পরিবারের সঙ্গে ঈদের ছুটি কাটিয়ে ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছেন কর্মজীবী মানুষ। সরকারি অফিসগুলোর সাপ্তাহিক ছুটিও শেষ। অধিকাংশ বেসরকারি অফিসের ছুটি শেষ হয়ে গেছে। তাই জীবন-জীবিকার তাগিদে ব্যস্ত নগরীতে ফিরতে শুরু করেছেন অনেকে। তবে বিগত বছরগুলোর মতো নেই তীব্র ভিড় আর যানবাহনের চাপ।
শনিবার (৫ এপ্রিল) ঢাকার আন্তজেলা বাস টার্মিনালগুলোতে দেখা গেছে, ঢাকায় ফেরা যাত্রীদের ভিড়। তবে কোনো ধরনের ভোগান্তি ছাড়াই ফিরতে পারছেন বলে জানিয়েছেন যাত্রীরা।
প্রায় একই অবস্থা রেলপথেও। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনেও দেখা গেছে, স্বাভাবিক চিত্র। বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় কিছুটা যাত্রীর সংখ্যা বেশি। তবে ঈদ হিসেবে স্বাভাবিক। রেলওয়ে কর্মকর্তারা বলছেন, এবার ঈদের ছুটি দীর্ঘ হওয়ায় মানুষের ফিরে আসার চাপ বোঝা গেছে কম। রেলপথে এবার স্বস্তির ঈদযাত্রা ছিল।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ছুটি বেশি হওয়ায় তুলনামূলকভাবে বেশি মানুষ ঢাকা ছেড়েছেন। এমনকি এবারের ঈদের যাত্রা তুলনামূলক স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ হওয়ায় ভোগান্তি ছাড়াই যাতায়াত করতে পেরেছেন ঘরমুখো মানুষ। তাছাড়া, ঈদের আমেজ এখনো পুরোপুরি না কাটায় ঢাকার বাইরেও ঘুরতে যাচ্ছেন অনেকে। যে কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য ও স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরতে আরো কয়েকদিন সময় লাগতে পারে।
হানিফ পরিবহনের বাসচালক সবুজ বলেন, “বাসে মোটামুটি সব সিটেই যাত্রী ছিল। কিন্তু আগে যেমন যাত্রীর চাপে একাধিক গাড়ি ছেড়ে এসেছে এবার তেমনটা নেই। আবার গাড়িতেও অতিরিক্ত যাত্রী নেই।”
বেসরকারি চাকরিজীবী নুরুল করিম বলেন, “প্রতিবছরই আমি বাড়িতে ঈদ করি। এবার একটু বেশি সময় নিয়ে বাড়িতে থেকেছি। মা-বাবা ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ভালো সময় কাটিয়েছি। কর্মের তাগিদে সবাইকে ছেড়ে ঢাকায় আসায় মন খারাপ লাগছে। আরো কিছুদিন থাকতে পারলে ভালো লাগতো।”
গাবতলী বাস টার্মিনালে যাত্রীর জন্য অপেক্ষারত এক অটোরিকশাচালক বলেন, “যাত্রী নেই। আগে দেখেছি গাবতলীতে একের পর এক গাড়ি ঢুকছে। যাত্রীরা নেমেই সিএনজি খোঁজা শুরু করত। এবার যাত্রীর চাপ কম। দেখেন কয়জন যাত্রী আসছে! তার থেকে বেশি সিএনজি।”
অন্য এক চালক বলেন, “সকাল থেকে গাবতলী থেকে মাত্র এক ট্রিপ পেয়েছি। যাত্রী নিয়ে কাজীপাড়া গিয়েছি। এরপর কাজীপাড়া থেকে ধানমন্ডি। সেই যাত্রী নামিয়ে আবার গাবতলী এসেছি। কিন্তু আসার পর থেকে বসেই আছি। কোনো যাত্রী নেই।”
এদিকে, ছুটি চলাকালীন বিগত দিনগুলোর তুলনায় সড়কে বেড়েছে যান চলাচল। বেড়েছে সাধারণ মানুষের উপস্থিতিও। কিছুক্ষণ পর পর গাবতলী বাস টার্মিনালে আসছে ফিরতি ঈদ যাত্রার দূরপাল্লার পরিবহন। তবে ফিরতি এ যাত্রায় দূরপাল্লার পরিবহনে চোখে পড়ার মতো যাত্রীর চাপ দেখা যায়নি।
পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আজ বিকেলে যাত্রী চাপ বাড়তে পারে।
ঢাকা/হাসান/ইভা
