আজ ঘুরে দাঁড়িয়েছে এশিয়ার শেয়ারবাজার
Published: 8th, April 2025 GMT
ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কে গতকাল রীতিমতো রক্তাক্ত হয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শেয়ারবাজার। এশিয়ার দেশগুলো থেকে শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র—সবখানেই এই রক্তপাত হয়েছে। তবে সেই ধাক্কা কাটিয়ে আজ সকালে এশিয়ার বিভিন্ন দেশের শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
গতকাল ১০ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ পতন হয়েছিল ভারতের শেয়ার সূচক সেনসেক্স ও নিফটির। সেই দুই সূচক আজ বেশ ভালোভাবেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আজ সকালে সেনসেক্স বেড়েছে ১ হাজার ২০৬ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৬৫ শতাংশ; নিফটি বেড়েছে ৩৬৫ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৬৫ শতাংশ। গতকাল সেনসেক্সের পতন হয়েছিল ৩ দশমিক ২ শতাংশ এবং নিফটির পতন হয়েছিল ৩ শতাংশ।
এদিকে আজ মঙ্গলবার সকালে এশিয়ার অন্যান্য দেশের শেয়ার সূচকও ঘুরে দাঁড়িয়েছে। সেই সঙ্গে ইউএস স্টক ফিউচার্সের অবস্থানও ঊর্ধ্বমুখী। এক দিন বড় ধরনের দরপতন হলে পরদিন শেয়ারবাজার সাধারণত ঘুরে দাঁড়ায়। সেই সঙ্গে ওয়াশিংটনও শুল্কের বিষয়ে আপস-রফা করতে চায়—এমন ধারণা বাজারে ছড়িয়ে পড়ার কারণে আজ বাজারে কিছুটা ইতিবাচক ধারা দেখা যাচ্ছে বলে রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে।
শেয়ারবাজারের পাশাপাশি অন্যান্য বাজারেও ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বন্ডের সুদহার ছয় মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছিল; সেখান থেকে তার উত্থান অব্যাহত আছে। সোনার দামও বেড়েছে আজ। আউন্সপ্রতি সোনার দাম বেড়েছে ২৯ দশমিক ৪৫ ডলার বা শূন্য দশমিক ৯৯ শতাংশ। বন্ধ হয়েছে তেলের দর হ্রাস। আজ ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১ দশমিক ৩৭ শতাংশ বেড়ে ৬৫ দশমিক শূন্য ৯ ডলারে উঠেছে।
বিষয়টি হলো, অনিশ্চয়তার মধ্যে সাধারণত সোনার দাম বাড়ে; কিন্তু এবার দেখা গেল, বাজারের সেই চিরাচরিত নিয়মও ভেঙে পড়েছে। বুধবার ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক ঘোষণার পর সাময়িকভাবে সোনার দাম বাড়লেও তারপর দ্রুতগতিতে কমতে থাকে সোনার দাম। এরপর আজ আবার বাড়ল সোনার দাম।
আজ সকালে এশিয়ার শেয়ার সূচকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে জাপানের নিক্কিই এশিয়া সূচক। ৬ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়েছে এই সূচক। জাপান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতার পথে আছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট ও বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রির টোকিওর সঙ্গে এই আলোচনায় এই নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
অন্যদিকে হংকংয়ের হ্যাং সেং সূচকের উত্থান হয়েছে ১ দশমিক ৭ শতাংশ। চীনের মূল ভূখণ্ডের ব্লি চিপস সূচকের উত্থান হয়েছে শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ। দক্ষিণ কোরিয়ার কোসপি সূচক ১ দশমিক ৩ শতাংশ ও অস্ট্রেলিয়ার ইক্যুইটির মানদণ্ড এএক্সজেওর উত্থান হয়েছে ১ শতাংশ। তাইওয়ানের মূল সূচক টিডব্লিউআইআইয়ের গতকাল পতন হয়েছিল ১০ শতাংশ। আজও এই সূচকের পতন হয়েছে ৩ শতাংশ।
ট্রাম্প নির্ভার
বিশ্বের অন্যান্য দেশের শেয়ার সূচকের মতো গতকাল সোমবার সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে প্রায় দুই হাজার পয়েন্ট পড়ে যায় মার্কিন বাজারের সূচক। ফলে আতঙ্কিত বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শেয়ার বিক্রির হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। সেদিন লেনদেন শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ডাও জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাভারেজে শুরু হয় চরম অস্থিরতা। প্রথমেই ১ হাজার ৭০০ পয়েন্ট নেমে যায় এই সূচক। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যে ৮০০ পয়েন্ট লাফিয়ে ওঠে সেটি। এর পর আবার ৪১৪ পয়েন্ট নেমে যায় ওই শেয়ারের লেখচিত্র।
১৯৮৭ সালের ১৯ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারের ইতিহাসে ‘কালো সোমবার’ (ব্ল্যাক মানডে) হিসেবে পরিচিত। সেদিন ২২ দশমিক ৬ শতাংশ পড়ে যায় ডাও জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাভারেজ। ৩৮ বছর পর ওয়াল স্ট্রিটে সে রকম রক্তপাত হলো গতকাল।
এত কিছু সত্ত্বেও ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বিকার। পারস্পরিক শুল্ক নীতি থেকে সরে আসতে নারাজ তিনি। তাঁর যুক্তি, ‘বিশ্বের বহু দেশ এত দিন আমেরিকাকে লুট করেছে। পারস্পরিক শুল্কের ওষুধ তাদের ওপর কাজ করছে।’ মার্কিন শেয়ারবাজারের রক্তক্ষরণের দায় এড়িয়ে গেছেন তিনি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র শ য় রব জ র ১ দশম ক গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
