গর্ভবতী মহিলা কোনোভাবেই উঁচু-নিচু রাস্তায় হাঁটতে পারছিলেন না। পড়ে যাচ্ছিলেন, আবার উঠে দাঁড়িয়ে চলার চেষ্টা করছিলেন। সঙ্গে একটি শিশুসন্তান। তার কচি পা ঠিকঠাক হাঁটতে শেখেনি। মায়ের কোলই তার ভরসা। কোলে উঠতে না পেরে চিৎকার করছে আকাশ কাঁপিয়ে। গর্ভবতী মাও চিৎকার করছেন। প্রসবযন্ত্রণায় কাতর মা মাটি আকরে ধরে বারবার উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা বরছেন। হাত-পায়ে ক্ষত থেকে রক্ত ঝরছে অবিরাম। এক সময় সে ধ্বংসপ্রায় রাস্তার পাশে জ্ঞানহীন হয়ে পড়ে। আশপাশে তখনও কাউকে দেখা যাচ্ছিল না। শিশুটি আরও জোরে কেঁদে চলেছে। এমন হৃদয়বিদারক দৃশ্য দিয়ে নয় মিনিটের ভিডিওটির সমাপ্তি ঘটে। 

ফিলিস্তিনে প্রতিনিয়ত জীবন-যুদ্ধের এটি একটি মাত্র দৃশ্য। ইসরায়েল নির্বিচারে সামরিক ও বেসামরিক মানুষ হত্যা করছে, শক্তিশালী বোমা দিয়ে উড়িয়ে দিচ্ছে ঘর-বাড়ি, রাস্তা-ঘাট। তাদের লক্ষ্য গাজায় স্থায়ী কোনো বাসিন্দা থাকবে না, এটা হবে মার্কিনিদের পরিকল্পিত একটি প্রকল্প। ভূমধ্যসাগর থেকে উঠে আসা বাতাসে শীতল হবে শরীর ও মন। ভিড়বে বড় বড় বাণিজ্যিক জাহাজ, ব্যবসা হবে রমরমা। এটা হয়তো হবে ইউরোপের দেশ দ্বিতীয় লুক্সেমবার্গ। আরব ধনকুবেররাও অবকাশ যাপনে যাবে। এই বাস্তবতার প্রধান বাধা ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস তথা স্থানীয় মানুষ। তাদের সরাতে পারলেই মিশন সফল হবে। 

একটু পেছনে ফিরে তাকানো যাক। স্পেনেও এক সময় মুসলিম রাষ্ট্র ছিল। সেই রাষ্ট্রটিও মুসলমানের অসহযোগিতা এবং শত্রুতার কারণেই হাত থেকে ফসকে গেছে। তাহলে গাজাও ফসকে যাবে? যদি মধ্যপ্রাচ্য এখনও জেগে না ওঠে সেই আশঙ্কা কিছুতেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না। হামাসের প্রতিষ্ঠাতা শায়খ আহমাদ ইয়ামিনের বক্তব্য, ‘আমরা ছোটবেলায় জানতাম গাজা উপত্যকা ইসরাইলের দখলে। এখন আমরা বুঝতে পারছি, পুরো আরববিশ্ব ইসরায়েলের দখলে। শুধু গাজা ব্যতীত। 

প্রতিবাদস্বরূপ ভূখণ্ডটিকে রক্ষা করতে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা থেকে ইসরাইলের আশদোদ শহরে রকেট হামলা চালিয়েছে হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসাম ব্রিগেড। এতে দুজন আহত হয়! নিহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। হামাসের আক্রমণে মূলত ইসরায়েলের কিছুই হচ্ছে না। বরং ইসরাইলের সামরিক অভিযানে গাজায় প্রতিনিয়ত শতশত বেসামরিক নারী-শিশু ও বয়স্করা জীবন দিচ্ছে। শক্তিশালী বোমার আঘাতে উড়ে যাচ্ছে ঘর-বাড়ি, স্কুল-কলেজ, হাসপাতালসহ নানা স্থাপনা! অর্থাৎ আক্রমণের আনুপাতিক হার ১:৯৯-ও না, এমন অসম লড়াইয়ের ইতিহাস পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি আর নেই। তারপরও বিশ্ববাসী এটাকে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল লড়াই বলছে! এর কারণ খুবই সূক্ষ্ম। ফিলিস্তিনের পক্ষে থাকার কথা ছিল সকল মুসলিম উম্মাহ। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে মনে মনে থাকলেও প্রকাশ্যে মুসলিম বিশ্বের অস্তিত্ব অনুপস্থিত। বাক্যের শুরুতে ‘ছিল’ উল্লেখ করেছি, এখন তাও অবশিষ্ট নেই। কিছুতেই নেই। নয়তো ফিলিস্তিনের এমন করুণ অবস্থা কেন দেখতে হচ্ছে বিশ্ববাসীর। 

