নাঙ্গলকোটে গৃহবধূকে ধর্ষণের পর চুল কেটে দেওয়ার অভিযোগে মামলা, আটক ১
Published: 19th, April 2025 GMT
কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে এক গৃহবধূকে ধর্ষণের পর চুল কেটে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় তিনজনকে অভিযুক্ত করে মামলা করেছেন ওই গৃহবধূ। প্রতিবেশিদের সঙ্গে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিশোধ নিতে প্রতিপক্ষ এই ধর্ষণের ঘটনা ঘটায় বলে জানিয়েছে ভুক্তভোগীর পরিবার।
গত বৃহস্পতিবার রাত ১২টার পর উপজেলার দৌলখাঁড় ইউনিয়ন কান্দাল গ্রামে এই ঘটনা ঘটেছে বলে মামলায় উল্লেখ করেছেন ভুক্তভোগী। গৃহবধূর স্বামী রাজধানী ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে গাড়ি চালকের চাকরি করেন। ঘটনার দিন ওই গৃহবধূর বাড়িতে অসুস্থ শাশুড়ি এবং দুই বছরে শিশু ছাড়া আর কেউ ছিলেন না।
অভিযুক্তরা গৃহবধূকে ধর্ষণের পর তার ঘর থেকে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকারও লুট করে নিয়ে যায় বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। গৃহবধূকে ধর্ষণের ঘটনায় দুইজনের নাম উল্লেখ এবং অপর একজনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নাঙ্গলকোট থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা একে ফজলুল হক। তিনি জানান, শুক্রবারেই মামলাটি করা হয়। অভিযুক্ত ইমাম হোসেনকে আটক করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে এবং ভুক্তভোগীকে মেডিকেল টেস্টের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ইমাম হোসেন ছাড়াও এই মামলায় জাহিদুল্লাহ ও অজ্ঞাত আরো জনকে আসামি করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী গৃহবধূ মামলায় উল্লেখ করেন, অভিযুক্ত ইমাম হোসেনের পরিবারের সঙ্গে দীর্ঘদিন যাবত জমি জমা সংক্রান্ত বিরোধ রয়েছে। এর আগেও অভিযুক্ত ইমাম হোসেন ওই গৃহবধূকে ধর্ষণের হুমকি দেয়। গত বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক রাত ১২টার ১০ মিনিট পর ইমাম হোসেনসহ আরও দুইজন বাড়ির দরজা ভেঙে গৃহবধূর ঘরে প্রবেশ করেন। পরে তার হাত-পা ও মুখ বেঁধে ধর্ষণ করা হয়। ধর্ষণের পর চুল কেটে ফেলেন অভিযুক্তরা।
মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়, অভিযুক্তরা ওই গৃহবধূর ঘর থেকে দেড় লক্ষাধিক নগদ অর্থ, স্বর্ণালংকার এবং জরুরি দলিলাদি লুট করে নিয়ে যায়। লুটতরাজের সময় পাশের ঘরে থাকা ওই গৃহবধূ শাশুড়ি টের পেলে তার চিৎকার চেঁচামেচিতে প্রতিবেশিরা এগিয়ে আসেন। এসময় অভিযুক্তরা পালিয়ে যায়।
ভুক্তভোগীর স্বামী জানান, পাশের বাড়ির ইমাম হোসেনের সঙ্গে আমাদের দীর্ঘদিন জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ রয়েছে। ইমাম হোসেন দীর্ঘদিন যাবত আমাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন হুমকি ধমকি ও মামলা দিয়ে হয়রানি করে আসছিলেন। চাকরির সুবাদে বৃহস্পতিবার ঘটনার দিন আমি বাড়িতে ছিলাম না, ঐদিনও ওই পরিবারের মানুষের সঙ্গে আমার স্ত্রীর কথা কাটাকাটি হয়। এরপরই রাতে এই ঘটনা ঘটে। ধর্ষণের পর আমার স্ত্রীর চুল কেটে দিয়ে গেছে তারা। আমি এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।
নাঙ্গলকোট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আল-আমিন সরকার জানান, ঘটনাটির বিষয়ে আমি অবগত আছি। প্রাথমিক তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ শেষে এ বিষয়ে একটি মামলা হয়েছে থানায়। ওসির সঙ্গে ঘটনাটি নিয়ে কথা হয়েছে। বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর বিধায় পুলিশ মামলাটি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন ঙ গলক ট ন ঙ গলক ট গ হবধ ক গ হবধ র এই ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
হনুমান কি পর্বত কাঁধে করে উড়ে এসেছিলেন?
