গুম-খুনে জড়িতদের বিচারের দাবিতে ‘মায়ের ডাক’র মানববন্ধন
Published: 20th, April 2025 GMT
বলপূর্বক গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন বাহিনীর কর্মকর্তা ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে গুমবিরোধী সংগঠন ‘মায়ের ডাক’।
রবিবার (২০ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টায় সুপ্রিম কোর্টের ফটকে এ মানববন্ধনে অংশ নেন বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা।
মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেছেন, সরকার গণহত্যার বিচারের কথা বলে এই গুম-খুনের বিচার দীর্ঘায়িত করছে। আমরা দেখেছি, সেনানিবাসের ভিতরে আয়নাঘর ছিল। ৫ আগস্টের পরে সেনানিবাসের ভিতরে ৬ শতাধিক লোক আশ্রয় নিয়েছিল। সরকার আজও তাদের তালিকা প্রকাশ করেনি। দ্রুত সময়ের মধ্যে গুম-খুন এবং ছাত্র-জনতা হত্যার বিচার করতে হবে। ছাত্র-জনতা হত্যার সঙ্গে যেসব পুলিশ সদস্য জড়িত, তাদের এখনো গ্রেপ্তার করা হয়নি।
মায়ের ডাকের মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের ৮ মাস পরেও বিচার নিশ্চিত করা হচ্ছে না। ৫৩ বছরের বাংলাদেশে এই প্রথম সকলের ঐক্যমতের একটি সরকার রয়েছে। আমরা এই সরকারকে সমর্থন করি। দ্রুত এ বিচার করা উচিত বলে মনে করি।
মায়ের ডাকের সংগঠক সানজিদা ইসলাম তুলি বলেন, গুমের সাথে জড়িত সকলকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচার নিশ্চিত করতে হবে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী খুনিদের বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোল চলবে। প্রয়োজনে আমরা আবার রাজপথে নামব।
মানববন্ধনে শেষে সানজিদা ইসলাম তুলির নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্রতিনিধিদল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বরাবর স্মারকলিপি জমা দেয়। স্মারকলিপিতে ছয়টি দাবি জানানো হয়।
মায়ের ডাকের দাবিগুলো হলো:
১। ‘আয়নাঘর’ ও গুম-নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন বাহিনীর কর্মকর্তা, গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য এবং সরকারি কর্মকর্তাদের নামের তালিকা প্রকাশ করতে হবে। অবিলম্বে নিশ্চিত করতে হবে যে, এই অপরাধীরা দেশের সীমান্ত পেরিয়ে পালিয়ে যেতে পারবে না।
২। খুন, গুম ও নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত সকল অপরাধীকে ক্যান্টনমেন্ট থেকে সরিয়ে আইনি প্রক্রিয়ায় গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠাতে হবে।
৩। অভিযুক্ত উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তাদের পদ থেকে অপসারণ এবং তাদের বিরুদ্ধে সুষ্ঠু বিচারিক তদন্ত নিশ্চিত করতে হবে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত র্যাব, ডিজিএফআই, এনএসআই, ডিবি, সিটিটিসির সদস্যদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
৪। ‘আয়নাঘর’ সংরক্ষণের জন্য অবিলম্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে প্রমাণ নষ্ট বা গোপন করা না যায়। প্রমাণ ধ্বংসের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।
৫। ভবিষ্যতে গুম, নির্যাতন ও গোপন বন্দিশালার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে, তার নিশ্চয়তা দিতে হবে এবং সংবিধান ও মানবাধিকার সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় আইনি সংস্কার করতে হবে।
৬। গুমের শিকার পরিবারের সদস্যদের রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দিতে হবে এবং তাদের দায়িত্ব নিতে হবে।
ঢাকা/রায়হান/রফিক
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন শ চ ত কর কর মকর ত র সদস য সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
‘ডাকসু হলো, রাকসু হলো, চাকসু কেন থেমে গেল’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (চাকসু) দ্রুত তফসিল ঘোষণার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (৩০ জুলাই) বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা ‘হয় মোদের চাকসু দে, নইলে গদি ছাইড়া দে’, ‘ডাকসু হলো, রাকসু হলো, চাকসু কেন থেমে গেল’, ‘চাকসু মোদের অধিকার, রুখে দেওয়ার সাধ্য কার’—এমন স্লোগান দেন।
আরো পড়ুন:
আনাতোলিয়ান রোভার চ্যালেঞ্জে বিশ্বে তৃতীয় ইউআইইউ
জবির প্রভাবশালী আওয়ামীপন্থি ‘ক্যাডার’ শিক্ষকরা যেখানে আছেন
আইন বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সাব্বির হোসেন রিয়াদ বলেন, “জুলাই মাসে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ হওয়ার ঘটনাগুলো আমাদের জানা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন শিক্ষার্থীও সে সময় শহীদ হয়েছিলেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়েই সবার আগে চাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার কথা ছিল, কিন্তু এখনও কোনো অগ্রগতি নেই। অথচ ডাকসু, রাকসু, জাকসুর তফসিল ঘোষণা হয়েছে।”
তিনি আরও জানান, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে আগামী ১ আগস্ট সিন্ডিকেট সভায় চাকসুর নীতিমালা অনুমোদনের বিষয়টি চূড়ান্ত হবে। এরপর আগস্টের প্রথম সপ্তাহেই তফসিল ঘোষণার প্রত্যাশা করা হচ্ছে। “যদি তা না হয়, তাহলে আমরা দুর্বার ছাত্রআন্দোলনের দিকে যাব,” বলেন তিনি।
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক ও নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী খান তালাত মাহমুদ রাফি বলেন, “দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এরইমধ্যে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষিত হলেও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছে। আমরা এতদিন রোডম্যাপ চেয়েছিলাম, এখন আর রোডম্যাপ নয়—তফসিল চাই।”
তিনি আরো বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল সমস্যার একমাত্র সমাধান হচ্ছে সক্রিয় ছাত্র সংসদ। তাই আগামী আগস্টের প্রথম সপ্তাহে তফসিল এবং সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন চাই।”
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, “আগামী ১ আগস্ট সিন্ডিকেট সভায় চাকসুর নীতিমালা চূড়ান্ত হলে নির্বাচন কমিশনার তফসিল ঘোষণা করবেন।”
চাকসু গঠনের ধারণা মূলত এসেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসুর আদলে। বাংলাদেশে ১৯৭৩ সালে প্রথমবারের মতো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রসংসদ গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়।
১৯৭০ সালে চাকসুর প্রথম কেবিনেট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ নির্বাচন হয় ১৯৯০ সালের ৮ মে। এই নির্বাচনে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল বিজয়ী হয়েছিল। এরপর দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে আর কোনো চাকসু নির্বাচন হয়নি।
২০২৫ সালে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হওয়ায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাকসু ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জাকসুর মতো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও চাকসু নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করছেন।
ঢাকা/মিজানুর রহমান/ইভা