প্রতিবছর ২২ এপ্রিল বিশ্বজুড়ে ধরিত্রী দিবস পালিত হয় পৃথিবীর পরিবেশ ও প্রতিবেশব্যবস্থা রক্ষার অঙ্গীকার নিয়ে।

২০২৫ সালের এই দিনের তাৎপর্য আরও গভীর, যখন জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশের মতো দেশগুলো অস্তিত্বের সংকটে পড়েছে।

বৈশ্বিক উষ্ণতা, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, চরম মাত্রার বন্যা-ঘূর্ণিঝড় এবং লবণাক্ততার অভিঘাত মোকাবিলায় এখনই সমন্বিত পদক্ষেপ জরুরি।

বিশ্বের সবচেয়ে জলবায়ু–ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর শীর্ষে থাকা বাংলাদেশের জন্য এ সংকট কোনো ভবিষ্যতের হুমকি নয়, এটি বর্তমানের কঠিন বাস্তবতা।

ওয়ার্ল্ড ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্স অনুযায়ী, বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে শীর্ষ ১০-এ অবস্থান করছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে ২০৫০ সাল নাগাদ দেশের ১৭ শতাংশ ভূমি তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এটি দুই কোটি মানুষকে বাস্তুচ্যুত করতে পারে। এ ছাড়া অনিয়মিত বৃষ্টি, নদীভাঙন, খরা ও ঘন ঘন ঘূর্ণিঝড়ের মতো দুর্যোগ ইতিমধ্যে কৃষি, অর্থনীতি ও জনস্বাস্থ্যে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।

আরও পড়ুনজলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশে দরিদ্রকে যেভাবে দরিদ্রতম করছে১৮ নভেম্বর ২০২৪জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা (ন্যাপ): রূপকল্প ও চ্যালেঞ্জ

জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশ ২০২২ সালে তার জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা (ন্যাপ) চূড়ান্ত করেছে, যাতে ১৪টি জলবায়ু ঝুঁকি চিহ্নিত করে ২০৫০ সাল পর্যন্ত ১১০টি কর্মকৌশল প্রস্তাব করা হয়েছে।

এই পরিকল্পনায় জলবায়ু–সহনশীল কৃষি ও মৎস্য খাত গড়ে তোলা, উপকূলীয় অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র ও বাঁধ নির্মাণ, নগরাঞ্চলে জলাবদ্ধতা রোধে টেকসই নিকাশি ব্যবস্থা এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়িয়ে ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ শতাংশ শক্তি উৎপাদন নিশ্চিত করার মতো লক্ষ্যগুলো স্থান পেয়েছে।

এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রয়োজন ২৩০ বিলিয়ন ডলার, যার বেশির ভাগই আন্তর্জাতিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল।

তবে অর্থের পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা, কারিগরি জ্ঞান এবং স্থানীয় সম্পদের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করাও সমান গুরুত্বপূর্ণ।

আরও পড়ুনকার্বন আর প্লাস্টিক নামক ধরিত্রীঘাতী দানব বধ করতেই হবে২২ এপ্রিল ২০২৪আর্থিক খাতের ভূমিকা: গ্রিন ফাইন্যান্সিংয়ের অগ্রযাত্রা

জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা ক্রমেই তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নেতৃত্বে টেকসই অর্থায়ন নীতিমালা অনুযায়ী, ২০২৫ সাল থেকে সব ব্যাংককে তাদের মোট ঋণের ৪০ শতাংশ টেকসই প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে হবে, যার মধ্যে ৫ শতাংশ সরাসরি পরিবেশবান্ধব উদ্যোগে যাবে।

২০২৪ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ব্যাংক ও এনবিএফআইগুলো ১ দশমিক ১৬ ট্রিলিয়ন টাকা গ্রিন ফাইন্যান্সিং বরাদ্দ করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ২৮ শতাংশ বেশি।

গ্রিন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে নবায়নযোগ্য জ্বালানি (সৌর, বায়ু, বায়োগ্যাস) প্রকল্পে ঋণ প্রদান, পরিবেশবান্ধব শিল্পকারখানা ও গ্রিন বিল্ডিং নির্মাণে প্রণোদনা, কৃষিতে ড্রিপ ইরিগেশন, লবণসহনশীল ফসলের গবেষণায় বিনিয়োগ এবং ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও পুনর্ব্যবহারযোগ্য উদ্যোগে অর্থায়ন বাড়ানো সম্ভব।

তবে শুধু ঋণ বিতরণই যথেষ্ট নয়, প্রতিটি ব্যাংককে নিজস্ব কার্যক্রমেও কার্বন নিঃসরণ কমানো, কাগজবিহীন ব্যাংকিং প্রসার এবং জলবায়ু ঝুঁকি মূল্যায়ন বাধ্যতামূলক করতে হবে।

আরও পড়ুনজলবায়ু পরিবর্তন: ক্ষতিপূরণ আদায়ে কতটা এগোলাম ০৬ অক্টোবর ২০২৪আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও তহবিল ব্যবস্থাপনা

বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য দায়ী শিল্পোন্নত দেশগুলোর নৈতিক দায়িত্ব বাংলাদেশের মতো ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে সহায়তা করা।

২০২৩ সালে কপ২৮-এ গৃহীত লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ডে বাংলাদেশের প্রাপ্য অর্থ ত্বরিত আদায়ে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানো জরুরি।

এ ছাড়া বিশ্বব্যাংক, গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড (জিসিএফ) এবং অন্যান্য উৎস থেকে প্রাপ্ত তহবিলের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, বিশ্বব্যাংকের ১ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার সহায়তা যেন স্বাস্থ্য, পানি ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু-সহনশীল অবকাঠামোয় সরাসরি কাজে লাগে।