হিন্দু ধর্মগ্রন্থ রামায়ণের এক বিশিষ্ট অধ্যায়ে উঠে আসে এক অলৌকিক ঘটনার কথা। রাম-রাবণের মহাযুদ্ধে শ্রীরামচন্দ্রের ভাই লক্ষ্মণ অচেতন হয়ে পড়লে, তাঁকে জীবিত রাখতে প্রয়োজন হয় একটি বিশেষ ভেষজ উদ্ভিদের—সঞ্জীবনী বুটি। আয়ুর্বেদাচার্য সুষেণের পরামর্শে হনুমান ছুটে যান হিমালয়ের পাদদেশে গন্ধমাদন পর্বতে।
রামায়ণে বর্ণিত আছে, নির্দিষ্ট গাছটি শনাক্ত করতে না পারায় হনুমান পুরো গন্ধমাদন বা দ্রোণগিরি পর্বতটাই তুলে কাঁধে নিয়ে পা বাড়ান লঙ্কার উদ্দেশে। বিশ্বাস করা হয় যে তিনি দীর্ঘ আকাশপথ পাড়ি দেন এই পাহাড় বহন করে। পথিমধ্যে তিনি কিছু স্থানে বিশ্রামও নেন; যেসব স্থান আজও ‘হনুমান টোক’, ‘হনুমান চট’, ‘হনুমান ধারা’ নামে পরিচিত।
নির্দিষ্ট গাছটি শনাক্ত করতে না পারায় হনুমান পুরো গন্ধমাদন বা দ্রোণগিরি পর্বতটাই তুলে কাঁধে নিয়ে পা বাড়ান লঙ্কার উদ্দেশে।পৌরাণিক গ্রন্থগুলোয় সব ঘটনা রূপকভাবে লেখা আছে। এককথায় পুরাণের মধ্যে সবকিছু গোলমাল পাকিয়ে আছে। গোলটা ফেলে মালটা বের করতে পারলে পৃথিবীর অনেক কল্যাণ হয়। এই ঘটনার রূপকতা ব্যাখ্যা করতে একটা গল্পের উল্লেখ করছি।
আরও পড়ুনভারতের আদিতম মহাকাব্য রামায়ণ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩বাড়িতে ২০০ মানুষকে নিমন্ত্রণ করে এক ব্যক্তি বাজারে গিয়ে অনেক বাজার করেছেন। ফেরার সময় তিনি নিজের সাইকেলের দুই হ্যান্ডলে দুটো ব্যাগ ঝুলিয়েছেন, পেছনে দুটো ব্যাগ ঝোলানো, ক্যারিয়ারে একটা বস্তা বাঁধা। জায়গা না পেয়ে নিজের দুই কাঁধে দুটো ব্যাগ ঝুলিয়ে বাজার থেকে বাড়ির উদ্দেশে যাওয়ার পথে রাস্তায় এক লোক তাঁকে দেখে বললেন ‘কী হে ভাই, তুমি তো দেখি পুরা বাজার উঠিয়ে নিয়ে এসেছ!’ এর মানে কিন্তু এই নয় যে সেই ব্যক্তি পুরো বাজার উঠিয়ে নিয়ে এসেছেন।
তিনি আসলে অনেক বাজার করেছেন। হনুমানের ক্ষেত্রেও একই রকম ঘটেছিল।
রামভক্ত হনুমান ছিলেন যোগী পুরুষ। তিনি যোগবলে অনেক অলৌকিক শক্তি অর্জন করেছিলেন। তিনি যোগবলে নিজের আকার এত ছোট করে ফেলতে পারতেন যে তাঁকে খালি চোখে দেখা কষ্টকর হয়ে যেত। আবার তিনি ইচ্ছা করলে যোগবলে নিজের আকার অনেক বড় করে ফেলতে পারতেন। আর তিনি ছিলেন অত্যন্ত শক্তিশালী।
