মানুষ একে অপরের আয়না স্বরূপ। যদি কেউ ভালো ব্যবহার করে, তবে অন্যরাও তার সঙ্গে ভালো ব্যবহারই করবে। তার দেহের অঙ্গে তার সুন্দর প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে এবং সে পরিতৃপ্ত ও সন্তুষ্ট থাকবে। সব সময় তার মনে হবে, সে বন্ধুবৎসল পরিবেশে জীবন যাপন করছে।
কিন্তু কেউ মন্দ ব্যবহার করে এবং আচরণে রুক্ষতা দেখায়, তখন অন্যরাও তার সঙ্গে মন্দ ব্যবহার করে। যে ব্যক্তি শিষ্টাচার বজায় রাখে না, তার সঙ্গে শিষ্টাচার করা হয় না। ভালো স্বভাব-চরিত্রের মানুষ আত্মিক প্রশান্তি অর্জন করে এবং যাবতীয় অহেতুক পেরেশানি, বিপদ ও সমস্যা থেকে দূরে থাকে। সর্বোপরি উত্তম চরিত্র ধারণ করা একটি ইবাদত, রাসুল (সা.
আল্লাহ বলেছেন, ‘ক্ষমা করার অভ্যাস গড়ে তোলো, সৎ-কাজের আদেশ দাও এবং মূর্খ-জাহেলদের থেকে দুরে থাকো।’ (সুরা আরাফ, আয়াত: ১৯৯)
আরও পড়ুনভালো প্রতিবেশী আল্লাহর প্রিয়জন১৩ এপ্রিল ২০২৫কোরআনের অন্য একটি আয়াতে আছে, ‘(হে নবী,) আল্লাহর আশীর্বাদে আপনি তাদের জন্য কোমল হৃদয় হয়েছেন। যদি আপনি রাগত মুখ ও কঠিন হৃদয় হতেন, তাহলে তারা আপনার থেকে সটকে পড়ত। তাই তাদের ক্ষমা করে দিন, তাদের জন্য ক্ষমাপ্রার্থী হোন করুন এবং কাজকর্মে তাদের সঙ্গে পরামর্শ করুন। এরপর যখন কোনো কাজের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ফেলেন, তখন আল্লাহর ওপর ভরসা করুন। আল্লাহ তার ওপর ভরসাকারীদের ভালোবাসেন।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৫৯)
রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের সবার মধ্যে আমার প্রিয় সেই ব্যক্তি, যার চরিত্র ভালো, যে বিনয়ী স্বভাবের, যে মানুষকে ভালোবাসে, মানুষও তাকে ভালোবাসে। আর সবচেয়ে অপ্রিয় আমার কাছে সেই ব্যক্তি, যে ঝগড়ায় জড়ায়, পরস্পর সুসম্পর্ক রাখে এমন লোকজনের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে এবং ভালো মানুষের দোষ খুঁজে বেড়ায়। (তাবরানি, হাদিস: ৭,৬৯৭; আল-মুজামুস সগির, হাদিস: ৮৩৫, আত-তারগিব, হাদিস: ২,৬৫৮)
সূত্র: আসআদু ইমরাআতিন ফিল আলাম, আয়েয আল-কারনি
অনুবাদ: মনযূরুল হক
আরও পড়ুনজিভের জড়তা কাটাতে মুসা (আ.) যে প্রার্থনা করেছিলেন০৮ এপ্রিল ২০২৫উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
আজও আছে পরতে পরতে সৌন্দর্য
কারুকার্যখচিত বিশাল ভবন। দেয়ালের পরতে পরতে মনোহর সৌন্দর্য। মনোরম পরিবেশে ভবনের চারপাশে দাঁড়িয়ে সুন্দরী পরীর আবক্ষ মূর্তি। ছবির মতো সাজানো ‘পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি’ এখন কালের সাক্ষী।
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া থেকে ১২ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে টাঙ্গাইলের নাগরপুরের কলমাই নদীতীরে ১৫ একর জমিতে জমিদারবাড়িটি। ঢুকতেই চোখে পড়ে পুরোনো মন্দির। লোকমুখে প্রচলিত, শরতের দিনে দেবী দুর্গার প্রতিমা তৈরিতে এখানে ব্যস্ত থাকতেন ভারতবর্ষের নামকরা কারিগররা। কালের বিবর্তনে স্থানটি এখন নির্জন। নেই আগের গৌরব-আভিজাত্যের ছাপ, এমনকি প্রতিমা তৈরির ব্যস্ততাও।