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পর বহন গ বতল
এছাড়াও পড়ুন:
মিরাজে দুর্দান্ত জয় বাংলাদেশের
এমন পারফরম্যান্সই তো চাওয়ার থাকে ভালো দলের কাছে। মেহেদী হাসান মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্য, সাদমান ইসলামের সেঞ্চুরি, তাইজুল ইসলামের ৯ উইকেট শিকারে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ইনিংস ও ১০৬ রানের বিশাল জয় এনে দেয় বাংলাদেশকে। প্রথম টেস্ট হারের পর যে সমালোচনা হয়েছিল, তার জবাবটা বোধ হয় দ্বিতীয় টেস্ট তিন দিনে জিতে দিয়ে দিলেন নাজমুল হোসেন শান্তরা। ‘বাউন্স ব্যাক’ করে সিরিজ ড্র ১-১-এ।
চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে বীরোচিত পারফরম্যান্স ছিল টাইগারদের। এটি সম্ভব হয়েছে পছন্দের উইকেটে খেলা হওয়ায়। স্পিন ভুবনে উইকেট উৎসব করেছেন তাইজুল, মিরাজ গাঁটছড়া বেঁধে। সিরিজ নির্ধারণী টেস্টে দুটি সেঞ্চুরি দারুণ অর্জন অধারাবাহিক ব্যাটিং লাইনআপের। এই টেস্টে ওপেনিং জুটি ভালো করেছে। লম্বা সময় পর টেস্ট খেলার সুযোগ পাওয়া এনামুল হক বিজয় ভালোই সঙ্গ দেন সাদমানকে। লোয়ার মিডলঅর্ডারে মিরাজের লড়াই ছিল দেখার মতো।
টেলএন্ডারদের নিয়ে রীতিমতো বাজিমাত করেছেন তিনি। শেষ ৩ উইকেটে তৃতীয় দিন ১৫৩ রান যোগ করেন। বাংলাদেশকে পৌঁছে দেন ৪৪৪ রানে। ২১৭ রানের লিড থাকায় ইনিংস ব্যবধানে জয়ের স্বপ্ন দেখায়। মিরাজের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে সে স্বপ্ন পূরণ হয়। সাকিব আল হাসান ও সোহাগ গাজীর পর তৃতীয় বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার তাঁর।
গত বছর দেশের মাটিতে টেস্টে ভালো করতে পারেনি বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার পর দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে। ২০২৫ সালের শুরুটাও ভালো ছিল না। সিলেটে জিম্বাবুয়ের কাছে হেরেছে। সিরিজ বাঁচাতে চট্টগ্রামে জিততেই হতো। লক্ষ্যে পৌঁছাতে কন্ডিশনেও পরিবর্তন আনা হয়। চট্টগ্রামের উইকেটে খেলা হয় দ্বিতীয় টেস্ট। যেখানে শাসন ছিল স্পিনারদের। পছন্দের উইকেট পাওয়ায় তিন স্পিনার নিয়ে খেলে বাংলাদেশ। তিনজনই দারুণ বোলিং করেন প্রথম থেকে।
দীর্ঘ বিরতির পর টেস্ট খেলার সুযোগ পাওয়া অফস্পিনার নাঈম হাসান চ্যালেঞ্জ নিয়ে বোলিং করে গেছেন। বেশি উইকেট না পেলেও এক প্রান্তে ব্যাটারদের চাপে ফেলেছেন। যার সুফল তাইজুল ও মিরাজ পেয়েছেন অন্য প্রান্তে। প্রথম দিন শেষ সেশনে ব্রেক থ্রু দেন তিনি। বাঁহাতি স্পিনার পরে পিক করে ৬ উইকেট শিকার করেন। জিম্বাবুয়ে ৯ উইকেটে ২২৭ রানে প্রথম দিন শেষ করে। পরের দিন এক বল খেলে ওই রানেই অলআউট হয়। বাংলাদেশ ব্যাটিং শুরু করে বড় লক্ষ্য নিয়ে। সাদমান ইসলাম ও এনামুল হক বিজয় ১১৮ রানের ওপেনিং জুটি করায় প্রতিপক্ষকে ছাড়িয়ে যাওয়া সহজ হয়। সাদমানের সেঞ্চুরি ও মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম কিছু রান করায় ৭ উইকেটে ২৯১ রানে দ্বিতীয় দিন শেষ করে বাংলাদেশ।
