একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন—সংবিধান সংস্কার কমিশনের এ সুপারিশের সঙ্গে একমত হয়নি বিএনপি। তারা চায়, একই ব্যক্তি টানা দুবারের পর বিরতি দিয়ে আবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন।

গতকাল রোববার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় এ বিষয়ে বিএনপি অনড় অবস্থান নেয়। পরে বৈঠকে একটি নতুন প্রস্তাব আলোচনায় আসে। সেটি হলো এক ব্যক্তি মাঝখানে বিরতি দিয়ে সর্বোচ্চ তিনবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন।

বিএনপির সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে উপস্থিত থাকা একাধিক সূত্র প্রথম আলোকে নতুন এ প্রস্তাবের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তবে এ প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হলেও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বিএনপি ঐকমত্য কমিশনকে জানিয়েছে, এ বিষয়ে তারা দলের নীতিনির্ধারণী পর্ষদে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানাবে।

এ ছাড়া ক্ষমতার ভারসাম্য আনতে সংবিধান সংস্কার কমিশন যেসব প্রস্তাব দিয়েছে, তার অনেকগুলোর সঙ্গে ভিন্নমত জানিয়ে অনড় অবস্থানে ছিল বিএনপি। তবে তারা রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বাড়াতে পরবর্তী সংসদে একটি আইন করা হবে—এমন প্রস্তাব দিয়েছে। তবে সে আইনে কী কী থাকবে, তার বিস্তারিত জানানো হয়নি।

সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য গঠনের লক্ষ্যে পাঁচটি কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এর অংশ হিসেবে বিএনপির সঙ্গে চলছে। গত বৃহস্পতিবার দলটির সঙ্গে দিনব্যাপী বৈঠক শেষে আলোচনা মুলতবি করা হয়েছিল। গতকাল বেলা ১১টা থেকে জাতীয় সংসদের এলডি হলে মুলতবি আলোচনা শুরু হয়। সন্ধ্যা পৌনে ছয়টা পর্যন্ত দ্বিতীয় দিনের মতো আলোচনা হয়। তবে আলোচনা শেষ হয়নি। আগামীকাল মঙ্গলবার আবার ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক হবে বলে জানিয়েছে বিএনপি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গতকাল সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রায় সব সুপারিশ এবং বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের কিছু সুপারিশ নিয়ে আলোচনা শেষ হয়। দুপুরে মধ্যাহ্নভোজের বিরতির পর আলোচনায় একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ কয় মেয়াদ প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন, সে আলোচনা ওঠে। একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন—এ প্রস্তাবের সঙ্গে বিএনপি একমত নয়, সেটি দলটি আগেই জানিয়েছিল।

এ বিষয়ে আলোচনা শুরুর আগেই মধ্যাহ্নবিরতিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তখন তিনি বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে এখনো আলোচনা হয়নি। তবে দলের অবস্থান স্পষ্ট। জনগণ যদি কোনো ব্যক্তিকে দুই মেয়াদের পর বিরতি দিয়ে আবার প্রধানমন্ত্রী করতে চায়, সে সুযোগ সংকুচিত করা উচিত হবে না।

বৈঠকের একাধিক সূত্র জানায়, এরপর ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনার সময়ও বিএনপি তাদের এ অবস্থানে অটল থাকে। একপর্যায়ে ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে নতুন প্রস্তাবটি দেওয়া হয়। সেটা হলো এক ব্যক্তি মাঝখানে বিরতি দিয়ে সর্বোচ্চ তিনবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন। এ নিয়ে আলোচনা হলেও সিদ্ধান্ত জানায়নি বিএনপি। তারা দলীয় ফোরামে আলোচনা করে পরে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবে।

সন্ধ্যায় আলোচনা শেষে সালাহউদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের সঙ্গে আবার কথা বলেন। একজন ব্যক্তি কতবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন, তা নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে বিএনপির বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে বলে জানান তিনি। এ সময় সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘এখানে তাদের (ঐকমত্য কমিশন) একটা প্রস্তাব আছে। এখনই আমি ডিসক্লোজ (প্রকাশ) করতে চাই না। সেটা আমরা আমাদের দলীয় ফোরামে আলোচনার পরে যদি আমরা সিদ্ধান্তে আসতে পারি, সেটা আমরা জানাব।’

একই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা ও দলীয় প্রধান হতে পারবেন না—সংবিধান সংস্কার কমিশনের এমন সুপারিশের সঙ্গেও একমত হয়নি বিএনপি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বৈঠকে বিএনপি বলেছে, একটি দলের প্রধান কে হবেন, তারা ক্ষমতায় গেলে প্রধানমন্ত্রী কে হবেন, কে সংসদ নেতা হবেন—এসব ঠিক করার বিষয়টি একান্ত দলের নিজস্ব বিষয়। এসব সংবিধানে ঠিক করে দেওয়া যাবে না।

এ বিষয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, একই ব্যক্তি সরকারপ্রধান ও দলীয় প্রধান হতে পারবে না—এমন চর্চা দেখা যায় না। যুক্তরাজ্যেও এটি নেই।
বিএনপির পক্ষে আলোচনায় অংশ নেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমদ ও নজরুল ইসলাম খান, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মো.

