তিন মাসে নির্যাতনের শিকার ৮৩৬ নারী ও কন্যাশিশু
Published: 11th, April 2025 GMT
দেশে নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের ঘটনা বেড়েছে। গত জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে মোট ৮৩৬ নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ২৬০ জন। মার্চে পৃথকভাবে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারির চেয়ে নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে দ্বিগুণের বেশি। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে মোট ৩৯৪, আর শুধু মার্চে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৪৪২ নারী ও কন্যাশিশু।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় লিগ্যাল এইড উপপরিষদের প্রতিবেদনে জানা যায়, মার্চে দেশে ২৪৮ কন্যাশিশু এবং ১৯৪ নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১২৫ শিশুসহ ১৬৩ জন। তার মধ্যে ১৮ শিশুসহ ৩৬ জন দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। দুই শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। আর দু’জন ধর্ষণের কারণে আত্মহত্যা করেছেন। এ ছাড়া ৫৫ শিশুসহ ৭০ জনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে।
অন্যদিকে, ফেব্রুয়ারি মাসে মোট ১৮৯ নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৩০ শিশুসহ ৪৮ জন। তার মধ্যে তিন শিশুসহ ১১ জন দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এক শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে চার শিশু ও এক নারীকে। জানুয়ারি মাসে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ২০৫ নারী ও কন্যাশিশু। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৩৩ শিশুসহ ৪৯ জন। তার মধ্যে ১৪ শিশুসহ ২০ জন দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এক শিশুসহ দু’জনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। এ ছাড়া দু’জনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে।
মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্চে শিশু ও নারী নির্যাতন, বিশেষ করে ধর্ষণের ঘটনা ব্যাপকভাবে ঘটেছে। নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা রোধে দেশে যথেষ্ট কঠোর আইন থাকা সত্ত্বেও অপরাধ দমন ও নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্টদের কার্যকর ভূমিকার অভাব, বিচারহীনতা ও বিচারের দীর্ঘসূত্রতা অপরাধীদের বেপরোয়া করে তুলেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ত্বরিত পদক্ষেপ নিতে অপারগতার ফলে নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা যে হারে বেড়ে চলেছে, তা জাতীয় জীবনে অন্যতম প্রধান উদ্বেগ হিসেবে দেখা দিয়েছে। ধর্ষণ বেড়ে অসহনীয় পর্যায়ে যাওয়ায় জনমনে নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কা বেড়েছে।
বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং নিজস্ব অনুসন্ধানের ওপর ভিত্তি করে প্রতি মাসে মানবাধিকার প্রতিবেদন তৈরি করে প্রতিষ্ঠানটি। তাদের হিসাবে মার্চে ১৩২টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। আর ফেব্রুয়ারিতে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে ৫৭টি। মার্চে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ছিল ১৭টি, যেটি পরের মাসে বেড়ে দাঁড়ায় ২৫টিতে। ধর্ষণচেষ্টার ঘটনা ফেব্রুয়ারিতে ঘটেছিল ১৯টি, আর মার্চে ৬১টি।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: শ শ সহ
এছাড়াও পড়ুন:
সিলেটে সহপাঠীর সঙ্গে বেড়াতে যাওয়া স্কুলছাত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ
সিলেটের জকিগঞ্জে সহপাঠীর সঙ্গে বেড়াতে গিয়ে দশম শ্রেণির এক ছাত্রী (১৬) দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা প্রথমে দুই শিক্ষার্থীর ছবি ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে মেয়েটিকে ধর্ষণ করেন বলে এ ঘটনায় করা মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
গত শনিবার সকালে উপজেলার বারহাল ইউনিয়নের পরিত্যক্ত একটি ইটভাটায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী কিশোরী আজ বুধবার সকালে জকিগঞ্জ থানায় মামলা করেছে।
মামলায় আসামি হিসেবে পাঁচজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁরা হলেন উপজেলার বারহাল ইউনিয়নের নিদনপুর গ্রামের ইমরান আহমদ (২৩), খিলগ্রামের তানজিদ আহমদ (১৮), মাইজগ্রামের শাকের আহমদ (২৪), একই গ্রামের শাকিল আহমদ (২১) ও মনতৈল গ্রামের মুমিন আহমদ (২০)।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ভুক্তভোগী স্কুলছাত্রী ২৬ জুলাই সকালে বারহাল ইউনিয়নের একটি পরিত্যক্ত ইটভাটায় এক সহপাঠীকে নিয়ে বেড়াতে যায়। সেখানে অভিযুক্ত পাঁচ তরুণ গোপনে তাঁদের ছবি ধারণ করেন। পরে ছবিগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে স্কুলছাত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ করেন। পরে দুজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এ সময় অভিযুক্ত তরুণেরা দুই শিক্ষার্থীকে বিষয়টি কাউকে জানানো হলে তাঁদের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হবে বলে ভয় দেখান।
এদিকে ঘটনার তিন দিন পর বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে এলাকার একটি পক্ষ বিষয়টি সালিস বৈঠকে মীমাংসার চেষ্টা করছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। তবে গতকাল মঙ্গলবার রাতে জকিগঞ্জ থানা-পুলিশ ওই স্কুলছাত্রীকে তার বাড়ি থেকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান–স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে পাঠায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, অভিযোগ দিতে বিলম্ব ও বিষয়টি এলাকায় ছড়িয়ে পড়ায় অভিযুক্ত তরুণেরা গা ঢাকা দিয়েছেন। এ ছাড়া জকিগঞ্জ ভারত সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় অভিযুক্ত তরুণেরা অবৈধ পথে সীমান্ত পাড়ি দিতে পারেন বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় লোকজন।
জকিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল রাতে খবর পেয়ে পুলিশ ভুক্তভোগীকে তার বাড়ি থেকে উদ্ধার করে। আজ সকালে মামলা হওয়ার পর থেকে আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু হয়েছে।