একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন—সংবিধান সংস্কার কমিশনের এ সুপারিশের সঙ্গে একমত হয়নি বিএনপি। তারা চায়, একই ব্যক্তি টানা দুবারের পর বিরতি দিয়ে আবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন।

গতকাল রোববার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় এ বিষয়ে বিএনপি অনড় অবস্থান নেয়। পরে বৈঠকে একটি নতুন প্রস্তাব আলোচনায় আসে। সেটি হলো এক ব্যক্তি মাঝখানে বিরতি দিয়ে সর্বোচ্চ তিনবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন।

বিএনপির সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে উপস্থিত থাকা একাধিক সূত্র প্রথম আলোকে নতুন এ প্রস্তাবের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তবে এ প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হলেও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বিএনপি ঐকমত্য কমিশনকে জানিয়েছে, এ বিষয়ে তারা দলের নীতিনির্ধারণী পর্ষদে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানাবে।

এ ছাড়া ক্ষমতার ভারসাম্য আনতে সংবিধান সংস্কার কমিশন যেসব প্রস্তাব দিয়েছে, তার অনেকগুলোর সঙ্গে ভিন্নমত জানিয়ে অনড় অবস্থানে ছিল বিএনপি। তবে তারা রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বাড়াতে পরবর্তী সংসদে একটি আইন করা হবে—এমন প্রস্তাব দিয়েছে। তবে সে আইনে কী কী থাকবে, তার বিস্তারিত জানানো হয়নি।

সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য গঠনের লক্ষ্যে পাঁচটি কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এর অংশ হিসেবে বিএনপির সঙ্গে চলছে। গত বৃহস্পতিবার দলটির সঙ্গে দিনব্যাপী বৈঠক শেষে আলোচনা মুলতবি করা হয়েছিল। গতকাল বেলা ১১টা থেকে জাতীয় সংসদের এলডি হলে মুলতবি আলোচনা শুরু হয়। সন্ধ্যা পৌনে ছয়টা পর্যন্ত দ্বিতীয় দিনের মতো আলোচনা হয়। তবে আলোচনা শেষ হয়নি। আগামীকাল মঙ্গলবার আবার ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক হবে বলে জানিয়েছে বিএনপি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গতকাল সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রায় সব সুপারিশ এবং বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের কিছু সুপারিশ নিয়ে আলোচনা শেষ হয়। দুপুরে মধ্যাহ্নভোজের বিরতির পর আলোচনায় একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ কয় মেয়াদ প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন, সে আলোচনা ওঠে। একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন—এ প্রস্তাবের সঙ্গে বিএনপি একমত নয়, সেটি দলটি আগেই জানিয়েছিল।

এ বিষয়ে আলোচনা শুরুর আগেই মধ্যাহ্নবিরতিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তখন তিনি বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে এখনো আলোচনা হয়নি। তবে দলের অবস্থান স্পষ্ট। জনগণ যদি কোনো ব্যক্তিকে দুই মেয়াদের পর বিরতি দিয়ে আবার প্রধানমন্ত্রী করতে চায়, সে সুযোগ সংকুচিত করা উচিত হবে না।

বৈঠকের একাধিক সূত্র জানায়, এরপর ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনার সময়ও বিএনপি তাদের এ অবস্থানে অটল থাকে। একপর্যায়ে ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে নতুন প্রস্তাবটি দেওয়া হয়। সেটা হলো এক ব্যক্তি মাঝখানে বিরতি দিয়ে সর্বোচ্চ তিনবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন। এ নিয়ে আলোচনা হলেও সিদ্ধান্ত জানায়নি বিএনপি। তারা দলীয় ফোরামে আলোচনা করে পরে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবে।

সন্ধ্যায় আলোচনা শেষে সালাহউদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের সঙ্গে আবার কথা বলেন। একজন ব্যক্তি কতবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন, তা নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে বিএনপির বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে বলে জানান তিনি। এ সময় সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘এখানে তাদের (ঐকমত্য কমিশন) একটা প্রস্তাব আছে। এখনই আমি ডিসক্লোজ (প্রকাশ) করতে চাই না। সেটা আমরা আমাদের দলীয় ফোরামে আলোচনার পরে যদি আমরা সিদ্ধান্তে আসতে পারি, সেটা আমরা জানাব।’

