Samakal:
2025-11-03@07:58:31 GMT

একটি স্বপ্ন ও অন্যান্য

Published: 4th, April 2025 GMT

একটি স্বপ্ন ও অন্যান্য

অধ্যাপক-বধূর নিয়তি
মূল: দ্য ফেইট অব দ্য প্রফেসর’স ওয়াইফ
রচনাকাল: আগস্ট ২১, ১৯৩৬

একবার এক অধ্যাপক এমন কিছু একটা খেয়ে ফেলেছিলেন; যা ঠিক খাওয়ার উপযোগী ছিল না। খাওয়ার পর তিনি বমি করতে শুরু করলেন।
তাঁর বউ এসে জিজ্ঞেস করল, “কী হয়েছে?”
অধ্যাপক বললেন, “কিছু না।” শুনে বউ চলে গেল। 
এর পর অধ্যাপক সোফায় শুয়ে পড়লেন, কিছুক্ষণ শুয়ে বিশ্রাম নিলেন আর তার পর কাজে চলে গেলেন।
কাজের জায়গায় তার জন্য একটা চমক অপেক্ষা করছিল: তারা তার বেতন কমিয়ে দিয়েছে। ৬৫০ রুবলের বদলে তিনি পাবেন ৫০০ রুবল। অধ্যাপক প্রতিবাদ করলেন, কিন্তু কোনো লাভ হলো না। তিনি পরিচালকের কাছে গেলেন। পরিচালক তাকে ঘাড় ধরে বের করে দিল। তিনি হিসাবরক্ষকের কাছে গেলেন। হিসাবরক্ষক বলল, “পরিচালকের কাছে যান।” অধ্যাপক ট্রেনে চেপে মস্কো চলে গেলেন।
পথে অধ্যাপক ফ্লুতে আক্রান্ত হলেন। মস্কোতে পৌঁছলেন ঠিকই কিন্তু ট্রেন থেকে প্ল্যাটফর্মে নামতে সক্ষম হলেন না।
তারা অধ্যাপককে স্ট্রেচারে করে বয়ে নিয়ে গেল হাসপাতালে।
অধ্যাপক হাসপাতালে প্রায় চার দিন পড়ে রইলেন এবং অক্কা পেলেন।
অধ্যাপকের মৃতদেহ দাহ করার জায়গায় নিয়ে দাহ করা হলো। এরপর তাঁর ভস্ম একটা পাত্রে ভরে তার বউকে পাঠিয়ে দেওয়া হলো।
ওদিকে অধ্যাপকের বউ বসে বসে কফি পান করছিলেন। এমন সময় দরকার ঘণ্টা বেজে উঠল। কী চাই জিজ্ঞেস করলে জবাব এলো: “আপনার জন্য একটি প্যাকেজ আছে।”
শুনে বউ উত্তেজিত হয়ে উঠল, খুশিতে দাঁত বের করে হাসল। ডাকপিয়নের হাতে আধ-রুবল গুঁজে দিয়ে তাড়াতাড়ি প্যাকেজ খুলতে গেল।
প্যাকেজ খুলে ভেতরে তাকাতে দেখল একটা জারভর্তি ছাই, সাথে একটা চিরকুট: “আপনার স্বামীর যা অবশিষ্ট আছে তা হলো এই।” 
বউ কিছু বুঝতে পারল না। জারটি ঝাঁকিয়ে দেখল, আলোর বিপরীতে উঁচু করে ধরে দেখল। ছয়বার চিরকুট পড়ল। অবশেষে বুঝল কী হয়েছে এবং চরমভাবে ভেঙে পড়ল।
দারুণভাবে ভেঙে পড়ে অধ্যাপকের বউ প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে কাঁদল, তারপর দেহভস্ম ভরা জারটা কবর দিতে বের হলো। একটা খবরের কাগজ দিয়ে জারটা মুড়িয়ে নিয়ে গেল বর্তমান প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা পার্কে; যা অতীতে টাভরিচেস্কি উদ্যান নামে পরিচিত ছিল। সবচেয়ে নির্জন পথটা বেছে নিয়ে গিয়ে যখনই সে জার মাটিতে পুঁতবে, তখনই সেখানে হাজির হলো এক পাহারাদার।
“এই যে!” চেঁচিয়ে বলে পাহারাদার। “ওখানে কী করছেন বলুন তো?”
অধ্যাপকের বউ ঘাবড়ে গেল। বলল, “কতগুলো ব্যাঙ ধরে জারে ভরতে চাইছিলাম।”
