ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক এগিয়ে নিতে একসঙ্গে কাজ করার কথা বললেন অধ্যাপক ইউনূস
Published: 4th, April 2025 GMT
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আজ ব্যাংককে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেছেন। দক্ষিণ এশিয়ার দুই প্রতিবেশী দেশের সরকারপ্রধানেরা পারস্পরিক শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে খোলামনে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। দুই সরকারপ্রধানের ৪০ মিনিটব্যাপী আলোচনা ছিল খোলামেলা, ফলপ্রসূ ও গঠনমূলক।
বৈঠকে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়। আমাদের দুটি দেশের বন্ধুত্ব সুদৃঢ় ইতিহাস, ভৌগোলিক নৈকট্য এবং সাংস্কৃতিক সাদৃশ্যের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। ১৯৭১ সালে আমাদের কঠিন সময়ে ভারত সরকার ও জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থনের জন্য আমরা চিরকৃতজ্ঞ।’
যদিও এটি দুই নেতার প্রথম সরাসরি বৈঠক, তবে অধ্যাপক ইউনূস জানান, গত আট মাসে দুই দেশের মধ্যে বহুবার দ্বিপক্ষীয় যোগাযোগ হয়েছে।
দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘দুই দেশের জনগণের কল্যাণে সম্পর্ককে সঠিক পথে এগিয়ে নিতে আমরা আপনার সঙ্গে একযোগে কাজ করতে চাই।’
বিমসটেকের নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে অধ্যাপক ইউনূস সাত সদস্যদেশের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির জন্য ভারতের সমর্থন চান। তিনি গঙ্গা পানিবণ্টন চুক্তি নবায়নের আলোচনা এবং তিস্তা পানিবণ্টন চুক্তি চূড়ান্ত করার আহ্বান জানান।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিমসটেকের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করায় অধ্যাপক ইউনূসকে অভিনন্দন জানান এবং ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা জানান।
নরেন্দ্র মোদি বলেন, ভারত সব সময় বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। তিনি উল্লেখ করেন, দুই প্রতিবেশী দেশের ইতিহাস বাংলাদেশ সৃষ্টির সময় থেকেই অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।
প্রধানমন্ত্রী মোদি অধ্যাপক ইউনূসের আন্তর্জাতিক মর্যাদার কথা স্মরণ করে বলেন, ভারত সর্বদা একটি প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশের পক্ষে থাকবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ভারত বাংলাদেশে কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করে না। প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, ‘আমাদের সম্পর্ক জনগণের সঙ্গে।’
অধ্যাপক ইউনূস শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের বিষয়ে ভারতের অবস্থান জানতে চান। তিনি বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী মিডিয়ার মাধ্যমে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন, যা ভারতের আতিথেয়তার অপব্যবহার বলে মনে হয়।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘শেখ হাসিনা অন্তর্বর্তী সরকার সম্পর্কে মিথ্যা ও উসকানিমূলক অভিযোগ করে চলেছেন।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা ভারত সরকারকে অনুরোধ করছি যে আপনার দেশে অবস্থানকালে তাঁকে এ ধরনের বক্তব্য থেকে বিরত রাখার জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।’
অধ্যাপক ইউনূস জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের অনুসন্ধানমূলক প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করেন, যা ২০২৪ সালের ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত নিরাপত্তা বাহিনী ও সশস্ত্র আওয়ামী লীগ কর্মীদের দ্বারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ দিয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা জানান, প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গণ–অভ্যুত্থানের সময় ১ হাজার ৪০০ জন নিহত হন, যাঁদের মধ্যে প্রায় ১৩ শতাংশই শিশু। প্রতিবেদনটি এটাও জানায় যে হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন এবং অমানবিক কার্যকলাপের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে।
জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী নিজে নিরাপত্তা বাহিনীকে আন্দোলনকারীদের হত্যা ও ‘নেতাদের গ্রেপ্তার করে লাশ গুম করার’ নির্দেশ দেন।