জলবায়ু সংকট মোকাবিলা কোনো একক মন্ত্রণালয় বা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব নয়, এটি একটি সমগ্র জাতির যুদ্ধ। সরকার, বেসরকারি খাত, গবেষক, সুশীল সমাজ এবং সাধারণ নাগরিকের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই পারে টেকসই ভবিষ্যৎ গড়তে। বিশ্ব ধরিত্রী দিবস ২০২৫ বাংলাদেশের জন্য হোক নতুন অঙ্গীকারের সূচনা, যেখানে জলবায়ু ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে, গ্রিন টেকনোলজিতে বিনিয়োগ বাড়বে এবং প্রতিটি নীতি-পরিকল্পনায় পরিবেশ স্থান পাবে সর্বাগ্রে।স্থানীয় উদ্যোগ ও জনসচেতনতা পরিবর্তনের মূল চাবিকাঠি

রাষ্ট্রীয় নীতি ও আন্তর্জাতিক অর্থায়নের পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়ে অভিযোজন কার্যক্রম জোরদার করতে হবে।

উপকূলীয় অঞ্চলে ভাসমান কৃষি, সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ বনায়ন এবং কমিউনিটিভিত্তিক দুর্যোগ প্রস্তুতি কর্মসূচি ইতিমধ্যে সাফল্য দেখিয়েছে।

এগুলোর সম্প্রসারণ ও ডিজিটাল প্রযুক্তির সমন্বয়ে আর্লি ওয়ার্নিং সিস্টেম শক্তিশালী করা যায়।

একই সঙ্গে জনসচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে স্কুল-কলেজের কারিকুলামে জলবায়ু শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা, মিডিয়া ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে গ্রিন লাইফস্টাইলকে জনপ্রিয় করা এবং যুবসমাজকে জলবায়ু ন্যায্যতার আন্দোলনে সম্পৃক্ত করা গেলে দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তন সম্ভব।

ভবিষ্যতের দিশা

জলবায়ু সংকট মোকাবিলা কোনো একক মন্ত্রণালয় বা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব নয়, এটি একটি সমগ্র জাতির যুদ্ধ।

সরকার, বেসরকারি খাত, গবেষক, সুশীল সমাজ এবং সাধারণ নাগরিকের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই পারে টেকসই ভবিষ্যৎ গড়তে।

বিশ্ব ধরিত্রী দিবস ২০২৫ বাংলাদেশের জন্য হোক নতুন অঙ্গীকারের সূচনা, যেখানে জলবায়ু ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে, গ্রিন টেকনোলজিতে বিনিয়োগ বাড়বে এবং প্রতিটি নীতি-পরিকল্পনায় পরিবেশ স্থান পাবে সর্বাগ্রে।

এম এম মাহবুব হাসান ব্যাংকার ও উন্নয়ন গবেষক
ই-মেইল: [email protected]

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবহ র ব যবস থ পর ব শ র জন য সরক র ট কসই জলব য়

এছাড়াও পড়ুন:

ভোট ম্যানুয়ালি গণনার আবেদন করলেন উমামা ফাতেমা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের ভোট ম্যানুয়ালি (হাতে) গণনা করার আবেদন করেছেন স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী উমামা ফাতেমা। সোমবার প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন করেন তিনি।

আবেদনে উমামা ফাতেমা লিখেছেন, ‘আমরা স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেলের পক্ষ থেকে সদ্য অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন এবং হল সংসদ নির্বাচন ২০২৫–এর নির্বাচনকেন্দ্রিক স্বচ্ছতা যাচাইকরণের উদ্দেশ্যে প্রতিটি কেন্দ্রের ভোটদাতাদের তালিকার কপি, ওএমআর মেশিনের পরিবর্তে ম্যানুয়ালি পুনরায় ভোট গণনা এবং ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের প্রবেশের সিসিটিভি ফুটেজ শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করার অনুরোধ করছি।’

৯ সেপ্টেম্বর ডাকসু নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হয়। ওই দিন নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা চলার মধ্যে রাত সোয়া তিনটার পর ফেসবুকে এক পোস্টে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন উমামা ফাতেমা।

ডাকসু নির্বাচনে ভিপি পদে জয়ী হন ছাত্রশিবির–সমর্থিত প্যানেল ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের সাদিক কায়েম। তিনি পেয়েছিলেন ১৪ হাজার ৪২ ভোট। অন্যদিকে ৩ হাজার ৩৮৯ ভোট পেয়ে চতুর্থ হন স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেলের উমামা ফাতেমা।

আরও পড়ুনডাকসুর ২৮ পদে কার সঙ্গে কার প্রতিদ্বন্দ্বিতা হলো, জয়ের ব্যবধান কত১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আজ টিভিতে যা দেখবেন (১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫)
  • জানুয়ারি থেকে বিশেষ বৃত্তি পাবেন জবি শিক্ষার্থীরা
  • যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েনে রাশিয়া-বেলারুশ সামরিক মহড়ায় কেন অংশ নিল ভারত
  • তদন্ত করে ভুয়া নাম বাদ দিন
  • আজ টিভিতে যা দেখবেন (১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫)
  • পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটে ৫৪ পদের চাকরি, করুন আবেদন
  • বাংলাদেশে সফরের সূচি জানিয়ে দিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ
  • আজ টিভিতে যা দেখবেন (১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫)
  • রাশিয়া-বেলারুশের সামরিক মহড়া চলছিল, ‘অবাক করে দিয়ে’ হাজির মার্কিন কর্মকর্তারা
  • ভোট ম্যানুয়ালি গণনার আবেদন করলেন উমামা ফাতেমা