“ঠিক আছে,” পাহারাদার বলে, “অসুবিধা নাই, কিন্তু দেখেশুনে চলুন –ঘাসের ‘পরে হাঁটা কিন্তু নিষেধ। 
পাহারাদার চলে যেতেই অধ্যাপকের বউ জারটা মাটিচাপা দিল, আলগা মাটি পা দিয়ে সমান করল আর তারপর পার্কে হাঁটাহাঁটি করতে লাগল।
পার্কে কিছু নাবিক তার সাথে ভাব জমাতে চাইল। আরে এসো এসো, চল যাই, শোবে চল– এইসব। জবাবে সে বলল, “দিনের বেলা শোবো কেন রে?” ওদিকে নাবিক তবু শোবার কথা বলে যেতে লাগল বারবার। 
বারবার শোয়ার কথা শুনে অধ্যাপকের বউয়ের একরকম ঘুম পেয়ে গেল।
রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে ঘুম পেল খুব। চারপাশে নানারকম মানুষ ছুটে চলেছে, নীল, সবুজ নানারকমের; অথচ তার তখনও ঘুম পাচ্ছে। 
সে তখন হাঁটছে ঘুমের ঘোরে। ঘুমোতে ঘুমোতে স্বপ্ন দেখল, লিও টলস্টয় তার দিকে এগিয়ে আসছে, হাতে একটা চিলমচি। সে জিজ্ঞেস করল– “ওটা কী বস্তু?” টলস্টয় চিলমচি দেখিয়ে বললেন:
“এখানে,” যোগ করলেন, “আমি এটার মধ্যে কিছু করেছি, এখন সেটা নিয়ে সারা দুনিয়াকে দেখাতে চলেছি।”
অধ্যাপকের বউ সেটার ভিতরটা দেখার চেষ্টা করতে লাগল, কিন্তু দেখল মানুষটা আর টলস্টয় নয়, বরং একটা ছাউনি হয়ে গেছে আর সেই ছাউনির নিচে বসে আছে একটা মুরগি।
অধ্যাপকের বউ মুরগির পেছনে ধাওয়া করতে গেল, কিন্তু মুরগিটা একটা সোফার নিচে ঢুকে গেল আর আড়াল থেকে যখন উঁকি দিল দেখা গেল সেটা আসলে একটা খরগোশ।
অধ্যাপকের বউ হামাগুড়ি দিয়ে খরগোশের পিছু পিছু সোফার নিচে ঢুকল আর তার ঘুম ভেঙে গেল। 
ঘুম ভাঙতে সে চারদিকে নজর বুলিয়ে দেখল: সে আসলেই একটা সোফার নিচে শুয়ে আছে। 
হামাগুড়ি দিয়ে সে বেরিয়ে এলো আর দেখল আসলে নিজের ঘরেই আছে। একটা টেবিলে মগে শেষ না করা কফি। টেবিলের ওপরে চিরকুট: “আপনার স্বামীর যা অবশিষ্ট আছে তা হলো এই।”
আরেকবার অধ্যাপকের বউ ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল আর বাকি ঠান্ডা কফিটুকু পান করার জন্য বসল।
হঠাৎ দরজায় ঘণ্টা বেজে উঠল। আবার কী? কতগুলো লোক ঢুকে পড়ে বল, “চল ঘুরে আসি।”
“কোথায়?” অধ্যাপকের বউ জিজ্ঞেস করে। 
“পাগলাগারদে,” লোকগুলো জবাব দ্যায়।
অধ্যাপকের বউ লাথি ছুড়ে, চিৎকার করে, মেঝেতে জুতোর হিল ঠেকিয়ে নানাভাবে বাধা দিল কিন্তু লোকগুলো তাকে জাপটে ধরে গাড়িতে করে পাগলাগারদে নিয়ে গেল। 
আর তাই এখানে দেখা যাচ্ছে পাগলাগারদের একটা খাটিয়ায় একেবারে স্বাভাবিক একজন স্ত্রীলোক বসে আছে, হাতে মাছ ধরার ছিপ। মেঝে থেকে যেন অদৃশ্য মাছ ধরছে।
দুনিয়ায় কত রকম হতভাগা মানুষ থাকে; যাদের জীবনে যেখানে থাকার কথা থাকে না, সেখানেই তাদের ঠিকানা হয়। এর স্রেফ একটা করুণ উদাহরণ হচ্ছে এই অধ্যাপকের বউ।

