উড়িষ্যায় বাংলাদেশি পর্যটকবাহী বাস উল্টে নিহত ১, আহত ১৫
Published: 7th, April 2025 GMT
ভারতের উড়িষ্যায় বাংলাদেশি পর্যটকবাহী বাস খালে পড়ে ননীবালা নাথ (৬০) নামে একজন নিহত ও ১৫ জন আহত হয়েছেন। গত শনিবার রাত আড়াইটার দিকে রাজ্যের উপকূলীয় শহর পুরী যাওয়ার পথে উত্তরাচকে ৬৫ জন বাংলাদেশি পর্যটক নিয়ে বাসটি দুর্ঘটনার শিকার হয়। স্থানটি পুরী-ভুবনেশ্বর সীমান্তের কাছে এবং পুরী জেলার পিপিলি পুলিশের এখতিয়ারে পড়ে।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়, অপ্রশিক্ষিত সহকারীকে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ দিয়ে বাসচালক ঘুমাচ্ছিলেন। পরে বাসটি সড়ক বিভাজকে ধাক্কা খেয়ে উল্টে রাস্তার পাশে খালে পড়ে যায়। আহতদের ক্যাপিটাল হাসপাতালে নেওয়া হয় এবং সকাল ১১টার দিকে ১১ জন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল ছাড়েন। এতে চার নারী গুরুতর আহত হয়েছেন। তাদের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল।
পুলিশ জানিয়েছে, চালক ও সহকারী উভয়ই ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। আহত পর্যটক বরদা বৈদ্য বলেন, ‘আমরা পুরী যাচ্ছিলাম। চালক ক্লান্ত ছিলেন বলে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এ সময় তিনি তাঁর সহকারীকে বাস চালাতে দেন। সহকারী বাসটি চালানোর সময় সড়ক বিভাজকে ধাক্কা দেন। এতে বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে খালে পাড়ে যায়। সৌভাগ্যবশত খালে খুব বেশি পানি ছিল না। দুর্ঘটনার সময় বেশির ভাগ যাত্রী ঘুমাচ্ছিলেন।’
পিপিলি থানার ইনচার্জ সৌম্যেন্দু ত্রিপাঠী বলেন, পালিয়ে যাওয়া বাসচালক ও সহকারী শনাক্ত হয়েছে। তাদের শিগগির গ্রেপ্তার করা হবে। আমাদের তাৎক্ষণিক অগ্রাধিকার ছিল পর্যটকদের উদ্ধার করে হাসপাতালে স্থানান্তর। উল্টে যাওয়া বাস থেকে যাত্রীদের উদ্ধারে স্থানীয়রা আমাদের সাহায্য করেছে। ননীবালার মৃত্যু হয় ক্যাপিটাল হাসপাতালে।
বাসটিতে ৬০ থেকে ৭০ বছর বয়সী পর্যটক বেশি ছিলেন। তবে কয়েকজন তরুণ সদস্যও ছিলেন। পুরী ভ্রমণের জন্য তারা কলকাতার একটি ট্রাভেল এজেন্সি থেকে দুটি বাসের ব্যবস্থা করেছিলেন। পর্যটকরা বাংলাদেশের বান্দরবান, ফরিদপুর, গাজীপুর, মাদারীপুর, রাঙামাটি, সাতক্ষীরা ও নোয়াখালী অঞ্চল থেকে এসেছিলেন।
পরিবহনমন্ত্রী বিভূতি ভূষণ জেনা দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে পুরীর আঞ্চলিক পরিবহন অফিসকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। সরকার আহত যাত্রীদের সময়মতো চিকিৎসা নিশ্চিত করেছে। বাংলাদেশি পর্যটকদের পুরীতে পরিবহনের জন্য বিকল্প বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা প্রতিবছর পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে পূজা-অর্চনা করতে যান। মন্দিরটি বেলেপাথরের তৈরি। ১১৬১ খ্রিষ্টাব্দে পুরীর জগন্নাথ মন্দির প্রতিষ্ঠা করা হয়। মন্দিরের চারটি দ্বার রয়েছে। উত্তর দ্বার, দক্ষিণ দ্বার, পূর্ব দ্বার ও পশ্চিম দ্বার। উত্তর দিকে হস্তীদ্বার, দক্ষিণে অশ্বদ্বার, পূর্বদিকে সিংহদ্বার ও পশ্চিমে ব্যাঘ্র দ্বার।
মন্দিরের গোপন কক্ষে সাতটি ঘর আছে। সেই ঘরগুলোই হলো রত্নভান্ডার।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
কক্সবাজারে পর্যটকের ঢল, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ
