Risingbd:
2025-08-01@03:19:11 GMT

শিকলবন্দি বাবুল বৈষ্ণব

Published: 7th, April 2025 GMT

শিকলবন্দি বাবুল বৈষ্ণব

প্রায় পরিত্যক্ত ভাঙা একটি ঘর। ওই ঘরে পায়ে শিকল পরা অবস্থায় মাটিতে বসে দিন কাটে বাবুল বৈষ্ণবের। পাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ওষুধের পাতা।  

ঘটনাস্থল হবিগঞ্জ জেলার আজমিরীগঞ্জ উপজেলার ঝিলুয়া গ্রাম।

স্থানীয়দের থেকে জানা যায়, ৩ সপ্তাহ ধরে তাকে স্বজনরা শিকলবন্দি করে রেখেছেন। 

ঠিকমতো খাবারও জোটে না। চরম এই অমানবিক ঘটনাটি ঘটেছে । পারিবারিক কলহের জেরে পাগলের তকমা দিয়ে তবে স্থানীয়দের ভাষ্য- বাবুল মোটেও মানসিক ভারসাম্যহীন নন।

কথা হয় ৫০ বছর বয়সী বাবুল বৈষ্ণবের সাথে। তিনি জানান, ছোট একটি ঘটনা নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে কথা-কাটাকাটি হয়। ওই সময় তিনি স্ত্রীর গায়ে হাত তোলেন। এ ঘটনার পর তার স্ত্রী, ছেলে ও কাকা মিলে তাকে মারপিট করে পাগলের তকমা দিয়ে শিকলে বেঁধে রেখেছে।

তিনি বলেন, “কোনো মানসিক সমস্যা নেই আমার। শুধু পারিবারিক ঝগড়ার কারণে ছেলে, স্ত্রী আর কাকা মিলে আমাকে বেঁধে রেখেছে। ঠিকমতো খাবার দেয় না। আমার বৃদ্ধা মা মাঝে মধ্যে কিছু খাবার দিলে তাকেও গালাগাল করা হয়। মাঝেমধ্যে খাবারের থালা মায়ের হাত থেকে কেড়ে নিয়ে ফেলে দেয়। আধা বালতি পানি দিয়ে গত ২০ দিনে মা আমাকে ৩-৪ দিন গোসল করিয়েছে। অথচ কোনো দিন কারও সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করিনি।”

বাবুল জানান, তিনি অনেক কষ্ট করে সংসার চালিয়েছেন। ছেলেমেয়েকে বড় করেছেন। আটকে রাখার আগেও তিনি কৃষি কাজের বাইরে বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে ঘুরে সবজি, বীজ বিক্রি করেছেন।

বাবুলের কাকা রথিন্দ্র চৌধুরী বলেন, “বাবুল প্রায়ই পরিবারের লোকজনকে মারপিট করে। দা নিয়ে হামলা করতে আসে। যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে। তাই তাকে শিকলে বেঁধে রাখা হয়েছে।”

সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন বদলপুরের ইউপি সদস্য দিলীপ কুমার চৌধুরী বলেন, “আমি বিষয়টি জানি না। তবে এখন যেহেতু আপনাদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি, আমি খোঁজ নেব। তবে আমার জানা মতে, তার আচরণ কিছুটা অস্বাভাবিক হলেও পাগল বলা যাবে না। এমনকি তিনি কখনো কারও সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছেন বলেও আমার জানা নেই।” 

ঢাকা/মামুন/টিপু 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

টিনএজ সিনড্রোম: ভবিষ্যৎ প্রজন্মের এক নীরব সংকট

এক সময় ছিল, যখন সন্তানের আবেগ, দুষ্টুমি বা হঠাৎ রাগ দেখে বাবা-মা মুচকি হেসে বলতেন—“বয়স হয়েছে, ঠিক হয়ে যাবে।” কিন্তু আজ, সেই দুষ্টুমি পরিণত হয়েছে এমন আচরণে, যা অনেক সময় বাবা-মা পর্যন্ত চেনেন না। সন্তান চোখে চোখ রাখে না, ঘরের দরজা বন্ধ করে দেয়, কথা বললে রাগে ফেটে পড়ে। এই চিত্র এখন বিশ্বব্যাপী। মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন—আমরা এক ‘Adolescent Syndrome’ বা ‘Teenage Behavioral Crisis’-এর মুখোমুখি, যা বিশেষ করে মেয়েদের মধ্যে আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে।

আচরণগত বিপর্যয়ের পেছনে বিজ্ঞান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিনএজ সিনড্রোমের প্রধান কারণ তিনটি:

হরমোনের দোলাচল: ইস্ট্রোজেন ও টেস্টোস্টেরনের ওঠানামা টিনএজারদের আচরণে গভীর প্রভাব ফেলে। মেয়েদের ক্ষেত্রে এই হরমোনাল পরিবর্তন দীর্ঘস্থায়ী ও সংবেদনশীল হয়ে ওঠে, যা আচরণে অতিরিক্ত আবেগ ও বিদ্রোহের জন্ম দেয়।

