গণতান্ত্রিক সরকার ছাড়া দেশের বৈষম্য কমবে না: মিন্টু
Published: 11th, April 2025 GMT
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেছেন, দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক সরকারের জন্য আন্দোলন করছে। একটি গণতান্ত্রিক সরকার ছাড়া দেশের সাধারণ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয় এবং দেশের বৈষম্যও কমবে না। আমাদের সমর্থন থাকলেও বর্তমান সরকারের জনগণের কাছে কোনো দায়বদ্ধতা নেই। সরকার ভালো কাজ করছে, দুনীর্তি কম থাকলেও দেশে গণতান্ত্রিক সরকার চাই। গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে একমাত্র অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে।
শুক্রবার রাতে যশোর শহরের একটি হোটেলে জেলার ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করে বলেন, ব্যবসায়ীরা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। মুনাফা সমাজ উন্নয়নের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সামাজিক বিনিয়োগ আর্থিক বিনিয়োগের পূর্বশর্ত। এমন বিনিয়োগ প্রয়োজন, যা কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। উৎপাদনশীলতা বাড়লে দেশ উন্নত হবে। রাজনীতি ও অর্থনীতি আলাদা নয়, বরং রাজনীতি অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে। দেশের বৈষম্য কমাতে হলে রাজনীতিকে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে।
এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মিন্টু আরও বলেন, বিনিয়োগের জন্য দরকার একটা পরিবেশ। বিনিয়োগের প্রথম দরকার সামাজিক শৃঙ্খলা। সামাজিক শৃঙ্খলা না থাকলে, ওই সমাজে কোনদিন সামাজিক মূলধন সৃষ্টি হয় না। সামাজিক মূলধন যদি না থাকে, তাহলে আর্থিক বিনিয়োগ হয় না। কোনো বিনিয়োগকারী এই সমাজে বিনিয়োগ করবে না।
যশোর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি আয়োজিত এ মতবিনিময় সভায় সংগঠনের সভাপতি মিজানুর রহমান খানের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম, পুলিশ সুপার রনওক জাহান, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকন, জেলা বিএনপির নির্বাহী সদস্য গোলাম রেজা দুলু, যশোর প্রেসক্লাবের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস চেয়ারম্যান শাহাজান হোসেন, বেনাপোলের সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি শামসুর রহমান, বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতি যশোর শাখার সভাপতি রকিবুল ইসলাম সঞ্জয় ও চিন্ময় সাহা প্রমুখ।
সভায় দেশের বৃহৎ স্থলবন্দর যশোরের বেনাপোল বন্দর ও নওয়াপাড়া নদী বন্দরের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মিজানুর রহমান খান। তিনি বিদেশি বিনিয়োগের অন্তত ১০ শতাংশ যশোর অঞ্চলে পাঠানোর অনুরোধ জানান। যাতে দক্ষিণ অঞ্চল আরও সমৃদ্ধ হয়। এছাড়া, তিনি যশোরে একটি কন্টেনার টার্মিনাল স্থাপনের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ যশ র আবদ ল আউয় ল ম ন ট গণত ন ত র ক সরক র ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
