Samakal:
2025-06-15@23:09:09 GMT

সবজিতে অনিয়ন্ত্রিত কীটনাশক

Published: 8th, April 2025 GMT

সবজিতে অনিয়ন্ত্রিত কীটনাশক

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার সাগান্না এলাকায় সবজি ক্ষেতে কীটনাশক স্প্রে করছিলেন এক কৃষক। রাস্তার পাশের জমিতে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক সারের সঙ্গে মাজরা ও লাল পোকা দমনে ব্যবহার করছিলেন থায়ামেথোক্সাম (২০%) ও ক্লোরান্টরানিলিপ্রোল (২০%) গ্রুপের কীটনাশক। কিছুদূর এগিয়ে সাধুহাটি গ্রামের মাঠে গিয়ে দেখা যায়, টমেটো ক্ষেতে ফল ছিদ্রকারী পোকামাকড় দমনে পানির সঙ্গে এবামেকটিন গ্রুপের কীটনাশক মেশাচ্ছেন। কিছুক্ষণ পর তিনি ক্ষেতে স্প্রে করেন।
এসব কীটনাশক নির্ধারিত মাত্রায় দেওয়া হচ্ছে কিনা, সে বিষয়ে সদুত্তর দিতে পারেননি দুই কৃষক। কিছুদিন ধরে সদর উপজেলার নগরবাথান, সাধুহাটি, হলিধানী, পবহাটিসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে কীটনাশক প্রয়োগের ক্ষেত্রে এমন অসংগতি পাওয়া গেছে। কৃষক জানিয়েছেন, নিজেদের ধারণা ও দোকানির পরামর্শে এসব স্প্রে করেন তারা। এক্ষেত্রে সঠিক মাত্রা, প্রয়োগ ও নির্দিষ্ট দিনের ব্যবধানও মানা হয় না। এতে প্রায়ই মাত্রাতিরিক্ত স্প্রে করছেন তারা।
সবজি তোলার ক্ষেত্রেও মানা হচ্ছে না সময়ের ব্যবধান। হাতেগোনা কিছু কৃষক কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুসরণ করছেন। দরিগোবিন্দপুর গ্রামের চাষি আল মমিন প্রায় এক বিঘা জমিতে বেগুনের আবাদ করেছেন। তাঁর ভাষ্য, ফল ও ডোগা ছিদ্রকারী পোকা দমনে এক সপ্তাহ পর পর ১৬ লিটার পানিতে ১৫ মিলি ওষুধ (কীটনাশক) দিতে হয়। গরমের সময় প্রায় প্রতিদিনই দিতে হচ্ছে। স্প্রে করার এক থেকে দু’দিন পর বাজারজাত করেন সবজি।
কৃষি বিভাগ থেকে জানা গেছে, উপজেলায় সবজির আবাদ হয়েছে ২ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে বেগুন ৩২০ হেক্টর, টমেটো ১৭০, শিম ৮৫, লাউ ২৫০ হেক্টরসহ অন্যান্য সবজি রয়েছে। ধানের আবাদ হয়েছে ২৩ হাজার ৮৮৫ হেক্টরে। এসব ফসলে আইসোসাইক্লোসেরাম, এবামেকটিন, ক্লোরান্টরানিলিপ্রোল, থায়ামেথোক্সামসহ নানা গ্রুপের কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে।
বোতলের লেবেল বা প্যাকেটে লেখা নির্দেশনা ও কৃষি বিভাগের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেগুনে ফল ও ডোগা ছিদ্রকারী পোকা দমনে আইসোসাইক্লোসেরাম ১৬ লিটার পানিতে ৯ দশমিক ৬ মিলি ব্যহারের নিয়ম রয়েছে। কৃষক ১৬ লিটার পানিতে ১৫ মিলি পর্যন্ত ব্যবহার করছেন। এটি প্রয়োগের অন্তত ১৪ দিন পর সবজি সংগ্রহের কথা থাকলেও কৃষক দু-এক দিন পরই বাজারজাত করেন।
টমেটোর পোকামাকড় দমনে ১৬ লিটার পানিতে ১৯ দশমিক ২ মিলি এবামেকটিন মিশিয়ে প্রতি এক শতক জমিতে ২ লিটার স্প্রে করার নিয়ম। কৃষক প্রতি ১৬ লিটারে ১৬ মিলি ব্যবহার করছেন। সাত দিন অন্তর এটি ব্যবহার করতে হয়। এটি প্রয়োগের ২১ দিন পর ফল সংগ্রহের নির্দেশনা থাকলেও সাত দিনে সংগ্রহ করার তথ্য মিলেছে। ফল ছিদ্রকারী পোকা দমনে থায়ামেথোক্সাম গ্রুপের কীটনাশক ১৬ লিটার পানিতে ৮ মিলি মেশানোর কথা থাকলেও কৃষক ১৫ মিলি পর্যন্ত ব্যবহার করছেন। অনুমোদিত মাত্রায় এটি প্রয়োগ করলে দু’দিন পর বেগুন ও টমেটো সংগ্রহ করা যাবে। ১৪ দিন পর সংগ্রহ করা যাবে শিম।
