মূল ক্যাম্পাসে ফেরার দাবিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের ৯ শিক্ষার্থীর অনশন কর্মসূচি দ্বিতীয় দিনের মতো চলছে। তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে এ কর্মসূচি পালন করছেন। অনশন করা শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, চারুকলাকে মূল ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া শেষ করে লিখিত সিদ্ধান্ত প্রশাসন না জানানো পর্যন্ত তাঁরা অনশন চালিয়ে যাবেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে উপাচার্য, দুই সহ-উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারের কার্যালয় রয়েছে। গতকাল সোমবার বেলা ৩টা ২০ মিনিটে ভবনটির সামনে অনশন শুরু করেন এসব শিক্ষার্থী। তাঁরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের স্নাতকোত্তরের খন্দকার মাসরুল আল ফাহিম, চতুর্থ বর্ষের নূর ইকবাল, তৃতীয় বর্ষের মো.

শাহরিয়ার হাসান; দ্বিতীয় বর্ষের ইসরাত জাহান, মালিহা চৌধুরী, ইসরাত জাহান, নুসরাত জাহান; প্রথম বর্ষের তরিকুল ইসলাম ও মাহমুদুল ইসলাম।

জানতে চাইলে সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) মো. কামাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, তিনি শিক্ষার্থীদের আলোচনার জন্য তাঁর কার্যালয়ে ডেকেছেন। আলোচনার মাধ্যমেই বিষয়টি সমাধান করতে চান। এ বিষয়ে জানতে চাইলে খন্দকার মাসরুল আল ফাহিম বলেন, তিনিসহ অনশন করা শিক্ষার্থীরা কোনো কার্যালয়ের পরিবর্তে, যেখানে কর্মসূচি চলছে, সেখানেই বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করতে চান। মৌখিক কোনো আশ্বাসের পরিবর্তে তাঁরা লিখিত আদেশ দাবি করেছেন। লিখিত আদেশ না হওয়া পর্যন্ত অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ প্রথম আলোকে বলেন, চারুকলাকে মূল ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে আনার প্রায় সব ধাপ সম্পন্ন হয়েছে। শুধু সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত বাকি রয়েছে। প্রশাসন থেকে শিক্ষার্থীদের কাছে ২৪ মে পর্যন্ত সময় চাওয়া হয়েছিল, তবে শিক্ষার্থীরা মানেননি। তাঁরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করছেন।

চতুর্থ দফায় আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা

বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের যাত্রা শুরু হয় ১৯৭০ সালে। বিভাগের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি ছিলেন শিল্পী রশিদ চৌধুরী। ২০১০ সালের ২ আগস্ট নগরের সরকারি চারুকলা কলেজের সঙ্গে এক হয়ে গঠিত হয় চারুকলা ইনস্টিটিউট। এই ইনস্টিটিউটের অবস্থান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে নগরের মেহেদীবাগের বাদশা মিয়া সড়কে। বর্তমানে ইনস্টিটিউটে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৪০০।

শ্রেণিকক্ষের ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ার পরিপ্রেক্ষিতে ১১ দফা দাবিতে ২০২২ সালের নভেম্বরে ক্লাস বর্জন করে বিক্ষোভ শুরু করেন ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। এর পর থেকে তাঁদের ক্লাস বর্জন অব্যাহত থাকে। পাশাপাশি তাঁরা বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন। একপর্যায়ে ইনস্টিটিউট নগর থেকে মূল ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে নিতে তাঁরা এক দফা দাবি দেন। প্রশাসন দাবি না মানায় ওই বছরের ১৬ নভেম্বর ইনস্টিটিউটের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা।