২.


এক সময় মধ্যপ্রাচ্য তথা আরববিশ্ব অর্থ ও বৃত্তে এতটা শক্তিশালী ছিল না, পরিকল্পিত ছিল না, পশ্চিমাদের সঙ্গে আজকের মতো এতটা সম্পর্কও ছিল না। অথচ আজকের আরববিশ্ব শানশওকতে ভরা। তবু কেন গাজাকে মুক্ত করতে পারছে না? কারণ অনৈক্য! কারণ স্বার্থ। কারণ অনৈতিক সুবিধা।

মুসলিম এজেন্ডায় গঠিত পাকিস্তান বিশ্বের অন্যতম পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র, তবু গাজার দিকে অস্ত্র তাক করেনি ইসলামাবাদ! আনোয়ার সাদাতের মিশর নিয়ে বর্তমানে খেলছে জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ সিসি, অথচ এই মিশরের বুক চিরে বয়ে গেছে নীলনদ, শতাব্দীর পর শতাব্দী যা শীতল করেছে আফ্রিকার মরুহৃদয়। এদিকে বন্দি অবস্থায় গাজার তৃষ্ণার্ত শিশুরা নির্মম অত্যাচারের মুখোমুখি কাঁপতে কাঁপতে আলো-বাতাসের পৃথিবীকে বলেছে, আল বিদায়! মুসলিম উম্মাহর মুখপাত্র দাবি করা তুরস্কের রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। মুসলিম বিশ্বের সামরিক কিছু সৈন্য নিয়ে তার গঠন করার কথা ছিল ‘মুসলিম বিগ্রেড’। যারা হবে মুসলিম দুনিয়ার অতন্দ্রপ্রহরী। নিশ্চিত নিরাপত্তা পাবে মুসলিম দেশগুলো। যদিও এসব ছিল ফাঁকা বুলি অথবা রাষ্ট্রক্ষমতায় নিজের আসন পোক্ত করার ঐকান্তিক প্রচেষ্টামাত্র। এরদোয়ান নিজের আসন পোক্ত করেছে সত্য। আর সেটা করতে গিয়ে গোপনে ইসরায়েলে পাঠিয়েছে জ্বালানি। অথচ আজারবাইজান-আর্মেনিয়া যুদ্ধ বন্ধের পুরো কৃতিত্ব এরদোয়ানের। আমেরিকা, রাশিয়া ও ইরানের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সিরিয়া দখলের মহড়া, বর্তমানে টি-৪ বিমানঘাঁটি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে তুরস্ক। কিন্তু গাজাকে মুক্ত করতে তাদের কোনো উদ্যোগ বিশ্ববাসী দেখেছে কি? না দেখেনি। 

সৌদি আরব মধ্যপ্রাচ্যের রাষ্ট্রনায়কদের নিয়ে রাজধানী রিয়াদে জরুরি বৈঠক ডেকেছে। বিষয় অবরুদ্ধ গাজা। এই বৈঠক কতটা ফলপ্রসূ হবে সময়ই বলে দেবে। কিন্তু এটা তো সত্য যে,  গাজার অ্যাম্বুলেন্সগুলো পেট্রোল না পেয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে নিঃশব্দে, নিরুপায় হয়ে। নীরবতা যেনো তাদের একমাত্র আর্তনাদ। সেই আর্তনাদের ভেতরও ইসরায়েলের গুলি বা বোমা কেড়ে নিচ্ছে প্রিয় পুত্র, কন্যা, স্ত্রী অথবা প্রাণপ্রিয় বাবা-মাকে।   অথচ আরবের তেলেই সমৃদ্ধ হচ্ছে ইসরায়েল! 

