বাংলাদেশের বিনিয়োগ বাড়াতে চীনকে এগিয়ে আসার আহ্বান
Published: 20th, April 2025 GMT
চীনের ইউনান প্রদেশের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ানোর পাশাপাশি বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়ানোর বিষয়ে আহ্বান জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। চীনের ইউনান প্রদেশের গভর্নর ওয়াং ইউবোর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে তিনি এ আহ্বান জানান।
রবিবার (২০ এপ্রিল) বিকালে সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এ সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়। এ সময় বাণিজ্য উপদেষ্টা ইউনান প্রদেশের গভর্নরের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
এ সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ড.
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, “বাংলাদেশ ও ইউনান প্রদেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধির বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশ সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিতে চায়।”
তিনি বলেন, “দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কোন্নয়নের মাধ্যমে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও পর্যটন খাতে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। বিনিয়োগ বৃদ্ধির পাশাপাশি এদেশে এগ্রিকালচার ড্রোন সিস্টেম চালু করতে সহযোগিতা, ট্রেনারদের সক্ষমতা বৃদ্ধি, পেস্টিসাইড ম্যানেজমেন্ট ও খাদ্য শস্য উৎপাদনে এক্সপেরিমেন্টাল প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে।”
শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, “বাংলাদেশে পর্যটনের সম্ভাবনা ভালো। ইউনানের পর্যটন অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ডমেস্টিক ট্যুরিজম (স্থানীয় পর্যটন) বাড়ানোর ক্ষেত্রে সহযোগিতা চাই”।
এ সময় বাংলাদেশে ট্যুরিজম অবকাঠামো উন্নয়নে এগিয়ে আসতে এবং বাংলাদেশে আরো বিনিয়োগ বাড়াতে ইউনানের গভর্নরের প্রতি আহ্বান জানান।
চীন বাংলাদেশের সম্পর্ক এখন চমৎকার উল্লেখ করে ইউনান প্রদেশের গভর্নর ওয়াং ইউবো বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস এর সাম্প্রতিক চীন সফর বাংলাদেশ চীন সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। এর ধারাবাহিকতায় ইউনান প্রদেশ বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক শক্তিশালী করতে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে আগ্রহী।”
তিনি বলেন, “ইউনান প্রদেশের অবস্থান বাংলাদেশের নিকটেই। চট্টগ্রাম-কুনমিং ফ্লাইট চালু হলে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরো গতি পাবে।”
এ সময় তিনি ইউনান প্রদেশের জনগণের সঙ্গে বাংলাদেশের জনগণের সম্পর্কোন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
গভর্নর বলেন, “চীনের ইউনানে বাংলাদেশি পণ্যের চাহিদা রয়েছে। বিশেষ করে মৌসুমি ফলের চাহিদা সবচেয়ে বেশি।”
তিনি বাংলাদেশ থেকে আম ও ইলিশ মাছ আমদানির আগ্রহ প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, “পর্যটকদের কাছে ইউনান প্রদেশ জনপ্রিয় পর্যটন ডেস্টিনেশন হিসেবে পরিচিত। ইউনান প্রদেশে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বছরে সাত শত মিলিয়ন পর্যটক ভ্রমণ করতে আসে। ইউনান প্রদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয়।”
এ সময় তিনি বাংলাদেশের পর্যটনের উন্নয়ন এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবা খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধির আশ্বাস দেন।
ঢাকা/হাসনাত/সাইফ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সহয গ ত উপদ ষ ট এ সময় ন নয়ন
এছাড়াও পড়ুন:
জামিন দেওয়াকে কেন্দ্র করে আদালতে হাতাহাতি, স্টেনোগ্রাফার আহত
লক্ষ্মীপুরে আদালতে একটি জামিনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে একজন বিচারকের আদালত বর্জন করেছে আইনজীবীরা। এ সময় আইনজীবীদের সাথে আদালতের কর্মচারীদের হাতাহাতি ও এজলাসে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এতে আহত হন ওই এজলাসের স্টেনোগ্রাফার আশরাফুজ্জামান।
রবিবার (১৫ জুন) দুপুর ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। আদালত বর্জন করায় ভোগান্তিতে পড়েন বিচারপ্রার্থীরা।