মস্তিষ্কের অসম্পূর্ণ বিকাশ: ১৩-১৯ বছর বয়সে মস্তিষ্কের যুক্তিবোধ ও নিয়ন্ত্রণ-সম্পর্কিত অংশ (prefrontal cortex) এখনও গঠনের পর্যায়ে থাকে। ফলে তারা আবেগে সিদ্ধান্ত নেয়, ঝুঁকি নেয়, এবং কখন কী বলতে হবে—তা বোঝে না।

প্রযুক্তির নীরব আগ্রাসন: TikTok, Instagram, Snapchat—এসব প্ল্যাটফর্মে মেয়েরা দিনে গড়ে ৬–৮ ঘণ্টা সময় কাটায়। সোশ্যাল মিডিয়ার ভুয়া সৌন্দর্য ধারণা, জনপ্রিয়তার চাপ, ফিল্টার সংস্কৃতি তাদের আত্মপরিচয়কে বিকৃত করে তুলছে।

কেন বেশি দেখা যায় মেয়েদের মধ্যে?

Emotional Sensitivity: মেয়েরা আত্মপরিচয় ও আত্মমূল্যায়নে বেশি স্পর্শকাতর।
Beauty Pressure: সোশ্যাল মিডিয়ায় নারীদের শরীর, ত্বক, স্টাইল—সবকিছু নিয়েই এক অনিয়ন্ত্রিত চাপ কাজ করে।
Hormonal Impact: মাসিক চক্র ও হরমোন ওঠানামা তাদের মুড, আবেগ ও আচরণে ব্যাপক প্রভাব ফেলে।

বাবা-মা কি আগের তুলনায় বেশি সমস্যায়?

হ্যাঁ, এবং এর পেছনে রয়েছে পরিবারে সংলাপের ঘাটতি। অনলাইন ইনফ্লুয়েন্সারদের আধিপত্য। পিতামাতার নিজের মানসিক চাপ। বিকৃত প্রতিযোগিতামূলক সমাজব্যবস্থা। আজ অনেক অভিভাবক জানেন না—কীভাবে সন্তানের কাছে পৌঁছাতে হয়। তারা নিজেরাই কর্মব্যস্ত, ক্লান্ত, মানসিকভাবে নিঃশেষ।

বিশ্বের অবস্থা কী বলছে?

জাপানে টিনএজ আত্মহত্যার হার সর্বোচ্চ পর্যায়ে। সুইডেনে, গত ১০ বছরে কিশোরীদের বিষণ্ণতা বেড়েছে ৪৭%। যুক্তরাষ্ট্রে, CDC বলছে—“Teenage girls are experiencing record levels of sadness, violence, and suicidal thoughts.” বাংলাদেশে, শহরাঞ্চলে স্কুলগামী কিশোরীদের মধ্যে বিষণ্ণতা বেড়েছে প্রায় ৫০% (মনোরোগ ইনস্টিটিউট, ২০২৩)।

তাহলে বাবা-মা কী করবেন?

শুনুন, শাসন নয় – সন্তানকে সময় দিন, তার কথার পেছনে আবেগ বুঝুন।
প্রযুক্তির নিয়ন্ত্রণ করুন – নিজেরাও মডেল হোন প্রযুক্তি ব্যবহারে।
কাউন্সেলিংয়ে ভীতি নয় – প্রয়োজনে পেশাদার সহায়তা নিন।
নিজের মানসিক স্বাস্থ্যও রক্ষা করুন – সন্তানকে বোঝাতে গেলে নিজের ভেতরে শান্তি থাকা জরুরি।

একটি প্রজন্ম যেন না হারিয়ে যায়। এই সংকট নিছক পারিবারিক নয়—এটি এক সামাজিক দায়। টিনএজারদের অভ্যন্তরীণ যন্ত্রণা বোঝা না গেলে, আমরা এক ‘চুপ করে থাকা বিষণ্ণ প্রজন্ম’ হারিয়ে ফেলব। সন্তান যখন বিদ্রোহ করে, সে আসলে জানিয়ে দেয়— ‘আমি ভালোবাসা চাই, বোঝার মানুষ চাই।’ আমাদের দায়িত্ব তাদের ভাষা বুঝে নেওয়া।

তারা//

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • থানা হোক ন্যায়বিচারের প্রথম ঠিকানা: আইজিপি
  • থানায় হয়রানিমুক্ত সেবা দেওয়ার আহ্বান আইজিপির
  • ট্রাম্পবিরোধী স্লোগান দিয়ে উড়োজাহাজে গ্রেপ্তার ভারতীয় বংশোদ্ভূত যুক্তরাজ্যের নাগরিক
  • শিক্ষার গতিপথ ও উন্নয়ন নিয়ে ঢাবিতে সেমিনার
  • শিশু ছাত্রীকে যৌন নির্যাতন, মাদ্রাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা 
  • ‘আমি কী অপরাধ করেছি’— সবাই জানেন শিরোনামটা...
  • নারীদের নিয়ে বারে ‘অগ্রহণযোগ্য’ আচরণ, আমিরাতের ক্ষোভে রাষ্ট্রদূতকে ফেরত নিচ্ছে ইসরায়েল
  • অফিসে প্রেম করার আগে জেনে রাখুন
  • টিনএজ সিনড্রোম: ভবিষ্যৎ প্রজন্মের এক নীরব সংকট