ভারতে বাংলাদেশি পর্যটকবাহী বাস দুর্ঘটনায় নিহত ১, আহত ১৬
Published: 6th, April 2025 GMT
ভারতের ওড়িশা রাজ্যের ভুবনেশ্বর-পুরি জাতীয় মহাসড়কের সিআইএফএ-এর কাছে বাংলাদেশি তীর্থযাত্রীদের বহনকারী একটি পর্যটন বাস ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে। এতে বাংলাদেশি একজন তীর্থযাত্রী নিহত এবং ১৬ জন আহত হয়েছেন।
রবিবার (৬ এপ্রিল) ভোররাত ৩টার দিকে এই দুর্ঘটনা ঘটে। বাংলাদেশি তীর্থযাত্রীদের বহনকারী বাসটি ৬৫ জনেরও বেশি যাত্রী নিয়ে পুরী যাচ্ছিল।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ওমকম নিউজ জানিয়েছে, বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার বাসিন্দা তীর্থযাত্রীরা পুরীতে ভগবান জগন্নাথের দর্শন এবং পরে বিশ্বনাথ মন্দিরে যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে একটি ধর্মীয় ভ্রমণে ছিলেন।
ওড়িশায় পৌঁছানোর আগে তারা ইতিমধ্যেই অযোধ্যা এবং দ্বারকা পরিদর্শন করেছিলেন।
দলটি দুটি বাসে ভ্রমণ করছিল, মোট ১৪০ জন তীর্থযাত্রী নিয়ে। দ্বিতীয় বাসের চালক গাড়ি চালানোর সময় ঘুমিয়ে পড়েছিলেন প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। বাসটি সড়ক থেকে ছিটকে খাদে পড়ে যায়। যাত্রীরা ভেতরে আটকা পড়ে সাহায্যের জন্য চিৎকার করতে থাকে। প্রথম বাস, স্থানীয় বাসিন্দা এবং পুলিশ সদস্যরা তাৎক্ষণিকভাবে উদ্ধার অভিযান শুরু করে।
পরবর্তীতে জরুরি পরিষেবা, অ্যাম্বুলেন্স এবং ফায়ার ব্রিগেড ইউনিটসহ ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার অভিযান চালিয়ে যায়।
পিপিলি থানার ইনচার্জ সৌয়মেন্দু শেখর ত্রিপাঠি বলেন, রবিবার ভোরে পিপিলি থানা এলাকায় ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনায় বাংলাদেশ থেকে আসা ১৬ জন তীর্থযাত্রী আহত হয়েছেন। ভুবনেশ্বরের রাজধানী হাসপাতালে নেওয়ার পথে একজন মহিলা যাত্রী, বাংলাদেশের ননিবালা নাথ, আহত অবস্থায় মারা যান।
ত্রিপাঠি আরো জানান, গুরুতর আহত তিনজন রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভুবনেশ্বরের এইমস-এ রেফার করা হয়েছে। অন্যান্য তীর্থযাত্রীদের প্রাথমিক চিকিৎসার পর হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
ত্রিপাঠি বলেন, দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ এখনও নিশ্চিত না হলেও, ধারণা করা হচ্ছে যে চালক ক্লান্তির কারণে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
নামতে গেলেই চালক বাস টান দিচ্ছিলেন, পরে লাফিয়ে নামেন
‘“এ সকল নষ্ট মাইয়াদের জন্য বাসের পরিবেশ নষ্ট হয়ে যায়। যা যা বাস থেকে নেমে যা নষ্ট মাইয়াছেলে”—বাস কন্ডাক্টরের এই মন্তব্য শোনার পর নিজের ওপর আর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারিনি।’ কথাগুলো বলছিলেন বাসে হেনস্তার শিকার ওই তরুণী। আজ প্রথম আলোর সঙ্গে মুঠোফোনে দীর্ঘ আলাপে তিনি সেদিনের ঘটনার আদ্যোপান্ত জানান। বললেন, ঘটনার সময় বাসে একজন মানুষও প্রতিবাদ না করায় কষ্ট পেয়েছেন। যিনি এ ঘটনার ভিডিও করেছিলেন, তাঁর কাছ থেকেও কটু কথা শুনতে হয়েছিল। এমনকি তিনি বাস থেকে নামতে গিয়েও পারছিলেন না। যতবার নামার চেষ্টা করেন, চালক বাস টান দিচ্ছিলেন।