জানা গেছে, রায়পুর প্রিন্সিপাল কাজী ফারুকী স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক আহম্মেদ কাউসার উদ্দিন জামান (৩৫) এর বিরুদ্ধে গত ৬ জুন সদর থানায় চুরির মামলা দায়ের করেন তারই প্রতিবেশি জেলা জজ আদালতের আইনজীবী আবু তৈয়ব। মামলায় আরও দুইজনকে আসামি করা হয়। ওই মামলায় আসামি কাউসার ও রুবেল গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে ছিলেন। এরপর গত ১০ জুন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩ এর বিচারক এম সাইফুল ইসলাম তাদের জামিন মঞ্জুর করেন। এ নিয়ে তাৎক্ষণিক ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দসহ আইনজীবীরা।
মামলায় অভিযোগ আনা হয়, বাদী এবং আসামিদের মধ্যে পূর্ব বিরোধ রয়েছে। ৫ জুন দিবাগত গভীর রাতে আসামিরা পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডে বাদীর ভবনের সামনে থাকা একটি লোহার গেট কেটে নিয়ে এবং গেটের পিলার ভেঙে একটি পিক-আপ গাড়িতে করে রায়পুরের দিকে নিয়ে যায়। রায়পুর বাসাবাড়ি এলাকায় গেলে পিকআপ গাড়িটি টহল পুলিশ আটক করে। পরে গাড়িটি জব্দ ও চালক রুবেলকে আটক করে পুলিশ। মামলায় বাদী আড়াই লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে উল্লেখ করেন।
আদালত সূত্র জানায়, গত ৯ জুন আসামিদের জামিন প্রার্থণা করা হয়। এতে আসামিপক্ষ উল্লেখ করেন, মামলার বাদি আইনজীবী হওয়ায় আদালতে তাদের পক্ষে কোন আইনজীবী জামিন শুনানিতে অংশ নিতে ইচ্ছুক নয়। আসামিরা তাদের পক্ষে আইনজীবী না পেয়ে জামিন শুনানির জন্য লক্ষ্মীপুর লিগ্যাল এইড অফিসে আইনি সহায়তা চান। সেখান থেকে দুইজন আইনজীবীকে শুনানি করতে বলা হলেও তারা অন্য আইজীবীদের দ্বারা হেনস্তার ভয়ে জামিন শুনানিতে অংশ নেননি। অন্যদিকে বাদী পক্ষের আইনজীবী আসামিদের বিরুদ্ধে জামিনের বিরোধিতা করেন।
আদালত সূত্র আরও জানায়, আসামিরা ৯ জুন জামিনের জন্য আবেদন করলে পরদিন ১০ জুন নথি প্রাপ্ত সাপেক্ষে জামিন শুনানির জন্য রাখা হয় এবং তদন্তকারী কর্মকর্তা ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন।
বিষয়টি নিয়ে আদালতের পর্যালোচনায় উঠে আসে, ঈদুল আজহার বন্ধে আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় এবং গ্রেপ্তারের পর থেকে আসামিরা জামিনের শুনানির সুযোগ পাননি। চারদিন তাদের হাজতবাস হয়েছে। ৬ জুন আসামি গ্রেপ্তার হলেও বাদী একজন আইনজীবী হওয়ায় আসামিরা জামিন শুনানির জন্য কোন আইনজীবী পাননি এবং লিগ্যাল এইড অফিসের আইনজীবীরাও শুনানিতে অংশ নিতে অনীহার বিষয়টি পরিষ্কার হওয়ায় ১৪ জুন পর্যন্ত ঈদের ছুটিতে আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় জামিন অযোগ্য ধারায় গুরুতর অভিযোগ না থাকায় উভয় পক্ষের শুনানি অন্তে উভয় দরখাস্ত নিষ্পত্তি করা হলো।
আদালত আসামিদের রিমান্ড না মঞ্জুর করে চারদিনের হাজতবাস ও ঈদ বিবেচনা করে আসামি কাউসার ও রুবেলকে ১০০ টাকা বন্ডে একজন গণ্যমান্য ব্যক্তির জিম্মায় জামিন মঞ্জুর করেন। তাদের জামিন হওয়ায় পর থেকেই আইনজীবীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করে। এ ঘটনায় তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করে বিচারকের অপসারণের দাবি জানান।
ঈদের বন্ধ শেষে রবিবার (১৫ জুন) আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হয়। আইনজীবী সমিতি বৈঠক করে ওই আদালতের বিচারক এম সাইফুল ইসলামের আদালতের বর্জনের ঘোষণা দেন। এদিন সকাল থেকে ওই বিচারকের কক্ষে বিচারপ্রার্থীরা এসে উপস্থিত হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন বিচারপ্রার্থী জানান, আদালতের বিচারক এজলাসে বসা ছিলেন। এ সময় ৭-৮ জন আইনজীবী কক্ষে ঢুকে আদালত বর্জনের ঘোষণা দেন। এতে হট্টগোল দেখা দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিচারক আদালত কর্মচারীদের দরজা বন্ধ করে দিতে বলেন। এ সময় আইনজীবী ও কর্মচারীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। আহত হন এজলাসের স্টেনোগ্রাফার আশরাফুজ্জামান। এতে বিচারকার্য সম্পন্ন না করেই এজলাস থেকে নেমে যান বিচারক।
আহত আশরাফুজ্জামান বলেন, ‘‘আইনজীবীরা হট্টগোল করায় বিচারকের নির্দেশে আমি দরজা বন্ধ করতে গেলে আমার ওপর আইনজীবীরা হামলা করে। এতে আমার বাম চোখের পাশে রক্তাক্ত জখম হয়।’’
উপস্থিত আইনজীবীদের মধ্যে অ্যাডভোকেট আশিকুর রহমান জানান, কয়েকজন আইনজীবী এজলাসে গিয়ে আদালত বর্জনের বিষয়টি জানিয়ে দিতে গিয়েছেন। আদালত কর্মচারীরা উল্টো তাদের ওপর হামলা করেছে। এতে তিনি নিজেও আহত হন।
ঢাকা/লিটন/টিপু