পরে কর্তৃপক্ষকে সাত দিনের সময় বেঁধে দিয়ে শর্ত সাপেক্ষে ২০২৩ সালের ২৩ জানুয়ারি ক্লাসে ফিরেছিলেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু দাবি আদায় না হওয়ায় ৩১ জানুয়ারি থেকে তাঁরা আবারও অবরোধ কর্মসূচি শুরু করেন। একই দিন শিক্ষার্থীদের একটি পক্ষ ক্লাসে ফেরার দাবি জানায়। এ অবস্থায় ১ ফেব্রুয়ারি রাতে চারুকলায় ইনস্টিটিউটের হোস্টেলে তল্লাশি চালায় পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল বডি। ২ ফেব্রুয়ারি চারুকলায় সশরীর শ্রেণি কার্যক্রম এক মাসের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের চারুকলা ক্যাম্পাস ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়। ভবন সংস্কারের কথা বলে কর্তৃপক্ষ এমন সিদ্ধান্ত নেয়। পরে শিক্ষার্থীরা মূল ক্যাম্পাসেই বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করতে থাকেন। তবে ৯ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীদের এই কর্মসূচিতে হামলা চালান ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।

এরপরও শিক্ষার্থীরা মূল ক্যাম্পাসে ফেরার দাবিতে আন্দোলন করতে থাকেন। তবে একপর্যায়ে সেশনজট কমাতে ওই বছরের ৩ মে ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন শিক্ষার্থীরা। সরকার পতনের পর গত বছরের ডিসেম্বরে আবারও একই দাবিতে আন্দোলনে নামেন চারুকলার শিক্ষার্থীরা। পরে সহ-উপাচার্য (একাডেমিক) মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান চলতি বছরের এপ্রিলের আগে চারুকলাকে মূল ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের আশ্বাস দিয়েছিলেন। বেঁধে দেওয়া এ সময়ের মধ্যে চারুকলা মূল ক্যাম্পাসে না আসায় গতকাল আবার আন্দোলনে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র চ র কল উপ চ র য বর ষ র বছর র

এছাড়াও পড়ুন:

বক্সিং রিংয়ে চ্যাম্পিয়ন জিনাতই, বোনকে উৎসাহ দিতে গ্যালারিতে আফঈদা

কদিন ধরে দেশের ক্রীড়াঙ্গনের আড্ডায় ঘুরেফিরে একটাই নাম জিনাত ফেরদৌস। যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী এই বক্সার প্রথমবারের মতো পা রেখেছেন জাতীয় বক্সিং রিংয়ে। আর প্রথমবারই নিজের জাত চেনালেন।

আজ বিকেলে পল্টনের মোহাম্মদ আলী বক্সিং স্টেডিয়ামে ৫২ কেজি ওজন শ্রেণির ফাইনালে নেমে প্রতিপক্ষ আফরা খন্দকারকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নের মুকুট মাথায় তুলেছেন জিনাত। প্রতিযোগিতার আগেই যাঁর আগমন ঘিরে কৌতূহল ছিল তুঙ্গে, সেই জিনাত রিংয়ে নামতেই যেন বুঝিয়ে দিলেন, অন্যদের চেয়ে কেন তিনি এগিয়ে।

তিন রাউন্ডের লড়াইয়ে শুরু থেকেই জিনাত ছিলেন আক্রমণাত্মক। পাঞ্চে ছিল গতি, রক্ষণে ছিল আত্মবিশ্বাস। অন্যদিকে আফরা খন্দকার চেষ্টা করেছেন রক্ষণ সামলে লড়াইয়ে টিকে থাকতে। খান কয়েক মোক্ষম ঘুষিতে কিছুটা নড়বড়ে হলেও শেষ পর্যন্ত দমে যাননি আফরা।

বরং জিনাতের ঘন ঘন আক্রমণের ফাঁক গলে এক-আধটু পাল্টা আঘাত করতেও পেরেছেন। তবে এই পর্যায়ের এক প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত হয়ে পড়ে তাঁর জন্য অনেকটাই চাপের। তবু আফরা লড়ে গেছেন। আর জিনাতের আত্মবিশ্বাসী উপস্থিতি এ লড়াইকে করে তুলেছিল দেখার মতো।

গ্যালারিতে বসে খেলা দেখছিলেন জাতীয় নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক ও আফরার বড় বোন আফঈদা খন্দকার। উৎসাহ দিচ্ছিলেন ছোট বোনকে। পাশে ছিলেন মা–বাবাও। তবে পরিবারের ষোলো আনা সমর্থনও জিনাতকে হারানোর জন্য যথেষ্ঠ হয়নি।

