বৈশাখের প্রথম প্রহরে কবিতা–হানিফের প্রথম সন্তান
Published: 16th, April 2025 GMT
‘স্বামী বিদেশ’ এই কথা নিয়ে যতটা হাসাহাসি করি আমরা; ঠিক ততটাই কষ্টের হয়ে কানে বাজে দক্ষিণ আফ্রিকা প্রবাসী আবু হানিফের স্ত্রী কবিতা আক্তারের। কেননা, তিনি খুব ভালো করেই জানেন একজন প্রবাসী কতটা কষ্ট করেন তাঁর পরিবারের সুখের জন্য। অন্যদিকে প্রবাসীর স্ত্রীকে কতটা কষ্ট করতে হয় সংসারের জন্য, তাও এতদিনি বুঝে গিয়েছেন বিয়ের আগে অনেকটা গা বাঁচিয়ে থাকা মেয়েটি।
২০২১ সালে পারিবারিক সিদ্ধান্তে জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জ উপজেলার সিঁদুলী ইউনিয়নের চরভাটিআনি গ্রামের বাসিন্দা প্রবাসী আবু হানিফের সঙ্গে সংসার পাতেন গায়ে বাতাস লাগিয়ে ঘুরে বেড়ানো কবিতা আক্তার। তাঁর জীবনটা তখন কবিতার মতোই ছিল ছন্দময়! সব কিছুই দেখতেন ইতিবাচক চোখে। স্বামী আবু হানিফ বিয়ের প্রথম রাতে যেন ছন্দপতন ঘটান কবিতার জীবনের। নিজের প্রবাস জীবনের কষ্টের কথা স্ত্রীকে বলার পর কবিতা নতুন করে ভাবনায় পড়েন। মানুষের এমনও জীবন হতে পারে? নিজেকে প্রশ্ন করতে থাকেন বার বার। এরই মধ্যে ভালোবেসে ফেলেন আবু হানিফকে। স্বামীকে কথাও দেন, সংসারের জন্য সব ধরনের কষ্ট সহ্য করে যাবেন; যদি থাকে স্বামীর ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি।
দেখতে দেখতে ছুটি শেষ হয়ে যায় হানিফের। প্রিয় কবিতাকে রেখে উড়াল দেন দক্ষিণ আফ্রিকার উদ্দেশে। তবে প্রিয় স্ত্রী কবিতার ছন্দ যেন খেলা করতে থাকে তার মনে। চোখের আড়াল হলে মনের আড়াল হয় না কিংবা আসল দেখাটা যে চোখের আড়াল থেকে দেখতে হয় তা বেশ ভালো উপলব্ধি করতে থাকেন হানিফ। এরই মধ্যে লাজুক মুখে কবিতা স্বামীকে শোনায় নতুন অতিথির কথা। এমন খবরে হানিফ যেন শূন্যে ভাসতে থাকে কিছুক্ষণ! পরক্ষণে নিজেকে সামলে নিয়ে স্ত্রীর প্রতি আরও মনোযোগী হন।
নিয়মিত ডাক্তার-চেকআপ, খাবার রুটিন থেকে শুরু করে সবকিছুর তদারকি করতে থাকেন হানিফ।
দিন এগোতে থাকে। দেশে আসার জন্য মনও আকুল হতে থাকে হানিফের। এরই মধ্যে দিন গড়িয়ে নির্দিষ্ট মাসে এসে ঠেকে। ডাক্তার তারিখ ঠিক করে দেন। আরও ব্যাকুল হয়ে ওঠে হানিফের মন। এ সময়টা স্ত্রীকে দেওয়ার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কিছু যেন নেই তাঁর কাছে। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। তারা যে প্রবাসী; তাদের যে অনেক কিছুই দূর থেকে মেন নিতে হয়!
ছুটি না পেয়ে এই যাত্রায়ও হানিফ দূর থেকে মেনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন। এরই মধ্যে শেষ হয়ে যায় চৈত্র। রাত পোহালেই পহেলা বৈশাখ এসে ধরা দেবে বাংলায়। সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত এগোতে থাকে গভীরের দিকে। ঘড়ির কাঁটা ২টায় ঠেকতে প্রসব ব্যথা ওঠে কবিতার। কোনো উপায় না পেয়ে তড়িঘড়ি ভ্যানে করে মাদারগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। সেখানে ডাক্তার না পেয়ে বদল হয় সিদ্ধান্ত। সেই সঙ্গে বদলে যায় বাহনও। সিএনজিচালিত অটোরিকশা করে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। সেখানেও মেলে না গাইনি ডাক্তারের দেখা। দ্রুত শহরের পাঁচ রাস্তা মোড়ে হযরত শাহ জামাল (রা.
