রক্তের সম্পর্ক অস্বীকার করে দূরে থাকা যায় না...
Published: 6th, April 2025 GMT
টেলিভিশনের হিসাবে আজ ঈদের সপ্তম দিন। এবারের ঈদে বড় পর্দা বা সিনেমা নিয়ে যতটা আলোচনা হচ্ছে, সে তুলনায় ছোট পর্দার কনটেন্ট নিয়ে চর্চা কম হচ্ছে। অন্য সময়ের তুলনায় এবার টেলিভিশন ও ইউটিউবে নাটকের সংখ্যাও অনেক কম। তবে একদমই যে দেখছে না বা সাড়া পড়েনি, তা নয়। বরং ইউটিউবের কয়েকটি কনটেন্ট নিয়ে আলোচনা হচ্ছে দর্শকের মধ্যে। যেমন কয়দিন ধরেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা হচ্ছে ‘তোমাদের গল্প’ ইউটিউব ফিল্ম নিয়ে। ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে তৃতীয় অবস্থানে আছে মোস্তফা কামাল রাজের ‘তোমাদের গল্প’।
মুক্তি পেয়েছে সিনেমাওয়ালার ইউটিউব চ্যানেলে। আজ রোববার বেলা ১১টা পর্যন্ত এর ইউটিউব ভিউ ৭০ লাখ ৩৫ হাজার ছাড়িয়েছে। এতে মন্তব্য পড়েছে ২৬ হাজারের বেশি। এতে পাঁচ প্রজন্মের পাঁচ অভিনেত্রী তানজিম সাইয়ারা তটিনী, দিলারা জামান, সাবেরি আলম, মনিরা আক্তার মিঠু ও শিল্পী সরকার অপুকে দেখা গেছে। আরও অভিনয় করেছেন ফারহান আহমেদ জোভান, নাদের চৌধুরী, বড়দা মিঠু, এম এন ইউ রাজু, সমু চৌধুরী ও শিশুশিল্পী আয়াত। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নাটকের ছোট ছোট ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকে শেয়ার করছেন নাটকের দৃশ্য। কী আছে এ নাটকে? কী বলছে দর্শক?
যৌথ পরিবারের মধ্যে বন্ধন অটুট থাকার গল্প বলা হয়েছে। দেড় ঘণ্টা দৈর্ঘ্যের এই নাটকের কিছু দৃশ্য দর্শকদের আবেগাপ্লুত করেছে। নাটকের চিত্রনাট্য লিখেছেন সিদ্দিক আহমেদ। শহুরে এক তরুণের গ্রামে পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদ্যাপন করতে যাওয়ার ঘটনা নিয়েই এর গল্প। ছেলেটির নাম রাতুল। তার চরিত্রে ফারহান আহমেদ জোভানের অভিনয়ে মুগ্ধ দর্শকেরা। রাতুলের চাচাতো বোন তুলির সঙ্গে তার দুষ্টু-মিষ্টি রসায়ন গড়ে ওঠে। তুলি চরিত্রে তানজিম সাইয়ারা তটিনীর প্রতি ভালো লাগার কথা জানিয়েছেন ভক্তরা।
দেশ-বিদেশের অসংখ্য দর্শক ও প্রবাসীরা ইউটিউবে মন্তব্যের ঘরে নাটকটি নিয়ে নিজেদের ভালো লাগার অনুভূতি জানিয়েছেন। কলকাতার মালদা জেলা থেকে মাসুদ আলম নামের একজন নাটকটি দেখে লিখেছেন, ‘এ রকম পারিবারিক ঈদ নাটক একটাও দেখিনি। অসম্ভব সুন্দর হয়েছে। শেষ দৃশ্যে চোখে জল চলে এসেছে।’ নাটকে রক্তের সম্পর্কের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। এ নিয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন অনেকে। মো.
মো. সুমন খান নামের একজন লিখেছেন, ‘পরিস্থিতির কারণে দূরে থাকলেও রক্তের সম্পর্কের বন্ধন কখনো ছিন্ন হয় না। স্বার্থের জন্য ভুলে থাকলেও সময়ের ব্যবধানে আবার সবাই এক হয়ে যায়। রক্তের সম্পর্ক ছিন্ন করে থাকা আসলেই খুবই কষ্টের ব্যাপার। নাটকটিতে রক্তের সম্পর্কের মূল্যবোধ বোঝানো হয়েছে।’ এক দর্শক লিখেছেন, ‘নাটকটি দেখার পর একটা কথাই মনে পড়ল, জীবনে খুব করে চাইতাম যৌথ পরিবারে সবাই একসঙ্গে থাকব। সে রকমই ছিল আমার পরিবারও। কিন্তু সম্পত্তির লড়াইয়ে সম্পর্ক যেন মূল্যহীন হয়ে গেল। এক নিমেষে সবাই আলাদা হয়ে কেউ কারও মুখও দেখে না, কেউ কারও সঙ্গে ঠিকভাবে কথাও বলে না। সম্পত্তির লোভ রক্তের সম্পর্কগুলোকে আলাদা করে দিল। নাটকটা দেখে শুধু এটাই মনে হলো, যদি সবাই এমন করে ভাবত, তাহলে আমার পরিবারের সবাই একসঙ্গে থাকতাম।’
মাহালি সজল নামের একজন লিখেছেন, ‘আশি ও নব্বই দশকের পর অন্যতম একটি পারিবারিক নাটক উপহার দিলেন মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ। যেখানে ভালোবাসা, অভিমান ও আবেগ মিশে একাকার। একান্নবর্তী পরিবারের ভালোবাসার একটি অনন্য উদাহরণ এই নাটক। পারিবারিক ও রক্তের সম্পর্কের সঙ্গে অন্য কোনো সম্পর্কের কোনো তুলনা হয় না।’ রাশিয়ার মস্কো থেকে ‘তোমাদের গল্প’ দেখে নাজমুল শুভ লিখেছেন, ‘পরিবার-আত্মীয় সবাইকে ছেড়ে একাকী এবারের ঈদ কেটেছে। ঈদের দিন নিজেকে খুব একা লেগেছে। চাইলেও সবাইকে নিয়ে ঈদ উদ্যাপন করতে না পারার যে কষ্ট, সেটা বলে বোঝানো যাবে না। অসাধারণ ছিল নাটকটি। আসলেই রক্তের সম্পর্ককে কখনোই অস্বীকার করে দূরে থাকা যায় না। সবার পারিবারিক বন্ধন এভাবে অটুট থাকুক আমৃত্যু।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন ম র একজন পর ব র র সব ই এক একসঙ গ ন টক র ন টকট আহম দ