একই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা ও দলীয় প্রধান হতে পারবেন না—সংবিধান সংস্কার কমিশনের এমন সুপারিশের সঙ্গেও একমত হয়নি বিএনপি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বৈঠকে বিএনপি বলেছে, একটি দলের প্রধান কে হবেন, তারা ক্ষমতায় গেলে প্রধানমন্ত্রী কে হবেন, কে সংসদ নেতা হবেন—এসব ঠিক করার বিষয়টি একান্ত দলের নিজস্ব বিষয়। এসব সংবিধানে ঠিক করে দেওয়া যাবে না।

এ বিষয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, একই ব্যক্তি সরকারপ্রধান ও দলীয় প্রধান হতে পারবে না—এমন চর্চা দেখা যায় না। যুক্তরাজ্যেও এটি নেই।
বিএনপির পক্ষে আলোচনায় অংশ নেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমদ ও নজরুল ইসলাম খান, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মো.

ইসমাইল জবিউল্লাহ, নির্বাহী কমিটির সদস্য রুহুল কুদ্দুস কাজল ও সাবেক সচিব আবু মো. মনিরুজ্জামান খান।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষে আলোচনায় অংশ নেন কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য) মনির হায়দার।

বৈঠক-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বৈঠকে সংবিধানের বেশির ভাগ মৌলিক পরিবর্তনের প্রস্তাবে বিএনপি বিরোধিতা করেছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তারা পরবর্তী সংসদে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া যৌক্তিক বলে মত দিয়েছে। তারা জোর দিয়ে বলেছে, যদি একটি নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা তৈরি হয় এবং সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত হয়, তাহলে বেশির ভাগ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

এনসিসিতে আপত্তি বিএনপির

বিদ্যমান সংবিধানের ৪৮(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতি পদে নিয়োগ ছাড়া অন্য যেকোনো কাজে রাষ্ট্রপতিকে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ নিতে হয়। বিভিন্ন সাংবিধানিক পদে নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রেও প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ নিতে হয় রাষ্ট্রপতিকে। মূলত প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছাতেই সাংবিধানিক পদে নিয়োগ হয়।

সংবিধান সংস্কার কমিশন বলেছিল, তাদের সংস্কার প্রস্তাব তৈরির অন্যতম লক্ষ্য ছিল, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির মধ্যে এবং রাষ্ট্রের তিনটি বিভাগের (আইনসভা, নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগ) মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনা। এ জন্য তারা বেশ কিছু সুপারিশ করেছিল। এর একটি হলো নির্বাহী বিভাগ, আইন সভা ও বিচার বিভাগ—রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি ‘জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল’ (এনসিসি) গঠন করা।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার, অ্যাটর্নি জেনারেল, সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান ও অন্যান্য সদস্য, দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান ও অন্যান্য কমিশনার, মানবাধিকার কমিশনের প্রধান ও অন্যান্য কমিশনার, প্রতিরক্ষা বাহিনীগুলোর প্রধানদের পদে নিয়োগের জন্য এই কাউন্সিল রাষ্ট্রপতির কাছে নাম পাঠাবে।

এনসিসি গঠনের এ সুপারিশের সঙ্গে একমত হয়নি বিএনপি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বৈঠকে এ প্রস্তাবের জোরালো বিরোধিতা করে বিএনপির প্রতিনিধিদল। তারা যুক্তি দেয়, এ প্রস্তাব একেবারে নতুন ধারণা। এখানে অনির্বাচিত ব্যক্তিরা থাকবেন। কিন্তু সব দায় নিতে হবে নির্বাচিত সরকারকে। এই কাউন্সিল গঠন করা হলে সরকারের হাত-পা বেঁধে দেওয়া হবে। সরকার হবে দুর্বল। তারা এ প্রস্তাবের সঙ্গে একমত নয়।

গতকাল দুপুরে বৈঠকের বিরতিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, এনসিসি গঠনের প্রস্তাবে বিএনপি একমত নয়। এটি বাস্তবায়িত হলে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা অনেক বেশি সংকুচিত হবে।

রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা প্রশ্নে বিএনপির অবস্থান

রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বাড়ানোর প্রশ্নে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, তাঁরা সংবিধানের ৪৮(৩) অনুচ্ছেদের পর একটি উপ-অনুচ্ছেদ যুক্ত করার কথা বলেছেন। যেখানে রাষ্ট্রপতিকে আরও বেশি স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা দেওয়ার জন্য আইন করার কথা থাকবে।