ইসমাইল জবিউল্লাহ, নির্বাহী কমিটির সদস্য রুহুল কুদ্দুস কাজল ও সাবেক সচিব আবু মো. মনিরুজ্জামান খান।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষে আলোচনায় অংশ নেন কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য) মনির হায়দার।

বৈঠক-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বৈঠকে সংবিধানের বেশির ভাগ মৌলিক পরিবর্তনের প্রস্তাবে বিএনপি বিরোধিতা করেছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তারা পরবর্তী সংসদে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া যৌক্তিক বলে মত দিয়েছে। তারা জোর দিয়ে বলেছে, যদি একটি নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা তৈরি হয় এবং সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত হয়, তাহলে বেশির ভাগ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

এনসিসিতে আপত্তি বিএনপির

বিদ্যমান সংবিধানের ৪৮(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতি পদে নিয়োগ ছাড়া অন্য যেকোনো কাজে রাষ্ট্রপতিকে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ নিতে হয়। বিভিন্ন সাংবিধানিক পদে নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রেও প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ নিতে হয় রাষ্ট্রপতিকে। মূলত প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছাতেই সাংবিধানিক পদে নিয়োগ হয়।

সংবিধান সংস্কার কমিশন বলেছিল, তাদের সংস্কার প্রস্তাব তৈরির অন্যতম লক্ষ্য ছিল, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির মধ্যে এবং রাষ্ট্রের তিনটি বিভাগের (আইনসভা, নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগ) মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনা। এ জন্য তারা বেশ কিছু সুপারিশ করেছিল। এর একটি হলো নির্বাহী বিভাগ, আইন সভা ও বিচার বিভাগ—রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি ‘জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল’ (এনসিসি) গঠন করা।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার, অ্যাটর্নি জেনারেল, সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান ও অন্যান্য সদস্য, দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান ও অন্যান্য কমিশনার, মানবাধিকার কমিশনের প্রধান ও অন্যান্য কমিশনার, প্রতিরক্ষা বাহিনীগুলোর প্রধানদের পদে নিয়োগের জন্য এই কাউন্সিল রাষ্ট্রপতির কাছে নাম পাঠাবে।

এনসিসি গঠনের এ সুপারিশের সঙ্গে একমত হয়নি বিএনপি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বৈঠকে এ প্রস্তাবের জোরালো বিরোধিতা করে বিএনপির প্রতিনিধিদল। তারা যুক্তি দেয়, এ প্রস্তাব একেবারে নতুন ধারণা। এখানে অনির্বাচিত ব্যক্তিরা থাকবেন। কিন্তু সব দায় নিতে হবে নির্বাচিত সরকারকে। এই কাউন্সিল গঠন করা হলে সরকারের হাত-পা বেঁধে দেওয়া হবে। সরকার হবে দুর্বল। তারা এ প্রস্তাবের সঙ্গে একমত নয়।

গতকাল দুপুরে বৈঠকের বিরতিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, এনসিসি গঠনের প্রস্তাবে বিএনপি একমত নয়। এটি বাস্তবায়িত হলে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা অনেক বেশি সংকুচিত হবে।

রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা প্রশ্নে বিএনপির অবস্থান

রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বাড়ানোর প্রশ্নে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, তাঁরা সংবিধানের ৪৮(৩) অনুচ্ছেদের পর একটি উপ-অনুচ্ছেদ যুক্ত করার কথা বলেছেন। যেখানে রাষ্ট্রপতিকে আরও বেশি স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা দেওয়ার জন্য আইন করার কথা থাকবে।