এছাড়াও পড়ুন:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে ২০ মামলার আসামি নিহত, গুলিবিদ্ধ ৩
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে একজন নিহত হয়েছেন। এতে একজন শিক্ষকসহ হোটেলের দুই কর্মচারী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আহত তিনজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
গতকাল শনিবার রাতে উপজেলার বড়িকান্দি ইউনিয়নের বড়িকান্দি গণি শাহ মাজার বাজারের একটি হোটেলে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর থেকে উভয় পক্ষের লোকজন এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন।
নিহত ব্যক্তির নাম শিপন মিয়া (৩০)। তিনি বড়িকান্দি ইউনিয়নের নুরজাহানপুর গ্রামের মোন্নাফ মিয়া ওরফে মনেক মিয়ার ছেলে। নবীনগর থানা সূত্রে জানা গেছে, ওই দুজনের বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে অন্তত ২০টি মামলা আছে।
গুলিবিদ্ধ আহত ব্যক্তিরা হলেন বড়িকান্দি ইউনিয়নের থোল্লাকান্দি গ্রামের বাসিন্দা এমরান হোসেন (৩৮) এবং হোটেলের দুই কর্মচারী—উপজেলার আলমনগর গ্রামের শফিকুল ইসলামের ছেলে ইয়াসিন মিয়া (২০) ও চরলাপাং গ্রামের রশিদ মিয়ার ছেলে নুর আলম (১৮)। এমরান উপজেলার শ্যামগ্রামের মোহিনী কিশোর স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক। তাঁর ভাই ঢাকায় কর্মরত পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) বিল্লাল হোসেন।
বড়িকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লুৎফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, মনেক ডাকাত এলাকাটা শেষ করে ফেলেছেন। তাঁর কারণেই এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বেড়েছে। মনেক ডাকাতদের কারণেই এ ঘটনা ঘটেছে। গুলিতে মনেক ডাকাতের ছেলে নিহত হয়েছেন।
স্থানীয় লোকজন, প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এলাকায় মোন্নাফ মিয়া ও তাঁর ছেলে শিপনের দীর্ঘদিন ধরে একক প্রভাব ছিল। তাঁদের সঙ্গে একই এলাকার থোল্লাকান্দি গ্রামের মিস্টার মিয়ার ছেলে আরাফাত মিয়ার বিরোধ চলছিল। শনিবার রাত আনুমানিক নয়টার দিকে বড়িকান্দি গণি শাহ মাজার বাজারের একটি হোটেলে শিপন মিয়া আড্ডা দিচ্ছিলেন। এ সময় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধের জেরে আরাফাতের নেতৃত্বে সশস্ত্র একটি দল হোটেলে ঢুকে গুলি চালায়। এতে শিপনসহ হোটেলের দুই কর্মচারী ইয়াসিন ও নুর আলম গুলিবিদ্ধ হন। গুলির শব্দে বাজারজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। হামলার পর আরাফাত ও তাঁর সহযোগীরা দ্রুত পালিয়ে যান।
শিপনের গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর নুরজাহানপুরে পৌঁছালে মোন্নাফ মিয়ার নেতৃত্বে একদল লোক গণি শাহ মাজারের অদূরে তালতলায় এমরান হোসেনের কার্যালয়ে হামলা চালান। সেখানে এমরান গুলিবিদ্ধ হন। এরপর তাঁরা থোল্লাকান্দি গ্রামে হামলা চালিয়ে একাধিক বাড়িঘর ভাঙচুর করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। রাতে ঘটনাস্থলে অভিযান চালালেও কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। কারণ, উভয় পক্ষের লোকজন বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। সংঘর্ষ এড়াতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
নবীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, গুলিবিদ্ধ কাউকেই শনিবার রাতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয়নি। তাঁদের হয়তো অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, শিপনের ওপর হামলাকারী আরাফাত থোল্লাকান্দি গ্রামের এমরান হোসেনের আত্মীয়। এ কারণেই এমরানের কার্যালয়ে গিয়ে হামলা এবং তাঁকে গুলি করা হয়েছে।
নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহিনুর ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, নিহত শিপন ডাকাত দলের সদস্য ছিলেন। শিপন ও তাঁর বাবার বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে অন্তত ২০টি মামলা আছে। ওই ঘটনায় একজন শিক্ষকসহ তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। ঘটনার পর থেকে সবাই পলাতক। তাই কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।