ওই আইনে রাষ্ট্রপতিকে কী কী ক্ষমতা দেওয়া থাকবে—এমন প্রশ্নের জবাবে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘সেটা যখন আইন করা হবে, তখন বিস্তারিত থাকবে। তিনি বলেন, ‘ভিন্ন রাষ্ট্রীয় সাংবিধানিক পদে পদায়নের ক্ষেত্রে এবং বিচার বিভাগের প্রধান বিচারপতি ও অন্য বিচারপতিদের পদায়নের ক্ষেত্রে, আমরা রাষ্ট্রপতিকে আরও কোন কোন বিষয়ে ঐকমত্যের ভিত্তিতে ক্ষমতায়িত করতে চাই; সে বিষয়গুলো আলোচনার মাধ্যমে ঠিক হলে, তখন লেজিসলেশন করে পার্লামেন্টে সেটা করা যাবে।’
সালাহউদ্দিন আহমদ জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা কখন, কীভাবে মনোনীত হবেন, তা নিয়ে তাঁরা পুরোপুরি একমত হতে পারেননি। এটি নিয়ে পরে সিদ্ধান্ত হবে। স্থানীয় সরকার শক্তিশালী করার বিষয়ে বিএনপি একমত, তবে তাঁরা মনে করেন, এটি আইনের মাধ্যমে করা সমীচীন হবে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার না করার বিষয়েও বিএনপি একমত।

এখন সংসদ নেই, সংবিধান সংশোধনসংক্রান্ত প্রস্তাবগুলো কীভাবে বাস্তবায়িত হবে—এমন প্রশ্নের জবাবে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, এটি অবশ্যই পরবর্তী সংসদে হবে। তিনি বলেন, রাষ্ট্র ও জনগণের জন্য কল্যাণকর এবং গণতান্ত্রিক, শক্তিশালী কাঠামো দাঁড় করানোর জন্য তাঁরা সহযোগিতা করছেন। প্রধান বিষয় হচ্ছে যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করা যায়, তাহলে চর্চার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী হবে।

রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচন প্রসঙ্গ

বিদ্যমান সংবিধান অনুযায়ী সংসদ সদস্যদের ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। সংবিধান সংস্কার কমিশন রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনে নতুন পদ্ধতি প্রস্তাব করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবেন নির্বাচকমণ্ডলীর (ইলেকটোরাল কলেজ) সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে। আইন সভার উভয় কক্ষের সদস্যদের প্রত্যেকের একটি করে ভোট, জেলা সমন্বয় কাউন্সিল সামষ্টিকভাবে একটি করে ভোট (৬৪টি জেলা সমন্বয় কাউন্সিল থাকলে ৬৪টি ভোট), সিটি করপোরেশন সমন্বয় কাউন্সিল সামষ্টিকভাবে একটি করে ভোট দেবে।

সংবিধান সংস্কার কমিশনের এ প্রস্তাবের সঙ্গেও একমত হয়নি বিএনপি। তারা চায় আইনসভা দ্বিকক্ষবিশিষ্ট হলে উভয় কক্ষের সদস্যদের ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবেন। আলোচনা শেষে এ বিষয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, দেশে ফেডারেল পদ্ধতি নেই, এখানে কোনো প্রদেশ নেই। যেসব দেশে প্রদেশ থাকে সেখানে ইলেকটোরাল কলেজের বিষয় আছে। তিনি বলেন, তাঁরা শুধু আইনসভার দুই কক্ষের সদস্যদের ইলেকটোরাল কলেজ হিসেবে গণ্য করার কথা বলেছেন।

আগে দ্বিমত ছিল, আলোচনার মাধ্যমে একমত হয়েছেন—এমন কোনো বিষয় আছে কি না, প্রশ্ন করা হলে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘অনেক বিষয় আছে, এগুলো কম্পাইল করে বলব।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ল হউদ দ ন আহমদ স র ষ ট রপত র ক কম ট র সদস য এ প রস ত ব র র ষ ট রপত ক ন প রস ত ব ও অন য ন য ব এনপ র স র ক ষমত অবস থ ন প রব ন র জন য নত ন প চ ত হব সরক র গতক ল ত হয়ন এনস স

এছাড়াও পড়ুন:

ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন জামায়াতের আমিরের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ: সালাহউদ্দিন আহমদ

লন্ডন বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ‘একটি দলের প্রতি বিশেষ অনুরাগ প্রকাশ করেছেন’ বলে জামায়াতে ইসলামী যে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে, তার জবাব দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেছেন, কোনো দলের প্রতি অনুরাগ নয়, বরং ২০২৬ সালের রোজার আগে ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন হতে পারে বলে জামায়াতের আমির যে পরামর্শ দিয়েছিলেন, সেটার সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ঘোষিত নির্বাচনের নতুন সময়সীমা সামঞ্জস্যপূর্ণ।

