মহাকাশে ঘুরে পৃথিবীতে ফিরে এলেন মার্কিন পপতারকা কেটি পেরিসহ ছয়জন নারী। বাংলাদেশ সময় সোমবার সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটে যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম টেক্সাসের ব্লু অরিজিনের উড্ডয়নক্ষেত্র থেকে মহাকাশযানটি উৎক্ষেপণ করা হয়। কেটি পেরি ছাড়াও মহাকাশযানে ছিলেন জেফ বেজোসের বাগ্‌দত্তা লরেন সানচেজ, মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিবিএসের সাংবাদিক গেইল কিং, যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার মহাকাশ প্রকৌশলী আয়েশা বোয়ে, নাগরিক অধিকারকর্মী আমান্ডা নুয়েন ও চলচ্চিত্র প্রযোজক কেরিয়ান্ন ফ্লিন। খবর-বিবিসি

মহাকাশে থাকাকালীন তারা প্রায় তিন মিনিটের মতো ওজনহীনতায় মহাকাশে ভেসে বেড়ান। ক্যাপসুলের বড় জানালা থেকে পৃথিবীর দৃশ্য উপভোগ করেন। এরপর তিনটি প্যারাসুট ব্যবহার করে ক্রু ক্যাপসুলটি পৃথিবীতে ফিরে আসে।  

অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা ও মার্কিন ধনকুবের জেফ বেজোসের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ব্লু অরিজিনের তৈরি নিউ শেপার্ড মহাকাশযানে করে মহাকাশের নিম্ন কক্ষপথে ভ্রমণ করেন তাঁরা। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাসের ‘লঞ্চ সাইট ওয়ান’ থেকে পুনরায়ব্যবহারযোগ্য স্বচালিত একটি রকেট উৎক্ষেপণের মাধ্যমে শুরু হয় ছয় নারীর এই যাত্রা। ১০ মিনিট পর তারা পৃথিবীতে ফিরে আসেন। মহাকাশে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে পপ শিল্পী কেটি পেরিকে গান গাইতে শোনা গেছে।

১৯৬৩ সালে একক মিশনে মহাকাশে ৭০ ঘণ্টারও বেশি সময় কাটিয়েছিলেন রাশিয়ার নভোচারী ভ্যালেন্তিনা তেরেসকোভা। এ মিশনের নেতৃত্ব ছিলেন বেজোসের বাগদত্তা সানচেজ। ‘নিউ শেপার্ড’ প্রোগ্রামের অংশ হিসাবে এখন পর্যন্ত ৫২ জনকে মহাকাশে নিয়ে গেছে মার্কিন বিলিয়নেয়ার ও ই কমার্স কোম্পানি অ্যামাজনের প্রধান নির্বাহী বেজোসের কোম্পানিটি, যার মধ্যে তিনি নিজেও ছিলেন। ২০২১ সালে নিউ শেপার্ডের প্রথম যাত্রায় যোগ দিয়েছিলেন বেজোস। ব্লু অরিজিন লাইভস্ট্রিমে সানচেজ বলেছেন, ওই সময় মহাকাশ ঘুরে এসে বেজোস একেবারে ‘মাটির মানুষ হয়ে গেছেন।

পৃথিবী থেকে সর্বোচ্চ একশ কিলোমিটার উচ্চতায় পৌঁছায় রকেটটি, যেখানে ক্যাপসুলটি ‘কারমান লাইন’ অতিক্রম করার সঙ্গে সঙ্গে কার্যত মহাকাশে প্রবেশ করবেন নারীরা। আন্তর্জাতিকভাবে মহাকাশের সীমানা হিসাবে স্বীকৃত ‘কারমান লাইন’। তবে মহাকাশে ভ্রমনকারী এ পাঁচজন নারীকে নভোচারী হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ করবে না যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বা এফএএ, মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা ও মার্কিন সামরিক বাহিনী। কারণ, তাদের সবারই নভোচারী হিসেবে গণ্য হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতার অভাব রয়েছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: অ য ম জন য ক তর ষ ট র

এছাড়াও পড়ুন:

সাদপন্থীদের ইজতেমা আয়োজন করতে না দেওয়ার দাবি

টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে মাওলানা সাদ কান্ধলভী অনুসারীদের (সাদপন্থী) ইজতেমা আয়োজন করতে না দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাবলিগ জামাতের শুরায়ে নেজাম (জুবায়েরপন্থী) অনুসারীরা। পাশাপাশি তাঁরা সরকারের প্রস্তাবে রাজি হয়ে আগামী বছরের মার্চ মাসে টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমা করার কথাও বলেছেন। গত আয়োজনে ইজতেমা মাঠে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও সাজা নিশ্চিতের দাবিও জানান তাঁরা।

