বান্দরবানে ঈদের ছুটিতে পর্যটকের ঢল
Published: 4th, April 2025 GMT
ঈদের ছুটিতে পর্যটকের ঢল নেমেছে বান্দরবানে। জেলার হোটেল-মোটেলের কোথাও কক্ষ খালি নেই। দীর্ঘ কয়েক বছর পর পর্যটকের ভিড় বাড়ায় বেশ খুশি জেলার পর্যটন–সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। আগামীকাল শনিবার পর্যন্ত পর্যটকের ভিড় থাকবে বলে আশাবাদী তাঁরা।
পর্যটন–সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলায় ঈদের পরদিন মঙ্গলবার থেকে পর্যটক সমাগম বাড়তে থাকে। গত বুধবার পর্যটকের চাপ ছিল সবচেয়ে বেশি। অনেক পর্যটক হোটেল কক্ষ ভাড়া না পেয়ে মসজিদের বারান্দাসহ বিভিন্ন স্থানে রাত যাপন করেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবারও পর্যটকের বাড়তি চাপ দেখা গেছে।
গত বুধবার থেকে আজ শুক্রবার পর্যন্ত কয়েক দফায় জেলা শহর ও শহরতলির বিভিন্ন পর্যটন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, প্রায় সবখানেই শত শত মানুষের ভিড়। কেউ পরিবার-পরিজন, কেউ বন্ধুবান্ধব নিয়ে ঘুরতে এসেছেন। দূরদূরান্তের পর্যটক যেমন রয়েছেন, তেমনি এসেছেন আশপাশের এলাকার মানুষও। নীলাচল, মেঘলা, চিম্বুক, নীলগিরি, শৈলপ্রপাতসহ প্রায় সব পর্যটনকেন্দ্রেই পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার শহরের ট্রাফিক মোড় এলাকায় কথা হয় যশোর থেকে বেড়াতে আসা শামসুল আলম নামের এক পর্যটকের সঙ্গে। তিনি বলেন, তাঁরা ১২ জনের একটি দল বুধবার পাহাড় দেখতে এসেছেন। হোটেলে অগ্রিম বুকিং দেননি। ভেবেছিলেন এসেই দরদাম করে হোটেলে উঠবেন। তবে বান্দরবানে এসে হোটেল না পেয়ে বুধবার রাতে একটি মসজিদের বারান্দায় ঘুমাতে হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁদের রাতযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় কাপড়চোপড় দিয়ে সহযোগিতা করেছেন।
বঙ্গবন্ধু মুক্তমঞ্চ এলাকায় কথা হয় কুমিল্লা থেকে আসা তরুণ মনিরুল আলমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ছয় বন্ধু একসঙ্গে বান্দরবানে এসেছেন। অনেক স্থানে ঘোরাঘুরি করেও হোটেলের কক্ষ ভাড়া পাননি। এ অবস্থায় রাতে ফিরে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই।
বুধবার দুপুরে শহরতলির শৈলপ্রপাতে গিয়ে দেখা যায়, কেউ ছাদখোলা জিপ ভাড়া নিয়ে, কেউ আবার ব্যক্তিগত গাড়িতে ভিড় করেছেন পর্যটন স্পটটিতে। শৈলপ্রপাত এলাকায় ফলমূল এবং কোমরতাতে বোনা পোশাক বিক্রি করেন কিছু বম নারী। তাঁদের একজন সিয়ামপুই বম। পর্যটক বাড়ায় বেচাবিক্রি ভালো হচ্ছে বলে জানান তিনি। সিয়ামপুই বলেন, কয়েক বছর ধরে পর্যটক আসা কমে যাওয়ায় তাঁরা পুঁজি হারিয়েছেন। এখন পর্যটকের ঢল নামতে শুরু করেছে, তবে টাকার অভাবে মালামাল সংগ্রহ করতে পারছেন না।
মেঘলা পর্যটন কেন্দ্রে কায়াক নিয়ে আনন্দে মেতে ওঠেন পর্যটকেরা। আজ সকালে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব ন দরব ন এস ছ ন ব র পর
এছাড়াও পড়ুন:
বাণিজ্যবিরোধ: ভারত কেন ট্রাম্পের নিশানায়
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল বৃহস্পতিবার ভারতের বাণিজ্যনীতির তীব্র সমালোচনা করেছেন। ভারতীয় পণ্যের ওপর হোয়াইট হাউসের শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তুতি নেওয়ার পর থেকেই এ আক্রমণের মাত্রা বেড়েছে।
ট্রাম্প জানিয়েছেন, তাঁর প্রশাসন আজ শুক্রবার (১ আগস্ট) থেকে ভারতের রপ্তানি পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করছে এবং এর পাশাপাশি অতিরিক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ট্রাম্প যখন বিশ্বের বহু দেশের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করছিলেন, তখনই ভারতকে উদ্দেশ করে তাঁর এমন কঠোর অবস্থান সামনে উঠে আসে।
হোয়াইট হাউসের অভিযোগ, ভারত মার্কিন পণ্যকে বাজারে ঠেকাতে অতিমাত্রায় শুল্ক আরোপ করছে। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ জ্বালানি কেনা অব্যাহত রাখায় ট্রাম্প প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
‘ভারতের শুল্ক বিশ্বে অন্যতম সর্বোচ্চ’, গত বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন মন্তব্য করেন ট্রাম্প। জবাবে ভারত সরকার জানিয়েছে, তারা ট্রাম্পের বক্তব্য ‘লক্ষ্য করেছে’ এবং এর ‘প্রভাব মূল্যায়ন’ করবে।
যুক্তরাষ্ট্র-ভারত বাণিজ্যবিরোধ: পরিস্থিতি কোথায় দাঁড়িয়ে
আজ থেকে ভারতীয় পণ্যের ওপর ট্রাম্পের ধার্য করা ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক গত ২ এপ্রিল হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনে ঘোষিত সম্ভাব্য শুল্ক থেকে মাত্র ১ শতাংশ কম।