সেদিন সংবাদ সম্মেলনে সাদমান আশা প্রকাশ করেন, মিরাজ ও তাইজুল জুটি করবেন। অষ্টম উইকেটে ৬৪ রানের জুটি দু’জনের। বেশি ভালো করেছেন পেসার তানজিম হাসান সাকিব। মিরাজের সঙ্গে ১৫৬ বলে ৯৬ রানের জুটি। অভিষেক টেস্টে সাকিবের ব্যাটিং দারুণ লেগেছে অধিনায়ক শান্তর কাছে। ৮০ বলে ৪১ রান করেন তিনি। সবচেয়ে বড় কথা, মাথায় বল লাগার পরও বিচলিত হননি তিনি। মিরাজ ছাড়া চট্টগ্রাম টেস্টের প্রাপ্তি হিসেবে ওপেনিং জুটির ভালো খেলা, সাদমানের সেঞ্চুরি, তাইজুলের ৫ উইকেট শিকার ও সাকিবের রান করাকে মনে করেন শান্ত।
শেষের তিন উইকেটে তৃতীয় দিন প্রায় দুই সেশন ব্যাট করে বাংলাদেশ। তাইজুল, সাকিব ও হাসানকে নিয়ে ১৫৩ রান যোগ করে। মিরাজ ১০৪ রান করে ওয়েলিংটন মাসাকাদজাকে উইকেট দেন। নার্ভাস নাইটির ঘরে প্রবেশ করে কিছুটা ঝুঁকির মুখে ছিলেন মিরাজ। ৯৮ রানে পৌঁছানোর পর সেঞ্চুরি ছুঁতে দুই রান নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ফিল্ডারের কাছে বল চলে যাওয়ায় এক রানে থামতে হয়। তখন স্ট্রাইকে হাসান থাকায় দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল সবাই। ড্রেসিংরুমে খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফের সবাই দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন। কখন হাসান আউট হয়ে যায়, সে ভয় কাজ করছিল হয়তো। কিন্তু হাসান ছিলেন দৃঢ়চেতা। মাসাকাদজাকে ডিফেন্স করে স্বস্তি দেন।
মিরাজ স্ট্রাইকে এসে মেদেভেরের প্রথম দুই বলে ঝুঁকি নেননি। তৃতীয় বলে এক রান নিয়ে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরির স্বাদ নেন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ ও দ্বিতীয় টেস্টের সেরা খেলোয়াড় মিরাজ। প্রথম ম্যাচের উভয় ইনিংসে ৫ উইকেট করে ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে অতীতের সব পারফরম্যান্স ছাড়িয়ে গেছেন। সেঞ্চুরির সঙ্গে ৫ উইকেটপ্রাপ্তি, দুই হাজার রানের মাইলফলক পেয়েছেন। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। ২১৭ রানে পিছিয়ে থাকা জিম্বাবুয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে অলআউট হয় ১১১ রানে। ফ্লাডলাইটের আলো জ্বেলে নির্ধারিত সময়ের বেশি খেলান আম্পায়াররা। প্রায় সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খেলা হয়। জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটাররা তাতে আপত্তি করেননি। তাইজুল ৩, নাঈম ১ ও মিরাজ ৫ উইকেট নিলে ম্যাচ শেষ হয়।
সিলেটে প্রথম টেস্ট হারের পর চট্টগ্রামে প্রভাব বিস্তার করে খেলে ম্যাচ জেতার পরও খুশি নন অধিনায়ক শান্ত, ‘আমি টেস্ট সিরিজ ড্র করে খুশি না। কারণ, প্রথম টেস্টে আমরা একেবারেই ভালো খেলিনি। এই টেস্টে একপেশে খেলে জিতলেও সিরিজে আরও ভালো খেলা উচিত ছিল। সিরিজটি জিততে হতো।’ টাইগার দলপতি জানান, এই পারফরম্যান্স শ্রীলঙ্কা সফরে কাজে দেবে। দেশের মাটিতে স্পোর্টিং উইকেট বানিয়ে বিদেশে খেলার পরিবেশ তৈরি করছিল বিসিবি। ২০২৩ সালে নিউজিল্যান্ড সিরিজ থেকে স্পোর্টিং উইকেটে খেলা হচ্ছে। কিউইদের বিপক্ষে সিলেটে ঐতিহাসিক জয় পেলেও মিরপুর থেকে হারতে শুরু করে। দেশের মাটিতে টানা ছয় হারের পর জয়ের দেখা পেল বাংলাদেশ।