মিশরের কূট-কৌশলি রাষ্ট্রনায়ক আনোয়ার সাদাতকে এই মুহূর্তে ভীষণ প্রয়োজন, যিনি প্রয়োজনকে উপেক্ষা করেননি। তিনি জানতেন, কখন অস্ত্র হাতে নিতে হবে, কখন আলোচনার টেবিলে বসতে হবে। অথচ দুবাই শাসকরা বিলাসিতার জন্য সেকেন্ড হোম বানিয়ে রেখেছে তেলআবিব তথা সমগ্র ইসরায়েলকে। ইসরায়েল পলিসিতে দুবাই আরও বেশি সমৃদ্ধ হচ্ছে, অথবা এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ সীমিত। কারণ বগল নামক তবলা পশ্চিমা মার্কেটে ছুটে যাবে। তারা সম্পর্ক করবে সৌদি আরবের সঙ্গে। সৌদি-দুবাই দ্বন্দ্বে দুই দেশ মিশে গেছে পশ্চিমা স্রোতে।

জর্ডান মার্কিন-ইসরায়েলপন্থী। দেশটি বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিপক্ষে যায় এমন কোনো কাজ প্রকাশ্যে কিংবা অপ্রকাশ্যে করতে অনাগ্রহী। তবে, একথা সত্য নয় যে, ফিলিস্তিনের পক্ষে কেউ নেই। লেবাননের হিজবুল্লাহ বাহিনী জান ও জবানবাজী রেখে লড়াই সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। সিরিয়ার কিছু সংগ্রামী সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে জানান দিচ্ছে আমরা ফিলিস্তিনকে একা হতে দেব না। এই দুই দেশকে পেছনে থেকে অর্থ, অস্ত্র, সৈন্য ও সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে সহযোগিতা করে আসছে ইরান। 

সিরিয়ার বাশার আল আসাদের পতনে অনেকের মতো আমিও খুশি হয়েছিলাম, কিন্তু এতে মূল ক্ষতিটা হয়েছে ফিলিস্তিনের। তেহরান মূলত সিরিয়া হয়েই ইসরায়েল বাহিনীকে প্রতিরোধ করতো। বাশার আল আসাদ পতনের পর ইরান বিরাট ক্ষতির মুখোমুখি হয়। মূলত বাশারের পতনটা ছিল মার্কিন-ইসরায়েলের আরেকটি এজেন্ডা! 

কাতারের অবস্থান আন্তর্জাতিকভাবে অবরুদ্ধ গাজার মুখপাত্রের মতোই। হামাসকে সব ধরনের সহযোগিতায় কাতার সবার চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে। তবু ইসরায়েলের কবল থেকে ফিলিস্তিনকে কেন রক্ষা করতে পারছে না! কারণ, ওই থার্ড টেম্পল। 

৩. 
ইতিহাসখ্যাত নবী হযরত দাউদ-এর সন্তান হযরত সুলায়মান জেরুজালেম নগরী প্রতিষ্ঠা করেন। স্রষ্টার মহিমা তুলে ধরতে তিনি সেখানে পুনঃনির্মাণ করে গড়ে তোলেন মুসলমানদের প্রথম কিবলা মসজিদুল আল-আকসা। নবী সুলাইমানের ইবাদাতগৃহ ইহুদিদের কাছে ‘ফার্স্ট টেম্পল’ নামেই পরিচিত। কিন্তু খ্রিস্টপূর্ব ৫৮৯ অব্দে ব্যাবিলনের রাজা জেরুজালেম অবরোধ করলে ৫৮৬ অব্দে ফার্স্ট টেম্পলটি ধ্বংস করা হয়। সেইসঙ্গে ইহুদিদেরকে নির্বাসন দেয়া হয় ব্যাবিলনে।

