ইউনিয়নে ওয়ার্ড হবে সর্বোচ্চ ৩৯টি, নির্বাচিতদের শপথ হবে ধর্মগ্রন্থে হাত রেখে
Published: 22nd, April 2025 GMT
জনসংখ্যা ও আয়তনের ভিত্তিতে দেশের বিদ্যমান ইউনিয়ন পরিষদগুলোর ওয়ার্ডের সংখ্যা পুনর্নির্ধারণ করার সুপারিশ করেছে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন। এ ক্ষেত্রে ইউনিয়ন পরিষদের ওয়ার্ডের সংখ্যা সর্বনিম্ন ৯টি থেকে সর্বোচ্চ ৩৯টি পর্যন্ত হতে পারে। নির্বাচনের সুবিধার্থে উপজেলা ও জেলা পরিষদেও ওয়ার্ড রাখার কথা বলেছে কমিশন। এখন প্রতিটি ইউনিয়নে ৯টি করে ওয়ার্ড রয়েছে।
স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের শপথের ক্ষেত্রেও পরিবর্তন আনার সুপারিশ করেছে কমিশন। বলা হয়েছে, নির্বাচিত সদস্যরা ভোটার সমাবেশে নিজ নিজ ধর্মগ্রন্থে হাত রেখে শপথনামা উচ্চ স্বরে পাঠ করে তাতে স্বাক্ষর করবেন।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে গত রোববার জমা দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনে কমিশন ৫১টি সুপারিশ করেছে। গত বছরের ১৮ নভেম্বর স্থানীয় সরকারবিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদকে প্রধান করে আট সদস্যের স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়।
বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও জেলা পরিষদের আইনি কাঠামো, সাংগঠনিক কাঠামো ও নির্বাচন ব্যবস্থাটি অসম পদ্ধতিতে বিন্যস্ত আছে। এটিকে একটি সমজাতীয় পদ্ধতিতে পুনঃস্থাপনের সুপারিশ করেছে কমিশন।ওয়ার্ড নির্ধারণ হবে যেভাবেবর্তমানে পাঁচ স্তরের স্থানীয় সরকারব্যবস্থায় ৪ হাজার ৫৭৮টি ইউনিয়ন পরিষদ, ৪৯৫টি উপজেলা পরিষদ, ৬৪টি জেলা পরিষদ (তিন পার্বত্য জেলাসহ), ৩৩০টি পৌরসভা এবং ১২টি সিটি করপোরেশন রয়েছে।
স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও জেলা পরিষদের কাজ ও কাঠামোতে বড় ধরনের পরিবর্তনের সুপারিশ করেছে। কমিশন বলছে, জেলা পরিষদ হবে একটি বিকেন্দ্রীকৃত পরিকল্পনা ইউনিট। ডেপুটি কমিশনারের (ডিসি) অফিস পৃথকভাবে এখন যেভাবে জাতীয় সরকারের প্রতিনিধিত্ব করছে তা-ই করবে এবং কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে সব দায়িত্ব পালন করবে। তার ওপর ভূমি ব্যবস্থাপনার সব বিদ্যমান দায়িত্ব বহাল থাকবে। আর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে ডিসির কার্যালয় বাদে জেলার সব উন্নয়ন ও সেবাসংক্রান্ত দপ্তরগুলো জেলা পরিষদে ন্যস্ত থাকবে। যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা জেলা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পাবেন। একইভাবে উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদে সংশ্লিষ্ট স্তরের দপ্তরগুলোতে কর্মরত সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীর কাজ ও অর্থসম্পদ পরিষদে ন্যস্ত হবে। প্রতিটি ইউনিয়ন ও উপজেলা পরিষদে সচিব ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দুটি আলাদা পদ থাকবে। তবে উপজেলা
নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ডিসির অধীনে থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করবেন। তিনি উপজেলা পরিষদের হস্তান্তরিত কর্মকর্তা হবেন না।
বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও জেলা পরিষদের আইনি কাঠামো, সাংগঠনিক কাঠামো ও নির্বাচন ব্যবস্থাটি অসম পদ্ধতিতে বিন্যস্ত আছে। এটিকে একটি সমজাতীয় পদ্ধতিতে পুনঃস্থাপনের সুপারিশ করেছে কমিশন।
কমিশনে প্রস্তাব হলো, ভবিষ্যতে জনসংখ্যা ও আয়তনের ওপর ভিত্তি করে ইউনিয়ন পরিষদের সংখ্যা ঢালাওভাবে না বাড়িয়ে ওয়ার্ডের সংখ্যা বাড়ানো যেতে পারে।ইউনিয়ন পরিষদের ওয়ার্ড ব্যবস্থায় অসমতার কথা তুলে ধরে সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জনসংখ্যাভেদে ছোট, মাঝারি, বড়, অতি বড় ইউনিয়ন রয়েছে। আবার ভৌগোলিক আয়তনেও বড় বা ছোট ইউনিয়ন আছে। ইউনিয়ন পরিষদের জনসংখ্যা চার হাজার থেকে ঊর্ধ্বে চার লাখ (সাভারের ধামসোনা) পর্যন্তও বিস্তৃত। ৫০ হাজার থেকে ৩ লাখের জনসংখ্যার ইউনিয়ন পরিষদও আছে। এ ক্ষেত্রে রাঙামাটির সাজেকের কথা উল্লেখ করে কমিশন বলছে, সেখানকার কেউ কেউ বলেছেন, তাঁরা নিজের ওয়ার্ড পুরোটা ঘুরে দেখতে পারেননি।
কমিশনে প্রস্তাব হলো, ভবিষ্যতে জনসংখ্যা ও আয়তনের ওপর ভিত্তি করে ইউনিয়ন পরিষদের সংখ্যা ঢালাওভাবে না বাড়িয়ে ওয়ার্ডের সংখ্যা বাড়ানো যেতে পারে। কারণ, পরিষদ বাড়লে সরকারি ব্যয় বাড়ে। এ ক্ষেত্রে ইউনিয়ন পরিষদের ওয়ার্ড সংখ্যা সর্বনিম্ন ৯টি থেকে সর্বোচ্চ ৩৯টিতে সীমাবদ্ধ করা যায়। এ বিষয়ে কমিশন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উদাহরণ তুলে ধরেছে। জনসংখ্যা ও আয়তনের সামঞ্জস্য বিধান করে নির্বাচন কমিশন আইনানুযায়ী ওয়ার্ড সংখ্যা নির্ধারণ করে দিতে পারে বলে মনে করে কমিশন।
কমিশন বলছে, নির্বাচিত সদস্যরা নিজ নিজ ধর্মগ্রন্থে হাত রেখে শপথনামা পড়বেন এবং স্বাক্ষর করবেন। পরিষদ বা কাউন্সিলের বাইরে থেকে কোনো সরকারি কর্মকর্তাকে ডেকে সদস্যদের শপথবাক্য পাঠ করানোর প্রয়োজন হবে না।দেশের কোন ইউনিয়নে কতগুলো ওয়ার্ড হতে পারে, তারও একটি তালিকা করে দিয়েছে কমিশন। বলা হয়েছে, আড়াই লাখের বেশি জনসংখ্যার ইউনিয়ন পরিষদ আছে সাতটি। এগুলোকে ৩৯টি ওয়ার্ড, দেড় লাখ থেকে আড়াই লাখের নিচে জনসংখ্যা থাকা পাঁচটি ইউনিয়নকে ৩৬টি করে ওয়ার্ড, এক লাখ থেকে দেড় লাখের নিচে থাকা ৯টি ইউনিয়নে ৩৩টি করে ওয়ার্ড,
৪০ হাজার থেকে ৫০ হাজারের নিচে জনসংখ্যা থাকা ৩০৩টি ইউনিয়নে ২৭টি করে ওয়ার্ড করা যেতে পারে। এভাবে ৪ হাজার ৫৭৮টি ওয়ার্ডের প্রতিটির জন্য কতটি ওয়ার্ড হবে, তা উল্লেখ করে দিয়েছে কমিশন।