বাপ-বেটি
মূল: ফাদার অ্যান্ড ডটার
রচনাকাল: সেপ্টেম্বর ১, ১৯৩৬

নাতাশার হাতে দুইটা লেবেঞ্চুস ছিল। একটা সে খেয়ে ফেলল আর একটা রয়ে গেল। সামনের টেবিলে রয়ে যাওয়া লেবেঞ্চুসটা রেখে সে কাঁদতে লাগল। চোখ তুলে তাকাতে দেখল হঠাৎ সামনে দুটো লেবেঞ্চুসই হাজির। নাতাশা সেখান থেকে আবার একটা খেয়ে ফেলল আর কাঁদতে শুরু করল। নাতাশা কাঁদতেই থাকল, কিন্তু পুরোটা সময় আড়চোখে টেবিলের দিকে তাকিয়ে থাকল দেখতে যে আদৌ দ্বিতীয় লেবেঞ্চুসটা হাজির হয় কিনা। কিন্তু তা হলো না। নাতাশা কান্না থামিয়ে গান গাইতে শুরু করল, গাইতেই থাকল, গাইতেই থাকল আর হঠাৎ অক্কা পেল। নাতাশার বাবা ঘরে ঢুকল, নাতাশাকে তুলে বহন করে ভবনের তত্ত্বাবধায়কের কাছে নিয়ে গেল, “এই যে,” নাতাশার বাবা বলল, “মৃত্যুসনদ দিন তো।” তত্ত্বাবধায়ক স্ট্যাম্পের ওপরে মুখের ভাপ দিয়ে নাতাশার কপালে সিল মারার জন্য চেপে ধরল। “ধন্যবাদ,” বলে নাতাশার বাবা নাতাশাকে বহন করে নিয়ে যেতে লাগল কবরস্থানে। পাহারাদার মাতভেই যথারীতি ছিল কবরস্থানে। ফটকের কাছে বসে থাকত সে আর কাউকে ঢুকতে দিত না। আর তাই মৃতদের কবর দিতে হতো রাস্তার ওপর। অতএব বাবা নাতাশাকে রাস্তায় কবর দিল। তারপর মাথার হ্যাটটা খুলে নাতাশার জন্য যেখানে মাটি খুঁড়েছে সেখানে রাখল, আর বাড়ি ফিরে এলো। বাড়ি ফিরে দেখল নাতাশা দিব্যি সেখানেই বসে আছে। কীভাবে সম্ভব? সহজ: সে মাটির নিচে থেকে হামাগুড়ি দিয়ে বেরিয়ে এসে এক দৌড়ে বাড়ি ফিরেছে। কতটুকুই-বা জানি আমরা! বাবা এতটাই হতবুদ্ধি হয়ে পড়ল যে পড়ে গেল আর অক্কা পেল। নাতাশা তত্ত্বাবধায়ককে ডেকে এনে বলল, “মৃত্যুসনদ দিন তো।” তত্ত্বাবধায়ক স্ট্যাম্পের ওপরে মুখের ভাপ দিয়ে একটা ছোট কাগজের টুকরোর ওপরে চেপে ধরল। তারপর সেই কাগজে লিখল, “এতদ্দ্বারা জানানো যাইতেছে যে অমুক আসলেই মৃত্যুবরণ করেছে।” নাতাশা কাগজের টুকরোটা নিয়ে কবরস্থানে নিয়ে গেল দাফন করবে বলে। কিন্তু পাহারাদার মাতভেই বাদ সেধে নাতাশাকে বলল, “কোনোভাবেই ঢুকতে দিতে পারব না।” নাতাশা বলল, “আমি শুধু এক টুকরো কাগজ কবর দিতে এসেছি।” কিন্তু পাহারাদার অটল, “অহেতুক শক্তি খরচ করে লাভ নেই।” আর তাই নাতাশা কাগজের টুকরোটা রাস্তায় মাটিচাপা দিল, সেইসাথে তার মোজা জোড়াও একই জায়গায় পুঁতে বাড়ি ফিরল। বাড়ি ফিরে দেখল তার বাবা এরই মধ্যে দিব্যি একা একা ছোট পুল টেবিলে ধাতব বল দিয়ে বিলিয়ার্ড খেলছে।
নাতাশা অবাক হলো, কিন্তু কিছুই না বলে নিজের ঘরে চলে গেল বড় হবে বলে।
বড় সে হতেই থাকল। মোটে চার বছরে বেশ পরিপক্ব তরুণী হয়ে উঠল, নাতাশার বাবা ওদিকে বুড়ো হয়ে বয়সের ভারে কুঁজো হয়ে উঠল। কিন্তু যখনই তাদের মনে পড়ত কীভাবে তারা একে অন্যকে মৃত ধরে নিয়েছিল, তারা হাসতে হাসতে সোফায় গড়াগড়ি খেত। কখনও কখনও তারা টানা কুড়ি মিনিট ধরে হাসত।
পড়শিরা তাদের হাসি শুনে জামাকাপড় পরে তৈরি হয়ে সিনেমা দেখতে চলে যেত। একবার তারা বেরিয়ে গেল কিন্তু আর ফিরে এলো না। আমার মনে তারা সবাই গাড়িচাপা পড়েছিল।

তোরঙ্গ
মূল: দ্য ট্রাঙ্ক

লম্বা চিকন গলার এক লোক হামাগুড়ি দিয়ে একটা ট্রাঙ্কের মধ্যে ঢুকে এর ঢাকনা বন্ধ করে দিল আর এতে তার দম আটকে এলো। 
“এখন,” দম আটকে আসা লম্বা চিকন গলার লোক বলল, “ট্রাঙ্কের মধ্যে আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। কারণ, আমার গলা লম্বা আর সরু। ট্রাঙ্কের ঢাকনা বন্ধ, তাই ভেতরে কোনো বাতাস ঢুকছে না। এভাবে ক্রমে আমার শ্বাসরোধ হ’তে থাকবে কিন্তু আমি ট্রাঙ্ক খুলব না। আস্তে আস্তে আমি মারা যেতে শুরু করব। জীবন আর মৃত্যুর লড়াই দেখতে পাব। লড়াইটা হবে প্রকৃতির নিয়মের বিপরীতে, সমানে সমান, কেননা প্রাকৃতিকভাবেই মৃত্যু জয়ী বলে। এখানে জীবন-মরণের সাথে নিশ্চিত নিয়তি জেনেও অহেতুক শত্রুর সাথে লড়ে যাবে, একেবারে শেষ মুহূর্ত অবধি ব্যর্থ আশা ত্যাগ না করে। যে লড়াই এখন চলবে সেখানে জীবন জানবে তার কৌশল অর্থাৎ জীবন আমাকে বাধ্য করবে ট্রাঙ্কের ঢাকনা খোলার জন্য। দেখা যাক কে জয়ী হয়। সমস্যা একটাই বাক্সে ভীষণ মথবলের (গন্ধগুটি) গন্ধ। জীবন যদি এই যুদ্ধে জিতে যায় তবে এরপর থেকে কাপড়ে তামাক ছড়াব এর বদলে … এই তো শুরু হলো: আমি আর শ্বাস নিতে পারছি না। আমি যে শেষ হ’তে চলেছি সন্দেহ নেই। আর কোনো মুক্তি নেই আমার। মাথায় আর আসছে না কোন উচ্চমার্গের চিন্তাভাবনা, দম বন্ধ হয়ে গেছে!.

..”
“আরেহ! এ কী? কিছু একটা হলো, আমি জানি না ঠিক কী হলো। কিছু একটা দেখলাম কিংবা শুনলাম মনে হলো।”
“আরেহ! আবার কিছু হলো। হে খোদা! নিঃশ্বাস নেওয়ার আর কোনো বাতাস নাই, মনে হচ্ছে মরে যাচ্ছি।
“কিন্তু এসব হওয়ার কি কথা ছিল? আমি গান গাইছি কেন? গলায় ব্যথা পাচ্ছি … কিন্তু ট্রাঙ্ক কোথায়? কেন চারপাশে ঘরের সবকিছু দেখতে পাচ্ছি? এটা কি হ’তে পারে আমি ঘরের মেঝেতে শুয়ে আছি? কিন্তু ট্রাঙ্কটা গেল কোথায়?
লম্বা চিকন গলার লোকটা মেঝে থেকে উঠে চারপাশে নজর বুলাল। ট্রাঙ্কটা নেই আশেপাশে। চেয়ার আর বিছানার ওপর ট্রাঙ্ক খালি করার সময় যা যা বের করা হয়েছিল সেগুলো ছড়িয়ে আছে। কিন্তু ট্রাঙ্কটা কোথাও নেই।
লম্বা চিকন গলার লোকটা বলল:
“এর মানে হলো জীবন মৃত্যুকে কী উপায়ে পরাজিত করে তা আমার জানা নাই।”

