চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার এবং পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মশালমিছিল করেছে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট। আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় মিছিলটি টিএসসি থেকে শুরু হয়ে ভিসি চত্বর হয়ে বিভিন্ন সড়ক ঘুরে রাজু ভাস্কর্যে গিয়ে শেষ হয়। মিছিল থেকে ‘হামলা-মামলা প্রত্যাহার চাই’, ‘আমার বোন বহিষ্কার কেন’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেওয়া হয়।

মশালমিছিল শেষে রাজু ভাস্কর্যের সামনে সমাবেশ করেন গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের নেতা–কর্মীরা। সেখানে বক্তব্যে জোটভুক্ত ছাত্রসংগঠনের নেতারা অভিযোগ করেন, শিক্ষাঙ্গনে দমন-পীড়ন চালিয়ে স্বৈরতান্ত্রিক কাঠামো মজবুত করা হচ্ছে।

সমাবেশে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মেঘমল্লার বসু অভিযোগ করে বলেন, ‘গণ–অভ্যুত্থানের পর ছাত্রনেতারা মব তৈরি ও ক্ষমতার ভাগাভাগিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।’

ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের সহিংসতার উল্লেখ করে মেঘমল্লার বসু বলেন, দীর্ঘদিনের বিরাজনীতিকরণের ফলে ছাত্রসমাজ আজ অর্থহীন কর্মসূচিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে।

সমাবেশে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি সালমান সিদ্দিকী বলেন, চট্টগ্রামে নারী শিক্ষার্থীদের ‘টার্গেট’ করে বহিষ্কার করা হয়েছে। ফেসবুকে বুলিং ও বহিষ্কারের মাধ্যমে ২৪ মার্চের আন্দোলন থেকে নারী শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের চাকরি পাওয়ার গল্প প্রচার করা হলেও বাস্তবতা ভিন্ন।

গণতাত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সভাপতি সায়েদুল হক নিশান দাবি করেন, কুয়েটে হামলার ঘটনায় প্রশাসনের কাছে জবাব চাইতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা আবারও হামলার শিকার হচ্ছে। তিনি বলেন, হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে বরং প্রতিবাদীদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসঙ্গে বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক জাবির আহমেদ জুবেল বলেন, যারা মবের বিরুদ্ধে ছিল, তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে। প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা উসকানিমূলক মন্তব্য ও বার্তা ছড়িয়ে পরিস্থিতি আরও খারাপ করেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

কুয়েট ভিসির পদত্যাগ ও শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, চট্টগ্রামে বহিষ্কৃত নারী শিক্ষার্থীদের পুনর্বহাল এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবি জানান বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

রাজশাহীতে প্রতি কেজি আলুর হিমাগারভাড়া কমল ৭৫ পয়সা

রাজশাহীতে হিমাগারে আলু সংরক্ষণে নতুন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। আজ সোমবার আলুচাষি, ব্যবসায়ী ও হিমাগারমালিকদের উপস্থিতিতে এ সিদ্ধান্ত হয়। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, হিমাগারে প্রতি কেজি আলু রাখার জন্য ভাড়া দিতে হবে ৫ টাকা ৫০ পয়সা। এর সঙ্গে যুক্ত হবে শ্রমিকের খরচ ৫০ পয়সা। সেই হিসাবে প্রতি কেজি আলুর হিমাগারভাড়া কমেছে ৭৫ পয়সা।

এর আগে গত মার্চে সরকার প্রতি কেজি আলু রাখার ভাড়া ৬ টাকা ৭৫ পয়সা নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। এর পর থেকে এ নিয়ে রাজশাহীর আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা বাড়তি ভাড়ায় আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন। এ নিয়ে কয়েক দফা তাঁরা রাজপথে আন্দোলনও করেছেন। অন্যদিকে হিমাগারমালিকদের দাবি ছিল, প্রতি কেজি আলুর ভাড়া ৮ টাকা করা হোক।

রাজশাহী কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন এবং রাজশাহী জেলা আলুচাষি ও আলু ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজশাহীতে হিমাগার থেকে বাড়তি ভাড়া না দিলে আলু ছাড়া হবে না। এর প্রতিবাদে ঈদের পর নতুন করে আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা আন্দোলন করে আসছেন। তাঁদের দাবি, আলু রাখার খরচ আগের বছরের মতো চার টাকা করতে হবে। এ নিয়ে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তাঁরা। হিমাগার মালিকপক্ষ এ নিয়ে আলোচনায় বসার তাগিদ দিয়ে আসছিল।

এরই মধ্যে আলুচাষিনেতারা ১৪ জুন সেনাবাহিনীর কাছে এ নিয়ে একটি অভিযোগ দেন। পরে বিষয়টি আমলে নিয়ে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আজ দুপুরে সভা ডাকা হয়। সভায় সব পক্ষের সম্মতিতে সিদ্ধান্ত হয় যে এ বছর সরকার নির্ধারিত প্রতি কেজি আলুর হিমাগারভাড়া ৬ টাকা ৭৫ পয়সার বদলে ৫ টাকা ৫০ পয়সা ও শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা রাখা হবে। আর পেইড বুকিংয়ের ক্ষেত্রে শুধু শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা দিতে হবে আলু রাখা চাষি ও ব্যবসায়ীদের। পরে বিকেলে ক্যান্টনমেন্টে হওয়া এই সিদ্ধান্ত প্রশাসনিকভাবে পাস করার জন্য রাজশাহী জেলা প্রশাসকের দপ্তরে সভা হয়।

সভায় আলুচাষি ও ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি, হিমাগার মালিক সমিতি, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি, পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামীকাল মঙ্গলবার রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পক্ষ থেকে নতুন ভাড়ার বিজ্ঞপ্তি সব হিমাগারে প্রচার করা হবে।

এ ব্যাপারে সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এবার আলুর দাম কম। আবার এ নিয়ে দুই পক্ষের সংঘাতের আশঙ্কা ছিল। এ নিয়ে একটি অভিযোগ পান তাঁরা। পরে দুই পক্ষকে নিয়ে সভা হয়। সভায় সবার সম্মতিতে সিদ্ধান্ত হয়। সেই সিদ্ধান্ত বিকেলে জেলা প্রশাসকের দপ্তরে আরেকটি সভার মাধ্যমে পাস হয়েছে।

রাজশাহীর আলুচাষি ও ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মিঠু আহমেদ বলেন, শুরু থেকেই তাঁরা বাড়তি ভাড়ার প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিলেন। কয়েক দিন ধরে তাঁরা হিমাগার থেকে আলু নিতে পারছিলেন না। হিমাগারগুলোয় বাড়তি ভাড়া দিতে হচ্ছিল। এ নিয়ে আন্দোলনের পাশাপাশি সেনাবাহিনীকেও অবহিত করেন তাঁরা। শেষ পর্যন্ত একটি ভালো সিদ্ধান্ত হয়েছে।

রহমান সিডস স্টোরেজের ব্যবস্থাপক আবদুল হালিম বলেন, সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রতি কেজি আলু রাখতে খরচ পড়বে ৫ টাকা ৫০ পয়সা আর শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা। এ ছাড়া যাঁরা আগে থেকেই টাকা দিয়ে অগ্রিম বুকিং দিয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে আলুর কেজিপ্রতি শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা দিতে হবে।

রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাসুদুর রহমান বলেন, নতুন সিদ্ধান্ত সব হিমাগারমালিকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জানানো হবে।

আরও পড়ুনরাজশাহীতে হিমাগারে ভাড়া বাড়ানোর প্রতিবাদে বিক্ষোভ-সমাবেশ১৫ জুন ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