এক সপ্তাহ পর পর স্প্রে না করলে মাজরা পোকা দমন হয় না বলে দাবি সাগান্না এলাকার কৃষক আব্দুর রশিদের। তিনি বলেন, ৮-১০ বছর আগের তুলনায় এখন পোকার সংক্রমণ হয় বেশি। কীটনাশক প্রয়োগের নিয়ম দোকানি ও কেম্পানির লোকদের কাছ থেকে নেন। নিজের অভিজ্ঞতা থেকেও দেন। টমেটো চাষি রাশেদুল ইসলামের ভাষ্য, স্প্রে করার এক সপ্তাহ পর সবজি তুলে বাজারজাত করেন। তাঁর দাবি, এতে বিষের প্রতিক্রিয়া থাকে না। এবামেকটিন ১৬ লিটার পানিতে ১৬ মিলি মিশিয়ে স্প্রে করেন। কৃষি বিভাগ থেকেও মাত্রা বলে দেওয়া হয়।
থায়ামেথোক্সাম ও ক্লোরান্টরানিলিপ্রোল গ্রুপের কীটনাশক পানির সঙ্গে মিশিয়ে ধানে স্প্রে করলে বেশি উপকার পাওয়া যায়। সারের সঙ্গে মিশিয়ে প্রয়োগ করলে পোকা দমনের সঙ্গে সঙ্গে মাটির উপকারী জীবাণুও মরে। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, অপরিমিত ব্যবহারে পোকামাকড়ের কীটনাশক সহনশীল ক্ষমতা বাড়ছে। ফলে স্প্রে করলেও বেড়ে যাচ্ছে সংক্রমণ।
জানা গেছে, জেলায় পাইকারি ও খুচরা মিলিয়ে কীটনাশক বিক্রির লাইসেন্সপ্রাপ্ত দোকান আছে ২ হাজার ৫৮৮টি। এ লাইসেন্স দিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালকের কার্যালয়। উপজেলার বহাটি বিশ্বাসপাড়ার কীটনাশক বিক্রেতা নজরুল ইসলাম লিটন বলেন, কোম্পানির প্রতিনিধি কিংবা গায়ের নির্দেশনার ভিত্তিতেও কৃষককে কীটনাশক প্রয়োগ করতে বলা হয়।
কৃষককে উঠান বৈঠক বা মাঠে গিয়ে কীটনাশক ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয় বলে জানান একটি কোম্পানির জেলা বিপণন কর্মকর্তা সুবোধ বকশি। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যবিধির বিষয়েও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু মাত্রা মানতে বললেও অনেক সময় কৃষক বিশ্বাস করেন, বেশি দিলে কাজ করবে। তখনই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়।
কৃষকদের ফসলে পোকার ধরনভেদে মাত্রা বলে দেওয়া হয় বলে জানান সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নূর এ নবী। তিনি বলেন, অনেক কৃষক দোকান থেকে শুনে ও নিজেদের মতো করে স্প্রে করেন। এতে মাত্রা ঠিক না থাকায় পোকামাকড়ের কীটনাশক সহনশীলতা বাড়ে।
পুষ্টি বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, চাহিদামতো উৎপাদনে ও চাহিদা পূরণে সবজি চাষে কীটনাশক ব্যবহারের প্রয়োজন রয়েছে। সেটি নির্দেশনা মেনে হতে হবে। অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার এবং নির্দিষ্ট সময়ের আগে বাজারজাত করলে মানবদেহের ক্যান্সারসহ জটিল রোগের কারণ হতে পারে।
কীটনাশক প্রয়োগের পর নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধান মেনে সবজি বাজারজাত করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন ফলিত পুষ্টি ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারটান) ঝিনাইদহ আঞ্চলিক কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সোনিয়া শারমিন। তিনি বলেন, এ নিয়ম মানলে সেটি নিরাপদ হবে। সবজি বা ফল খাওয়ার আগে এক লিটার পানিতে দুই চামচ লবণ ও চার চামচ ভিনেগার দিয়ে ১৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখলে কীটনাশক চলে যায়।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ১৬ ল ট র প ন ত ব যবহ র করছ ব যবহ র কর কর মকর ত দ ন পর উপজ ল করছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইসরায়েলের হামলা