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, এই বৈঠক নিয়ে জামায়াতে ইসলামী যে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে, তাতেই বলা আছে যে জামায়াতের আমির গত ১৬ এপ্রিল একটি বিদেশি মিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে ২০২৬ সালের রোজার আগে ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন হতে পারে বলে দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছিলেন। ফলে লন্ডন বৈঠকের পর নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে যে ঘোষণা, তা জামায়াতের আমিরের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ; এটা কোনো দলের প্রতি বিশেষ অনুরাগ প্রকাশ নয়।

আরও পড়ুনফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোট, একমত ইউনূস ও তারেক১৫ ঘণ্টা আগে

লন্ডন বৈঠক নিয়ে আজ শনিবার বিকেলে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের প্রতিক্রিয়া গণমাধ্যমে প্রকাশের পর বিএনপির নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ প্রথম আলোকে এ কথা বলেন। তিনি এ–সংক্রান্ত জাতীয় নাগরিক কমিটির (এনসিপি) প্রতিক্রিয়ারও জবাব দেন।

গতকাল শুক্রবার লন্ডনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে যৌথ ঘোষণায় বলা হয়, সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে আগামী বছরের রমজান মাসের আগে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন হতে পারে। এরপর শুক্রবার রাতে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায় জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের নেতৃত্বদানকারী তরুণদের দল এনসিপি। দলটি মনে করে, নির্বাচন প্রশ্নে সরকার কেবল একটি রাজনৈতিক দলের অবস্থান ও দাবিকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়ন, মৌলিক সংস্কার বাস্তবায়নে জুলাই সনদ কার্যকর করা ও বিচারের রোডম্যাপ ঘোষণার পরই নির্বাচনসংক্রান্ত আলোচনা চূড়ান্ত হওয়া উচিত।

বিএনপির নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, নতুন রাজনৈতিক দলটি (এনসিপি) লন্ডন এই বৈঠকের ঘোষণাকে দলীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখছে। এ ক্ষেত্রে দলীয় দৃষ্টির ঊর্ধ্বে উঠে বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং তাদের আরও অভিজ্ঞতা অর্জনের পরামর্শ থাকবে।

আরও পড়ুনএকটি দলের প্রতি বিশেষ অনুরাগ প্রধান উপদেষ্টার নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন করেছে: জামায়াত১ ঘণ্টা আগে

লন্ডন বৈঠকে নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় নিয়ে সরকার ও বিএনপির মধ্যে যে প্রক্রিয়ায় সমঝোতা হয়েছে এবং সেটি যেভাবে যৌথ ঘোষণার মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে সন্তুষ্ট হতে পারেনি জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল। দলগুলোর নেতারা বলছেন, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচনের ব্যাপারে তাঁদের ভিন্নমত নেই। দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের সঙ্গে এ বিষয়ে সরকারের সমঝোতায়ও তাঁরা অসন্তুষ্ট নন। তাঁদের প্রশ্ন এক জায়গায়। সেটি হচ্ছে, সরকার এভাবে একটি দলের সঙ্গে নির্বাচনের বিষয়ে যৌথ ঘোষণা দিতে পারে কি না? এটা কতটা নৈতিক।

আরও পড়ুনলন্ডন বৈঠকে বিচার ও সংস্কারের বিষয়টি নির্বাচনের মতো গুরুত্ব না পাওয়া অত্যন্ত হতাশাজনক: এনসিপি১৯ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনইউনূস-তারেকের ‘সন্তুষ্টি’তে স্বস্তি টেকসই হবে কি ৯ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা মঙ্গলবার আবার শুরু
  • বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য, ভালো উদ্যোগ নিলেও বিরোধিতা আসে
  • আপেল মাহমুদ অথবা রবিঠাকুরের কাদম্বিনীর গল্প
  • বালু ব্যবসার নামে প্রতারণা কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা
  • ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন জামায়াতের আমিরের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ: সালাহউদ্দিন আহমদ
  • ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোট, একমত ইউনূস ও তারেক
  • লন্ডন বৈঠকে বিচার ও সংস্কারের বিষয়টি নির্বাচনের মতো গুরুত্ব না পাওয়া অত্যন্ত হতাশাজনক: এনসিপি
  • ইউনূস-তারেকের বৈঠক দেশের মানুষের জন্য স্বস্তির বার্তা, আশার আলো
  • ড. ইউনূস ও তারেকের বৈঠক জাতির জন্য স্বস্তির বার্তা: ১২ দলীয় জোট
  • ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংস্কার ও জুলাই সনদ