একটি স্বপ্ন
মূল: এ ড্রিম

কালুগিন ঘুমিয়ে পড়েছিল। ঘুমিয়ে সে স্বপ্নে দেখল: সে কিছু ঝোপঝাড়ের মধ্যে বসে আছে এবং এক পুলিশ ঝোপঝাড়ের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে।
কালুগিন জেগে উঠল, তারপর গাল চুলকে আবার ঘুমিয়ে পড়ল। এবার স্বপ্ন দেখল: সে ঝোপঝাড়ের পাশ দিয়ে হাঁটছে আর এক পুলিশ সেই ঝোপঝাড়ের মধ্যে লুকিয়ে বসে আছে।
কালুগিন আবার জেগে উঠল। তারপর মাথার নিচে একটা খবরের কাগজ বিছিয়ে দিল যেন তার মুখের গড়িয়ে পড়া লালায় বালিশ ডুবে না যায়। এবং আবার ঘুমিয়ে পড়ল। এবারও স্বপ্ন দেখল: সে কিছু ঝোপঝাড়ের মধ্যে বসে আছে আর এক পুলিশ সেই ঝোপঝাড়ের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে।
কালুগিন আবার জেগে উঠল, খবরের কাগজটা বদলাল, শুয়ে পড়ল এবং আবার ঘুমিয়ে গেল। এবার সে স্বপ্নে দেখল: সে ঝোপঝাড়ের পাশ দিয়ে হাঁটছে আর এক পুলিশ সেই ঝোপঝাড়ের মধ্যে বসে আছে।
এই পর্যায়ে, কালুগিন জেগে উঠল আর সিদ্ধান্ত নিল আর ঘুমাবে না। কিন্তু সাথে সাথেই ঘুমিয়ে পড়ল এবং আবার স্বপ্ন দেখল: সে এক পুলিশের পেছনে বসে আছে আর কিছু ঝোপঝাড় তাদের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে।
কালুগিন চিৎকার দিয়ে উঠল এবং বিছানায় ছটফট করল কিন্তু জেগে উঠতে পারল না।
কালুগিন টানা চার দিন চার রাত ঘুমিয়ে কাটাল। পঞ্চম দিনে জেগে উঠল। এ ক’দিনে এতটাই শীর্ণ হয়ে উঠেছে সে যে তার জুতো পায়ে ধরে রাখতে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখতে হলো। যে দোকান থেকে সে প্রতিদিন গমের রুটি কিনত, সেখানেও কেউ তাকে চিনতে পারল না। এবং তাকে আধা-রাইয়ের রুটি ধরিয়ে দিল। বাসায় বাসায় পরিদর্শন করে বেড়ানো স্বাস্থ্য কমিশন কালুগিনকে দেখে সিদ্ধান্ত নিল যে সে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে না। তারা বাসার তত্ত্বাবধায়কদের নির্দেশ দিল কালুগিনকে আবর্জনার সাথে ফেলে দিতে।
কালুগিনকে ভাঁজ করে অর্ধেক করা হলো আর আবর্জনার মতোই ফেলে দেওয়া হলো।

লেখক পরিচিতি
দানিল খার্মস (১৯০৫-১৯৪২) ছিলেন অ্যাবসার্ড ধারার লেখক, কবি এবং নাট্যকার। তিনি নিরীক্ষামূলক এবং অ্যাবসার্ড ধারার সাহিত্যকর্মের জন্য বিখ্যাত। স্তালিন শাসনামলে তাঁর কাজকে সমাজবিরোধী মনে করা হয় এবং তিনি সরকারের রোষানলে পড়েন। মৃত্যুর পর ১৯৭০-এর দশকের শেষদিকে তাঁর কাব্যিক, ব্যঙ্গাত্মক, অ্যাবসার্ড, শক্তিশালী সৃষ্টিগুলো সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রকাশ পেতে শুরু করে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জ জ ঞ স কর এক প ল শ র জন য ই থ কল কবর দ র ওপর ত রপর

এছাড়াও পড়ুন:

সার্চ দুনিয়ার নতুন দিগন্ত জিইও: দেশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো কী প্

ইন্টারনেট সার্চ দুনিয়ায় চলছে নীরব এক বিপ্লব। তথ্য খোঁজার ধরন বদলে যাচ্ছে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে দ্রুত। আগে যেখানে গুগলে উচ্চ র‌্যাংকিং মানেই ছিল সাফল্য, এখন সেই জায়গা নিচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)-নির্ভর সার্চ টুল।

সার্চ জগতের নতুন চ্যালেঞ্জ

চ্যাটজিপিটি, গুগল জেমিনি, মাইক্রোসফট কপিলট কিংবা পারপ্লেক্সিটি এআই-এগুলো আর শুধু সার্চ ইঞ্জিন নয়, বরং উত্তর তৈরিকারক ইঞ্জিন। ব্যবহারকারী এখন শুধু ‘লিংক’ নয়, বরং সরাসরি উত্তর পেতে চায়। আর এই পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্যই এসেছে নতুন এক কৌশল- জিইও বা জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন।

জিইও কী?