তবে দৃঢ়তার সঙ্গে এই তরুণী জানিয়েছেন, এই হেনস্তার ঘটনা তাঁকে দমিয়ে রাখতে পারবে না। তিনি প্রতিবাদ করে যাবেন।
জুতা হাতে বাস কন্ডাক্টরের আচরণের প্রতিবাদ জানানোর ওই ঘটনা ঘটে গত ২৭ অক্টোবর। বাসের এক ব্যক্তি ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করলে তা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। গত বৃহস্পতিবার রমজান পরিবহন নামের বাসের হেনস্তাকারী কন্ডাক্টর নিজাম উদ্দিনকে (৪৫) গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় তরুণীর এজাহারের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্র বাদী হয়ে গতকাল শুক্রবার মামলা করে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০ ধারায় (যৌন নিপীড়নের অভিযোগ) মামলাটি করা হয়েছে।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছিল, বাসের সামনের আসনে বসা এক ব্যক্তির কোনো একটি মন্তব্য নিয়ে এক তরুণী তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়লেন। তিনি তেড়ে যান লোকটির দিকে। ওই সময় লোকটি আসন ছেড়ে উঠে তরুণীকে চড় মারেন। একপর্যায়ে দুজন জুতা খুলে দুজনের দিকে তুলে ধরেন। সে সময় ওই ব্যক্তি তরুণীকে আঘাত করেন এবং ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। ওই ব্যক্তি এরপর বারবার তরুণীর গায়ে ধাক্কা মারেন ও আঘাত করার চেষ্টা করেন। তরুণী চিৎকার করে বলছিলেন, ‘তুই আমার পোশাক তুলে কেন কথা বলবি?’ এ সময় সামনের দিকে থাকা দুই নারী ও একজন পুরুষ যাত্রী ছাড়া আর কেউ আঘাত করা ব্যক্তিটিকে থামানোর চেষ্টা করেননি, প্রতিবাদ করেননি।
ওই তরুণী প্রথম আলোকে জানান, তাঁর মা–বাবা ও ভাই–বোনরা চাঁদপুরে থাকেন। বাবার দোকান রয়েছে। ভাই–বোনদের মধ্যে তিনি সবার বড়। চাঁদপুর থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পর এখন ঢাকায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে পড়ছেন। পড়াশোনার খরচ চালানোর পাশাপাশি বাবাকে সহায়তা করতে নিজেও টুকটাক কাজ করেন। হাতের কাজ, ছবি আঁকার কাজ করেন, টেলিভিশন চ্যানেলে মাঝেমধ্যে কিছু অনুষ্ঠান উপস্থাপনাও করেন। রাজধানীর বছিলা এলাকায় কয়েকজন মিলে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকেন।
‘শুরুতে আমি উত্তেজিত হইনি’
সেদিনের ঘটনা বলতে গিয়ে তরুণী বলেন, তিনি মুঠোফোন ঠিক করতে হাতিরপুলে মোতালিব প্লাজায় গিয়েছিলেন। বাসায় ফেরার জন্য সেখান থেকে ধানমন্ডি–১৫ নম্বর বাসস্ট্যান্ডে আসেন এবং রমজান পরিবহনের ওই বাসটিতে ওঠেন। তখন বেলা দুইটা কি আড়াইটা। তিনি বাসে উঠে মাঝামাঝি জায়গায় একটি আসনে বসেন। বাস কন্ডাক্টর তাঁর কাছে এসে ভাড়া চাইলে ‘স্টুডেন্ট’ (শিক্ষার্থী) জানিয়ে তিনি অর্ধেক ভাড়া দেন। তরুণী দাবি করেন, বাস কন্ডাক্টর তখন বলে ওঠেন, ‘চেহারা আর পোশাক দেখলে তো মনে হয় না স্টুডেন্ট!’ তখন তিনি রাগ হলেও কন্ডাক্টরকে ‘আপনি’ বলে সম্বোধন করে বলেন, ‘স্টুডেন্টের সঙ্গে পোশাকের কী সম্পর্ক? আপনি এসব কী ধরনের কথা বলছেন? ওই সময় কিছুটা কথা-কাটাকাটি হয়। শুরুতে আমি উত্তেজিত হইনি।’
রাজধানীর বছিলায় বাসের মধ্যে পোশাক নিয়ে কটূক্তির সাহসী প্রতিবাদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণীর প্রশংসা করে এমন চিত্র ফেসবুকে পোস্ট করা হয়েছে