দ্রুত চাকসু নির্বাচনের দাবিতে ছাত্রশিবিরের স্মারকলিপি
Published: 16th, April 2025 GMT
দ্রুত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) কার্যকর ও নির্বাচনের দাবিতে প্রশাসন বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে শাখা ছাত্রশিবির।
বুধবার (১৬ এপ্রিল) দুপুর ২টায় উপাচার্য কার্যালয় ও প্রক্টর অফিসে চবি শাখা শিবিরের সাধসেক্রেটারি মোহাম্মদ আলীর নেতৃত্বে এ স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।
স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, চবি এ দেশের একটি স্বনামধন্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তবে গভীর উদ্বেগের বিষয়, দীর্ঘদিন ধরে এখানে চাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। প্রতিষ্ঠান হিসেবে চাকসু কার্যকর ভূমিকা পালন করতে ব্যর্থ হচ্ছে। এটি ছাত্র সমাজের অধিকার ও গণতান্ত্রিক চর্চার ক্ষেত্রে এক গুরুতর অন্তরায়। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের স্বার্থ ও অধিকার চরমভাবে উপেক্ষিত হচ্ছে।
চাকসুর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি-দাওয়া ও সমস্যা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট উপস্থাপন করতে পারে। পাশাপাশি এটি নেতৃত্ব বিকাশের একমাত্র প্রাতিষ্ঠানিক প্ল্যাটফর্ম, যা শিক্ষার্থীদের চিন্তা-চেতনা, মেধা ও সৃজনশীলতা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
স্মারকলিপিতে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, আমরা বিশ্বাস করি, চাকসু শুধু একটি নির্বাচিত ছাত্র সংসদই নয়; বরং এটি শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে একটি সেতুবন্ধন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, ১৯৯০ সালের পর কোনো চাকসু নির্বাচন হয়নি। এতে শিক্ষার্থীরা নেতৃত্ব বিকাশ, প্রশাসনের সঙ্গে কার্যকর যোগাযোগ এবং ন্যায্য দাবির প্রাতিষ্ঠানিক উপস্থাপন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
শিবির মনে করি, বর্তমান সময়ে চাকসু নির্বাচনের আয়োজন অত্যাবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি শুধু শিক্ষার্থীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় নয়। বরং একটি সুস্থ, গণতান্ত্রিক ও নৈতিক শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত করতেও অপরিহার্য।
স্মারকলিপিতে শাখা ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে বেশকিছু দাবি জানানো হয়েছে। দাবিগুলো হলো- দ্রুত সময়ের মধ্যে চাকসু নির্বাচন আয়োজনের সুনির্দিষ্ট রূপরেখা ও সময়সূচি ঘোষণা করতে হবে; চাকসুর জন্য গঠনতন্ত্র শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে হালনাগাদ করে প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে; বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ে একটি স্বচ্ছ, অংশগ্রহণমূলক ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে হবে; দ্রুত সময়ের মধ্যে ছাত্রসংসদ পুনরায় কার্যকর করে একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।
শাখা ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী বলেন, “আমরা চাই, শিক্ষার্থীদের দাবি আদায়ের অন্যতম প্লাটফর্ম চাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে চবি শিক্ষার্থীরা তাদের অধিকার ফিরে পাবে। সর্বশেষ নব্বইয়ের পর এ পর্যন্ত নির্বাচন না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্বশীল নেতৃত্ব তৈরি হয়নি। শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য দ্রুত চাকসু নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছি।”
ঢাকা/মিজান/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ম রকল প ক র যকর
এছাড়াও পড়ুন:
২২ ক্যাডার নিয়ে চলতেন স্বেচ্ছাসেবক দলের জিতু
বগুড়ায় মেয়েকে উত্ত্যক্ত ও বাবাকে খুনে অভিযুক্ত জিতু ইসলাম দলীয় প্রভাবে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। কথায় কথায় যাকে-তাকে অহেতুক মারধর করতেন। চলতেন ২২ জনের ক্যাডার বাহিনী নিয়ে। তারা সবাই নানা অপকর্মে জড়িত এবং একাধিক মামলার আসামি। তাঁর আয় চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসা থেকে। গতকাল রোববার এলাকায় গিয়ে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা যায়, জিতু ফুলবাড়ী কারিগরপাড়ার মৃত সেকেন্দার আলীর ছেলে। ২০০৩ সালে এলাকায় বালু ব্যবসা নিয়ে প্রতিপক্ষ রবিউল ইসলামকে খুন করেন। সেই মামলায় তাঁর ১৪ বছর সাজা হয়। সাজা খেটে তিন বছর আগে বের হন। এর পর এলাকায় গড়ে তোলেন সন্ত্রাসী বাহিনী। তাঁর বাহিনীতে যে ২২ জন সদস্য, তারা কেউ রাজনৈতিক দলের পদ-পদবিতে নেই। হত্যা মামলা ছাড়াও জিতুর বিরুদ্ধে একটি মাদক ও একটি ডাকাতির মামলা রয়েছে।