জিইও (জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) হলো এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে আপনার ওয়েবসাইট ও কনটেন্ট এমনভাবে সাজানো হয় যাতে এআই-চালিত সার্চ ইঞ্জিন সহজেই আপনার তথ্য চিনতে, বুঝতে এবং ব্যবহারকারীর প্রশ্নের উত্তরে সেটি অন্তর্ভুক্ত করতে পারে।

আগে ব্র্যান্ডগুলোর ফোকাস ছিল গুগলের প্রথম পাতায় জায়গা করে নেওয়া। কিন্তু এখন গুরুত্ব পাচ্ছে- চ্যাটজিপিটি বা জেমিনি-এর উত্তরে আপনার ব্র্যান্ডের নাম আসছে কি না!

এসইও বনাম জিইও: সার্চ দুনিয়ার নতুন যুগের পালাবদল

অনেকেই এসইও (সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) এবং জিইও (জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) এক মনে করেন, কিন্তু এদের মধ্যে মূলত লক্ষ্য ও কৌশল ভিন্ন। এসইও হচ্ছে পুরোনো পদ্ধতি, অন্যদিকে জিইও হচ্ছে নতুন পদ্ধতি।

* মূল লক্ষ্য
এসইও: সার্চ ইঞ্জিনে র‌্যাংক বাড়ানো
জিইও: এআই সার্চের উত্তরে দৃশ্যমান হওয়া

* কাজের ধরন
এসইও: কিওয়ার্ড ও ব্যাকলিংক ভিত্তিক
জিইও: কনটেক্সট, প্রাসঙ্গিকতা ও ব্র্যান্ড অথরিটি নির্ভর

* ফলাফল
এসইও: ক্লিক ও ট্রাফিক বৃদ্ধি
জিইও: ব্র্যান্ড উল্লেখ ও আস্থা বৃদ্ধি

* প্ল্যাটফর্ম
এসইও: গুগল, বিং ইত্যাদি সার্চ ইঞ্জিন
জিইও: চ্যাটজিপিটি, জেমিনি, পারপ্লেক্সিটি, এসজিই ইত্যাদি এআই সার্চ

এসইও এখনও গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু ভবিষ্যতের সার্চ ইকোসিস্টেমে জিইও সমান অপরিহার্য হয়ে উঠছে।

বাংলাদেশি ব্যবসার জন্য জিইও-এর গুরুত্ব

বাংলাদেশে ডিজিটাল মার্কেটের ক্রমবর্ধমান প্রবৃদ্ধি স্পষ্টভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শিক্ষা, ট্রাভেল, স্বাস্থ্যসেবা, ই-কমার্স, রিয়েল এস্টেট- প্রায় প্রতিটি খাতেই ব্যবসা অনলাইনে আরো দৃশ্যমান হতে চাচ্ছে। কিন্তু বদলেছে মানুষের সার্চ করার ধরন। এখন তারা শুধু গুগলে সার্চ করেই সন্তুষ্ট থাকছে না, তারা এআই-চালিত সার্চ টুলগুলো যেমন চ্যাটজিপিটি, জেমিনি বা পারপ্লেক্সিটি-এর মাধ্যমে সরাসরি উত্তর খুঁজছে। 

গার্টনারের এক গবেষণা অনুযায়ী, ২০২৬ সালের মধ্যে প্রচলিত সার্চ ইঞ্জিনে সার্চ ভলিউম প্রায় ২৫ শতাংশ কমে যাবে- কারণ ব্যবহারকারীরা দ্রুতই এআই-চালিত সার্চ ও চ্যাটবটের দিকে ঝুঁকছে। (তথ্যসূত্র: Gartner, “Search Engine Volume Will Drop 25% by 2026, Due to AI Chatbots and Other Virtual Agents)

তবে এই পরিবর্তনের প্রভাব ব্যবসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ধরুন, কেউ চ্যাটজিপিটি-তে লিখল, ‘ঢাকায় সেরা অ্যাকাউন্টিং ফার্ম কোনটি?’ যদি আপনার কোম্পানির নাম বা কনটেন্ট এআই-এর তৈরি উত্তরে না আসে, তাহলে সম্ভাব্য ক্লায়েন্ট ও ব্যবসার সুযোগ হাতছাড়া হচ্ছে।