কবিতার পরিবারের যাচ্ছে নির্ঘুম রাত। ওদিকে কাজ শেষে বাসায় ফিরে নামাজের বিছানায় হানিফ। স্ত্রীর জন্য দোয়া করা ছাড়া এ মুহূর্তে যে তাঁর কিছু করার নেই। সময় বিবেচনায় দক্ষিণ আফ্রিকা বাংলাদেশ থেকে চার ঘণ্টা পেছানো। তাই হানিফ কাজ থেকে ফিরে সেখানে সন্ধ্যা থেকে সময় কাটাচ্ছেন নামাজের বিছানায়।
সময় ছুটছে তার আপন গতিতে। কেবল গতি হারাচ্ছে হযরত শাহ জামাল (রা.) জেনারেল হাসপাতালের গাইনি বিভাগে! তবু ভোরের দিকে গড়ালো রাত। বাংলা বছরের প্রথম সূর্য উঠেছে নতুন আশার আলো নিয়ে; এই বাংলায় একই সঙ্গে কবিতা-হানিফের পৃথিবীতেও! নবজাতকের আগমনে দক্ষিণ আফ্রিকায় হানিফের ছোট্ট রুম আর হযরত শাহ জামাল (রা.) জেনারেল হাসপাতালের গাইনি বিভাগে বইলো বৈশাখী ঝড়োহাওয়া!
নতুন অতিথির আগমনের পরক্ষণে ভিডিও কল দেন আবু হানিফ। সন্তানের মুখ দেখার আগে তিনি স্ত্রী কবিতা আক্তারের মুখ দেখতে চাইলেন। তারপর প্রথম এবং একমাত্র পুত্র সন্তানের মুখ দেখেন প্রবাসী হানিফ।
জামালপুর হযরত শাহ জামাল (রা.) জেনারেল হাসপাতালের ৫০৮ নম্বর কক্ষে নতুন অতিথিকে নিয়ে এসেছেন কবিতা আক্তারের বাবা-মা। অর্থাৎ সদ্য জন্ম নেওয়া সন্তানের নানা-নানি। তারা আদর করে নাতির নাম রেখেছেন আয়মান।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: হযরত শ হ জ ম ল র প রথম র জন য প রব স
এছাড়াও পড়ুন:
ইবিতে ছুটি ছাড়াই কর্মস্থলে অনুপস্থিত সেই মোজাম্মেল
হযরত মোহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তিকারী ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আল হাদিস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সাব-রেজিস্ট্রার মোজাম্মেল হক পলাতক রয়েছেন। তিনি কোনো ধরনের ছুটি না নিয়ে কর্সস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন।
এর আগে, হযরত মোহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তির বিষয়টি সামনে এলে ওই কর্মকর্তার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন ও উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। একই দাবিতে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে ঝিনাইদহ জেলা ইমাম পরিষদ।
শিক্ষার্থীরা বলেন, মোজাম্মেল হক দীর্ঘদিন থেকে মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সা.)-কে নারীলোভী বলে কটুক্তি করে আসছিলেন। অথচ মহান আল্লাহ স্বয়ং মহানবী (স.) এর চরিত্রের সনদ দিয়েছেন। সমস্ত পৃথিবীর রহমত স্বরূপ তাকে প্রেরণ করা হয়েছে। তার এ হীন কাজের জন্য আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
আরো পড়ুন:
রাসূল (সা.)-কে নিয়ে কটুক্তিকারী ইবি কর্মকর্তার বহিষ্কার দাবি
নারী কমিশনের সুপারিশ প্রত্যাহার দাবি ইবি শিক্ষার্থীদের
শিক্ষার্থীরা মনে করেন, সারা দেশের মানুষকে আলোর পথ দেখাবে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু এ বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি জায়গায় এবং আল হাদিস বিভাগের কর্মকর্তার রাসূলের শানে এ ধরনের বেয়াদবি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। তাই প্রশাসনের কাছে এই কর্মকর্তার বহিষ্কারের দাবি জানাচ্ছি।
ঝিনাইদহ ইমাম পরিষদের স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, মোজাম্মেল হক নামের এক ব্যক্তি আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে নারীলোভী ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করার পাশাপাশি ইসলামের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে চরম কটূক্তি ও অশালীন মন্তব্য করেছে যা দেশের কোটি কোটি মুসলমানের ধর্মীয় অনুভূতিতে চরম আঘাত হেনেছে। এমন ঘৃণ্য ও উসকানিমূলক বক্তব্য শুধু ধর্মীয় সহনশীলতা নষ্ট করে না, বরং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে বিঘ্নিত করে সমাজে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করতে পারে। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিকে দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. আকতার হোসেন বলেন, “এ ঘটনায় আগেই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এটি এখন জাতীয় ইস্যু হয়ে গেছে। তবে অভিযুক্ত মোজাম্মেল হক বিভাগে আসছে না। এ বিষয়ে আগামীকাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে মিটিং আছে। সেখানে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তবে এ বিষয়ে অভিযুক্ত মোজাম্মেল হকের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
মহানবী (সা.)-কে কটুক্তিকারী মোজাম্মেল হক ঝিনাইদের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার তাহেরহুদা ইউনিয়নের ভুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা। মহানবী (সা.)-কে নারীলোভী বলে কটুক্তি করার অভিযোগে গ্রামবাসী তাকে গণধোলাই দিয়ে আটকে রাখেন এবং পুলিশকে খবর দেন। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে মৌখিক মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়।
ঢাকা/তানিম/মেহেদী