ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের বর্বর হামলা ও গণহত্যা বন্ধে রাজধানীতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেছে ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ। সমাবেশে মুক্ত–স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ফিলিস্তিনের সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করতে এবং ইসরায়েলকে মধ্যপ্রাচ্য থেকে উৎখাত করতে আরব বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

আজ সোমবার জোহরের নামাজ শেষে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে সমাবেশ হয়। সেখানে বক্তব্য দেন ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের নেতারা। সমাবেশ শেষে মিছিল বের হয়। মিছিলটি মসজিদ গেট থেকে পল্টন, প্রেসক্লাব, মৎস্য ভবন ও শাহবাগ হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়।

সমাবেশে ইসলামী আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান ফিলিস্তিনে শান্তির উদ্যোগ নিতে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘ড.

মুহাম্মদ ইউনূসের খ্যাতি রয়েছে। আমরা চাই, আপনি বিশ্ববাসীকে বলুন, আমরা যুদ্ধ চাই না, আমরা শান্তি চাই। যুদ্ধ বন্ধ করে ফিলিস্তিনকে শান্তির আবাদভূমিতে পরিণত করতে চাই। এই বার্তা বিশ্ববাসীর কাছে ড. ইউনূসের মাধ্যমে পৌঁছে দেওয়ার আমরা আহ্বান জানাই।’

ফিলিস্তিন থেকে যাঁদের উচ্ছেদ করা হয়েছে, তাঁদের পুনর্বাসনের জন্য বিশ্ববাসীর প্রতি আহ্বান জানান ইসলামী আন্দোলনের এই নেতা।

ইসলামী যুব আন্দোলনের ঢাকা মহানগর সভাপতি মাওলানা ইমতিয়াজ আলম বলেন, কূটনৈতিকভাবে আর শান্তিপূর্ণ উপায়ে আল-আকসা আর ফিলিস্তিনের সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। অতএব আরব বিশ্ব, ওআইসি ও জাতিসংঘকে অনতিবিলম্বে জরুরি বৈঠক ডেকে মুক্ত–স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ফিলিস্তিনের সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করতে এবং ইসরায়েলকে মধ্যপ্রাচ্য থেকে উৎখাত করতে হবে।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন বলেন, এই জাতিসংঘের ওপর কোনো আস্থা নেই, এই জাতিসংঘ যুক্তরাষ্ট্রের ইশারায় চলে, ইসরায়েলের নির্দেশনায় চলে। কাজেই যে জাতিসংঘ যুক্তরাষ্ট্রের মদদে চলে, সে জাতিসংঘ মানুষ চায় না। তিনি বলেন, ‘আমরা মুসলিম জাতিসংঘ চাই, যার মাধ্যমে আমরা ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চাই।’

মিছিলপূর্ব সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন ইসলামী যুব আন্দোলনের সহকারী মহাসচিব আহমদ আবদুল কাইয়ুম, ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম আবরার, ইসলামি বক্তা আবু ত্বহা মুহাম্মদ আদনান প্রমুখ।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল ইসল ম ত করত

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাচনে জোট গঠনে সতর্ক থাকার পরামর্শ হেফাজত আমিরের

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোট গঠনের ক্ষেত্রে সঙ্গে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী।

মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী বলেছেন, আগামী নির্বাচনে এমন কোনো দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়ার চিন্তা করা যাবে না, যাদের ভ্রান্ত বিশ্বাস সম্পর্কে বুজুর্গানে দ্বীন ও পূর্বপুরুষেরা আগেই সতর্ক করেছেন।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘জাতীয় উলামা মাশায়েখ সম্মেলন ২০২৫’–এ লিখিত বক্তব্যে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী এ কথা বলেন। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের উদ্যোগে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন হেফাজত আমির শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকলেও অসুস্থ থাকায় তিনি কথা বলেননি। তাঁর লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা তোফাজ্জল হক আজিজ।

ইসলামের মূলধারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এমন কোনো সিদ্ধান্ত না নিতে দলগুলোকে অনুরোধ জানিয়ে লিখিত বক্তব্যে হেফাজত আমির বলেন, সহিহ আকিদার সব ইসলামি দলকে এক হওয়ার জন্য আগেও তিনি আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর আহ্বানে সাড়া দেওয়ার মতো তেমন পরিবেশ এখনো তৈরি হয়নি। যা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।

শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, একদিকে যেমন ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকার ষড়যন্ত্র চলছে, অন্যদিকে তেমনি দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে বহু রকম চক্রান্ত লক্ষ করা যাচ্ছে। গণ–অভ্যুত্থান–পরবর্তী বাংলাদেশে এ রকম পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে, তা তিনি কল্পনাও করেননি।

অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোকে উদ্দেশ করে বাবুনগরী বলেন, ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের অফিস স্থাপনের চুক্তি দেশের স্বাধীনতার অখণ্ডতার জন্য এবং ধর্মীয় কৃষ্টির জন্য এক অশনিসংকেত। এ চুক্তির তীব্র নিন্দা জানিয়ে তা বাতিল করার দাবিও জানান তিনি।

সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হাটহাজারী মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা খলিল আহমদ কুরাইশী। দেশের সার্বিক পরিস্থিতির বিষয়ে তিনি বলেন, সামনে কালো তুফান দেখা যাচ্ছে। কালো তুফানের সঙ্গে মোলাকাত নয়, মোকাবিলা করতে হবে। জনগণকে ওলামাদের নেতৃত্ব কবুল করতে হবে। তখনই তুফানকে মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সহসভাপতি মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব বলেন, যারা ফ্যাসিবাদী আমলে পাখা দিয়ে নৌকাকে বাতাস করেছে, তাদের সঙ্গে কোনো ঐক্য হবে না। জুলাই আন্দোলন ছিল ভোটের অধিকার বাস্তবায়নের জন্য। সামনে নির্বাচন। সেই নির্বাচন বানচালের পাঁয়তারা শুরু হয়েছে। সেই পাঁয়তারা রুখে দিতে হবে।

হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, ইসলামের বিষয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আলেমদের মতামত উপেক্ষা করলে হাসিনার মতো পরিণতি হবে।

সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক। এ সময় আরও বক্তব্য দেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা আলেম এবং ওলামারা।

১৫ দফা প্রস্তাবনা

সম্মেলনে জমিয়তে উলামায়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ১৫ দফা প্রস্তাবনা পেশ করা হয়। প্রস্তাবনা পাঠ করেন সংগঠনের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া।

১৫ দফার মধ্যে আছে—ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের কার্যালয় স্থাপনের চুক্তি বাতিল করা, জুলাই সনদের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা, জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থায় ধর্মশিক্ষা বাধ্যতামূলক করা এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীতের শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত বাতিল করা, ঘোষিত সময়ে নির্বাচন আয়োজনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা; নির্বাচনে কালোটাকা ও পেশিশক্তির মহড়া বন্ধ করে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা; বিতর্কিত নারী কমিশনের সুপারিশ বাতিল ও শরিয়ার সীমারেখার আলোকে নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