একাধিকবার হামলা ও হেনস্থার শিকার কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বাতিসা ইউনিয়নের লুদিয়ারা গ্রামের সেই বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই ভূঁইয়া কানুর বাড়িতে ফের হামলা হয়েছে। 

বৃহস্পতিবার (৩ এপ্রিল) রাত আনুমানিক ১২টা ৫৫ মিনিটে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা তার বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালান বলে অভিযোগ করেছেন মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই  ও তার পরিবার।

বৃহস্পতিবার গভীর রাতে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাইয়ের বাড়ির দরজা ও জানালায় দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপোয় হামলাকারীরা। 

আরো পড়ুন:

নড়াইলে ছাত্র আন্দোলনে হামলা: আ.

লীগ নেতা গ্রেপ্তার 

সিলেটে ছাত্রলীগের মিছিলের পর দুই আ.লীগ নেতার বাসায় হামলা

হামলার ঘটনার বিষয়ে অবহিত চৌদ্দগ্রাম থানার হিলাল উদ্দিন বলেন, অভিযোগ পেয়ে তিনি নিজেই ফোর্সসহ ঘটনাস্থলে যান এবং সেখানে দরজায় বেশ কয়েকটি কোপের চিহ্ন পান। তবে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে হামলাকারীরা দ্রুত পালিয়ে যায়।

মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই বলেন, ঈদ উদযাপনের জন্য তিনি গ্রামে এসেছিলেন। রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে ১০ থেকে ১২টি মোটরসাইকেলে করে আনুমানিক ২০ থেকে ২৫ জন অস্ত্রধারী তার বাড়িতে হামলা চালায়। 

হামলাকারীরা জামায়াত-শিবির কর্মী বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, তারা দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে দরজা, জানালা ও টিনের চালায় আঘাত করতে থাকে এবং ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়।

আব্দুল হাইয়ের অভিযোগ, ভয়ে তার পরিবার চিৎকার করলেও আশপাশের বাসিন্দারা আতঙ্কে ঘর থেকে বের হতে পারেননি। পরে স্থানীয়রা চৌদ্দগ্রাম থানায় ফোন করলে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে আসে। পুলিশ আসার পর হামলাকারীরা দ্রুত পালিয়ে যায়।

এই মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী রেহানা বেগম বলেন, “হামলাকারীরা এতটাই আতঙ্ক ছড়িয়েছিল যে, আমি আমার স্বামী ও নাতিদের জীবন নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম। আমরা কেউই নিরাপদ নই।”

ওসি হিলাল উদ্দিন বলেন, “হামলাকারীরা মূলত এলাকা ছেড়ে পালিয়ে থাকে এবং সুযোগ বুঝে ফিরে এসে হামলা চালায়। এবারো তারা ঈদের ছুটিতে এসে হামলা করে গা ঢাকা দিয়েছে।”

অভিযোগের বিষয় চৌদ্দগ্রাম উপজেলা জামায়াতের আমির মো. মাহফুজুর রহমানের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, “এই ঘটনার সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এটি আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক অভিযোগ।”

এর আগেও  আব্দুল হাইয়ের ওপর একাধিকবার হামলা হয়েছে। 

গত বছর ২২ ডিসেম্বর স্থানীয় জামায়াত কর্মী আবুল হাসেম মজুমদারের নেতৃত্বে ১০-১২ জন তাকে লাঞ্ছিত করে এবং জুতার মালা পরিয়ে এলাকা ছাড়তে বাধ্য করে। এরপর তিনি পাশের জেলায় তার ছেলে বিপ্লবের বাড়িতে আশ্রয় নেন। 

হামলার প্রতিবাদ ও দোষীদের বিচারের আওতায় আনার দাবিতে ২৪ ডিসেম্বর চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধারা মানববন্ধন করেন।

আবদুল হাইয় কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং ওই সংগঠনের কুমিল্লা দক্ষিণ জেলার সাবেক সহসভাপতি। 

জুতার মামলা পরিয়ে তাকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় ২৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি, জুতার মালা পরানোয় ১০০ কোটি টাকার মানহানি এবং মারধরের অভিযোগে ২৫ ডিসেম্বর আবদুল হাই থানায় মামলা করেন। এতে ১০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করা হয়েছিল।