ইউনূস-তারেক সফল বৈঠকে স্বপ্নভঙ্গ হলো যাদের
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ১ ঘণ্টা ২০ মিনিটের বৈঠক দেশের রাজনীতির মোড় অনেকটাই ঘুরিয়ে দিয়েছে। নানা অনিশ্চয়তা, শঙ্কা, গুজব রাজনীতিকে ঘিরে ধরেছিল। একধরনের অনাস্থার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। এ বৈঠক অনিশ্চয়তা, শঙ্কার কালো মেঘ সরিয়ে দিয়ে রাজনীতিতে আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি করবে বলে আশা করা যায়।
পারস্পরিক যে কাদা ছোড়াছুড়ি, দুর্নাম করার রাজনীতি, সেখান থেকে বেরিয়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথ তৈরিতে সহায়তা করবে অধ্যাপক ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠক। নির্বাচন নিয়ে সরকারের সঙ্গে বিএনপির কিছুদিন ধরে টানাপোড়েন চললেও বৈঠকটি অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ ও আন্তরিক পরিবেশে হয়েছে। এটা আমাদের রাজনীতিতে উদাহরণ হয়ে থাকবে।
বৈঠকটি সারা দেশের মানুষের মধ্যে নতুন করে আশার সঞ্চার করেছে। এখন মানুষ বিশ্বাস করতে শুরু করেছে যে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে। মানুষের ধারণাকে বাস্তবে রূপদান করার দায়িত্ব সরকারের।
বিএনপি এর আগে ডিসেম্বরে নির্বাচন চাইলেও কিছুটা সরে এসে ফেব্রুয়ারির সময়সীমাকে মেনে নিয়েছে। সরকারও এপ্রিল থেকে সরে এসে নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে হতে পারে বলে মন্তব্য করেছে। উভয় পক্ষেরই কিছুটা সরে আসা, কিছুটা ছাড় দেওয়া—এটাই আমাদের রাজনীতি থেকে একদম হারিয়ে গিয়েছিল।
রাজনীতি মানেই প্রতিপক্ষের সঙ্গে শত্রুতা করতে হবে, এমন পরিস্থিতিতে আমাদের রাজনীতি পৌঁছে গিয়েছিল। কিন্তু শুধু কথায় কথায় উদার হলে হবে না। কাজে-কর্মেও উদারতা দেখাতে হবে। লন্ডনের বৈঠকে সেই উদারতার কিছু নমুনা আমরা দেখতে পেলাম।
আরও পড়ুনলন্ডনে ইউনূস-তারেকের আলোচনায় বিএনপিরই কি জিত১৩ জুন ২০২৫বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে আলোচনার ফলাফল তুলে ধরা হয়েছে। তা নিয়ে আপাতত আলোচনার কিছু নেই। আমরা বরং রাজনীতিতে এ বৈঠকের প্রভাব নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করি। প্রথমত, এ বৈঠক সারা দেশের মানুষকে আশান্বিত করলেও রাজনীতির কোনো কোনো পক্ষ বা ব্যক্তি হতাশ হয়েছেন।
এসব গোষ্ঠীর মূল কাজ যেন বিএনপিকে যে কোনোভাবে ঠেকানো। ব্যক্তি পর্যায়ে যারা হতাশ হয়েছেন তাদের মধ্যে রাজনীতিবিদ ও অরাজনৈতিক ব্যক্তিরা আছেন। তাঁদের মূল লক্ষ্যই ছিল, যেকোনো প্রকারে বিএনপির রাজনীতিকে প্রতিহত করা। এ অংশ চাইছে না বিএনপির রাজনীতি সামনের দিকে এগিয়ে যাক। বিএনপির নেতৃত্বে নতুন করে বাংলাদেশের বিনির্মাণ হোক।
কেউ যদি সহজ রাজনীতির পথ পরিহার করে অহেতুক কুটিল ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি করে, তবে তারা নিজেরাই রাজনীতি থেকে হারিয়ে যায়। আওয়ামী লীগ ও জাসদ আমাদের সামনে রাজনীতি থেকে হারিয়ে যাওয়ার সবচেয়ে বড় উদাহরণ।বিএনপি যে শত ভাগ শুদ্ধ ও সঠিক রাজনীতি করছে, এটা বলা যাবে না। ভুল-ত্রুটি বিএনপিরও আছে। স্থানীয় পর্যায়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, দখল, হত্যাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। বিএনপি নিজ দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। এই পর্যন্ত চার হাজারের মতো নেতা-কর্মীকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে এসব কর্মকাণ্ডের জন্য। দেশের ইতিহাসে কোনো দল নিজেদের এতসংখ্যক নেতা-কর্মীকে বহিষ্কার করেনি। এ ধরনের অপরাধ শুধু বিএনপির নেতা-কর্মীরাই করছেন না। বিভিন্ন দলের নেতা-কর্মীরাও এর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে এটা আমাদের রাজনৈতিক অপসংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে।
এখান থেকে বেরিয়ে আসতে হলে আমাদের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা লাগবে। রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন করতে হবে। এটা সময়সাপেক্ষ বিষয়। বাস্তবতা হচ্ছে আমাদের রাজনীতি এই অর্থনীতির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। তাই রাজনৈতিক সরকার লাগবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে। কারণ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।
এ ধরনের পরিস্থিতি শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়েই নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। এর সঙ্গে রাজনৈতিক শক্তিরও প্রয়োজন হয়। বিকল্প অর্থনৈতিক কর্মসূচিও লাগে। এ জন্যই বিএনপি বারবার নির্বাচনের কথা বলে আসছে। আমরা মনে করি, নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় এলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ সার্বিক অবস্থান উন্নতি ঘটবে। বিএনপির বিকল্প অর্থনৈতিক পরিকল্পনা আছে।
বৈঠক শেষে যৌথ ঘোষণা