মিরাজে দুর্দান্ত জয় বাংলাদেশের
এমন পারফরম্যান্সই তো চাওয়ার থাকে ভালো দলের কাছে। মেহেদী হাসান মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্য, সাদমান ইসলামের সেঞ্চুরি, তাইজুল ইসলামের ৯ উইকেট শিকারে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ইনিংস ও ১০৬ রানের বিশাল জয় এনে দেয় বাংলাদেশকে। প্রথম টেস্ট হারের পর যে সমালোচনা হয়েছিল, তার জবাবটা বোধ হয় দ্বিতীয় টেস্ট তিন দিনে জিতে দিয়ে দিলেন নাজমুল হোসেন শান্তরা। ‘বাউন্স ব্যাক’ করে সিরিজ ড্র ১-১-এ।
চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে বীরোচিত পারফরম্যান্স ছিল টাইগারদের। এটি সম্ভব হয়েছে পছন্দের উইকেটে খেলা হওয়ায়। স্পিন ভুবনে উইকেট উৎসব করেছেন তাইজুল, মিরাজ গাঁটছড়া বেঁধে। সিরিজ নির্ধারণী টেস্টে দুটি সেঞ্চুরি দারুণ অর্জন অধারাবাহিক ব্যাটিং লাইনআপের। এই টেস্টে ওপেনিং জুটি ভালো করেছে। লম্বা সময় পর টেস্ট খেলার সুযোগ পাওয়া এনামুল হক বিজয় ভালোই সঙ্গ দেন সাদমানকে। লোয়ার মিডলঅর্ডারে মিরাজের লড়াই ছিল দেখার মতো।
টেলএন্ডারদের নিয়ে রীতিমতো বাজিমাত করেছেন তিনি। শেষ ৩ উইকেটে তৃতীয় দিন ১৫৩ রান যোগ করেন। বাংলাদেশকে পৌঁছে দেন ৪৪৪ রানে। ২১৭ রানের লিড থাকায় ইনিংস ব্যবধানে জয়ের স্বপ্ন দেখায়। মিরাজের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে সে স্বপ্ন পূরণ হয়। সাকিব আল হাসান ও সোহাগ গাজীর পর তৃতীয় বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার তাঁর।
গত বছর দেশের মাটিতে টেস্টে ভালো করতে পারেনি বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার পর দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে। ২০২৫ সালের শুরুটাও ভালো ছিল না। সিলেটে জিম্বাবুয়ের কাছে হেরেছে। সিরিজ বাঁচাতে চট্টগ্রামে জিততেই হতো। লক্ষ্যে পৌঁছাতে কন্ডিশনেও পরিবর্তন আনা হয়। চট্টগ্রামের উইকেটে খেলা হয় দ্বিতীয় টেস্ট। যেখানে শাসন ছিল স্পিনারদের। পছন্দের উইকেট পাওয়ায় তিন স্পিনার নিয়ে খেলে বাংলাদেশ। তিনজনই দারুণ বোলিং করেন প্রথম থেকে।
দীর্ঘ বিরতির পর টেস্ট খেলার সুযোগ পাওয়া অফস্পিনার নাঈম হাসান চ্যালেঞ্জ নিয়ে বোলিং করে গেছেন। বেশি উইকেট না পেলেও এক প্রান্তে ব্যাটারদের চাপে ফেলেছেন। যার সুফল তাইজুল ও মিরাজ পেয়েছেন অন্য প্রান্তে। প্রথম দিন শেষ সেশনে ব্রেক থ্রু দেন তিনি। বাঁহাতি স্পিনার পরে পিক করে ৬ উইকেট শিকার করেন। জিম্বাবুয়ে ৯ উইকেটে ২২৭ রানে প্রথম দিন শেষ করে। পরের দিন এক বল খেলে ওই রানেই অলআউট হয়। বাংলাদেশ ব্যাটিং শুরু করে বড় লক্ষ্য নিয়ে। সাদমান ইসলাম ও এনামুল হক বিজয় ১১৮ রানের ওপেনিং জুটি করায় প্রতিপক্ষকে ছাড়িয়ে যাওয়া সহজ হয়। সাদমানের সেঞ্চুরি ও মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম কিছু রান করায় ৭ উইকেটে ২৯১ রানে দ্বিতীয় দিন শেষ করে বাংলাদেশ।