ব্যাবিলনের পতন হলে খ্রিস্টপূর্ব ৫৩৯ অব্দে পারস্যের রাজা সাইরাস দ্য গ্রেট ইহুদিদের কিংডম অব জুডাতে ফিরে আসার অনুমতি দেয়। হিব্রু বাইবেল অনুযায়ী ৫৩৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ফার্স্ট টেম্পলের জায়গায় ‘সেকেন্ড টেম্পল’ নির্মাণকাজ শুরু হয়। কিন্তু ইহুদিদের কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেনি রোমানরা। বিদ্রোহ শুরু হলে ৭০ খ্রিস্টাব্দে রোমান সেনাবাহিনী ‘সেকেন্ড টেম্পল’ও ধ্বংস করে ফেলে। সেই থেকে চলছে থার্ড টেম্পল নির্মাণের প্রস্তুতি। এটি করলে দাজ্জাল এসে তাদেরকে রাজত্ব ফিরিয়ে দেবে। এর প্রস্তুতি হিসেবে সকল উপকরণ ও টেম্পল নকশাও রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় প্রস্তুত ইসরায়েলে।

ইসরায়েল রাষ্ট্র জন্মের পর থেকে এই প্রথম তারা এতটা শক্তিশালী অবস্থানে আছে। চাইলেই থার্ড টেম্পল নির্মাণ করা সম্ভব। তাদের ধর্মমতে টেম্পলের আনুষ্ঠানিকতা পর্ব শেষেই দাজ্জালের আগমন ঘটবে। দাজ্জাল সাম্রাজ্য বিস্তার করলে তাকে দমন করতেই ইসলামের নবী মুহাম্মদের উম্মত হিসেবে পৃথিবীতে আসবেন ঈসা রুহুল্লাহ। তাঁকে সাপোর্ট দিবেন ইমাম মাহাদি। মাহাদির রাস্তা প্রশ্বস্ত করতে তিনজন ইমাম ও তাঁদের সহযোগীরা আসবেন। তাঁরা হলেন ইমাম মাহমুদ ও সহযোগী শামিম বাররা, ইমাম মানসুর ও সহযোগী হারিস ইবনে হারস সর্বশেষ তামিমি বীর শোয়েব ইবনে সালেহ। এই তথ্যগুলো ইহুদিরা বিশ্বাস করে- এবং তাদের বিশ্বাস এটাও দাজ্জালকে ধ্বংস করতেই মাহাদী-মাহমুদ-মানসুর-শোয়াইবদের আগমন ঘটবে জেরুজালেমেই। এর ফলে সেখানে নির্বিচারে গণহত্যা চলছে! বেসামরিক, নারী ও বয়স্ককের পাশাপাশি খুন করা হচ্ছে নিষ্পাপ শিশুদের। অথচ যেকোনো যুদ্ধের নিয়ম কোনো বেসামরিক কোনোভাবেই খুন করা যাবে না, শিশুদের খুনের প্রশ্নই আসে না। সেই নিয়ম অগ্রাহ্য করেই চলছে ইসরায়েলের গণহত্যা! 

এটা কোনো যুদ্ধ নয়, অবরুদ্ধদের সঙ্গে যুদ্ধ চলে না। তাহলে কেন গাজার নারী ও শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে! মূলত ভীতি! তাদের ধারণা হয়তো গাজা থেকেই জন্ম নেবে ইমাম মাহাদী-মাহমুদ-মানসুর-শোয়াইবরা। শিশুদের ধ্বংস করলে এদের আগমন ঠেকানো সম্ভব, অনেকটা ফেরাউনের মতো ঘটনা। গণকদের দেওয়া নির্দিষ্ট সময়ে যেন কোনো শিশুর জন্ম না হয়, জন্ম হলে তার মৃত্যু নিশ্চিত। নয়তো সে শিশু হবে ভবিষ্যতের নবী মুসা।

