নাটোর আদালতের মালখানা থেকে ৬২ লাখ টাকাসহ প্রায় সোয়া কোটি টাকার মালামাল চুরি হয়েছে। দুজন পুলিশ সদস্য আদালতের পরিচ্ছন্নতাকর্মী এবং আদালতের বেসরকারি সহায়ক কর্মীর সহযোগিতায় এ চুরির ঘটনা ঘটান। গতকাল শনিবার রাত পর্যন্ত ৬১ লাখ টাকা ও বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালংকার উদ্ধার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এ ঘটনায় পুলিশের দুই সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

গতকাল সন্ধ্যায় গ্রেপ্তার হওয়া আদালতের বেসরকারি সহায়ক সাব্বির হোসেন নাটোরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। জানা গেছে, পুলিশের আবেদনের পর আদালত তাঁকে জবানবন্দি দিতে দুই ঘণ্টা সময় দেন। সাব্বির স্বেচ্ছায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন।

সাব্বির আদালত পুলিশের বেসরকারি সহায়ক হিসেবে মালামাল ও কাগজপত্র আনা-নেওয়ার কাজে যুক্ত ছিলেন। তিনি জানান, গত বৃহস্পতিবার আদালতের কম্পিউটার অপারেটর কনস্টেবল আল আমিন (বর্তমানে বরখাস্ত), রাশেদ মাহমুদ (পরিচ্ছন্নতাকর্মী) এবং তিনি মিলে চুরির পরিকল্পনা করেন। সাব্বির মালখানার হিসাব রাখার দায়িত্বে থাকায় তিনি জানতেন, কোথায় কী আছে। অন্যদিকে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে রাশেদ মামলার আলামত বের করার কাজে অভিজ্ঞ ছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে তাঁরা মালখানায় ঢুকে মালামাল চুরি করেন। চোরাই মালের কিছু অংশ তাঁরা মালখানার পেছনের পুকুরের গর্তে লুকিয়ে রাখেন এবং বাকি অংশ কনস্টেবল আল আমিন রাজশাহীর গোদাগাড়ির বাসায় নিয়ে যান।

জেলা ডিবির পরিদর্শক নজরুল ইসলাম জানান, সাব্বিরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী গতকাল রাতে আল আমিনের গোদাগাড়ির ভাড়া বাসা থেকে ৩৬ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া মোট টাকার পরিমাণ ৬১ লাখ ছাড়িয়েছে। এ ছাড়া চুরি হওয়া প্রায় ৬২ লাখ টাকার সোনা ও রুপার অলংকারও উদ্ধার করা হয়েছে, তদন্ত চলছে।

নাটোর আদালত পুলিশের পরিদর্শক মোস্তফা কামাল জানান, এ ঘটনায় গত শুক্রবার উপপরিদর্শক এনামুল হোসেন (মালখানার তদারক কর্মকর্তা) ও কনস্টেবল আশরাফুল ইসলামকে (মালখানার পাহারাদার) সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ পর্যন্ত পাঁচ আসামিকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বরখ স ত

এছাড়াও পড়ুন:

কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন

টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।

এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।

গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।

প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