ওই আইনে রাষ্ট্রপতিকে কী কী ক্ষমতা দেওয়া থাকবে—এমন প্রশ্নের জবাবে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘সেটা যখন আইন করা হবে, তখন বিস্তারিত থাকবে। তিনি বলেন, ‘ভিন্ন রাষ্ট্রীয় সাংবিধানিক পদে পদায়নের ক্ষেত্রে এবং বিচার বিভাগের প্রধান বিচারপতি ও অন্য বিচারপতিদের পদায়নের ক্ষেত্রে, আমরা রাষ্ট্রপতিকে আরও কোন কোন বিষয়ে ঐকমত্যের ভিত্তিতে ক্ষমতায়িত করতে চাই; সে বিষয়গুলো আলোচনার মাধ্যমে ঠিক হলে, তখন লেজিসলেশন করে পার্লামেন্টে সেটা করা যাবে।’
সালাহউদ্দিন আহমদ জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা কখন, কীভাবে মনোনীত হবেন, তা নিয়ে তাঁরা পুরোপুরি একমত হতে পারেননি। এটি নিয়ে পরে সিদ্ধান্ত হবে। স্থানীয় সরকার শক্তিশালী করার বিষয়ে বিএনপি একমত, তবে তাঁরা মনে করেন, এটি আইনের মাধ্যমে করা সমীচীন হবে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার না করার বিষয়েও বিএনপি একমত।

এখন সংসদ নেই, সংবিধান সংশোধনসংক্রান্ত প্রস্তাবগুলো কীভাবে বাস্তবায়িত হবে—এমন প্রশ্নের জবাবে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, এটি অবশ্যই পরবর্তী সংসদে হবে। তিনি বলেন, রাষ্ট্র ও জনগণের জন্য কল্যাণকর এবং গণতান্ত্রিক, শক্তিশালী কাঠামো দাঁড় করানোর জন্য তাঁরা সহযোগিতা করছেন। প্রধান বিষয় হচ্ছে যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করা যায়, তাহলে চর্চার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী হবে।

রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচন প্রসঙ্গ

বিদ্যমান সংবিধান অনুযায়ী সংসদ সদস্যদের ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। সংবিধান সংস্কার কমিশন রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনে নতুন পদ্ধতি প্রস্তাব করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবেন নির্বাচকমণ্ডলীর (ইলেকটোরাল কলেজ) সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে। আইন সভার উভয় কক্ষের সদস্যদের প্রত্যেকের একটি করে ভোট, জেলা সমন্বয় কাউন্সিল সামষ্টিকভাবে একটি করে ভোট (৬৪টি জেলা সমন্বয় কাউন্সিল থাকলে ৬৪টি ভোট), সিটি করপোরেশন সমন্বয় কাউন্সিল সামষ্টিকভাবে একটি করে ভোট দেবে।

সংবিধান সংস্কার কমিশনের এ প্রস্তাবের সঙ্গেও একমত হয়নি বিএনপি। তারা চায় আইনসভা দ্বিকক্ষবিশিষ্ট হলে উভয় কক্ষের সদস্যদের ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবেন। আলোচনা শেষে এ বিষয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, দেশে ফেডারেল পদ্ধতি নেই, এখানে কোনো প্রদেশ নেই। যেসব দেশে প্রদেশ থাকে সেখানে ইলেকটোরাল কলেজের বিষয় আছে। তিনি বলেন, তাঁরা শুধু আইনসভার দুই কক্ষের সদস্যদের ইলেকটোরাল কলেজ হিসেবে গণ্য করার কথা বলেছেন।

আগে দ্বিমত ছিল, আলোচনার মাধ্যমে একমত হয়েছেন—এমন কোনো বিষয় আছে কি না, প্রশ্ন করা হলে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘অনেক বিষয় আছে, এগুলো কম্পাইল করে বলব।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ল হউদ দ ন আহমদ স র ষ ট রপত র ক কম ট র সদস য এ প রস ত ব র র ষ ট রপত ক ন প রস ত ব ও অন য ন য ব এনপ র স র ক ষমত অবস থ ন প রব ন র জন য নত ন প চ ত হব সরক র গতক ল ত হয়ন এনস স

এছাড়াও পড়ুন:

ইউএনওদের সিইসি: ব্যালট বাক্স দখল করে বাড়ি যাওয়ার পর হাজির হলেন, সেটা যেন না হয়

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) কোনো চাপের কাছে নতিস্বীকার না করে, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন।

আজ বুধবার সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে ইউএনওদের নির্বাচন ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত প্রশিক্ষণের উদ্বোধনীতে সিইসি এ আহ্বান জানান। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে এ প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন নাসির উদ্দীন। ইউএনওদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘কেন্দ্র দখল করে, বাক্স দখল করে বাড়ি চলে গেছে, আর আপনি গিয়ে হাজির হলেন, সেটা যাতে না হয়।’

নির্বাচনে সব কটি সংস্থার সঙ্গে সমন্বয়ের কাজটি ইউএনওদের গুরুত্বের সঙ্গে করতে হবে বলে উল্লেখ করেন সিইসি। তিনি বলেন, কোনো সংকট দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে নিরসনের চেষ্টা করতে হবে। ঘটনা শেষ হয়ে যাওয়ার পর ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে হবে না। কোনো চাপের কাছে নতিস্বীকার করা যাবে না। আইন অনুযায়ী সিদ্ধান্তে অটল থাকতে হবে।