উপজেলা ও জেলায় কী হবেবর্তমানে উপজেলা পরিষদে কোনো ওয়ার্ড নেই। কমিশন বলছে, ছোট ও মাঝারি সব ইউনিয়ন উপজেলা পরিষদের তিনটি ওয়ার্ড বা নির্বাচনী এলাকায় বিভক্ত হবে। তবে ব্যতিক্রমী বড় ইউনিয়নের ক্ষেত্রে পাঁচটি ওয়ার্ডও হতে পারে। একইভাবে জেলা পরিষদ নির্বাচনের জন্য তিন থেকে পাঁচটি ওয়ার্ডে বিভক্ত হতে পারে। জেলা ও উপজেলা ওয়ার্ডগুলো শুধু নির্বাচনের জন্য ব্যবহৃত হবে। এসব ওয়ার্ড সদস্যদের কোনো নির্বাহী দায়িত্ব থাকবে না। কারণ, ওই এলাকাগুলোর সবকিছু ইউনিয়ন পরিষদ দেখাশোনা করে।
ধর্মগ্রন্থে হাত রেখে শপথইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পরিষদ এবং পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন নির্বাচন সংসদীয় পদ্ধতির আদলে করার সুপারিশ করেছে কমিশন। এই প্রক্রিয়ায় প্রথমে সদস্য বা কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটে নির্বাচন করা হবে। এরপর নির্বাচিত কাউন্সিলর ও সদস্যদের ভোটে চেয়ারম্যান ও মেয়র নির্বাচিত হবেন।
কমিশন বলছে, নির্বাচিত সদস্যরা নিজ নিজ ধর্মগ্রন্থে হাত রেখে শপথনামা পড়বেন এবং স্বাক্ষর করবেন। পরিষদ বা কাউন্সিলের বাইরে থেকে কোনো সরকারি কর্মকর্তাকে ডেকে সদস্যদের শপথবাক্য পাঠ করানোর প্রয়োজন হবে না।
কমিশনপ্রধান তোফায়েল আহমেদ এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, সুপারিশগুলো অবশ্যই বাস্তবায়নযোগ্য। এগুলো বাস্তবায়িত হলে ভারসাম্যপূর্ণ গণতান্ত্রিক পরিবেশ সম্ভব হবে এবং তৃণমূল থেকেই গণতান্ত্রিক চর্চা শুরু হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র স প র শ কর ছ স থ ন য় সরক র য় সরক র র কর মকর ত ও আয়তন র জনস খ য ব যবস থ করব ন উপজ ল সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
সার্চ দুনিয়ার নতুন দিগন্ত জিইও: দেশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো কী প্
ইন্টারনেট সার্চ দুনিয়ায় চলছে নীরব এক বিপ্লব। তথ্য খোঁজার ধরন বদলে যাচ্ছে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে দ্রুত। আগে যেখানে গুগলে উচ্চ র্যাংকিং মানেই ছিল সাফল্য, এখন সেই জায়গা নিচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)-নির্ভর সার্চ টুল।
সার্চ জগতের নতুন চ্যালেঞ্জ
চ্যাটজিপিটি, গুগল জেমিনি, মাইক্রোসফট কপিলট কিংবা পারপ্লেক্সিটি এআই-এগুলো আর শুধু সার্চ ইঞ্জিন নয়, বরং উত্তর তৈরিকারক ইঞ্জিন। ব্যবহারকারী এখন শুধু ‘লিংক’ নয়, বরং সরাসরি উত্তর পেতে চায়। আর এই পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্যই এসেছে নতুন এক কৌশল- জিইও বা জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন।
জিইও কী?
জিইও (জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) হলো এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে আপনার ওয়েবসাইট ও কনটেন্ট এমনভাবে সাজানো হয় যাতে এআই-চালিত সার্চ ইঞ্জিন সহজেই আপনার তথ্য চিনতে, বুঝতে এবং ব্যবহারকারীর প্রশ্নের উত্তরে সেটি অন্তর্ভুক্ত করতে পারে।
আগে ব্র্যান্ডগুলোর ফোকাস ছিল গুগলের প্রথম পাতায় জায়গা করে নেওয়া। কিন্তু এখন গুরুত্ব পাচ্ছে- চ্যাটজিপিটি বা জেমিনি-এর উত্তরে আপনার ব্র্যান্ডের নাম আসছে কি না!