ওই ঘটনায় পুলিশ পাঁচজনকে আটক করেছিল। তাদের মধ্যে চারজন জামিনে মুক্তি পান। 

মামলার ১ ও ২ নম্বর আসামি জামায়াতের কর্মী আবুল হাশেম ও অহিদুর রহমানকে ওই ঘটনার পর জামায়াত থেকে বহিষ্কার করা হয়।

আসামিদের জামিনের পর জানুয়ারি মাসে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই গণমাধ্যমকে তার ও তার পরিবারের নিরাপত্তার অভাবের কথা বলেছিলেন।

আবদুল হাই তখনই আসামিদের এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ানো নিয়ে কথা বলেছিলেন। তিনি সন্দেহ প্রকাশ করে বলেছিলেন, আসামিদের আর ধরা হবে না। তিনি বিচারও পাবেন না।

অবশ্য নিরাপত্তার সেই শঙ্কাই সত্যি হলো; ৩ এপ্রিল রাতে আবার হামলার হলো আব্দুল হাইয়ের বাড়িতে।

ঢাকা/রুবেল/রাসেল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আবদ ল হ ই

এছাড়াও পড়ুন:

সত্য মিথ্যা যাচাই না করে শেয়ার করবেন না, মেসেজটা তৃণমূলে ছড়িয়ে দিন: সিইসি

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, 'আমাদের একটা অভ্যাস হয়ে গেছে একটা নেতিবাচক সংবাদ দেখলেই যাচাই-বাছাই না করে শেয়ার করে দেওয়া হয়। অত্যন্ত ভিত্তিহীন সংবাদও আমরা শেয়ার করে দেই।'

সিইসি বলেন, 'দয়া করে সত্য মিথ্যা যাচাই না করে শেয়ার করবেন না। এই মেসেজটা তৃণমূলে ছড়িয়ে দিন। তথ্যটা যেন আগে যাচাই করে তারপরে শেয়ার করেন।'

আজ সোমবার রাজধানীর ভাটারায় আনসার গার্ড ব্যাটালিয়নে (এজিবি) এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এসব কথা বলেন সিইসি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ভুয়া সংবাদের প্রচার ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপপ্রয়োগ রোধে করণীয় সম্পর্কে তিনি এসব কথা বলেন।

থানা আনসার কোম্পানি/প্লাটুন সদস্যদের আনসার মৌলিক প্রশিক্ষণের (৪র্থ ধাপ) সমাপনী উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিইসি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো সংবাদ দেখা মাত্রই নাগরিকদের যাচাইবাছাই করতে আহ্বান জানান সিইসি। নিশ্চিত হওয়ার আগে শেয়ার না করতে বলেন তিনি।

জাতীয় নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে আনসার ভিডিপির ভূমিকাকে মূল শক্তি বলে উল্লেখ করেন সিইসি। তিনি বলেন, 'এনারাই অধিক সংখ্যায় নিয়োজিত থাকেন। এবং আমাদের হিসেব করতে গেলে প্রথম এদেরকেই হিসেব করতে হয় যে, কতজন আনসার ভিডিপি সদস্য আমরা মোতায়েন করতে পারব। মূল কাজটা আঞ্জাম (সম্পাদন) দিতে হয় কিন্তু আনসার এবং ভিডিপির সদস্যদের।'

অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ। নির্বাচনকালীন জনগণের নিরাপত্তা, ভোট কেন্দ্রের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা এবং সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণে আনসার বাহিনী সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করছে বলে জানান তিনি। নির্বাচনে দেশজুড়ে প্রায় ৬ লাখ আনসার ও ভিডিপি সদস্য দায়িত্বপালন করবেন বলেন মহাপরিচালক।

অনুষ্ঠানে মহড়ায় ঢাকা মহানগর আনসারের চারটি জোনের অধীন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ৩২০ জন আনসার ও ভিডিপি সদস্য অংশ নেন।  আনসার গার্ড ব্যাটালিয়নের সদস্যরা টহল, দায়িত্ব বণ্টন ও জরুরি প্রতিক্রিয়া অনুশীলনে অংশ নেন।

মহড়ায় ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনী সরঞ্জামাদি নিরাপদে পৌঁছে দেওয়া, ভোটারদের শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে ভোট প্রদানে সহায়তা, জাল ভোট প্রতিরোধ, প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা এবং সেনা, বিজিবি, র‍্যাব ও পুলিশের সঙ্গে দ্রুত সমন্বয়ের প্রস্তুতি নেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন জোনের অধিনায়ক এবং প্রশিক্ষণ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