কুয়েট উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে প্রতীকী গদিতে আগুন জ্বালালেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা
Published: 19th, April 2025 GMT
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে প্রতীকী গদিতে আগুন জ্বালানোর কর্মসূচি পালন করেছেন। ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ শনিবার বিকেল সোয়া ছয়টার দিকে ভাস্কর্য দুর্বার বাংলার পাদদেশে ‘ভিসির গদি’ লেখা একটা চেয়ারে অগ্নিসংযোগ করে পুড়িয়ে দেন তাঁরা। প্রতীকী চেয়ারের পেছন দিকে শিক্ষার্থীরা ‘ইন্টেরিম কী অন্ধ?’ এবং ‘এক দফা, স্টেপ ডাউন মাছুদ, মেক কুয়েট ফ্রি এগেইন’ লেখা ব্যানার ধরে রাখেন।
এর আগে শিক্ষার্থীরা কুয়েটের স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারের সামনে থেকে উপাচার্যের পদত্যাগ চেয়ে মিছিল নিয়ে পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করেন। এরপর তাঁরা দুর্বার বাংলার পাদদেশে এসে উপাচার্যবিরোধী স্লোগান দিতে থাকেন। একসময় সেখানে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা শুয়ে পড়েন।
প্রতীকী গদি জ্বালানোর পর প্রেস বিফিংয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পক্ষে একজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা গত শুক্রবার দেখলাম ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির ভাই আমাদের বহিষ্কার ইস্যুতে ভিডিও বার্তা দিলেন। যেই বার্তায় তিনি জানান, ছাত্রদলের সাতজন বহিষ্কার হয়েছে। আমাদের প্রশ্ন, যে তালিকা অফশিয়ালি রিলিজ করা হয় নাই, কোনো শিক্ষার্থী–শিক্ষক পায় নাই, তা কীভাবে নাসির ভাইয়ের কাছে গেল। আমরা তার জবাব চাই। ছাত্রদলের ৭ জন হলে বাকি ৩০ জন কী সাধারণ শিক্ষার্থী? তাঁদের কেন বহিষ্কার করা হলো?’
শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সাইবার বুলিং এবং শিক্ষক লাঞ্ছনা তদন্ত করার জন্য। সেই কমিটিকে বর্জন ঘোষণা করেছেন শিক্ষার্থীরা। তাঁদের অভিযোগ, তাঁরা হলে আসার পরেও হলের ওয়াইফাই চালু করে দেওয়া হচ্ছে না। বিভিন্ন হলে এখনো পানি ও খাওয়ার পানির সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
শিক্ষার্থীরা বলেন, অনেকেই অভিযোগ তুলছেন, তাঁরা মব কালচার করছেন। এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, তাঁদের উপাচার্য নিরাপত্তা দিতে পারেননি। দেড় শতাধিক ছাত্রের রক্তের ব্যর্থতার দায় স্বীকার করেননি। বরং শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার করেছেন। শিক্ষার্থীদের নামে মামলার মদদ যুগিয়েছেন। বহিষ্কারের তালিকা ছাত্রদলের কাছে পৌঁছিয়ে দিয়েছেন। উপাচার্যের পদত্যাগ চাওয়া শিক্ষার্থীদের নায্য দাবি বলে উল্লেখ করেন তাঁরা।
চলমান আন্দোলন কোনো দলের না, এটা সব শিক্ষার্থীর আন্দোলন উল্লেখ করে তাঁরা জানান, বিভিন্ন জায়গায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের নানাভাবে ট্যাগ দেওয়া হচ্ছে, এই আন্দোলন শিবিরের। এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, প্রধান উপদেষ্টার কাছে দেওয়া স্মারকলিপিতে পাঁচ হাজার শিক্ষার্থীর স্বাক্ষর ছিল। সুতরাং আন্দোলরত শিক্ষার্থীদের ট্যাগ না দিয়ে দাবির যৌক্তিকতার প্রতি তাকানোর আহ্বান জানানো হয়। শিক্ষার্থীদের প্রেস ব্রিফিংয়ে বলা হয়, ‘আমরা লজ্জিত ইন্টারিমের প্রতি। আমাদের দিকে আপনারা দুই মাসেও তাকালেন না। আপনারা আমাদের জুলাই–আগস্টের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করেছেন। দুই মাসেও একজন গ্রেপ্তার হয়নি।’
এর আগে শুক্রবার বিকেলে ‘শোকের গ্রাফিতি এক দফার ডাক’ শিরোনামে কর্মসূচি পালন করেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এতে দেয়ালে দেয়ালে আঁকা গ্রাফিতিতে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি করা হয়।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় শতাধিক মানুষ আহত হন। পরদিন প্রশাসনিক ভবনসহ সব একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। ওই দিন দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় কুয়েটে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়। ২৫ ফেব্রুয়ারি সব আবাসিক হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
আবাসিক হলগুলো খুলে দেওয়ার দাবিতে কুয়েটের শিক্ষার্থীরা ১৩ এপ্রিল বিকেল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিলে আন্দোলন আবারও দানা বাঁধতে থাকে। গত সোমবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযোগে ৩৭ শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্তের কথা জানায় কর্তৃপক্ষ। সেই সঙ্গে আগামী ২ মে থেকে সব আবাসিক হল শিক্ষার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া ও ৪ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত হয়।
এর মধ্যে গত মঙ্গলবার শিক্ষার্থীরা উপাচার্য মুহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগের এক দফা দাবি ঘোষণা দেন। ঘোষণার পর আন্দোলনকারীরা কুয়েটের ছেলেদের ছয়টি হলের তালা ভেঙে হলগুলোতে অবস্থান নেন। গত বুধবার দুপুরে উপাচার্য মুহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগের দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের মিছিলের পরপরই উপাচার্যের পদত্যাগের দাবির বিপক্ষে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেন শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এক দফার পক্ষে ক্যাম্পাসে মশালমিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার দুপুরে কর্মচারী সমিতির উদ্যোগে উপাচার্যের সমর্থনে মানববন্ধন করা হয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ছ ত রদল র আম দ র ক র কর কর ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
আমার স্ত্রী খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করছেন না: জেডি ভ্যান্স
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স তাঁর স্ত্রী উষা ভ্যান্স ক্যাথলিক গির্জার মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে কোনো একদিন খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করবেন বলে যে মন্তব্য করেছিলেন, তা নিয়ে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। নিজের এ মন্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে বিশাল এক পোস্ট দিয়েছেন তিনি।
জেডি ভ্যান্স বলেন, তাঁর যে মন্তব্য নিয়ে কথা হচ্ছে, সেটি মূল বক্তব্য থেকে কেটে নেওয়া একটি অংশ। কোন প্রসঙ্গে তিনি ওই মন্তব্য করেছেন, সেটা দেখানো হয়নি।
গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের মিসিসিপি অঙ্গরাজ্যে তরুণদের সংগঠন ‘টার্নিং পয়েন্ট ইউএসএ’র একটি অনুষ্ঠানে এক তরুণীর প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে ভ্যান্স তাঁর স্ত্রী উষা একদিন খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন। ভারতীয় বংশোদ্ভূত উষা হিন্দু সংস্কৃতিতে বেড়ে উঠেছেন।
স্ত্রী একদিন খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করবেন, এমন আশাবাদ ব্যক্ত করা ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, ভ্যান্সের এ মন্তব্য কি তাঁর স্ত্রীকে ধর্ম পরিবর্তনের জন্য চাপ দেওয়ার ইঙ্গিত।
স্ত্রী একদিন খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করবেন, এমন আশাবাদ ব্যক্ত করা ভিডিও ভাইরাল হওয়া পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, ভ্যান্সের এ মন্তব্য কি তাঁর স্ত্রীকে ধর্ম পরিবর্তনের জন্য চাপ দেওয়ার ইঙ্গিত।জবাব দিতে এক্স পোস্টে ভ্যান্স বলেন, একটি পাবলিক ইভেন্টে তাঁকে তাঁর আন্তধর্মীয় বিয়ে নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। তিনি ওই প্রশ্ন এড়িয়ে যেত চাননি, উত্তর দিয়েছেন।
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট লিখেছেন, ‘প্রথমেই বলি, প্রশ্নটি আসে আমার বাঁ পাশে থাকা একজনের কাছ থেকে, আমার আন্তধর্মীয় বিয়ে নিয়ে। আমি একজন পাবলিক ফিগার, লোকজন আমার ব্যাপারে জানতে আগ্রহী এবং আমি প্রশ্নটি এড়িয়ে যেতে চাচ্ছিলাম না।’
এ বছর জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠানে জেডি ভ্যান্স ও তাঁর স্ত্রী উষা ভ্যান্স