ইসরায়েলের এটাও জানার কথা এদের কারো জন্মই ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে হবে না, তবু তাদেরকে মারার কারণ? আরববিশ্ব দুর্বল নয়তো প্রভুভক্ত। তাই ন্যাটো তথা মার্কিন আক্রমণের শিকার প্রথমে ইরাক, লিবিয়া, আফগানিস্তান, সিরিয়া, ধারাবাহিকভাবে এই খপ্পড়ে পড়বে- জর্ডান, লেবানন, মিশর। এদেরকে দমন করলে নিস্তেজ হয়ে আসবে ইরান, সৌদি আরব, কাতার- কুয়েত ও পাকিস্তান। মধ্যপ্রাচ্যের কোনোভাবেই ইসরায়েলের হাত থেকে মুক্ত হওয়া সম্ভব নয়। আমেরিকাও মধ্যপ্রাচ্যকে মুক্ত করতে পারবে না। কারণ, আমেরিকার সিনেটর থেকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, অভ্যন্তরীণ যেকোনো রাজনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি, পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণ করে American Israel Public Affairs Committee সংক্ষেপে (AIPAC)। আমেরিকান ইসরায়েল পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কমিটি, বা সংক্ষেপে এইপ্যাক (AIPAC), যুক্তরাষ্ট্রের একটি অন্যতম প্রভাবশালী লবিং সংগঠন, যার মূল লক্ষ্য- যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের মধ্যে শক্তিশালী এবং ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখা। ১৯৬৩ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। আমেরিকার কোনো প্রেসিডেন্ট যখন চায়, ফিলিস্তিন মুক্ত হবে, ইরানের পরমাণু অস্ত্র বিষয়ে বৈঠক হবে, অথবা মধ্যপ্রাচ্য স্বাধীন নীতিতে চলবে, তখনই এইপ্যাক সচল ও সজ্ঞানে বিরোধীতা শুরু করে এবং তাকে রাষ্ট্রক্ষমতা থেকে দূরে সরানোর সকল ধরনের কৌশল বা প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে। এই প্যাকের হয়ে প্রচারণার গুরুদায়িত্বে থাকে সিএনএন, ফক্স নিউজ, নিউইয়র্ক টাইমসের মতো শক্তিশালী মিডিয়া। 

ইসরায়েলের এমন অপতৎপরতা উৎখাত করতে প্রয়োজন সম্মিলিত প্রচেষ্টা। এজন্য প্রথমেই এগিয়ে আসতে হবে আরববিশ্বকে। তাহলেই গর্ভবতী মহিলা তাঁর গর্ভের সন্তান জন্ম দেয়ার নিরাপদ স্থান পাবে, শিশু পাবে নিরাপদ মা। 

লেখক: কবি ও কথাসাহিত্যিক
 

তারা//

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইসর য় ল র ধ ব স কর ড ট ম পল ক ত কর আম র ক ত করত প রথম অবস থ ন ইসর সহয গ

এছাড়াও পড়ুন:

সার্চ দুনিয়ার নতুন দিগন্ত জিইও: দেশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো কী প্

ইন্টারনেট সার্চ দুনিয়ায় চলছে নীরব এক বিপ্লব। তথ্য খোঁজার ধরন বদলে যাচ্ছে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে দ্রুত। আগে যেখানে গুগলে উচ্চ র‌্যাংকিং মানেই ছিল সাফল্য, এখন সেই জায়গা নিচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)-নির্ভর সার্চ টুল।

সার্চ জগতের নতুন চ্যালেঞ্জ

চ্যাটজিপিটি, গুগল জেমিনি, মাইক্রোসফট কপিলট কিংবা পারপ্লেক্সিটি এআই-এগুলো আর শুধু সার্চ ইঞ্জিন নয়, বরং উত্তর তৈরিকারক ইঞ্জিন। ব্যবহারকারী এখন শুধু ‘লিংক’ নয়, বরং সরাসরি উত্তর পেতে চায়। আর এই পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্যই এসেছে নতুন এক কৌশল- জিইও বা জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন।

জিইও কী?

জিইও (জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) হলো এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে আপনার ওয়েবসাইট ও কনটেন্ট এমনভাবে সাজানো হয় যাতে এআই-চালিত সার্চ ইঞ্জিন সহজেই আপনার তথ্য চিনতে, বুঝতে এবং ব্যবহারকারীর প্রশ্নের উত্তরে সেটি অন্তর্ভুক্ত করতে পারে।

আগে ব্র্যান্ডগুলোর ফোকাস ছিল গুগলের প্রথম পাতায় জায়গা করে নেওয়া। কিন্তু এখন গুরুত্ব পাচ্ছে- চ্যাটজিপিটি বা জেমিনি-এর উত্তরে আপনার ব্র্যান্ডের নাম আসছে কি না!