মূলত এখানেই জিইও-এর গুরুত্ব উঠে আসে। জিইও ব্যবহার করে কনটেন্ট এমনভাবে সাজানো যায় যাতে এআই সার্চ সিস্টেম আপনার ব্র্যান্ডকে সহজেই চিনতে পারে, বুঝতে পারে এবং ব্যবহারকারীর প্রশ্নের উত্তরে উল্লেখ করে। অর্থাৎ, বাংলাদেশের প্রতিটি ব্যবসা যদি এআই-এর দুনিয়ায় দৃশ্যমান থাকতে চায়, জিইও’র সঙ্গে খাপ খাওয়ানো এখন আর বিকল্প নয়- এটি একান্ত প্রয়োজন।

জিইও’র জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন?

জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (জিইও) কোনো একদিনে শেখার মতো বিষয় না- এটি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া, যেখানে ব্যবসাগুলোকে নিজেদের কনটেন্ট, উপস্থিতি ও বিশ্বাসযোগ্যতা এআই-বান্ধব করে গড়ে তুলতে হয়। নিচে ধাপে ধাপে দেখা যাক, কীভাবে আপনি জিইও’র পথে প্রস্তুত হতে পারবেন।

১. অনলাইন উপস্থিতি যাচাই করুন

জিইও’র প্রথম ধাপ হলো আপনার ব্যবসা বা ব্র্যান্ডের বর্তমান অনলাইন উপস্থিতি যাচাই করা। চ্যাটজিপিটি বা পারপ্লেক্সিটি-এর মতো এআই-চালিত সার্চ টুলে সার্চ দিন ‘বাংলাদেশে সেরা (আপনার ইন্ডাস্ট্রি)-এর কোম্পানিগুলো কোনগুলো?’

যদি সার্চের উত্তরে আপনার নাম না আসে, বোঝা যাবে যে আপনার এআই-দৃশ্যমানতা এখনও সীমিত। এই ক্ষেত্রে আপনাকে জিইও অনুযায়ী কনটেন্ট ও অনলাইন উপস্থিতি বাড়াতে কাজ শুরু করতে হবে।

২. বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করুন

জেনারেটিভ এআই সার্চ সিস্টেম সেই উৎসকেই অগ্রাধিকার দেয়, যা নির্ভরযোগ্য ও যাচাইযোগ্য। তাই আপনার ওয়েবসাইটে ব্র্যান্ড, টিম, যোগাযোগ ও রিভিউসহ সব তথ্য সম্পূর্ণ ও স্বচ্ছ রাখুন।

গুগল বিজনেস প্রোফাইল নিয়মিত আপডেট করুন-  ঠিকানা, সময়, পোস্ট ও রিভিউসহ।

বিশ্বস্ত সংবাদমাধ্যম ও ব্লগে ব্র্যান্ডের উল্লেখ বাড়ান।

E-E-A-T (Experience, Expertise, Authoritativeness, Trustworthiness) বজায় রাখুন।

এভাবেই এআই ও ব্যবহারকারীর কাছে আপনার ব্র্যান্ড একটি বিশ্বাসযোগ্য সোর্স হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে- যা জিইও সাফল্যের মূল চাবিকাঠি।

৩. কনভারসেশনাল কনটেন্ট লিখুন

এআই সার্চ এখন ব্যবহারকারীর প্রশ্নভিত্তিক অনুসন্ধানকে গুরুত্ব দেয়। তাই আপনার কনটেন্ট তৈরি করুন এমনভাবে যেন এটি প্রাকৃতিক প্রশ্ন ও কথোপকথনের মতো শোনায়। উদাহরণ: ‘Where can I find a trusted IELTS coaching center in Dhaka?’ ‘Where can I apply for a blue-collar job?’ এ ধরনের কনটেন্ট এআই-এর চোখে আরো সহজে বোঝার মতো হয় এবং ব্যবহারকারীর প্রশ্নের উত্তর হিসেবে উল্লেখযোগ্য।

৪. বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে সক্রিয় থাকুন

এআই শুধু ওয়েবসাইট থেকে তথ্য সংগ্রহ করে না। এটি ফেসবুক, ইউটিউব, লিংকডইন, কোরা এবং অন্যান্য সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম থেকেও তথ্য সংগ্রহ করে। তাই বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে আপনার উপস্থিতি নিশ্চিত করা জিইও-এর জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

