আকস্মিকভাবে ৩০ ঘণ্টার অস্ত্রবিরতি ঘোষণা করেও সেটি মানছেন না রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। অস্ত্রবিরতির সময়সীমার মধ্যে ইউক্রেনে ‘আক্রমণাত্মক অভিযান’ চলছে, আকাশে উড়তে দেখা গেছে রুশ ড্রোন, চলছে গোলাবর্ষণ। এমন সব অভিযোগ তুলেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।

গতকাল শনিবার মস্কোয় রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর চিফ অব স্টাফ ভ্যালেরি গেরাসিমভের সঙ্গে বৈঠক করেন পুতিন। এ সময় টেলিভিশনে সম্প্রচার করা এক বক্তব্যে পুতিন ৩০ ঘণ্টার ওই অস্ত্রবিরতির ঘোষণা করেন। মূলত খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের উৎসব ইস্টার সানডে উপলক্ষে এ অস্ত্রবিরতি ঘোষণা করা হয়।

আরও পড়ুনপুতিনের এক দিনের অস্ত্রবিরতি, জেলেনস্কি বললেন ‘জীবন নিয়ে খেলছেন পুতিন’৯ ঘণ্টা আগে

পুতিনের ঘোষণা অনুযায়ী, অস্ত্রবিরতির আওতায় স্থানীয় সময় গতকাল সন্ধ্যা ৬টা থেকে আজ রোববার দিবাগত রাত ১২টা পর্যন্ত ইউক্রেনে হামলা বন্ধ রাখবে রাশিয়া। তবে এ সময় ইউক্রেনের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য হামলা মোকাবিলায় নিজেদের বাহিনীকে পুরোপুরি প্রস্তুত থাকারও নির্দেশ দেন পুতিন।

পুতিন বলেন, মানবিক কারণে ‘এই সময়ে কোনো ধরনের সামরিক হামলা না চালানোর নির্দেশ দিয়েছি আমি।’

এখন পর্যন্ত এটি (একতরফা অস্ত্রবিরতি ঘোষণার মধ্যে হামলা) মানুষের জীবন নিয়ে খেলতে পুতিনের আরেকটি অপচেষ্টা.

..আমাদের আকাশে শাহেদ ড্রোনের উপস্থিতি ইস্টার সানডে ও মানুষের জীবনের প্রতি পুতিনের প্রকৃত মনোভাব তুলে ধরেছে।-ভলোদিমির জেলেনস্কি, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট

পুতিনের এমন বক্তব্যের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে একটি পোস্ট দেন জেলেনস্কি। সেখানে তিনি লেখেন, ‘এখন পর্যন্ত এটি মানুষের জীবন নিয়ে খেলতে পুতিনের আরেকটি অপচেষ্টা...আমাদের আকাশে শাহেদ ড্রোনের উপস্থিতি ইস্টার সানডে ও মানুষের জীবনের প্রতি পুতিনের প্রকৃত মনোভাব তুলে ধরেছে।’

আরও পড়ুনচুক্তির জন্য ‘প্রস্তুত’ পুতিন, ‘যুদ্ধ শুরুর’ জন্য জেলেনস্কিকে দুষলেন ট্রাম্প১৫ এপ্রিল ২০২৫

পরে জেলেনস্কি আরেকটি এক্স পোস্টে লেখেন, রাশিয়া যদি এখন হঠাৎ করে পূর্ণ ও নিঃশর্ত নীরবতার কাঠামোয় যেতে প্রস্তুত হয়, তবে তাঁর দেশ যুদ্ধবিরতি মেনে চলবে। সেই সঙ্গে জেলেনস্কি ‘যুদ্ধবিরতির’ মেয়াদ বাড়ানোর পরামর্শ দেন।

জেলেনস্কি আরও অভিযোগ করেন, পুতিনের পক্ষ থেকে ৩০ ঘণ্টা হামলা না চালানোর ঘোষণা দেওয়া হলেও রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চল এবং বেলগোরোদে লড়াই অব্যাহত আছে। এমনকি ইউক্রেনের বিভিন্ন স্থানে এখনো রুশ ড্রোন উড়ছে। যদিও কিছু এলাকায় লড়াই বন্ধ রয়েছে।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু হয়। এর পর থেকে তিন বছরের বেশি সময় ধরে এ যুদ্ধ চলছে। ইউক্রেনে যুদ্ধ থামাতে কিয়েভ ও মস্কোর মধ্যে একটি শান্তিচুক্তির সইয়ের চেষ্টা করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে এ নিয়ে এখনো আশার আলো দেখা যায়নি।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু হয়। এর পর থেকে তিন বছরের বেশি সময় ধরে এ যুদ্ধ চলছে। ইউক্রেনে যুদ্ধ থামাতে কিয়েভ ও মস্কোর মধ্যে একটি শান্তিচুক্তির সইয়ের চেষ্টা করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে এ নিয়ে এখনো আশার আলো দেখা যায়নি।

আরও পড়ুনশিগগির অগ্রগতি না হলে যুদ্ধ বন্ধে মধ্যস্থতা বাদ দেবে যুক্তরাষ্ট্র১৮ এপ্রিল ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম ন ষ র জ বন ইউক র ন র

এছাড়াও পড়ুন:

কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন

টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।

এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।

গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।

প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