এসইও বনাম জিইও: সার্চ দুনিয়ার নতুন যুগের পালাবদল

অনেকেই এসইও (সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) এবং জিইও (জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) এক মনে করেন, কিন্তু এদের মধ্যে মূলত লক্ষ্য ও কৌশল ভিন্ন। এসইও হচ্ছে পুরোনো পদ্ধতি, অন্যদিকে জিইও হচ্ছে নতুন পদ্ধতি।

* মূল লক্ষ্য
এসইও: সার্চ ইঞ্জিনে র‌্যাংক বাড়ানো
জিইও: এআই সার্চের উত্তরে দৃশ্যমান হওয়া

* কাজের ধরন
এসইও: কিওয়ার্ড ও ব্যাকলিংক ভিত্তিক
জিইও: কনটেক্সট, প্রাসঙ্গিকতা ও ব্র্যান্ড অথরিটি নির্ভর

* ফলাফল
এসইও: ক্লিক ও ট্রাফিক বৃদ্ধি
জিইও: ব্র্যান্ড উল্লেখ ও আস্থা বৃদ্ধি

* প্ল্যাটফর্ম
এসইও: গুগল, বিং ইত্যাদি সার্চ ইঞ্জিন
জিইও: চ্যাটজিপিটি, জেমিনি, পারপ্লেক্সিটি, এসজিই ইত্যাদি এআই সার্চ

এসইও এখনও গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু ভবিষ্যতের সার্চ ইকোসিস্টেমে জিইও সমান অপরিহার্য হয়ে উঠছে।

বাংলাদেশি ব্যবসার জন্য জিইও-এর গুরুত্ব

বাংলাদেশে ডিজিটাল মার্কেটের ক্রমবর্ধমান প্রবৃদ্ধি স্পষ্টভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শিক্ষা, ট্রাভেল, স্বাস্থ্যসেবা, ই-কমার্স, রিয়েল এস্টেট- প্রায় প্রতিটি খাতেই ব্যবসা অনলাইনে আরো দৃশ্যমান হতে চাচ্ছে। কিন্তু বদলেছে মানুষের সার্চ করার ধরন। এখন তারা শুধু গুগলে সার্চ করেই সন্তুষ্ট থাকছে না, তারা এআই-চালিত সার্চ টুলগুলো যেমন চ্যাটজিপিটি, জেমিনি বা পারপ্লেক্সিটি-এর মাধ্যমে সরাসরি উত্তর খুঁজছে। 

গার্টনারের এক গবেষণা অনুযায়ী, ২০২৬ সালের মধ্যে প্রচলিত সার্চ ইঞ্জিনে সার্চ ভলিউম প্রায় ২৫ শতাংশ কমে যাবে- কারণ ব্যবহারকারীরা দ্রুতই এআই-চালিত সার্চ ও চ্যাটবটের দিকে ঝুঁকছে। (তথ্যসূত্র: Gartner, “Search Engine Volume Will Drop 25% by 2026, Due to AI Chatbots and Other Virtual Agents)

তবে এই পরিবর্তনের প্রভাব ব্যবসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ধরুন, কেউ চ্যাটজিপিটি-তে লিখল, ‘ঢাকায় সেরা অ্যাকাউন্টিং ফার্ম কোনটি?’ যদি আপনার কোম্পানির নাম বা কনটেন্ট এআই-এর তৈরি উত্তরে না আসে, তাহলে সম্ভাব্য ক্লায়েন্ট ও ব্যবসার সুযোগ হাতছাড়া হচ্ছে।

মূলত এখানেই জিইও-এর গুরুত্ব উঠে আসে। জিইও ব্যবহার করে কনটেন্ট এমনভাবে সাজানো যায় যাতে এআই সার্চ সিস্টেম আপনার ব্র্যান্ডকে সহজেই চিনতে পারে, বুঝতে পারে এবং ব্যবহারকারীর প্রশ্নের উত্তরে উল্লেখ করে। অর্থাৎ, বাংলাদেশের প্রতিটি ব্যবসা যদি এআই-এর দুনিয়ায় দৃশ্যমান থাকতে চায়, জিইও’র সঙ্গে খাপ খাওয়ানো এখন আর বিকল্প নয়- এটি একান্ত প্রয়োজন।

জিইও’র জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন?

জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (জিইও) কোনো একদিনে শেখার মতো বিষয় না- এটি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া, যেখানে ব্যবসাগুলোকে নিজেদের কনটেন্ট, উপস্থিতি ও বিশ্বাসযোগ্যতা এআই-বান্ধব করে গড়ে তুলতে হয়। নিচে ধাপে ধাপে দেখা যাক, কীভাবে আপনি জিইও’র পথে প্রস্তুত হতে পারবেন।

১. অনলাইন উপস্থিতি যাচাই করুন

জিইও’র প্রথম ধাপ হলো আপনার ব্যবসা বা ব্র্যান্ডের বর্তমান অনলাইন উপস্থিতি যাচাই করা। চ্যাটজিপিটি বা পারপ্লেক্সিটি-এর মতো এআই-চালিত সার্চ টুলে সার্চ দিন ‘বাংলাদেশে সেরা (আপনার ইন্ডাস্ট্রি)-এর কোম্পানিগুলো কোনগুলো?’

যদি সার্চের উত্তরে আপনার নাম না আসে, বোঝা যাবে যে আপনার এআই-দৃশ্যমানতা এখনও সীমিত। এই ক্ষেত্রে আপনাকে জিইও অনুযায়ী কনটেন্ট ও অনলাইন উপস্থিতি বাড়াতে কাজ শুরু করতে হবে।

২. বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করুন

জেনারেটিভ এআই সার্চ সিস্টেম সেই উৎসকেই অগ্রাধিকার দেয়, যা নির্ভরযোগ্য ও যাচাইযোগ্য। তাই আপনার ওয়েবসাইটে ব্র্যান্ড, টিম, যোগাযোগ ও রিভিউসহ সব তথ্য সম্পূর্ণ ও স্বচ্ছ রাখুন।

গুগল বিজনেস প্রোফাইল নিয়মিত আপডেট করুন-  ঠিকানা, সময়, পোস্ট ও রিভিউসহ।

বিশ্বস্ত সংবাদমাধ্যম ও ব্লগে ব্র্যান্ডের উল্লেখ বাড়ান।

E-E-A-T (Experience, Expertise, Authoritativeness, Trustworthiness) বজায় রাখুন।

এভাবেই এআই ও ব্যবহারকারীর কাছে আপনার ব্র্যান্ড একটি বিশ্বাসযোগ্য সোর্স হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে- যা জিইও সাফল্যের মূল চাবিকাঠি।

৩. কনভারসেশনাল কনটেন্ট লিখুন

এআই সার্চ এখন ব্যবহারকারীর প্রশ্নভিত্তিক অনুসন্ধানকে গুরুত্ব দেয়। তাই আপনার কনটেন্ট তৈরি করুন এমনভাবে যেন এটি প্রাকৃতিক প্রশ্ন ও কথোপকথনের মতো শোনায়। উদাহরণ: ‘Where can I find a trusted IELTS coaching center in Dhaka?’ ‘Where can I apply for a blue-collar job?’ এ ধরনের কনটেন্ট এআই-এর চোখে আরো সহজে বোঝার মতো হয় এবং ব্যবহারকারীর প্রশ্নের উত্তর হিসেবে উল্লেখযোগ্য।

৪. বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে সক্রিয় থাকুন

এআই শুধু ওয়েবসাইট থেকে তথ্য সংগ্রহ করে না। এটি ফেসবুক, ইউটিউব, লিংকডইন, কোরা এবং অন্যান্য সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম থেকেও তথ্য সংগ্রহ করে। তাই বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে আপনার উপস্থিতি নিশ্চিত করা জিইও-এর জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

৫. এসইও এবং জিইও একসাথে ব্যবহার করুন

ডিজিটাল দুনিয়ায় এখন শুধু সার্চ র‌্যাংকই যথেষ্ট নয়। এসইও যেমন গুগল সার্চে আপনার কনটেন্টকে শীর্ষে নিয়ে আসে, তেমনি নতুন যুগের জিইও (জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) আপনার ব্র্যান্ডকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক সার্চে আরো দৃশ্যমান করে তোলে।

