হাতীবান্ধা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত হাসিবুলের বাড়িতে জামায়াতের আমির, চাইলেন বিচার
Published: 19th, April 2025 GMT
মনিরহাটের হাতীবান্ধা সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে নিহত হাসিবুল ইসলামের বাড়িতে গিয়ে স্বজনদের সমবেদনা জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান। আজ শনিবার দুপুরে তিনি হাতীবান্ধার মধ্য সিঙ্গিমারী গ্রামে হাসিবুলের বাড়িতে যান। এ সময় হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করে তিনি হাসিবুলের স্বজনদের হাতে উপহারসামগ্রী তুলে দেন।
গত বুধবার দুপুরে উপজেলার মধ্য সিঙ্গিমারী সীমান্তের ৮৯৪ নম্বর মেইন পিলালের সাব ৬ এস পিলার–লাগোয়া এলাকায় বিএসএফের গুলিতে আহত হন হাসিবুল। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় বিএসএফের সদস্যরা তাঁকে ধরে নিয়ে যান। বুধবার রাতে ভারতের কোচবিহারের এমজেএন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এরপর বৃহস্পতিবার রাতে বিজিবি ও পুলিশের কাছে লাশটি হস্তান্তর করে বিএসএফ। হাসিবুল সিঙ্গিমারী গ্রামের জাহিদুল ইসলামের ছেলে।
নিহত হাসিবুলের পরিবার ও এলাকাবাসীর ভাষ্য, ভারতের সীমান্ত–লাগোয়া জমিতে হাসিবুলসহ কয়েকজন বাংলাদেশি ঘাস কাটতে গিয়েছিলেন। তখন বিএসএফের ফুলবাড়ী ক্যাম্পের টহল দলের সদস্যরা তাঁদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে হাসিবুল গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে বিএসএফ আহত অবস্থায় তাঁকে ধরে নিয়ে যায়।
আজ হাসিবুলের বাড়িতে গিয়ে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা এই ঘটনার নিন্দা জানাই, এটার বিচার চাই। ভারত বলে, তারা আমাদের বন্ধু দেশ। ফেলানীর বিচার এখনো পেলাম না। অসংখ্য সীমান্ত হত্যার বিচার পাইনি। ভারতের কাছে আহ্বান জানাব, অন্তত এই বিচারটা করে প্রমাণ করেন, আপনারা আমাদের বন্ধু। বন্ধুত্বের জন্য ভালোবাসা বিনিময় করতে হয়, দায়িত্ব নিতে হয়।’
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে জামায়াতের আমির বলেন, ‘হত্যাকাণ্ড হয়েছে এ দেশের মাটিতে আর লাশ নিয়ে গেছে ভারতে, এর বিচার হতে হবে বাংলাদেশে। এ হত্যাকাণ্ডের বিচারের জন্য উদ্যোগ নিন। ভারতকে বলেন, সৎ ইচ্ছা নিয়ে সহযোগিতা করুন।’ এ সময় ভারতের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা যত এগিয়ে আসবেন, আমরাও তত আপনাদের দিকে এগিয়ে যাব। এই জাতি বন্ধুত্বের মর্যাদা দিতে জানে। আমরা প্রমাণ করব, আমরা মর্যাদা দিতে জানি।’ নিহতের পরিবারকে এ ব্যাপারে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি।’
আরও পড়ুনহাতীবান্ধা সীমান্তে গুলিতে নিহত বাংলাদেশি তরুণের লাশ ফেরত দিয়েছে বিএসএফ১৮ এপ্রিল ২০২৫.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কড়া নজরদারি সুন্দরবন সীমান্তে
দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুন্দরবন জলসীমানা প্রায় দেড়শো কিলোমিটার। ভারতীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এ সীমানা দিয়ে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বাড়তি তৎপরতা নেওয়া হচ্ছে। খবর আনন্দবাজারের।
খবরে বলা হয়েছে, নদী ও বনভূমি এলাকায় সীমান্ত বরাবর বিএসএফ মোতায়েন আছে। ভাসমান বর্ডার আউটপোস্ট, বঙ্গোপসাগর অংশে কোস্ট গার্ডের নজরদারি চলছে। ড্রোন, সেন্সর ও ক্যামেরা, কিছু জায়গায় নাইট ভিশন ক্যামেরা ব্যবহার করা হচ্ছে। পাশাপাশি, পুলিশের তরফেও উপকূল এলাকায় দিনরাত নজরদারি চলছে।
উপকূল থানাগুলোর পক্ষ থেকে নদীপথে নিয়মিত টহল দেওয়া হচ্ছে। রাতেও উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে নজর রাখা হচ্ছে। নদীপথে কোনো জলযান দেখলেই তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। মৎস্যজীবীদের পরিচয়পত্রও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নদী বা সমুদ্রে এখন মাছ ধরার উপরে নিষেধাজ্ঞা চলছে। মৎস্যজীবীদের জলযান চলাচল করার কথা নয়। তাই জলযান দেখলেই তল্লাশি চলছে। বাংলাদেশি জাহাজগুলোতেও পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে।
সুন্দরবন পুলিশ জেলার সুপার কোটেশ্বর রাও নালাভাট বলেন, আগেও উপকূলবর্তী এলাকায় পুলিশের নজরদারি চলত। এখন বাড়তি জোর দেওয়া হচ্ছে। দু’বেলা নদী ও স্থলপথে পুলিশের টহল বৃদ্ধি পেয়েছে। নাকা চেকিং হচ্ছে। চলছে তল্লাশিও।
উত্তর ২৪ পরগনাতেও উপকূল এলাকায় নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। নিরাপত্তা বেড়েছে জল ও স্থলসীমান্তে। জল, ভূমি ও আকাশে অত্যাধুনিক ইজ়রাইল রাডারের মাধ্যমে নজরদারি চালাচ্ছে সীমান্তরক্ষী বাহিনী।
ইতোমধ্যে ভারতীয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দফতর জানিয়েছে, বাংলাদেশের আকাশ ব্যবহার করে ভারতকে আক্রমণ করতে পারে সশস্ত্র সংগঠনগুলো। ফলে সুরক্ষা বাড়াতে বিএসএফের তৎপরতা শুরু হয়েছে। বসিরহাট মহকুমার স্বরূপনগর থেকে হিঙ্গলগঞ্জের হেমনগর কোস্টাল থানা পর্যন্ত ৯৪ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। তার মধ্যে ৫০ কিলোমিটার জলসীমান্ত। স্থলসীমান্ত ৪৪ কিলোমিটার। সীমান্ত সুরক্ষায় অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর।