চলমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং ৪৭০ কোটি ডলার চলমান ঋণের শর্ত পর্যালোচনায় আইএমএফ প্রতিনিধি দলটি গতকাল শনিবার ঢাকায় পৌঁছে। আজ রোববার থেকে টানা দুই সপ্তাহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে আলোচনা করবে তারা।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বিদ্যুৎ বিভাগ, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি), জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সঙ্গে তাদের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। অর্থ উপদেষ্টা ড.
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের চতুর্থ কিস্তি পাওয়ার কথা ছিল গত ডিসেম্বরে। তবে এখনও তা পায়নি বাংলাদেশ। সংস্থাটির একটি প্রতিনিধি দল গত ডিসেম্বরে ঢাকায় আসে। এর পর ঋণের এ কিস্তি অনুমোদনের জন্য আইএমএফের নির্বাহী পর্ষদের সভায় ওঠার কথা থাকলেও দু’দফায় তা পিছিয়ে যায়।
এদিকে ঋণের অন্যতম শর্ত কর আহরণের লক্ষ্যমাত্রা থেকে সরকার অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। অন্যদিকে মুদ্রার বিনিময় হার পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার বিষয়েও সংস্থাটির প্রত্যাশা অনুসারে অগ্রগতি হয়নি। তবে অন্যান্য শর্ত পূরণ হওয়ায় আগামী জুনেই ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি একসঙ্গে ছাড়ের আশা করছে সরকার। এ অবস্থায় ঋণের শর্ত বাস্তবায়ন পরিস্থিতি পর্যালোচনায় ফের ঢাকায় আসছে আইএমএফ মিশন।
আইএমএফের সঙ্গে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচি শুরু হয় ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি। ২০২৬ সাল নাগাদ পুরো অর্থ পাওয়ার কথা। ইতোমধ্যে তিন কিস্তি বাবদ ২৩০ কোটি ডলার ছাড় হয়েছে। এ ঋণ কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশকে প্রতিটি কিস্তি পেতে কিছু শর্ত পরিপালন করতে হচ্ছে। চতুর্থ কিস্তির সাড়ে ৬৪ কোটি ডলারের জন্য গত বছরের জুনভিত্তিক বিভিন্ন শর্ত বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছিল।
চতুর্থ কিস্তির জন্য দেওয়া শর্তের বাস্তবায়ন অগ্রগতি দেখতে গত বছরের ৩ ডিসেম্বর ঢাকা সফরে আসে আইএমএফের ১৩ সদস্যের প্রতিনিধি দল। গত ৫ ফেব্রুয়ারি আইএমএফের নির্বাহী পর্ষদের বৈঠকে এ প্রস্তাব ওঠার কথা ছিল। পরে তারিখটি পিছিয়ে করা হয় ১২ মার্চ। ওই তারিখেও প্রস্তাব ওঠেনি। আবার তা পিছিয়ে গেছে আগামী জুনে।
এদিকে গত ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়, সরকার ও আইএমএফের যৌথ সম্মতিতে চতুর্থ ও পঞ্চম দুই কিস্তি একসঙ্গে ছাড়ের সিদ্ধান্ত হয়েছে। বাজেট সাপোর্ট প্রোগ্রামের আওতায় যে সব সংস্কার কার্যক্রম নেওয়া হয় তার মধ্যে কিছু কার্যক্রম বাস্তবায়নে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বেশি সময় প্রয়োজন হতে পারে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, কিছু শর্ত পূরণ না হলেও আগের কয়েকটি কিস্তি তারা বাংলাদেশের অনুরোধে দিয়েছে। তবে সর্বশেষ ঢাকা সফর করে যাওয়া আইএমএফ প্রতিনিধি দল কর অব্যাহতি সুবিধা কমিয়ে রাজস্ব বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছে। শর্ত অনুসারে, চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা ১২ হাজার কোটি টাকা বেড়ে হয়েছে ৪ লাখ ৯২ হাজার কোটি টাকা। বাড়তি রাজস্ব আহরণের কৌশল হিসেবে উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যেই গত জানুয়ারিতে শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ায় সরকার। অবশ্য পরে কিছু পণ্য ও সেবায় শুল্ক-কর কমানো হয়।
জানা গেছে, আইএমএফ ঋণের শর্ত হিসেবে গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত কর আহরণের যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল তা থেকে ৫২ হাজার কোটি টাকার বেশি পিছিয়ে ছিল সরকার। এর আগে গত বছরের জুন পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রাও অর্জন হয়নি। মূলত কর সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়া এবং মুদ্রার বিনিময় হার আপাতত পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করতে রাজি না হওয়ায় ঋণের চতুর্থ কিস্তি পিছিয়ে যায়। তবে দুই কিস্তি একসঙ্গে ছাড়ের বিষয়ে সরকার ইতোমধ্যে আইএমএফের সঙ্গে আলোচনা করেছে। রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে আগের মতো কিছুটা ছাড় দিলে এবং নতুন করে কোনো শর্ত না এলে আগামী জুনে অর্থ ছাড়ের আশা করছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
এ পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন শর্তের বাস্তবায়ন পর্যালোচনায় ঢাকায় আসছে আইএমএফ প্রতিনিধি দল। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে বৈঠক শেষে আগামী ১৭ এপ্রিল সংবাদ সম্মেলন করবে আইএমএফ মিশন। এর আগে অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে তারা আরও একটি বৈঠক করবে বলে জানা গেছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আইএমএফ আইএমএফ ঋণ আইএমএফ র গত বছর র ড স ম বর সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
৭ উপাচার্যের অংশগ্রহণে গোবিপ্রবিতে শিক্ষা সমাপনী
গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (গোবিপ্রবি) নবম ব্যাচের (নবনীতক ৯) শিক্ষার্থীদের নিয়ে শিক্ষা সমাপনী-২০২৪ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থীদের বিদায় বেলায় এক মঞ্চে আসীন হন দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতিমান সাত উপাচার্য।
বুধবার (৩০ জুলাই) দুপুর ১২টায় একাডেমিক ভবন প্রাঙ্গণে আনন্দঘন পরিবেশে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর ছাড়াও অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী, খুলনা কৃষি বিশ্বিবদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নাজমুল আহসান, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এম সরওয়ারউদ্দিন চৌধুরী, পিরোজপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল ইসলাম, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এসএম আব্দুল আওয়াল, রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আতিয়ার রহমান ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুসলেহ উদ্দিন তারেক।
আরো পড়ুন:
নতুনবাজারের সেই রনির বুলেটের যন্ত্রণা আজো থামেনি
শিশু ছাত্রীকে যৌন নির্যাতন, মাদ্রাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা
এক মঞ্চে একইসঙ্গে এতজন উপাচার্যকে পেয়ে সমাপনী ব্যাচসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, “এভাবে একসঙ্গে পুরো সেশনের শিক্ষা সমাপনী আয়োজনের আইডিয়াটি অত্যন্ত চমৎকার। এতে করে একটি ব্যাচের একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রবেশ ঘটে। যেখানে সবার একসঙ্গে পরীক্ষা হয়, রেজাল্ট প্রকাশ হয় এবং কোনো সেশন জট থাকে না। আমি এই আইডিয়াটি আমার নিজ বিশ্ববিদ্যালয়েও বাস্তবায়নের চেষ্টা করব।”
খুলনা কৃষি বিশ্বিবদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নাজমুল আহসান বলেন, “আমরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যগণ এখানে এসেছি সংহতি জানানোর জন্য। আমি নবম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের জীবনে সফলতা কামনা করছি।”
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এম সরওয়ারউদ্দিন চৌধুরী বলেন, “শিক্ষার্থীদের বিসিএস দেওয়া, বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করা বা ব্যবসা করার লক্ষ্য থাকে। তবে জীবনে কোনো না কোনো কিছু করতেই হবে। এক্ষেত্রে অবসর বলে কোনো শব্দ থাকা উচিত নয়।”
পিরোজপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, “আমি যখন দেশের বাইরে পড়াশোনা করতাম, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে আমি কখনোই দেখিনি। আর বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্চে কখনো একসঙ্গে সাতজন উপাচার্যকেও বসতে দেখিনি, এটা অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর করে দেখিয়েছেন।”
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এম আব্দুল আওয়াল বলেন, “আমরা যদি আন্তর্জাতিক পরিপ্রেক্ষিতে চিন্তা করি, আমাদের চাকরি খোঁজার পাশাপাশি এমন কিছু করার মানসিকতা রাখতে হবে, যা দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে।”
রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আতিয়ার রহমান বলেন, “শিক্ষা সমাপনী মানেই সব সম্পর্ক ছিন্ন করা নয়। বিশ্বে এমন অনেক নজির আছে, যেখানে অ্যালামনাই থেকে উপাচার্য নিয়োগ হয়েছে। তাই নিজেকে বিস্তৃত পরিসরে মেলে ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখ উজ্জ্বল করার দায়িত্ব নিতে হবে।”
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুসলেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “নিজেকে চেনাই সবচেয়ে বড় শিক্ষা। আর শিক্ষার্থীদের কর্মজীবনই বলে দেবে, তারা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে কতটা জ্ঞান অর্জন করেছে।”
প্রধান অতিথিরি বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর আগত উপাচার্যদের কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, “শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা দেওয়ার জন্যই আমাদের এই প্রয়াস। একইসঙ্গে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি তুলে ধরাও আমাদের লক্ষ্য। আমরা জানিয়ে দিতে চাই, গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চায় এবং অচিরে দাঁড়াবেই।”
তিনি বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে ইউজিসির দুইটি হিট প্রকল্প পেয়েছি এবং ভবিষ্যতে আরো পাব। আমরা আশা করছি, বি ক্যাটাগরি থেকে আগামী অর্থবছরের আগেই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়টি এ ক্যাটাগরিতে উন্নীত হবে।”
গোবিপ্রবির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সোহেল হাসানের সভাপতিত্বে এতে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নাজমুল আহসানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার, প্রক্টর, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক, সব অনুষদের ডিন, বিভাগীয় সভাপতি ও প্রাধ্যক্ষগণ, দপ্তর প্রধানগণ, বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে, জুলাই শহিদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করা হয়।
শিক্ষা সমাপনী উপলক্ষে বুধবার ছাত্রদের কালার ফেস্ট ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা এবং আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) সন্ধ্যায় একটি কনসার্টের আয়োজন করা হয়েছে।
ঢাকা/রিশাদ/মেহেদী