নদী ভাঙন কবলিত মানুষের হাহাকার, রৌমারীর ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা পরিদর্শন করলেন প্রকৌশলী
Published: 7th, April 2025 GMT
কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার নদী ভাঙন কবলিত এলাকা খেদাইমারী, সুখেরবাতি, ঘুঘুমারী, সোনাপুর ও নামাজের চর পরিদর্শন করেছেন রংপুর পানি উন্নয়ন (বাপাউবো) সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহসান হাবীব। সোমবার দুপরে এসব ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেন তিনি।
প্রকৌশলী আহসান হাবীব বলেন, ‘রৌমারী ও রাজীবপুর খুবই ভাঙন কবলিত এলাকা। ফলে স্বাভাবিকভাবে আমাদের একটা নজরদারিতে থাকে এই অঞ্চলগুলো। বন্যার আগে কোন এলাকাগুলো খুব ঝুঁকিপূর্ণ, বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, সেগুলো পরিদর্শন আমরা মাঝে মাঝে করি। তারপরও বন্যার সময়ে সব জায়গা পরিদর্শন করা হয়। পাশাপাশি বরাদ্দ-চাহিদা পাঠানো হয়। বেশি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে কিছু কিছু কাজ করেছি। এবারও একইভাবে নিয়মিত পরিদর্শনের আওতায় কোন জায়গাগুলোতে আগামী বন্যায় বেশি ঝুঁকিপূর্ণ, এই তথ্য সংগ্রহ করছি।
তিনি বলেন, ‘এর বাইরেও এলাকাব্যাপী একটি প্রকল্প দেওয়া আছে। পুরো রৌমারী ও রাজীবপুরকে ঘিরে প্রায় ৩০ কিলোমিটার, ২৬ কিলোমিটার রৌমারী ও রাজীবপুরে। আর ৪ কিলোমিটার জিঞ্জিরাম নদী তীর সংরক্ষণ দেওয়া আছে। এ প্রকল্পটি যদি পাস হয় তাহলে পুরো এলাকাটাই ভাঙন থেকে মুক্তি পাবে।’ পরিদর্শনের সময় উপস্থিত ছিলেন, কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান, সহকারী প্রকৌশলী আ.
ভুক্তভোগী স্থানীয়রা জানান, প্রতিবছর ব্রহ্মপুত্রে পানি বাড়া ও কমার সঙ্গে সঙ্গে রৌমারী উপজেলায় দেখা দেয় তীব্র ভাঙন। এতে খেদাইমারী, সুখেরবাতি, ঘুঘুমারী, সোনাপুর ও নামাজের চর, উত্তর খাউরিয়া, ঘুঘুমারী, চর ইটালুকান্দা, চর খেদাইমারীর প্রায় ৫০০ মানুষের ভিটেমাটি, হাজার হাজার একর আবাদি জমি, পাঁচটির বেশি শিক্ষা ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান, স্থানীয় বাজার, মসজিদসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। রাস্তার ধারে খোলা আকাশের নিচে কিংবা অন্যের ভিটায় ঠাঁই নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করতে হয় ভাঙন কবলিত মানুষদের। নির্ঘুম রাত কাটাতে হয় নদী তীরবর্তী বাড়ির বাসিন্দাদের। কখন যে ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে যায় তা নিয়ে দুচিন্তায় থাকতে হয় তাদের। ভিটেমাটি হারানো তাদের প্রতিবছরের দুঃখ গাথা। তবে শুষ্ক মৌসুম ছাড়া সারা বছর কমবেশি ভাঙতে থাকে নদী।
রৌমারী নদী রক্ষা সংগঠক মহিউদ্দিন মহির বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ের বাতাস এখন ভাঙন কবলিত মানুষদের কান্নায় ভারি। টানা বর্ষণে খোলা আকাশের নিচে না করতে পারে রান্না, না থাকে মাথা গোঁজার ঠাঁই। প্রাকৃতিক ক্রিয়াদির ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হওয়ায় সবচেয়ে বিপদগ্রস্ত নারীরা। খোলা আকাশের নিচে প্রাকৃতিক কর্ম সারতে রাত নামা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। নদীপাড়ের বাসিন্দা ছলেমন অন্যের বাড়িতে কাজ করে চরের মধ্যে দুই কাঠা জমি কিনে ঘর তুলেছিলেন। সেটাও এবার নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। তবু দাবি একটাই- ত্রাণ নয়, নদী ভাঙন থেকে পরিত্রাণ চান তিনি।
২০১০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্রের বাম তীর রক্ষার নামে সরকারিভাবে হাজার হাজার কোটি টাকার ডিপিপি প্রণয়ন হলেও, তার সঠিক বাস্তবায়ন না হওয়ায় প্রতিবছর ভাঙনের তালিকায় আসছে নতুন নতুন এলাকা। এ ব্যাপারে রাষ্ট্রের দায়িত্বরত ব্যক্তিদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে এ অঞ্চলের নিঃস্ব, অসহায় মানুষ বারবার লিখিতভাবে জানানোর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। এতেও কোনো কাজ হচ্ছে না।
রৌমারীকে বাঁচাতে হলে নদী ভাঙন প্রতিরোধের পাশাপাশি ঘরবাড়ি, জমিহারা মানুষের পুনর্বাসন প্রয়োজন। সরকারকে ভাঙন কবলিত মানুষদের জন্য বিশেষ বরাদ্দ দিতে হবে। এই অভাবী জনপদের বেশির ভাগ মানুষকে বছরের ছয় মাস দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কাজের সন্ধানে ছুটে বেড়াতে হয়। এলাকায় কর্মসংস্থান হলে তাদের ছিন্নমূল জীবনের অবসান ঘটবে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ
সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়।
গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।
টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন।
এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’
সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।