‘কী হে ভাই, তুমি তো দেখি পুরা বাজার উঠিয়ে নিয়ে এসেছ!’ এর মানে কিন্তু এই নয় যে সেই ব্যক্তি পুরো বাজার উঠিয়ে নিয়ে এসেছেন। তিনি আসলে অনেক বাজার করেছেন।তিনি আসলে ‘সঞ্জীবনী বুটি’ চিনতে না পেরে যোগবলে নিজের শরীরটা অনেক বড় করে সামনে যত ধরনের বৃক্ষ ও লতাপাতা পেয়েছিলেন, সেই সবকিছু সংগ্রহ করে বিশাল এক বোঝা বানিয়ে নিজের পিঠের ওপর তুলে যখন অতি দ্রুত এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে লাফ দিচ্ছিলেন, তখন সেই বিশালদেহী হনুমানকে দেখে মনে হচ্ছিল যেন গোটা পাহাড়টাই পিঠে তুলে নিয়ে লাফাচ্ছেন।
আরও পড়ুনদুর্গাপূজার কাহিনি২০ অক্টোবর ২০২৩হনুমানের এই অসাধারণ কীর্তিকে অনেকেই অলৌকিক বলেই ভাবেন। কিন্তু অলৌকিকতা ছাপিয়ে এটা তাঁর গুরুর প্রতি শ্রদ্ধা এবং গুরুর আদেশের প্রতি দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। ভারতের হিমাচল, উত্তরাখন্ড, মধ্যপ্রদেশ এমনকি বাংলাদেশের মহেশখালীর আদিনাথ ধামসহ কিছু স্থানে এই ঘটনার স্মৃতি বহন করে, এমন লোককথা এখনো প্রচলিত।
একটি পাহাড় কাঁধে বহন করে উড়ে যাওয়া প্রকৃতির নিয়মের বাইরে। আর অবতার, মহাপুরুষ বা প্রেরিত পুরুষেরা কখনো প্রকৃতির নিয়মের বাইরে যান না। রামায়ণের এ ঘটনাকে মূলত রূপক বা প্রতীকী ঘটনা হিসেবেই বিবেচনা করেন হিন্দুধর্মীয় অবতার-মহাপুরুষেরা। আর পৃথিবীতে অলৌকিক বলে কিছু নেই।
রামায়ণের এ ঘটনাকে মূলত রূপক বা প্রতীকী ঘটনা হিসেবেই বিবেচনা করেন হিন্দুধর্মীয় অবতার-মহাপুরুষেরা। আর পৃথিবীতে অলৌকিক বলে কিছু নেই।মনে করেন, একজন যোগী পুরুষ নদীর তীর থেকে যোগবলে অদৃশ্য হয়ে নদীর মধ্যে ভেসে উঠলেন। আমি দেখতে পাচ্ছি না, জানতে পারছি না যে তিনি কীভাবে গিয়েছেন, তাই আমার কাছে অলৌকিক। আর ওই যোগী জানেন যে তিনি কীভাবে গিয়েছেন, তাই তাঁর কাছে লৌকিক।
যুগের পর যুগ ধরে লাখ লাখ ভক্তের হৃদয়ে এই ঘটনা গুরুর প্রতি শিষ্যের ভালোবাসা এবং নিজেকে গুরুর প্রতি সম্যকভাবে ন্যস্ত করার এক আস্থা ও অনুপ্রেরণার গল্প হয়ে রয়েছে। হনুমানের এই গাথা তাঁর ভক্তিমূলক চরিত্রকে যেমন সমৃদ্ধ করে, তেমনি মানবজাতির দুর্দম সাহস ও আত্মত্যাগের কথাও মনে করিয়ে দেয়।
তথ্যসূত্র: ১. বাল্মীকি রামায়ণ. ২. কৃত্তিবাসী রামায়ণ, ৩. শ্রীশ্রী ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র কথিত ‘আলোচনা প্রসঙ্গে’ গ্রন্থ, ৪. মহেশখালীর আদিনাথ ধাম অঞ্চলের লোককথা।
পার্থ দেব বর্মন: গবেষক, সৎসঙ্গ রিসার্চ সেন্টার
আরও পড়ুনরামচন্দ্র, বিষ্ণুর অবতার কিন্তু মানবিক১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