ম্যাচ শেষে আফরা বললেন, ‘তিনি একজন ভালো খেলোয়াড়। তাঁর বিপক্ষে খেলা আমার জন্য এক নতুন অভিজ্ঞতা। বিশেষ করে তাঁর আক্রমণাত্মক স্কিলটা দুর্দান্ত। ম্যাচ শেষে তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, গুড ফাইট।’

বিজয়ী জিনাত পরে কথা বলেন সাংবাদিকদের সঙ্গে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বললেন, ‘আমি সবাইকে বলতে চাই, বাংলাদেশের ছেলে-মেয়েরা খেলতে চায়। তারা যদি সুযোগ-সুবিধা পায়, অনেক ভালো করবে। ওদের স্কিল আছে।’

সেমিফাইনালে আছিয়া না ফাইনালে আফরা—কোন লড়াইটা বেশি কঠিন ছিল? জিনাতের জবাব, ‘আমি আমার খেলাটা খেলেছি এবং জিতেছি। দুজনই আলাদা ধাঁচের প্রতিপক্ষ।’

জিনাত বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক পদক জয়ের আকাঙ্ক্ষার কথা আজও বলেছেন। আগামী এশিয়ান গেমসে সুযোগ পেলে পদক জিতবেন কি না, প্রশ্নের ছোট্ট উত্তর, ‘ইনশা আল্লাহ।’

আফরা-জিনাত ফাইনাল ম্যাচটা যেন ছিল দুই প্রতিদ্বন্দ্বী বক্সারের লড়াই নয়, এর বাইরেও চলছিল আরেক নাটক। ফাইনালের কয়েক ঘণ্টা আগেই বক্সিং রিংয়ে এক ব্যতিক্রমী দৃশ্য। আনসারের বক্সার জাহিদুল হক রেফারির রায় নিয়ে ক্ষোভ জানাতে রিংয়ে বসে পড়েন প্রতিবাদ হিসেবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বক্সার জনি ভদ্রর ঘুষিতে কপালে চোট পান জাহিদুল। চিকিৎসাও নেন। একপর্যায়ে রিংয়ের মাঝখানে বসেই অভিনব প্রতিবাদ জানান।

এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ আনসার দল বাংলাদেশ বক্সিং ফেডারেশনের সভাপতির কাছে অভিযোগ করে এবং তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিযোগিতা থেকে নিজেদের প্রত্যাহারের হুমকি দেয়। একপর্যায়ে আনসারের প্রতিনিধিরা রিং ছেড়ে চলে যান। মুহূর্তেই ঘনীভূত হয়ে ওঠে অনিশ্চয়তা, আফরা-জিনাত ফাইনালটি আদৌ হবে তো? কারণ, আফরা বাংলাদেশ আনসারের প্রতিযোগী। শেষ পর্যন্ত অবশ্য আনসার ফিরে আসে এবং প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।

এ বিষয়ে বক্সিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবদুস কুদ্দুস প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফাইটে হারলে যা হয়। হারলেই বলে অন্যায় হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত রিংয়ে ফিরে এসেছে, খেলেছে, এটা ভালো।’

ম্যাচ শুরুর ঠিক আগে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের একটি প্রতিনিধিদল গ্যালারিতে এসে জিনাতকে শুভেচ্ছা জানায়, তাঁকে উপহারও দেয় তারা। গ্যালারিতে বাড়তি উত্তেজনা আর গুরুত্ব যোগ করে ফাইনাল ম্যাচকে ঘিরে। আর দেশের সংবাদমাধ্যমের ব্যাপক উপস্থিতি তো ছিলই ম্যাচটা ঘিরে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অনশনের পর ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পেলেন ছয় সমন্বয়ক
  • বক্সিং রিংয়ে চ্যাম্পিয়ন জিনাতই, বোনকে উৎসাহ দিতে গ্যালারিতে আফঈদা