সামান্য বৃষ্টি হলেই পানি জমে যায় শম্ভুগঞ্জ বাজারে। বাজারের প্রধান রাস্তার পাশে ড্রেন না থাকায় পানি জমে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। ভোগান্তিতে পড়েন বাজারে আসা লোকজন। বাজারটি ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন এলাকায়।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বাজার ইজারা দিয়ে সিটি করপোরেশন রাজস্ব পেলেও ব্যবসায়ীদের সুবিধা-অসুবিধার কথা ভাবেন না। দ্রুত সময়ের মধ্যে রাস্তাটি মেরামতের উদ্যোগ নিতে আহ্বান জানিয়েছেন ব্যবসায়ী নেতারা।
সরেজমিন দেখা গেছে, শম্ভুগঞ্জ বাজারের প্রধান রাস্তাটির প্রায় ৩০০ মিটার টাখনুর ওপর পর্যন্ত পানি। চলাচলে কষ্ট হচ্ছে ক্রেতা-বিক্রেতার। রাস্তাটির দু’পাশে ফল, মনোহারি এবং সবজির দোকান থাকলেও পানির কারণে কোনো ক্রেতা আসতে দেখা যায়নি। যানবাহন চলাচলেও সৃষ্টি হয়েছে ভোগান্তি। স্থানীয়রা বলছেন, পাঁচ-ছয় বছর ধরে রাস্তাটির এমন অবস্থা। বছরের ছয় মাস পানি জমে থাকে। বৃষ্টি হলে ভোগান্তি আরও বেড়ে যায়। সিটি করপোরেশন বিষয়টি জানার পরও ব্যবস্থা 
নেয় না।
অটোরিকশা চালক আশিকুল ইসলাম জানান, রাস্তায় পানি জমে থাকার কারণে অনেক সময় অটোরিকশার মোটরে পানি ঢুকে নষ্ট হয়ে যায়। এ রাস্তা দিয়ে চলাচল করা বিপজ্জনক। রাস্তা করা হয়েছে, কিন্তু পানি নামার ড্রেন করা হয়নি।

ফল ব্যবসায়ী সালাউদ্দিন বলেন, ‘রাস্তার পাশে আমার দোকান। গত শনিবার রাতে সামান্য বৃষ্টি হওয়ায় রাস্তাটিতে টাখনুর ওপর পর্যন্ত পানি জমেছে। সেই পানিতে আবার অনেক দুর্গন্ধ। অনেকের পায়ে পচা পানি লেগে ফোসকা পড়ে গেছে। পানির জন্য বেচাকেনা একেবারেই নেই। কারণ ক্রেতারা ময়লা পানির মধ্য দিয়ে বাজারে আসতে চান না।’
স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী সেলিম জানান, সিটি করপোরেশনের মধ্যে শম্ভুগঞ্জ একটি জমজমাট বাজার। বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষক তাদের উৎপাদিত সবজি এই বাজারে নিয়ে আসেন। কিন্তু রাস্তাটির বেহাল অবস্থার কারণে কৃষক তাদের ফসল যথাসময়ে বাজারজাত করতে পারছেন না। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষক।
জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ব্যবসায়ী আবু জাফর সুমন বলেন, ‘দীর্ঘদিন এই অঞ্চলের মানুষের পাশে রয়েছি। রাস্তাটি সংস্কারের জন্য আমি নিজেও কাজ করছি। আমি চাই, আমার এলাকার মানুষের দুর্ভোগ যেন না হয়। সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তার মধ্যে এত পানি; বৃষ্টি বেশি হলে দোকানেও পানি ঢুকে যায়। একবার পানি জমলে ১০-১৫ দিনেও সরে না। কারণ পানি যাওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই।’
বাজার সমিতির সভাপতি আব্দুল মান্নানের ভাষ্য, শম্ভুগঞ্জ বাজারটি এক বছরের জন্য এক কোটি ৮০ লাখ টাকায় সিটি করপোরেশনের কাছ থেকে ইজারা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু রাস্তায় পানি জমে থাকায় ব্যবসায়ীদের পথে বসার উপক্রম হয়েছে। সিটি করপোরেশন রাজস্ব পেলেও ব্যবসায়ীদের সুবিধা-অসুবিধা দেখছে না। বারবার বলার পরও রাস্তা সংস্কারে তাদের কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেই।
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের বাজার পরিদর্শক খন্দকার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, রাস্তাটি মেরামতের পাশাপাশি শম্ভুগঞ্জ বাজারে ড্রেন ও শেড নির্মাণের জন্য প্রকৌশলী বিভাগে তালিকা পাঠানো হয়েছে। দ্রুত কাজ শুরু করবেন তারা।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবস য ও ব যবস র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম, এখানে সাম্প্রদায়িকতার জায়গা নেই: জেড আই খান পান্না

মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেছেন, এই দেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই।

আজ শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট বারের হলরুমে ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার সংকট ও আইনি প্রতিকার পাওয়ার পথ’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জেড আই খান পান্না। সেমিনারটির আয়োজন করে আন্তর্জাতিক সংস্থা হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনোরিটিস (এইচআরসিবিএম), বাংলাদেশ চ্যাপ্টার।

বক্তব্যে জেড আই খান পান্না বলেন, ‘এখানে সংখ্যালঘুর কথা বলা হচ্ছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখন আমি সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু। আজ মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা দেখি, জুতা দিয়ে বাড়ি দিতে দেখি, কিন্তু কিছু করতে পারি না। তাই আমি সবচেয়ে বড় অসহায়।’

এসব কথা বলতে বলতে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না কেঁদে ফেলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, জীবনে কখনো জেনে-বুঝে অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। যাঁরা মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেন, তাঁদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।

জেড আই খান পান্না আরও বলেন, ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, কারও সঙ্গে এর তুলনা চলে না। এটা সাম্প্রদায়িকতার দেশ না। সংবিধানে যেন কেউ হাত না দেয়। সরকারের অনেকেই বিদেশি হয়েও স্বদেশি ভাব দেখাচ্ছেন।

সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার যেন নিঃশেষ হয়ে গেছে। সমাজে ন্যায়বিচার বা সুবিচার পাওয়ার কথা থাকলেও তা মিলছে না। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিচার হয় না। কেউ কেউ ধরা পড়লেও পরে বেরিয়ে যায়।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুমন কুমার রায় বলেন, সব সরকারের আমলেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত। বর্তমান নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। সংস্কার কমিশনে সংখ্যালঘুদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় হামলা হলেও সরকারের কোনো প্রতিক্রিয়া আসে না, এমনকি দুঃখও প্রকাশ করে না।

গত বছরের ৫ আগস্টের পর সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের প্রেক্ষিতে প্রতিবাদ শুরু হলে তা দমন করতেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে উল্লেখ করে সুমন কুমার দাবি করেন, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সনাতনী সম্প্রদায়ের বাক্‌স্বাধীনতা বন্ধ করতে, নেতৃত্ব দমন করতে এসব করা হচ্ছে।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জে কে পাল। সঞ্চালনায় ছিলেন এইচআরসিবিএমের বাংলাদেশ চ্যাপটারের আহ্বায়ক লাকি বাছাড়। সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরশেদ ও মো. গোলাম মোস্তফা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