এ হার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও জাপানের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশ শুল্কের চেয়ে বেশি। তবে গত মে মাসে চীনের ওপর আরোপিত ৩০ শতাংশ শুল্কের চেয়ে কিছুটা কম।
হোয়াইট হাউসের অভিযোগ, ভারত মার্কিন পণ্যকে বাজারে ঠেকাতে অতিমাত্রায় শুল্ক আরোপ করছে। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ জ্বালানি কেনা অব্যাহত রাখায় ট্রাম্প প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।এ শুল্ক ভারতের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য আলোচনা আরও জটিল করে তুলতে পারে। একাধিক দফা আলোচনার মধ্য দিয়ে উভয় পক্ষ একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ১২তম বৃহৎ বাণিজ্য অংশীদার ভারত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন থেকে উৎপাদন সরিয়ে নেওয়া অনেক কোম্পানির নতুন গন্তব্য হয়েছে দেশটি। মে মাসে অ্যাপলের সিইও টিম কুক জানান, যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রির জন্য আইফোন এখন ভারতে উৎপাদিত হচ্ছে; যাতে উচ্চ শুল্ক এড়ানো যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি কার্যালয়ের (ওটিআর) তথ্যমতে, গত বছর ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য বাণিজ্যের মোট পরিমাণ ছিল প্রায় ১২৯ বিলিয়ন (১২ হাজার ৯০০ কোটি) ডলার। ভারতের রপ্তানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে পোশাক, রাসায়নিক, যন্ত্রপাতি ও কৃষিপণ্য।
ট্রাম্প কেন ভারতকে নিশানা করছেন
সম্প্রতি ট্রাম্প একাধিকবার বিভিন্ন পণ্যের ওপর ভারতের ‘অতি উচ্চ’ শুল্ক আরোপের সমালোচনা করেছেন। এর মধ্যে কৃষিপণ্য ও দুগ্ধজাত পণ্যও রয়েছে।
বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রাম্প লেখেন, ‘বছরের পর বছর আমরা ভারতের সঙ্গে তুলনামূলকভাবে খুব কম ব্যবসা করেছি। কারণ, তাদের শুল্ক অত্যন্ত বেশি।’
এ মুহূর্তে যখন সবাই চায় ইউক্রেনে হত্যা বন্ধ হোক, তখন ভারত চীনের সঙ্গে রাশিয়ার জ্বালানির সর্ববৃহৎ ক্রেতা।ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন প্রেসিডেন্টদেশীয় শিল্পকে রক্ষা করতে ভারত কিছু পণ্যের ওপর ১০০ শতাংশের বেশি শুল্ক আরোপ করেছে।
ওটিআরের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে পণ্যবাণিজ্যে প্রায় ৪৫ বিলিয়ন (৪ হাজার ৫০০ কোটি) ডলারের ঘাটতি দেখেছে। এটি আগের বছরের তুলনায় ৫ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি। তুলনামূলকভাবে গত বছর যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে প্রায় ২৯৫ বিলিয়ন (২৯ হাজার ৫০০ কোটি) ডলারের বাণিজ্যঘাটতিতে ছিল।
আরও পড়ুনভারতের ৬ প্রতিষ্ঠানের ওপর ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা, ইরানের পণ্যের বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগ ৩১ জুলাই ২০২৫ট্রাম্প আরও ক্ষুব্ধ যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ তেল কেনা অব্যাহত রেখেছে।
‘এ মুহূর্তে যখন সবাই চায় ইউক্রেনে হত্যা বন্ধ হোক, তখন ভারত চীনের সঙ্গে রাশিয়ার জ্বালানির সর্ববৃহৎ ক্রেতা’, বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন ট্রাম্প।
ভারতের প্রতিক্রিয়া
এ সপ্তাহে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে ভারত সরকার ট্রাম্পের ওই বক্তব্যে তুলনামূলকভাবে মৃদু, তবে শক্ত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
ভারতের ওপর ধার্য করা শুল্কহার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও জাপানের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশের চেয়ে বেশি। তবে গত মে মাসে চীনের ওপর আরোপিত ৩০ শতাংশের চেয়ে কিছুটা কম।বুধবার দেওয়া এ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘কয়েক মাস ধরে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র একটি ন্যায্য, ভারসাম্যপূর্ণ ও পারস্পরিকভাবে লাভজনক দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তির লক্ষ্যে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা সেই লক্ষ্য অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘সরকার জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেবে।’
আগস্টের শেষ দিকে দুই দেশের মধ্যে আরেক দফা বাণিজ্য আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
আরও পড়ুনভারতের পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা ট্রাম্পের, রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যের জন্য আলাদা ‘দণ্ড’৩০ জুলাই ২০২৫আরও পড়ুনট্রাম্পের ২৫ শতাংশ শুল্কে ভারতের অর্থনীতি কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, কী বলছেন অর্থনীতিবিদেরা১৪ ঘণ্টা আগে