রাজধানী ঢাকা থেকে ছুটিতে পরিবার নিয়ে কক্সবাজারে বেড়াতে এসেছেন হাবিবুল আউয়াল। ভালো হোটেলে রুম না পাওয়ায় শহরের কলাতলী এলাকায় মধ্যমমানের একটি আবাসিক হোটেলে উঠেছেন। তাঁর কাছে এক রাতের জন্য হোটেলটির দুটি রুমের ভাড়া নেওয়া হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। যদিও অন্য সময়ে ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকায় এই মানের হোটেলে রুম ভাড়া পাওয়া যায়। ঈদ মৌসুমে চাহিদা বাড়ায় অন্য সময়ের তুলনায় ১২ গুণের বেশি ভাড়া নেওয়া হয়েছে তাঁর কাছ থেকে।
কোরবানির ঈদ ও পরবর্তী ছুটির সময়ে অতিরিক্ত পর্যটক আসায় কক্সবাজার শহর ও এর আশপাশের পাঁচ শতাধিক আবাসিক হোটেল, মোটেল, গেস্টহাউস ও রিসোর্টের প্রায় প্রতিটিতেই অন্য সময়ের চেয়ে ১০ থেকে ১৫ গুণ বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। শুধু আবাসিক হোটেল নয়, রেস্টুরেন্ট থেকে শুরু করে পর্যটনসংশ্লিষ্ট সব সেবা খাতেই অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট অনেকের মতে, প্রতিটি ছুটির মৌসুমে কক্সবাজারে পর্যটকদের সংখ্যা একটু বাড়লেই তাদের কাছ থেকে ‘গলাকাটা’ টাকা নেওয়া হয়।
ঈদুল আজহার লম্বা ছুটি শেষ হচ্ছে আজ। গতকাল শুক্রবার কক্সবাজার সৈকতে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। লাবণী পয়েন্ট থেকে কলাতলী পয়েন্ট পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকায় ছিল পর্যটকের ভিড়। সাগরতীর পরিণত হয়েছিল উৎসবের বেলাভূমিতে। শুক্রবার সকাল থেকে তীব্র গরম থাকলেও পর্যটকে পূর্ণ ছিল কক্সবাজার সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্ট, লাবণী, কলাতলী, হিমছড়ি, ইনানী, পাতুয়ারটেক থেকে মেরিন ড্রাইভ পর্যন্ত পুরো এলাকা।
রাজধানীর মতিঝিল থেকে ঘুরতে আসা হুমায়ুন কবির বলেন, ‘এখন সমুদ্রে গোসল করছি। বিকেলে মেরিন ড্রাইভে ঘুরব, এরপর শনিবার রাতে ঢাকায় ফিরে যাব।’ নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা আসিফ আহমেদ বলেন, ‘অনেক মানুষ, তবুও পরিবারের সবাইকে নিয়ে আনন্দ করছি, ছবি তুলছি, বিচ বাইক ও ঘোড়ায় চড়েছি।’
কক্সবাজার শহরের পাঁচতারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইস লিমিটেডের বিপণন ব্যবস্থাপক ইমতিয়াজ নুর সোমেল সাংবাদিকদের বলেন, শুক্রবার পর্যন্ত তাদের হোটেলের ৭০-৮৫ শতাংশ রুম বুকিং রয়েছে। যদিও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক হোটেল ব্যবসায়ী জানান, ১৩ জুন পর্যন্ত অধিকাংশ আবাসিক হোটেল সম্পূর্ণ বুকিং হয়ে গেছে। তবে প্রশাসন, কর ও ভ্যাট কর্মকর্তাদের ফাঁকি দিতে তারা বিষয়টি স্বীকার করতে চান না।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের এএসপি নিত্যানন্দ দাস বলেন, এবার কোরবানির ঈদের পর গত সাত দিনে আট লাখের বেশি মানুষ কক্সবাজার ভ্রমণ করেছেন। তিনি বলেন, অতীতের মতো এবারও শহর ও সমুদ্রসৈকতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা রোধে ওয়াচ টাওয়ার থেকে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া সৈকতের প্রতিটি গোলঘরে সার্বক্ষণিক পুলিশের অবস্থান এবং মোবাইল টিমসহ কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পর্যটন স্পটগুলোতে সাদা পোশাকেও দায়িত্ব পালন করছেন পুলিশ সদস্যরা।
আবাসিক হোটেলে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে এএসপি জানান, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। গত কয়েকদিন এমন পাঁচটি অভিযোগ পাওয়া গেছে এবং ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শাহিদুল আলম বলেন, পর্যটকদের হয়রানি রোধে তিনজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছেন। অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি সচেতনতা বাড়াতে নিয়মিত মাইকিং করা হচ্ছে।