মন্দির ঘুরে দেখা যায়, এর কোথাও কোথাও ইট খসে পড়েছে। পুরোনো দিনের নকশা হারাচ্ছে তার সৌন্দর্য। মন্দিরের পেছনে বিশাল তিনটি মহল, যা সেকালে তিন তরফ নামে পরিচিত ছিল। মহলগুলোর আলাদা কোনো নাম পাওয়া যায়নি। সবচেয়ে বড় মহলে বর্তমান পাকুটিয়া বিসিআরজি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ পরিচালিত হচ্ছে।
দোতলা ভবনের নির্মাণশৈলী মুগ্ধ করবে সবাইকে। যদিও সংস্কারের অভাবে ভবনটিতে ফাটল দেখা দিয়েছে। পাশেই অপূর্ব লতাপাতার কারুকার্যখচিত বিশাল আরেকটি ভবন, যার মাথায় ময়ূরের মূর্তি। এ ছাড়া কিছু নারী মূর্তিরও দেখা মেলে। জমিদার আমলের টিনের চৌচালা ঘরে অস্থায়ীভাবে সরকারি তহশিল অফিস স্থানান্তর হলেও, সেটি এখন স্থায়িত্ব পেয়েছে।
লতাপতায় আচ্ছন্ন ভবনের একাংশ বর্তমানে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং আরেকাংশে একটি বেসরকারি দাতব্য সেবা সংস্থা কার্যক্রম চালাচ্ছে। ভবনটির পিলারের মাথায় এবং দেয়ালেও অসাধারণ নকশা মুগ্ধ করে।
দোতল আরেকটি মহল, যার সামনে বিশাল শান বাঁধানো সিঁড়ি। অন্য সব ভবনের সঙ্গে এটির নকশার যথেষ্ট মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ভবনটির বারান্দা ও পুরোনো কাঠের দরজা সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলেছে কয়েক গুণ। ভবনটির মাথায় ময়ূরের সঙ্গে দুই পাশে দুই নারী মূর্তির দেখা মেলে। সিঁড়ি বেয়ে ছাদে গেলে গাছগাছালির সবুজে ঘেরা পুরো জমিদারবাড়ির সৌন্দর্য বিমোহিত করতে বাধ্য। যদিও ভবনের ভিন্ন অংশ খসে পড়ছে, হারাচ্ছে রূপ-লাবণ্য।
জমিদারবাড়ির পেছনে রয়েছে দীঘি ও দুটি পরিত্যক্ত কূপ। এ ছাড়া জমিদারবাড়ির বিশাল মাঠের এক কোণে নাটমন্দির। জানা যায়, নাগরপুরের সঙ্গে কলকাতার একটি বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা থেকে আসেন ধনাঢ্য ব্যক্তি রামকৃষ্ণ সাহা মণ্ডল। তিনিই ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে ব্রিটিশদের কাছ থেকে বিপুল অর্থের বিনিময়ে জমি কিনে জমিদারি শুরু করেন।
রামকৃষ্ণ সাহার দুই ছেলে বৃন্দাবন ও রাধাগোবিন্দ। রাধা নিঃসন্তান। তবে বৃন্দাবনের তিন ছেলে– ব্রজেন্দ্র মোহন, উপেন্দ্র মোহন ও যোগেন্দ্র মোহন দীর্ঘকাল রাজত্ব করেন। এভাবে পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি তিন ভাইয়ের তরফে বিভক্ত থাকলেও, জমিদাররা সবাই ছিলেন প্রজানন্দিত। বৃন্দাবনের মেজ ছেলে উপেন্দ্রকে কাকা রাধাগোবিন্দ দত্তক নেন। ফলে উপেন্দ্র কাকার জমিদারির পুরো সম্পত্তি লাভ করেন।
দৃষ্টিনন্দন পাকুটিয়া জমিদারবাড়িতে প্রতিনিয়ত পর্যটকের ভিড় বাড়ছে। ইতিহাসের সাক্ষী বাড়িটি সংস্কার না হওয়ায় একদিকে যেমন সৌন্দর্য হারাচ্ছে, অন্যদিকে তরুণ প্রজন্মের কাছে অজানা থেকে যাচ্ছে ইতিহাস। জমিদারবাড়িটি পুরাকীর্তি হিসেবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে নিয়ে সংস্কার ও সংরক্ষণের দাবি জোরালো হচ্ছে।