দেশে কেমন একটা অস্থিরতা চলছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। নেতাকর্মীর উদ্দেশে তিনি বলেন, আমাদের সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে। কারণ, আমাদের সংগ্রাম এখনও শেষ হয়নি। দেশে গণতান্ত্রিক উত্তরণ হয়নি। আমরা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নির্বাচিত সরকার ও সংসদ পাইনি। ফলে দলকে আরও সুদৃঢ় ও শক্তিশালী করতে হবে।

রোববার রাজধানীর কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান স্মরণে শ্রমিক দলের আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল।

গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ধানমন্ডির বাসায় আবদুল্লাহ আল নোমান মারা যান। প্রয়াত এ নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তাঁর অনুসরণীয় পথে শ্রমিক দলের নেতাকর্মীদের চলার আহ্বান জানান তিনি।

দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক অবস্থা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে আমাদের পরীক্ষার সময়। পত্রপত্রিকা, টেলিভিশন, টকশো– সবকিছুতে কেমন একটা অস্থিরতা চলছে। কতগুলো নির্ধারিত বিষয়কেও অনির্ধারিত করে ফেলা হয়েছে। অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে অনেক কিছু। আজ সংস্কার, নির্বাচন– কথাগুলো অনেক বেশি উচ্চারিত হচ্ছে। সবার দায়িত্ব, অত্যন্ত ধৈর্যের সঙ্গে সমস্যাগুলো আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা।

শ্রমিকদের সংস্কার কোথায়– প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, এত সংস্কারের কথা হচ্ছে। কিন্তু শ্রমজীবী, শ্রমিকদের কথা কোথাও শুনছি না। আমাদের ৩১ দফার মধ্যে শ্রমজীবী মানুষের কথা বলা হয়েছে। বর্তমানে সংস্কার কমিশনগুলোর প্রস্তাবের মধ্যে এ নিয়ে কী আছে, তা জানি না।

মির্জা ফখরুল বলেন, কৃষক তার পণ্যের ন্যায্যমূল্য পান না, পানি পান না। যখন সেচের পানি প্রয়োজন, তখন সমস্যার সমাধান হয় না। শ্রমিকদের সন্তানরা ভালো স্কুলে যেতে পারে না; গেলেও বই পায় না। অথচ এই কথাগুলো আলোচনাই হয় না।

তিনি বলেন, খুব ভালো করে লক্ষ্য করে দেখবেন– টেলিভিশন বলেন, টকশো বলেন, এমনকি টেলিভিশনের নাটকেও কিন্তু সাধারণ মানুষ অনুপস্থিত। শ্রমজীবীরা কোথাও নেই। অথচ এরাই দেশের বড় অংশ। ২০২৩ সালের ৭ ডিসেম্বর বিএনপি অফিসের সামনে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন মকবুল, তিনি কারখানা শ্রমিক ছিলেন। ভোলার শাওন অটোরিকশা চালাতেন; মুন্সীগঞ্জ-নারায়ণগঞ্জে ফ্যাসিস্টবিরোধী আন্দোলনে যারা আত্মাহুতি দিয়েছেন, তারাও শ্রমিক ছিলেন।

ছাত্রদল কর্মী পারভেজের হত্যাকারীরা গণতন্ত্রের পক্ষের নয়– মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, যারা এ সময় ত্যাগী ছাত্রনেতাকে হত্যা করতে পারে, তারা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের নতুন পরিবর্তনের আন্দোলনে যুক্ত ছিল না। বাংলাদেশে যারা বিভাজন সৃষ্টি করতে চায়, তারা এ দেশের পক্ষের নয়। তারা গণতন্ত্র ও শ্রমজীবী মানুষের পক্ষের নয়।

শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইনের সভাপতিত্বে এবং প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস প্রমুখ। এ সময় আবদুল্লাহ আল নোমানের ছেলে সাঈদ আল নোমানও উপস্থিত ছিলেন।


 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ম র জ ফখর ল ব এনপ আল ন ম ন শ রমজ ব আম দ র ফখর ল ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ

সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়। 

গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’ 

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।

টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন। 

এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’ 

সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।

সম্পর্কিত নিবন্ধ