ফুলবাড়ীর এক মুদি দোকানি বলেন, জিতু মাঝেমধ্যে তাঁর দোকান থেকে বাকি নিতেন। দু’বছরে বাকির পরিমাণ প্রায় ৪৮ হাজার টাকা হয়। তখন একদিন টাকা চান। এ কারণে জিতু তাঁকে মারধর করে নাকে খত নেন।
বৃন্দাবন এলাকার আরেক ব্যবসায়ী বলেন, মাঝেমধ্যে জিতু তাঁর বাহিনী নিয়ে হাজির হতেন। মোটা অঙ্কের চাঁদা চাইতেন। চাঁদার কমপক্ষে অর্ধেক দিয়ে তবে নিস্তার পাওয়া যেত। এ ছাড়া ঈদে সেলামির নামে মোটা অঙ্কের চাঁদা দিতে হতো তাঁকে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী জানান, তাঁর কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা চান জিতু। না দেওয়ায় দোকানে ককটেল হামলা করেন। বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকায় আগস্টের পর জিতু বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। এলাকার একাধিক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা নিয়ে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে। ছোট ভাই মিতুলও তাঁর বাহিনীর সদস্য।
জিতু গত ১৯ ফেব্রুয়ারি জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের ১০১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির সহসাধারণ সম্পাদকের পদ পান। সন্ত্রাসী হয়ে দলের পদ পাওয়ায় এলাকায় তাঁকে নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পদ পেয়ে তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।
এলাকার এক ভুক্তভোগী বলেন, ‘জিতুর কারণে আমরা মুখ খুলতে পারি না। সে চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসার মাধ্যমে এলাকা অতিষ্ঠ করে তুলেছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক দলের পদ-পদবি পেয়ে ভয়ংকর হয়ে ওঠে। তার নির্যাতনের শিকার অর্ধশতের কম হবে না। তার বখাটেপনার কারণে কেউ মেয়ে বিয়ে দিতে রাজি হতো না।’
এক বছর আগে থেকে ফুলবাড়ির পাশেই শহরের শিববাটি এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করতে থাকেন জিতু। সেই এলাকার বাসিন্দা রিকশাচালক শাকিল হোসেন। শাকিলের মেয়ে স্থানীয় ভান্ডারী সিটি বালিকা বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। এক মাস আগে ৫২ বছর বয়সী জিতু বিয়ের প্রস্তাব দেন শাকিলের মেয়েকে। বিষয়টি শাকিল জেনে রাগ করেন। জিতুর ওপর চড়াও হন। কিছুতে রাজি না হলে নানাভাবে নির্যাতন করতে থাকেন জিতু। তাঁর মেয়েকেও উত্ত্যক্ত করতেন। এরই এক পর্যায়ে শনিবার বিকেলে শাকিলকে পিটিয়ে খুন করেন জিতু ও তাঁর বাহিনী।
এ হত্যার ঘটনায় জিতুকে এক নম্বর আসামি করে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে গতকাল রোববার বগুড়া সদর থানায় হত্যা মামলা করেছেন শাকিলের স্ত্রী মালেকা খাতুন। পুলিশ শনিবার রাতেই জিতু ও তাঁর সহযোগী মতি এবং বিপ্লবকে আটক করে।
সন্ত্রাসীকে দলের পদ দেওয়ার বিষয়ে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সরকার মুকুল বলেন, ‘আমি জানতাম না, সে দলের নাম ভাঙিয়ে এসব অপকর্ম করছে। আমরা তাকে দল থেকে বহিষ্কার করেছি।’ শনিবার রাতে স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী ও সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসানের সই করা বিবৃতিতে জিতু ইসলামকে বহিষ্কার করা হয়। সেই সঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অনুরোধ জানানো হয়।
বগুড়া সদর থানার ওসি হাসান বাসির বলেন, ‘এ মামলার অন্য আসামিদেরও গ্রেপ্তার করা হবে।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ফুলবাড়ী পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক জোবায়ের খান জানান, গতকাল জিতুসহ তিন আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মেহেদী হাসান পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এদিকে হত্যার প্রতিবাদ ও দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম জেলা শাখা। গতকাল বিকেলে শহরের সাতমাথায় সংগঠনের সভাপতি অ্যাডভোকেট দিলরুবা নূরী এতে সভাপতিত্ব করেন।