এসইও বনাম জিইও: সার্চ দুনিয়ার নতুন যুগের পালাবদল
অনেকেই এসইও (সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) এবং জিইও (জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) এক মনে করেন, কিন্তু এদের মধ্যে মূলত লক্ষ্য ও কৌশল ভিন্ন। এসইও হচ্ছে পুরোনো পদ্ধতি, অন্যদিকে জিইও হচ্ছে নতুন পদ্ধতি।
* মূল লক্ষ্য
এসইও: সার্চ ইঞ্জিনে র্যাংক বাড়ানো
জিইও: এআই সার্চের উত্তরে দৃশ্যমান হওয়া
* কাজের ধরন
এসইও: কিওয়ার্ড ও ব্যাকলিংক ভিত্তিক
জিইও: কনটেক্সট, প্রাসঙ্গিকতা ও ব্র্যান্ড অথরিটি নির্ভর
* ফলাফল
এসইও: ক্লিক ও ট্রাফিক বৃদ্ধি
জিইও: ব্র্যান্ড উল্লেখ ও আস্থা বৃদ্ধি
* প্ল্যাটফর্ম
এসইও: গুগল, বিং ইত্যাদি সার্চ ইঞ্জিন
জিইও: চ্যাটজিপিটি, জেমিনি, পারপ্লেক্সিটি, এসজিই ইত্যাদি এআই সার্চ
এসইও এখনও গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু ভবিষ্যতের সার্চ ইকোসিস্টেমে জিইও সমান অপরিহার্য হয়ে উঠছে।
বাংলাদেশি ব্যবসার জন্য জিইও-এর গুরুত্ব
বাংলাদেশে ডিজিটাল মার্কেটের ক্রমবর্ধমান প্রবৃদ্ধি স্পষ্টভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শিক্ষা, ট্রাভেল, স্বাস্থ্যসেবা, ই-কমার্স, রিয়েল এস্টেট- প্রায় প্রতিটি খাতেই ব্যবসা অনলাইনে আরো দৃশ্যমান হতে চাচ্ছে। কিন্তু বদলেছে মানুষের সার্চ করার ধরন। এখন তারা শুধু গুগলে সার্চ করেই সন্তুষ্ট থাকছে না, তারা এআই-চালিত সার্চ টুলগুলো যেমন চ্যাটজিপিটি, জেমিনি বা পারপ্লেক্সিটি-এর মাধ্যমে সরাসরি উত্তর খুঁজছে।
গার্টনারের এক গবেষণা অনুযায়ী, ২০২৬ সালের মধ্যে প্রচলিত সার্চ ইঞ্জিনে সার্চ ভলিউম প্রায় ২৫ শতাংশ কমে যাবে- কারণ ব্যবহারকারীরা দ্রুতই এআই-চালিত সার্চ ও চ্যাটবটের দিকে ঝুঁকছে। (তথ্যসূত্র: Gartner, “Search Engine Volume Will Drop 25% by 2026, Due to AI Chatbots and Other Virtual Agents)
তবে এই পরিবর্তনের প্রভাব ব্যবসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ধরুন, কেউ চ্যাটজিপিটি-তে লিখল, ‘ঢাকায় সেরা অ্যাকাউন্টিং ফার্ম কোনটি?’ যদি আপনার কোম্পানির নাম বা কনটেন্ট এআই-এর তৈরি উত্তরে না আসে, তাহলে সম্ভাব্য ক্লায়েন্ট ও ব্যবসার সুযোগ হাতছাড়া হচ্ছে।
মূলত এখানেই জিইও-এর গুরুত্ব উঠে আসে। জিইও ব্যবহার করে কনটেন্ট এমনভাবে সাজানো যায় যাতে এআই সার্চ সিস্টেম আপনার ব্র্যান্ডকে সহজেই চিনতে পারে, বুঝতে পারে এবং ব্যবহারকারীর প্রশ্নের উত্তরে উল্লেখ করে। অর্থাৎ, বাংলাদেশের প্রতিটি ব্যবসা যদি এআই-এর দুনিয়ায় দৃশ্যমান থাকতে চায়, জিইও’র সঙ্গে খাপ খাওয়ানো এখন আর বিকল্প নয়- এটি একান্ত প্রয়োজন।
জিইও’র জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন?
জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (জিইও) কোনো একদিনে শেখার মতো বিষয় না- এটি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া, যেখানে ব্যবসাগুলোকে নিজেদের কনটেন্ট, উপস্থিতি ও বিশ্বাসযোগ্যতা এআই-বান্ধব করে গড়ে তুলতে হয়। নিচে ধাপে ধাপে দেখা যাক, কীভাবে আপনি জিইও’র পথে প্রস্তুত হতে পারবেন।
১. অনলাইন উপস্থিতি যাচাই করুন
জিইও’র প্রথম ধাপ হলো আপনার ব্যবসা বা ব্র্যান্ডের বর্তমান অনলাইন উপস্থিতি যাচাই করা। চ্যাটজিপিটি বা পারপ্লেক্সিটি-এর মতো এআই-চালিত সার্চ টুলে সার্চ দিন ‘বাংলাদেশে সেরা (আপনার ইন্ডাস্ট্রি)-এর কোম্পানিগুলো কোনগুলো?’
যদি সার্চের উত্তরে আপনার নাম না আসে, বোঝা যাবে যে আপনার এআই-দৃশ্যমানতা এখনও সীমিত। এই ক্ষেত্রে আপনাকে জিইও অনুযায়ী কনটেন্ট ও অনলাইন উপস্থিতি বাড়াতে কাজ শুরু করতে হবে।
২. বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করুন
জেনারেটিভ এআই সার্চ সিস্টেম সেই উৎসকেই অগ্রাধিকার দেয়, যা নির্ভরযোগ্য ও যাচাইযোগ্য। তাই আপনার ওয়েবসাইটে ব্র্যান্ড, টিম, যোগাযোগ ও রিভিউসহ সব তথ্য সম্পূর্ণ ও স্বচ্ছ রাখুন।
গুগল বিজনেস প্রোফাইল নিয়মিত আপডেট করুন- ঠিকানা, সময়, পোস্ট ও রিভিউসহ।
বিশ্বস্ত সংবাদমাধ্যম ও ব্লগে ব্র্যান্ডের উল্লেখ বাড়ান।
E-E-A-T (Experience, Expertise, Authoritativeness, Trustworthiness) বজায় রাখুন।
এভাবেই এআই ও ব্যবহারকারীর কাছে আপনার ব্র্যান্ড একটি বিশ্বাসযোগ্য সোর্স হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে- যা জিইও সাফল্যের মূল চাবিকাঠি।
৩. কনভারসেশনাল কনটেন্ট লিখুন
এআই সার্চ এখন ব্যবহারকারীর প্রশ্নভিত্তিক অনুসন্ধানকে গুরুত্ব দেয়। তাই আপনার কনটেন্ট তৈরি করুন এমনভাবে যেন এটি প্রাকৃতিক প্রশ্ন ও কথোপকথনের মতো শোনায়। উদাহরণ: ‘Where can I find a trusted IELTS coaching center in Dhaka?’ ‘Where can I apply for a blue-collar job?’ এ ধরনের কনটেন্ট এআই-এর চোখে আরো সহজে বোঝার মতো হয় এবং ব্যবহারকারীর প্রশ্নের উত্তর হিসেবে উল্লেখযোগ্য।
৪. বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে সক্রিয় থাকুন
এআই শুধু ওয়েবসাইট থেকে তথ্য সংগ্রহ করে না। এটি ফেসবুক, ইউটিউব, লিংকডইন, কোরা এবং অন্যান্য সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম থেকেও তথ্য সংগ্রহ করে। তাই বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে আপনার উপস্থিতি নিশ্চিত করা জিইও-এর জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
৫. এসইও এবং জিইও একসাথে ব্যবহার করুন