৫. এসইও এবং জিইও একসাথে ব্যবহার করুন

ডিজিটাল দুনিয়ায় এখন শুধু সার্চ র‌্যাংকই যথেষ্ট নয়। এসইও যেমন গুগল সার্চে আপনার কনটেন্টকে শীর্ষে নিয়ে আসে, তেমনি নতুন যুগের জিইও (জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) আপনার ব্র্যান্ডকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক সার্চে আরো দৃশ্যমান করে তোলে।

এসইও মূলত গুগল ও অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিনে ওয়েবসাইটের অবস্থান উন্নত করে, আর জিইও শেখায়- কীভাবে এআই মডেলগুলো আপনার ব্র্যান্ডকে চিনবে, উল্লেখ করবে এবং বিশ্বাস করবে।

দুটি কৌশল একসাথে প্রয়োগ করলে অনলাইন উপস্থিতি অনেক বেশি শক্তিশালী হয়। একদিকে সার্চে দৃশ্যমানতা বাড়ে, অন্যদিকে এআই-নির্ভর প্ল্যাটফর্মগুলোতেও আপনার ব্র্যান্ডের নাম উঠে আসে স্বতঃস্ফূর্তভাবে।

ভবিষ্যতের সার্চ জগতে টিকে থাকতে হলে এখনই সময়- এসইও এবং জিইও-কে একসাথে কাজে লাগানোর।

বাংলাদেশের ব্যবসার জন্য জিইও’র নতুন সম্ভাবনা

জিইও বাংলাদেশের ব্যবসাগুলোর জন্য হতে পারে এক গেম চেঞ্জার। আগে যেখানে অনলাইন দৃশ্যমানতা মানেই ছিল গুগলে র‌্যাংক করা, এখন সেটি ধীরে ধীরে স্থান ছেড়ে দিচ্ছে এআই সার্চ ভিজিবিলিটি–কে।

আজ যদি কোনো ব্যবহারকারী চ্যাটজিপিটি বা জেমিনি-তে জিজ্ঞেস করে- 

‘বাংলাদেশে নির্ভরযোগ্য অনলাইন বই বিক্রির সাইট কোনটা?’

অথবা, ‘ঢাকায় সেরা ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি কারা?’

যদি আপনার ব্র্যান্ডের নাম সেই উত্তরে উঠে আসে, সেটিই হবে প্রকৃত দৃশ্যমানতা- শুধু ক্লিক নয়, বরং আস্থা, প্রভাব ও ব্র্যান্ড অথরিটি–এর প্রতিফলন।

বাংলাদেশে এখন প্রতিদিন শত শত নতুন অনলাইন ব্যবসা শুরু হচ্ছে- ই–কমার্স, এডুকেশন, হেলথটেক, রিয়েল এস্টেট, ফাইন্যান্স, এমনকি ছোট স্টার্টআপরাও দ্রুত ডিজিটাল হচ্ছে। কিন্তু একইসঙ্গে প্রতিযোগিতাও বেড়ে যাচ্ছে বহুগুণে।

এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে শুধু এসইও নয়, জিইও–কেন্দ্রিক কৌশলও অপরিহার্য।

জিইও’র ভবিষ্যৎ

খুব শিগগিরই এআই সার্চ টেক্সটের বাইরে গিয়ে ভয়েস, ভিডিও ও ইমেজ কনটেন্ট থেকেও উত্তর তৈরি করবে। তখন জিইও কেবল ওয়েবসাইট নয়, বরং ভিডিও, পডকাস্ট, সোশ্যাল প্রোফাইল, নিউজ রিপোর্ট- সবকিছুর মধ্যেই প্রভাব ফেলবে।

তাই এখন থেকেই যারা জিইও-কেন্দ্রিক কৌশল গ্রহণ করবে, ভবিষ্যতের সার্চ রেভোলিউশনে নেতৃত্ব দেবে তারাই।

উপসংহার

জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (জিইও) শুধু নতুন ট্রেন্ড নয়- এটি ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের পরবর্তী অধ্যায়।

এসইও যেমন আপনাকে সার্চ রেজাল্টে নিয়ে যায়, জিইও তেমনি আপনাকে নিয়ে যাবে এআই–এর উত্তরে।

‘ভবিষ্যতের সার্চে র‌্যাংক নয়, ব্র্যান্ডের বিশ্বাসযোগ্যতাই হবে সাফল্যের আসল মাপকাঠি।’

লেখক: হেড অব ওয়েব অ্যানালাইসিস অ্যান্ড এসইও ডিরেক্টর, ইন্টেলেক আইটি এলএলসি (ইউএসএ অ্যান্ড বাংলাদেশ)

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