প্রধানমন্ত্রী মোদি শেখ হাসিনার বক্তব্য নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, ভারতের সম্পর্ক কোনো ব্যক্তি বা দলের সঙ্গে নয়, বরং দেশের সঙ্গে।
অধ্যাপক ইউনূস সীমান্তে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টিও উত্থাপন করেন এবং বলেন, এ ধরনের মৃত্যু রোধে যৌথভাবে কাজ করলে তা শুধু পরিবারগুলোর বেদনা কমাবে না, বরং দুই দেশের মধ্যে আস্থা ও সম্পর্ক আরও দৃঢ় করবে।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমি প্রতিবার এসব মৃত্যুতে কষ্ট অনুভব করি।’ তিনি অনুরোধ জানান, ভারত যেন এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে উপায় খুঁজে বের করে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, ভারতীয় সীমান্তরক্ষীরা শুধু আত্মরক্ষার জন্য গুলি চালায় এবং মৃত্যুর ঘটনাগুলো ভারতের ভেতরেই ঘটে। উভয় নেতা বিষয়টি নিয়ে একসঙ্গে কাজ করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
বিমসটেকের বাংলাদেশের চেয়ারম্যানশিপের বিষয়ে অধ্যাপক ইউনূস আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিমসটেকের দৃশ্যমানতা বাড়াতে চায় এবং এই সংস্থাকে একটি কার্যকর ও প্রাণবন্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে চায়, যা এই অঞ্চলের জনগণের প্রত্যাশা পূরণে সহায়তা করবে এবং বিশ্বব্যাপী পণ্য আমদানি-রপ্তানির একটি দক্ষ পথ তৈরি করবে।
বাংলাদেশে সংখ্যালঘু পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদির উদ্বেগের জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার যেসব প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, তা অনেকটাই অতিরঞ্জিত এবং ‘এর বেশির ভাগই ভুয়া খবর’।
আরও পড়ুনমোদির সঙ্গে বৈঠকে হাসিনার প্রত্যর্পণ প্রসঙ্গ তুললেন ইউনূস৮ ঘণ্টা আগেযেসব হামলার অভিযোগ এসেছে, তা স্বচক্ষে যাচাই করার জন্য তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে সাংবাদিক পাঠানোর অনুরোধ জানান।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তিনি দেশে ধর্মীয় ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার প্রতিটি ঘটনা নজরদারির আওতায় আনতে একটি কার্যকর ব্যবস্থা প্রচলন করেছেন এবং তাঁর সরকার এমন যেকোনো ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।
দুই নেতা তাঁদের খোলামেলা ও ফলপ্রসূ সংলাপের সমাপ্তি টানেন পরস্পরের সুস্বাস্থ্য ও মঙ্গল কামনা করে এবং উভয় দেশের জনগণের শান্তি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির জন্য শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
বৈঠকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব মসট ক র জনগণ র ক জ কর র জন য সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
হামদর্দের গাজার জনগণের প্রতি মানবিক সহায়তা
গাজা পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সংকটের মুখোমুখি। ইসরায়েলি হামলায় গাজার প্রতিটি অঞ্চল ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। শিশু, নারী, চিকিৎসক, মানবাধিকার কর্মী, সাংবাদিক কেউই রেহাই পাচ্ছে না। মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে গাজা শহরটি মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে। যেখানে প্রতিদিন হাজার হাজার নিরীহ মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে।
এ পরিস্থিতিতে হামদর্দ ল্যাবরেটরিজ (ওয়াক্ফ) বাংলাদেশ গাজার জনগণের প্রতি মানবিক সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
হামদর্দ বাংলাদেশের চিফ মোতাওয়াল্লী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাকীম মো. ইউছুফ হারুন ভূঁইয়ার আহ্বানে গত ২৬ এপ্রিল কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। হামদর্দের সকল কর্মকর্তা এবং কর্মচারীরা তাদের বেতন থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অনুদান এবং শরবত রুহআফজা’র বিক্রয়লব্ধ লভ্যাংশ থেকে ফিলিস্তিনের গাজার জনগণের জন্য অর্থ সহায়তা হিসেবে প্রদান করবে।
এই অর্থ গাজার জনগণের জন্য জরুরি চিকিৎসাসেবা, খাদ্য সহায়তা, আশ্রয় এবং অন্যান্য মৌলিক প্রয়োজনে কিছুটা হলেও সহায়ক হবে। হামদর্দের এই উদ্যোগ গাজার জনগণের মানবিক সংকটের মধ্যে তাদের পাশে দাঁড়ানোর একটি ক্ষুদ্র প্রয়াস।
ঢাকা/ইভা