ডিজিটাল দুনিয়ায় এখন শুধু সার্চ র্যাংকই যথেষ্ট নয়। এসইও যেমন গুগল সার্চে আপনার কনটেন্টকে শীর্ষে নিয়ে আসে, তেমনি নতুন যুগের জিইও (জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) আপনার ব্র্যান্ডকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক সার্চে আরো দৃশ্যমান করে তোলে।
এসইও মূলত গুগল ও অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিনে ওয়েবসাইটের অবস্থান উন্নত করে, আর জিইও শেখায়- কীভাবে এআই মডেলগুলো আপনার ব্র্যান্ডকে চিনবে, উল্লেখ করবে এবং বিশ্বাস করবে।
দুটি কৌশল একসাথে প্রয়োগ করলে অনলাইন উপস্থিতি অনেক বেশি শক্তিশালী হয়। একদিকে সার্চে দৃশ্যমানতা বাড়ে, অন্যদিকে এআই-নির্ভর প্ল্যাটফর্মগুলোতেও আপনার ব্র্যান্ডের নাম উঠে আসে স্বতঃস্ফূর্তভাবে।
ভবিষ্যতের সার্চ জগতে টিকে থাকতে হলে এখনই সময়- এসইও এবং জিইও-কে একসাথে কাজে লাগানোর।
বাংলাদেশের ব্যবসার জন্য জিইও’র নতুন সম্ভাবনা
জিইও বাংলাদেশের ব্যবসাগুলোর জন্য হতে পারে এক গেম চেঞ্জার। আগে যেখানে অনলাইন দৃশ্যমানতা মানেই ছিল গুগলে র্যাংক করা, এখন সেটি ধীরে ধীরে স্থান ছেড়ে দিচ্ছে এআই সার্চ ভিজিবিলিটি–কে।
আজ যদি কোনো ব্যবহারকারী চ্যাটজিপিটি বা জেমিনি-তে জিজ্ঞেস করে-
‘বাংলাদেশে নির্ভরযোগ্য অনলাইন বই বিক্রির সাইট কোনটা?’
অথবা, ‘ঢাকায় সেরা ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি কারা?’
যদি আপনার ব্র্যান্ডের নাম সেই উত্তরে উঠে আসে, সেটিই হবে প্রকৃত দৃশ্যমানতা- শুধু ক্লিক নয়, বরং আস্থা, প্রভাব ও ব্র্যান্ড অথরিটি–এর প্রতিফলন।
বাংলাদেশে এখন প্রতিদিন শত শত নতুন অনলাইন ব্যবসা শুরু হচ্ছে- ই–কমার্স, এডুকেশন, হেলথটেক, রিয়েল এস্টেট, ফাইন্যান্স, এমনকি ছোট স্টার্টআপরাও দ্রুত ডিজিটাল হচ্ছে। কিন্তু একইসঙ্গে প্রতিযোগিতাও বেড়ে যাচ্ছে বহুগুণে।
এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে শুধু এসইও নয়, জিইও–কেন্দ্রিক কৌশলও অপরিহার্য।
জিইও’র ভবিষ্যৎ
খুব শিগগিরই এআই সার্চ টেক্সটের বাইরে গিয়ে ভয়েস, ভিডিও ও ইমেজ কনটেন্ট থেকেও উত্তর তৈরি করবে। তখন জিইও কেবল ওয়েবসাইট নয়, বরং ভিডিও, পডকাস্ট, সোশ্যাল প্রোফাইল, নিউজ রিপোর্ট- সবকিছুর মধ্যেই প্রভাব ফেলবে।
তাই এখন থেকেই যারা জিইও-কেন্দ্রিক কৌশল গ্রহণ করবে, ভবিষ্যতের সার্চ রেভোলিউশনে নেতৃত্ব দেবে তারাই।
উপসংহার
জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (জিইও) শুধু নতুন ট্রেন্ড নয়- এটি ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের পরবর্তী অধ্যায়।
এসইও যেমন আপনাকে সার্চ রেজাল্টে নিয়ে যায়, জিইও তেমনি আপনাকে নিয়ে যাবে এআই–এর উত্তরে।
‘ভবিষ্যতের সার্চে র্যাংক নয়, ব্র্যান্ডের বিশ্বাসযোগ্যতাই হবে সাফল্যের আসল মাপকাঠি।’
লেখক: হেড অব ওয়েব অ্যানালাইসিস অ্যান্ড এসইও ডিরেক্টর, ইন্টেলেক আইটি এলএলসি (ইউএসএ অ্যান্ড বাংলাদেশ)
ঢাকা/ফিরোজ