ইবনে বতুতা লিখেছেন, বাংলা সবুজঘেরা বিশাল এক দেশ। ত্রিশ িকউবিট লম্বা মিহি সুতার তৈরি সুন্দর কাপড় সে দেশে মাত্র দুই দিনারে বিক্রি হয়। এখানকার এক সোনার দিনার মরক্কোর আড়াই দিনারের সমান। বাংলার সুলতান ফখরুদ্দীন সন্দেহাতীতভাবে চমৎকার একজন শাসক।
ট্রাভেলস অব ইবনে বতুতায় বর্ণিত এই শাসকের প্রকৃত নাম ফখরুদ্দীন মুবারক শাহ। তিনি ছিলেন সোনারগাঁয়ের শাসনকর্তা বাহরাম খানের একজন সাধারণ সেনা, ‘বর্ম রক্ষক’ বা সিলাহদার ছিল তাঁর পদবি। ১৩৩৪ খ্রিষ্টাব্দে বাহরাম খানের মৃত্যু হলে বর্ম রক্ষক ফখরুদ্দীন স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং সোনারগাঁয়ের সিংহাসনে আরোহণ করেন। তাঁর প্রাপ্ত মুদ্রার তারিখ ৭৩৪ থেকে ৭৫০ হিজরি, অর্থাৎ তিনি প্রায় ১৬ বছর রাজত্ব করেছেন। ফখরুদ্দীন সোনারগাঁকে ঘিরে পরবর্তী সময়ে চট্টগ্রাম ও সিলেট নিজের অধিকারভুক্ত করেছিলেন বলে সমকালীন সূত্র থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়। এত দিন ফখরুদ্দীন মুবারকের একটিমাত্র স্বর্ণমুদ্রার খোঁজ ছিল, যা জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত। গোরন গোয়েনকার ক্যাটালগে অবশ্য আরেকটি স্বর্ণ কোয়ার্টার টাংকার উল্লেখ আছে।
১৮-২০ এপ্রিল জাতীয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী চিত্রশালায় ‘ওল্ড ঢাকা কালেক্টরস সোসাইটি’র উদ্যোগে মুদ্রা প্রদর্শনী ‘ঢাকা নিউমিস শো ২০২৫’-এ ফখরুদ্দীন মুবারক শাহর আরেকটি স্বর্ণমুদ্রা প্রদর্শন করা হয়। সংগ্রাহক মুহাম্মদ শামসুদ্দিন। জাতীয় জাদুঘরের সংগ্রহে থাকা মুদ্রাটি থেকে এই মুদ্রায় রয়েছে ভিন্নতা, যা ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায় যুক্ত করেছে।
মুদ্রাটির সংগ্রাহক মুহাম্মদ শামসুদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত স্বর্ণমুদ্রাটির সন ৭৩৪ হিজরি, তথা ফখরুদ্দীন মুবারক শাহর সিংহাসনে আরোহণের সন হওয়ায় ধারণা করা হতো, সেটি সিংহাসনে আরোহণের স্মারক মুদ্রা হতে পারে। কিন্তু পরবর্তী স্বর্ণমুদ্রা আবিষ্কারের ফলে বোঝা যায়, তিনি অন্য বছরেও একাধিক স্বর্ণমুদ্রা প্রচলন করেন।’ মুহাম্মদ শামসুদ্দিনের সংগ্রহে থাকা মুদ্রাটি সম্ভাব্য ৭৩৮ হিজরির।
মুহাম্মদ শামসুদ্দিনের সংগৃহীত ফখরুদ্দীন মুবারক শাহের স্বর্ণমুদ্রা.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জ ত য় জ দ ঘর
এছাড়াও পড়ুন:
‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স’ নিয়ে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনের পরবর্তী শুনানি বুধবার
রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স’ নিয়ে আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে করা আবেদনের (রিভিউ) ওপর পরবর্তী শুনানির জন্য আগামীকাল বুধবার দিন রেখেছেন আপিল বিভাগ। আজ মঙ্গলবার শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের বেঞ্চ পরবর্তী ওই দিন ধার্য করেন।
এর আগে গত ১৮ মে শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগ শুনানির জন্য ১ জুলাই দিন ধার্য করেছিলেন। ধার্য তারিখে বিষয়টি শুনানির জন্য রিভিউ আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবীর সময়ের আরজির পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগ ১৫ জুলাই পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন। আজ বিষয়টি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের কার্যতালিকার ৭ নম্বর ক্রমিকে ওঠে।
ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স সংশোধন করে ২০১৫ সালের ১১ জানুয়ারি আপিল বিভাগ রায় দেন। পরে ২০১৬ সালের ১০ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। রায়ে রাষ্ট্রের সাংবিধানিক পদধারীদের পদক্রম ওপরের দিকে রাখা ও অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়। পাশাপাশি জেলা জজদের পদক্রম আট ধাপ উন্নীত করে সচিবদের সমান করা হয়।
আপিল বিভাগের রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতির পদক্রম এক ধাপ উন্নীত করে জাতীয় সংসদের স্পিকারের সমান এবং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের (স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পদক ও মহান স্বাধীনতাসংগ্রামে অংশগ্রহণ করে যে মুক্তিযোদ্ধারা বীর উত্তম খেতাব পেয়েছেন) পদক্রমে যথাযথভাবে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত বলে উল্লেখ করা হয়।
ওই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) তৎকালীন চেয়ারম্যান ২০১৭ সালে পৃথক আবেদন করেন। রিভিউ আবেদনে রাষ্ট্রের ৯০ জন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল পক্ষভুক্ত হন। পুনর্বিবেচনা চেয়ে করা আবেদনের ওপর গত ২৭ এপ্রিল শুনানি শুরু হয়।
আজ আদালতে রিভিউ আবেদনকারী মন্ত্রিপরিষদ সচিবের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সালাহ উদ্দিন দোলন শুনানি করেন। রিট আবেদনকারী পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী প্রবীর নিয়োগী এবং ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলদের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম শুনানিতে অংশ নেন।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী, ১৯৮৬ সালে ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স তৈরি করে। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর একই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর তা জারি করা হয়। পরে বিভিন্ন সময়ে তা সংশোধন করা হয়।
সর্বশেষ সংশোধন করা হয় ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে। সংশোধিত এই ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স তৈরির ক্ষেত্রে সাংবিধানিক পদ, সংবিধান কর্তৃক স্বীকৃত ও সংজ্ঞায়িত পদগুলো প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নিচের ক্রমিকে রাখা হয়েছে—এমন উল্লেখ করে এর বৈধতা নিয়ে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের তৎকালীন মহাসচিব মো. আতাউর রহমান ২০০৬ সালে রিট করেন।
রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট আট দফা নির্দেশনাসহ ১৯৮৬ সালের ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স (সংশোধিত) অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ২০১১ সালে আপিল করে। এ আপিলের ওপর শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১১ জানুয়ারি আপিল বিভাগ রায় দেন। এ রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে ২০১৭ সালে করা আবেদনের ওপর শুনানি চলছে।