রবিবার বিকেল থেকে ইরানজুড়ে নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সামরিক স্থাপনার পাশাপাশি ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

রবিবার রাতে ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইদ খাতিবজাদেহ ইসরায়েলি হামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে তিনি জানান, রবিবার রাজধানী তেহরানে ইসরায়েলি হামলায় ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খবর তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলুর।

এক্স-পোস্টে সাইদ বলেছেন, “ইসরায়েলের অপরাধী শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঠিক বিপরীতে অবস্থিত ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবনে ইচ্ছাকৃত এবং নির্মম হামলা চালিয়েছে।”

আরো পড়ুন:

ইসরায়েলের নতুন হামলায় ইরানের আইআরজিসির গোয়েন্দা প্রধান নিহত

ইসরায়েলে ৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ইরান, তেল আবিব ও হাইফাতে সরাসরি আঘাত

উপ-মন্ত্রী আরো বলেন, “এই হামলায় বেশ কয়েকজন বেসামরিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন, আমার বেশ কয়েকজন সহকর্মীও আহত হয়েছেন, যাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।”

সাইদ বলেন, “এটি আরো একটি স্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি শাসকগোষ্ঠীর চলমান ও নিয়মতান্ত্রিক আগ্রাসন অভিযানের অংশ।”

এর আগে শনিবার ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা তেহরানের অস্ত্র উৎপাদন ক্ষমতা ধ্বংস করার লক্ষ্যে ইরানের আইআরজিসি ও সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে রবিবার নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে।

বিবৃতিতে  বলা হয়, এই হামলায় ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি), গার্ডস কুদস ফোর্স এবং ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর অবকাঠামো লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আরো জানিয়েছে, ইরানজুড়ে অসংখ্য অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রে হামলা চালানো হয়েছে। 

ইরানি বার্তাসংস্থা তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, ইসরায়েলের এই হামলায় আইআরজিসিরি গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ কাজেমি এবং তার সহকারী হাসান মোহাকিক নিহত হয়েছেন। এছাড়া মোহসেন বাঘারি নামে আইআরজিসির আরো একজন জেনারেল নিহত হয়েছেন। এর প্রতিশোধ নিতে রবিবার রাতে ইসরায়েলে ৫০টি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও শতাধিক ড্রোন ছুড়েছে ইরান।

ইসরায়েলের ফায়ার ও রেসকিউ সার্ভিসের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, উত্তর ইসরায়েলে দুটি এবং হাইফায় একটি আবাসিক ভবনে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হানার খবর পেয়েছে তারা।

ইসরায়েলি জাতীয় জরুরি সেবা সংস্থা জানিয়েছে, হাইফায় ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে সাতজন আহত হয়েছেন। এছাড়া কিরিয়াত গাটের কাছে দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি শহরে একজন আহত হয়েছেন।

এ ঘটনায় ইসরায়েলি সেনাপ্রধান ইয়াল জামির ইরানের ওপর আক্রমণ আরো তীব্র করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একটি বিবৃতি জারি করে ইসরায়েরি সেনাপ্রধান বলেছেন, “আমরা আমাদের অভিযান তীব্রতর করে যাব এবং এটি করে, আগামী বছরগুলোতে আমাদের নিরাপত্তা জোরদার করব। আমরা জানতাম এর একটি মূল্য দিতে হবে এবং এটিই বোঝায় যে, আমরা কেন এখনই পদক্ষেপ নিয়েছি, তা অনেক দেরি হওয়ার আগেই।”

ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে ইসরায়েলি হামলায় ২২৪ জন নিহত এবং ৯০০ জন আহত হয়েছেন।

ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ১৩ জন নিহত এবং ৩৭০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