নাসির উদ্দীন বলেন, নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে। নির্বাচন কমিশনও কারও চাপের কাছে নত হবে না। প্রচলিত আইন মেনেই নির্বাচন কমিশন সব নির্দেশনা দেবে।

ইউএনওদের উদ্দেশে সিইসি বলেন, যে ধরনের কাজের দায়িত্বই পড়ুক না কেন, তা ন্যায়, আইনসংগত ও নিরপেক্ষভাবে পালন করতে হবে। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ, মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, তাহমিদা আহমদ ও আব্দুর রহমানেল মাছউদ। স্বাগত বক্তব্য দেন নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান।

আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) ও নির্বাচনী আচরণবিধির কিছু কিছু জায়গায় পরিবর্তন আসতে পারে, সেটি বিবেচনায় রাখতে হবে।

প্রবাসীদের ভোট গ্রহণের জন্য ওসিভি (আউট অব কান্ট্রি ভোটিং) ও নির্বাচনী কার্যক্রমে যুক্ত ব্যক্তিদের জন্য আইসিপিভি (ইন কান্ট্রি পোস্টাল ভোট) সম্পর্কে প্রশিক্ষণার্থীদের ধারণা দেন আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। তিনি জানান, আগামী ১৬ নভেম্বরে প্রবাসীদের ভোট দেওয়ার অনলাইন অ্যাপ সবার জন্য উন্মুক্ত করা হবে।

নির্বাচনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা গুরুত্বপূর্ণ ও মুখ্য ভূমিকা পালন করবেন বলে উল্লেখ করেন আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। তিনি বলেন, নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টির কাজ এখন থেকেই করতে হবে। প্রশাসন নিরপেক্ষভাবে কাজ করবে, সে আবহাওয়া এখন থেকে সৃষ্টি করতে হবে।

নির্বাচনী দায়িত্ব সাহসের সঙ্গে পালন করার পরামর্শ দেন নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম। ইউএনওদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। কারণ, নির্বাচন কমিশন সঠিক কাজ করা কর্মকর্তাদের পাশে থাকবে। তবে উদ্দেশ্যমূলকভাবে অন্যায় কাজ করলে কঠিন পরিণতির সম্মুখীন হতে হবে।

আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের জন্য কোনো মারামারি বা ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষণিকভাবে উভয় পক্ষকেই ধরতে হবে। কোনো ছাড় দেওয়া যাবে না। সেই সঙ্গে ভ্রাম্যমাণ আদালত অবশ্যই আয়নার মতো স্বচ্ছ হতে হবে, যাতে পক্ষপাতিত্বের বিতর্ক সৃষ্টি না হয়। যাঁরা আগামী নির্বাচনে ভালো দায়িত্ব পালন করবেন, তাঁদের জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা থাকবে।

নির্বাচন পরিচালনাকালে কর্মকর্তাদের অতি উৎসাহী ও অতি সাহসী না হওয়ার পরামর্শ দেন নির্বাচন কমিশনার তাহমিদা আহমদ। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার আদেশ নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত শুনতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

তাহমিদা আহমদ বলেন, নিজেদের বিদ্যা, বুদ্ধি ও অভিজ্ঞতা ব্যবহার করে কোনটা ভুল আর কোনটা সত্য, সে পার্থক্য বুঝে কাজ করতে হবে।

ভালো নির্বাচন করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেন নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ। তিনি বলেন, দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। ভালো নির্বাচন করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। তাই কর্মকর্তাদের অর্পিত দায়িত্ব সঠিক ও সফলভাবে পালন করে বিশ্ব ও মানুষের কাছে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মানসিক সংস্কার ছাড়া কোনো সংস্কার বাস্তবায়ন সম্ভব নয়: সালাহউদ্দিন আহমদ
  • ওয়ালটন শোরুম থেকে আর্থিক সহায়তা পেল ২ পরিবার
  • প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছি, এখনো গণভোটের সময় আছে
  • বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পুনরায় সভা করল ঐকমত্য কমিশন
  • ইউএনওদের সিইসি: ব্যালট বাক্স দখল করে বাড়ি যাওয়ার পর হাজির হলেন, সেটা যেন না হয়
  • বিএনপি নতুন রাজনীতির যে ইঙ্গিত দিচ্ছে
  • সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশের দিকে তাকিয়ে দলগুলো
  • জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশের দিকে তাকিয়ে দলগুলো
  • জুলাই যোদ্ধাদের সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক
  • জুলাই সনদ নিয়ে আদালতে না যাওয়ার অঙ্গীকার গণতান্ত্রিক অধিকারের সম্পূর্ণ পরিপন্থি