এসইও মূলত গুগল ও অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিনে ওয়েবসাইটের অবস্থান উন্নত করে, আর জিইও শেখায়- কীভাবে এআই মডেলগুলো আপনার ব্র্যান্ডকে চিনবে, উল্লেখ করবে এবং বিশ্বাস করবে।

দুটি কৌশল একসাথে প্রয়োগ করলে অনলাইন উপস্থিতি অনেক বেশি শক্তিশালী হয়। একদিকে সার্চে দৃশ্যমানতা বাড়ে, অন্যদিকে এআই-নির্ভর প্ল্যাটফর্মগুলোতেও আপনার ব্র্যান্ডের নাম উঠে আসে স্বতঃস্ফূর্তভাবে।

ভবিষ্যতের সার্চ জগতে টিকে থাকতে হলে এখনই সময়- এসইও এবং জিইও-কে একসাথে কাজে লাগানোর।

বাংলাদেশের ব্যবসার জন্য জিইও’র নতুন সম্ভাবনা

জিইও বাংলাদেশের ব্যবসাগুলোর জন্য হতে পারে এক গেম চেঞ্জার। আগে যেখানে অনলাইন দৃশ্যমানতা মানেই ছিল গুগলে র‌্যাংক করা, এখন সেটি ধীরে ধীরে স্থান ছেড়ে দিচ্ছে এআই সার্চ ভিজিবিলিটি–কে।

আজ যদি কোনো ব্যবহারকারী চ্যাটজিপিটি বা জেমিনি-তে জিজ্ঞেস করে- 

‘বাংলাদেশে নির্ভরযোগ্য অনলাইন বই বিক্রির সাইট কোনটা?’

অথবা, ‘ঢাকায় সেরা ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি কারা?’

যদি আপনার ব্র্যান্ডের নাম সেই উত্তরে উঠে আসে, সেটিই হবে প্রকৃত দৃশ্যমানতা- শুধু ক্লিক নয়, বরং আস্থা, প্রভাব ও ব্র্যান্ড অথরিটি–এর প্রতিফলন।

বাংলাদেশে এখন প্রতিদিন শত শত নতুন অনলাইন ব্যবসা শুরু হচ্ছে- ই–কমার্স, এডুকেশন, হেলথটেক, রিয়েল এস্টেট, ফাইন্যান্স, এমনকি ছোট স্টার্টআপরাও দ্রুত ডিজিটাল হচ্ছে। কিন্তু একইসঙ্গে প্রতিযোগিতাও বেড়ে যাচ্ছে বহুগুণে।

এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে শুধু এসইও নয়, জিইও–কেন্দ্রিক কৌশলও অপরিহার্য।

জিইও’র ভবিষ্যৎ

খুব শিগগিরই এআই সার্চ টেক্সটের বাইরে গিয়ে ভয়েস, ভিডিও ও ইমেজ কনটেন্ট থেকেও উত্তর তৈরি করবে। তখন জিইও কেবল ওয়েবসাইট নয়, বরং ভিডিও, পডকাস্ট, সোশ্যাল প্রোফাইল, নিউজ রিপোর্ট- সবকিছুর মধ্যেই প্রভাব ফেলবে।

তাই এখন থেকেই যারা জিইও-কেন্দ্রিক কৌশল গ্রহণ করবে, ভবিষ্যতের সার্চ রেভোলিউশনে নেতৃত্ব দেবে তারাই।

উপসংহার

জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (জিইও) শুধু নতুন ট্রেন্ড নয়- এটি ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের পরবর্তী অধ্যায়।

এসইও যেমন আপনাকে সার্চ রেজাল্টে নিয়ে যায়, জিইও তেমনি আপনাকে নিয়ে যাবে এআই–এর উত্তরে।

‘ভবিষ্যতের সার্চে র‌্যাংক নয়, ব্র্যান্ডের বিশ্বাসযোগ্যতাই হবে সাফল্যের আসল মাপকাঠি।’

লেখক: হেড অব ওয়েব অ্যানালাইসিস অ্যান্ড এসইও ডিরেক্টর, ইন্টেলেক আইটি এলএলসি (ইউএসএ অ্যান্ড বাংলাদেশ)

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