আলুর কেজি ৯ থেকে ১০ টাকা। কয়েক দিন ধরে এ দামে আলু বিক্রি হয়েছে। উঠছে না উৎপাদন খরচ। হিমাগারে জায়গা না পেয়ে কেজিপ্রতি কোথাও ৩ থেকে ৪ টাকা, কোথাওবা দ্বিগুণ লোকসান দিয়ে আলু বিক্রি করতে হচ্ছে কৃষককে। এর পরও মিলছে না ক্রেতা। বাধ্য হয়ে ক্ষেতের পাশে বা রাস্তার ধারে বস্তায় বস্তায় রেখে দিয়েছেন বিক্রির আশায়। এ চিত্র দেখা গেছে জয়পুরহাটের কালাই, পাঁচবিবি, ক্ষেতলাল ও গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলায়।
জয়পুরহাটের কালাই উপজেলায় এবার শুরু থেকেই বাজারে আলুর দাম কম। এরই মধ্যে হিমাগারে সংরক্ষণের জন্য বুকিং দিতে পারেননি বেশির ভাগ কৃষক। বাড়িঘর, বারান্দাসহ ক্ষেতের আশপাশে আলু রেখে বিপদে পড়েছেন কৃষক। কয়েক দিনের গরমে আলু পচে যাচ্ছে। এ অবস্থায় দাম আরও কমে গেছে।
পুনট হাটে কথা হয় নুনুজ গ্রামের কৃষক রবিউল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানিয়েছেন, ফসল বিক্রির লাভের টাকায় সারা বছরের খরচ চলে। কিন্তু এবার লাভ দূরের কথা, বিক্রির জন্য ক্রেতাই পাওয়া যাচ্ছে না।
কৃষক রবিউল ইসলাম ঋণ নিয়ে এক একর জমিতে আলু চাষ করেছেন। রোপণ থেকে তোলা বাবদ প্রতি কেজিতে ২১-২২ টাকা খরচ হলেও বিক্রি করতে হচ্ছে ৮-৯ টাকা কেজি দরে। হিমাগারের বুকিং স্লিপ পাননি। বাধ্য হয়ে ৩০০ মণ আলু বাড়িতে রেখেছেন। তীব্র গরমে প্রায় ৫০ মণ আলু পচে গেছে। এখন দাম আরও কমে গেছে। এ অবস্থায় বিক্রি করলে অর্ধেকেরও বেশি লোকসান গুনতে হবে।
একই অভিযোগ করেছেন পাঁচবিবির চাটখুর গ্রামের কৃষক আকবর আলী, ক্ষেতলালের তারাকুল গ্রামের গোলাম রব্বানীসহ স্থানীয় কৃষকদের।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জয়পুরহাটে ৪৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আবাদ করে ফলন পাওয়া গেছে ৯ লাখ ৩১ হাজার ৫০০ টন আলু। উৎপাদিত আলুর ২২ থেকে ২৩ শতাংশ জয়পুরহাটের ১৯টি হিমাগারে সংরক্ষণের ব্যবস্থা আছে। এ সুযোগ বেশি পেয়েছেন ব্যবসায়ীরা। সময়মতো অগ্রিম বুকিং দিতে না পারায় কৃষক হিমাগারে আলু রাখতে পারেননি।
গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলায় এবার লাল পাকড়ি, কার্ডিনাল, ডায়মন্ড, সাদা হল্যান্ড ও বার্মা জাতের আলু বেশি আবাদ হয়েছে। এ জন্য কৃষকদের বীজ আলু কিনতে হয়েছে বেশি দামে। এর সঙ্গে সার-কীটনাশক, সেচ ও দিনমজুর খরচ আছে। তাতে প্রতি কেজি আলু উৎপাদনে ১২ থেকে ১৪ টাকা ছাড়িয়ে গেছে বলে জানান অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা মাহবুবুল আলম বসুনিয়া।
ধাপেরহাট বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি কার্ডিনাল ৯ টাকা ও লাল পাকড়ি আলু বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকায়। এই আলু বিক্রি করতে এসেছেন জুনিদপুর গ্রামের কৃষক বেলাল হোসেন। তিনি বলেন, আলুর উৎপাদন ভালো; কিন্তু চাহিদামতো দাম এবং ক্রেতার দেখা নেই। দামেই আলু বিক্রি করতে হচ্ছে।
পাইকার সহিদুল ইসলাম বলেন, হিমাগারে প্রতি কেজি আলু মজুত রাখতে ১১ টাকা খরচ পড়ে। নতুন বস্তা কিনতে হয়েছে। রয়েছে পরিবহন খরচ। এভাবে প্রতি কেজি আলুতে খরচ ২২ টাকা ছাড়িয়ে যাবে। বেশি দামে আলু কিনলে লোকসান গুনতে হবে।
কৃষি বিভাগ বলছে, সাদুল্লাপুরে ২ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৫৬ হাজার ২৫০ টন আলু। গত বছর উৎপাদন হয়েছিল ৩০ হাজার ৫০০ টন। সেই তুলনায় এবার উৎপাদন প্রায় দ্বিগুণ। উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত থাকবে প্রায় ৩৬ হাজার ২৫০ টন আলু। বাড়তি আলু সংরক্ষণে যথাযথ ব্যবস্থা না থাকায় সমস্যায় পড়েছেন কৃষক।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আল উৎপ দ উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

গভীর রাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের বাড়িতে ককটেল বিস্ফোরণ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ইফতিখারুল আমল মাসঊদের বাড়িতে ককটেল বিস্ফোরণ করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল বুধবার গভীর রাতে বিনোদপুরের মণ্ডলের মোড় এলাকায় তাঁর বাড়ির দরজার সামনে এ ঘটনা ঘটে। তবে এতে কেউ আহত হয়নি।

মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মালেক প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। সেখানে তিনটি ককটেল বিস্ফোরণ করা হয়েছে। তবে কে বা কারা এটি করেছে, সে বিষয়ে এখনো কিছু জানা যায়নি। এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগও কেউ করেনি। তাঁরা দুর্বৃত্তদের শনাক্তের চেষ্টা করছেন।

এ বিষয়ে কথা বলতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ইফতিখারুল আমল মাসঊদের মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল করলেও তিনি সাড়া দেননি। তবে ঘটনার পর তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্টে লিখেছেন, ‘ফ্যাসিবাদী অপশক্তির জুলুম-নিপীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলাম। কোনো রক্তচক্ষুর ভয়ংকর হুমকি অন্যায়ের প্রতিবাদ করা থেকে বিরত রাখতে পারেনি। তবে তারা কখনো বাড়ি পর্যন্ত আসার ঔদ্ধত্য দেখাতে পারেনি। কিন্তু আজ আমার বাড়ির দরজায় গভীর রাতের অন্ধকারে হামলার সাহস দেখিয়েছে কাপুরুষের দল! এরা কারা? এদের শিকড়সহ উৎপাটনের দাবি জানাই।’

এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহউপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ভেবেছিলাম বাড়ির গেটে কিংবা গেটের বাইরে। কিন্তু গিয়ে দেখলাম একেবারে বাড়িতে হামলা হয়েছে। গতকালই ওনার অসুস্থ বাবা হাসপাতাল থেকে রিলিজ নিয়ে বাসায় এসেছেন। জানি না শেষ কবে একজন শিক্ষকের বাড়িতে রাতের আঁধারে এভাবে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। আমরা শঙ্কিত, স্তম্ভিত।’

এদিকে হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুজ্জোহা চত্বরে এ সমাবেশের আয়োজন চলছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