আজ সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়। ‘হযরত ওলামায়ে কেরাম ও দাওয়াত ও তাবলিগের সাথীবৃন্দের’ উদ্যোগে এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়।

এর আগে গত রোববার সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনের পর বিশ্ব ইজতেমা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তাবলিগের শুরায়ে নেজামের সাথী মুফতি আমানুল হক বলেন, ‘কোরআন ও হাদিসের কথা যারা বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে, তাদের ইসলামি দাওয়াতের এই ময়দানে জায়গা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। রাসুল (সা.)-এর তরিকা, সুন্নাহ ও হাদিসের অনুসরণে যারা তাবলিগি কার্যক্রম পরিচালনা করে, কেবল তারাই ইজতেমা করার অধিকার রাখে।’

মুফতি আমানুল হক আরও বলেন, ‘সরকারের ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে জারি করা প্রজ্ঞাপনে সাদপন্থীরা শেষবারের মতো টঙ্গী ময়দানে ইজতেমা করার অনুমতি পেয়েছিল। সেই প্রজ্ঞাপনে তাদের স্বাক্ষরও রয়েছে। সরকার তখনই বুঝেছিল—একই মাঠে দুই পক্ষের ইজতেমা আয়োজন দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি।’

২০২৪ সালের ডিসেম্বরের ইজতেমা মাঠে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে মুফতি আমানুল হক বলেন, ‘গত বছরের ১৮ ডিসেম্বরের রাতে সাদপন্থীদের অনুসারীরা অতর্কিত হামলা চালায়। তাদের বাংলাদেশি নেতা ওয়াসিফ সাহেবের চিঠিতে উল্লেখ ছিল, “যুগটা ব্যতিক্রমী, সবাই প্রস্তুতি নিয়ে আসবে”—এই প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই তারা হামলার পরিকল্পনা করেছিল। ঘুমন্ত মুসল্লিদের ওপর টর্চলাইট নিয়ে হামলা চালানো হয়, যা একতরফা সন্ত্রাসী কার্যক্রম ছিল।’ তিনি দাবি করেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বৈঠকেও প্রমাণিত হয়েছে, ‘এ হামলা একতরফাভাবে সাদপন্থীদের পক্ষ থেকেই হয়েছিল।’

মুফতি কেফায়েত উল্লাহ আজহারী তাঁর লিখিত বক্তব্যে বলেন, কিছু স্বার্থান্বেষী ও ইসলামবিরোধী মহলের প্ররোচনায় তাবলিগ জামাতে বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে। ভারতের মাওলানা সাদ সাহেবের অনুসারীরা বেআইনি পথে টঙ্গী ইজতেমা মাঠ ও কাকরাইল মসজিদে প্রবেশের চেষ্টা করেন। এমনকি তাঁরা সরকারকে বিব্রত করতে ‘যমুনা ভবন ঘেরাও’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর বিশৃঙ্খলাকারীদের কাকরাইল মসজিদে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয় এবং শুরায়ে নেজামপন্থীদের কাকরাইলে দাওয়াত কার্যক্রম চালানোর অনুমতি দেয় বলে জানান মুফতি কেফায়েত উল্লাহ আজহারী। তিনি বলেন, ২০২৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারির ৬৩ নম্বর স্মারকে বলা হয়, সাদপন্থীরা শেষবারের মতো ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে টঙ্গীতে ইজতেমা করতে পারবে, এরপর আর নয়। তারা স্বাক্ষর দিয়ে সেই শর্ত মেনে নিয়েছিল।

শুরায়ে নেজামপন্থীরা বলেন, ‘আমরা সরকারের সিদ্ধান্তকে শ্রদ্ধার সঙ্গে গ্রহণ করছি। আগামী বছরের মার্চে ইজতেমা আয়োজনের জন্য প্রস্তুতি শুরু করা হবে।’

সংবাদ সম্মেলন থেকে সরকারের কাছে ৪ দফা দাবি পেশ করেন তাবলিগ জামাতের শুরায়ে নেজাম (জুবায়েরপন্থী) অনুসারীরা। তাঁদের দাবিগুলো হলো ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ইজতেমার তারিখ ঘোষণা, টঙ্গী ইজতেমা মাঠকে অস্থায়ীভাবে ‘কেপিআই’ হিসেবে ঘোষণা, বিদেশি মেহমানদের ভিসা সহজীকরণের পরিপত্র নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে প্রকাশ ও গত বছরের ইজতেমা মাঠে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচার।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মাওলানা শাহরিয়ার মাহমুদ, মতিন উদ্দিন আনোয়ার, রুহুল আমিন এবং তাবলিগ জামাত বাংলাদেশের (শুরায়ে নেজাম) মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