সেদিন সংবাদ সম্মেলনে সাদমান আশা প্রকাশ করেন, মিরাজ ও তাইজুল জুটি করবেন। অষ্টম উইকেটে ৬৪ রানের জুটি দু’জনের। বেশি ভালো করেছেন পেসার তানজিম হাসান সাকিব। মিরাজের সঙ্গে ১৫৬ বলে ৯৬ রানের জুটি। অভিষেক টেস্টে সাকিবের ব্যাটিং দারুণ লেগেছে অধিনায়ক শান্তর কাছে। ৮০ বলে ৪১ রান করেন তিনি। সবচেয়ে বড় কথা, মাথায় বল লাগার পরও বিচলিত হননি তিনি। মিরাজ ছাড়া চট্টগ্রাম টেস্টের প্রাপ্তি হিসেবে ওপেনিং জুটির ভালো খেলা, সাদমানের সেঞ্চুরি, তাইজুলের ৫ উইকেট শিকার ও সাকিবের রান করাকে মনে করেন শান্ত।
শেষের তিন উইকেটে তৃতীয় দিন প্রায় দুই সেশন ব্যাট করে বাংলাদেশ। তাইজুল, সাকিব ও হাসানকে নিয়ে ১৫৩ রান যোগ করে। মিরাজ ১০৪ রান করে ওয়েলিংটন মাসাকাদজাকে উইকেট দেন। নার্ভাস নাইটির ঘরে প্রবেশ করে কিছুটা ঝুঁকির মুখে ছিলেন মিরাজ। ৯৮ রানে পৌঁছানোর পর সেঞ্চুরি ছুঁতে দুই রান নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ফিল্ডারের কাছে বল চলে যাওয়ায় এক রানে থামতে হয়। তখন স্ট্রাইকে হাসান থাকায় দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল সবাই। ড্রেসিংরুমে খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফের সবাই দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন। কখন হাসান আউট হয়ে যায়, সে ভয় কাজ করছিল হয়তো। কিন্তু হাসান ছিলেন দৃঢ়চেতা। মাসাকাদজাকে ডিফেন্স করে স্বস্তি দেন।
মিরাজ স্ট্রাইকে এসে মেদেভেরের প্রথম দুই বলে ঝুঁকি নেননি। তৃতীয় বলে এক রান নিয়ে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরির স্বাদ নেন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ ও দ্বিতীয় টেস্টের সেরা খেলোয়াড় মিরাজ। প্রথম ম্যাচের উভয় ইনিংসে ৫ উইকেট করে ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে অতীতের সব পারফরম্যান্স ছাড়িয়ে গেছেন। সেঞ্চুরির সঙ্গে ৫ উইকেটপ্রাপ্তি, দুই হাজার রানের মাইলফলক পেয়েছেন। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। ২১৭ রানে পিছিয়ে থাকা জিম্বাবুয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে অলআউট হয় ১১১ রানে। ফ্লাডলাইটের আলো জ্বেলে নির্ধারিত সময়ের বেশি খেলান আম্পায়াররা। প্রায় সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খেলা হয়। জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটাররা তাতে আপত্তি করেননি। তাইজুল ৩, নাঈম ১ ও মিরাজ ৫ উইকেট নিলে ম্যাচ শেষ হয়।
সিলেটে প্রথম টেস্ট হারের পর চট্টগ্রামে প্রভাব বিস্তার করে খেলে ম্যাচ জেতার পরও খুশি নন অধিনায়ক শান্ত, ‘আমি টেস্ট সিরিজ ড্র করে খুশি না। কারণ, প্রথম টেস্টে আমরা একেবারেই ভালো খেলিনি। এই টেস্টে একপেশে খেলে জিতলেও সিরিজে আরও ভালো খেলা উচিত ছিল। সিরিজটি জিততে হতো।’ টাইগার দলপতি জানান, এই পারফরম্যান্স শ্রীলঙ্কা সফরে কাজে দেবে। দেশের মাটিতে স্পোর্টিং উইকেট বানিয়ে বিদেশে খেলার পরিবেশ তৈরি করছিল বিসিবি। ২০২৩ সালে নিউজিল্যান্ড সিরিজ থেকে স্পোর্টিং উইকেটে খেলা হচ্ছে। কিউইদের বিপক্ষে সিলেটে ঐতিহাসিক জয় পেলেও মিরপুর থেকে হারতে শুরু করে। দেশের মাটিতে টানা ছয় হারের পর জয়ের দেখা পেল বাংলাদেশ।