ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের হামলায় ২০ জনের বেশি নিহত হয়েছেন। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ বিবিসিকে নিহতের এ সংখ্যা জানিয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে কাশ্মীরের পেহেলগামে এ হামলা হয়। হিমালয়ের কোলে অবস্থিত মনোরম শহর পেহেলগামকে ‘ভারতের সুইজারল্যান্ড’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়। জনপ্রিয় এই পর্যটন নগরীতে গতকালের এই হামলা ২০১৯ সালে পুলওয়ামা হামলার পর কাশ্মীরে সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা।

কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ বলেছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেসামরিক লোকজনকে লক্ষ্য করে যতগুলো হামলা হয়েছে, সেগুলোর তুলনায় এটা অনেক বড় হামলা। হামলায় আরও অনেকে আহত হয়েছেন, যাঁদের কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

ভারতের সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে দেশটির বার্তা সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, হামলায় ২৬ জন নিহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে দুজন বিদেশি নাগরিক। একজন সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং আরেকজন নেপালের নাগরিক। নিহতদের মধ্যে ভারতের নৌবাহিনীর একজন কর্মকর্তা রয়েছেন বলে দেশটির সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

হামলায় জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার ঘোষণা দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গতকাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, ‘সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য আমাদের সংকল্প অটুট রয়েছে এবং এটা আরও শক্তিশালী হবে।’

এই হামলার পর নরেন্দ্র মোদি সৌদি আরব সফর সংক্ষিপ্ত করে মঙ্গলবার রাতেই দেশে ফিরছেন বলে পিটিআই জানিয়েছে। হামলার পর কাশ্মীরে গেছেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। কাশ্মীরের শ্রীনগরে গিয়ে নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যালোচনায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি।

হামলার পর ঘটনাস্থল পেহেলগাম এলাকায় সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে বলে ওই অঞ্চলের লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিনহা জানিয়েছেন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক খবরে বলা হয়, এই হামলার দায় স্বীকার করেছে ‘কাশ্মীর রেজিস্ট্যান্স’ নামের একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তারা এই ঘোষণা দিয়েছে। তবে বিষয়টি রয়টার্সের পক্ষ থেকে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

হামলার নিন্দা জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। গতকাল নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘কাশ্মীরের খবরে গভীরভাবে মর্মাহত হয়েছি। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্র বলিষ্ঠভাবে ভারতের পাশে রয়েছে।’

কাশ্মীরে গতকালের এই হামলা হয়েছে ভারতে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের চার দিনের সফরের দ্বিতীয় দিনে। হামলার পর জেডি ভ্যান্স এক্স এক পোস্টে লিখেছেন, ‘ভারতের পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার ভুক্তভোগীদের প্রতি উষা ও আমি সমবেদনা জানাচ্ছি। গত কয়েক দিন আমরা এই দেশের সৌন্দর্য ও এর জনগণের সঙ্গে সময় কাটিয়েছি। এই হামলায় শোকার্ত মানুষের প্রতি আমাদের প্রার্থনা রইল।’

হামলার ঘটনাটি ঘটেছে বৈসারন নামক এলাকায়। এটি পেহেলগাম থেকে প্রায় তিন মাইল (পাঁচ কিলোমিটার) দূরে পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত।

জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের মহাপরিদর্শক ভিডি কুমার বিরদী বিবিসি হিন্দিকে জানান, যেখানে গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, সেখানে কোনো গাড়ি যেতে পারে না।

যে পর্যটক দলের ওপর গুলিবর্ষণ করা হয়, সেই দলে ছিলেন গুজরাট থেকে আসা একজন। তিনি বলেছেন, হঠাৎ হামলা শুরু হলে মুহূর্তের মধ্যে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়। সবাই দৌড়াতে শুরু করেন এবং কান্না-চিৎকার করতে থাকেন।

ভারতের বিভিন্ন সংবামাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, ভারতীয় সেনারা ঘটনাস্থলের দিকে দৌড়ে যাচ্ছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, মাটিতে অনেকের দেহ পড়ে আছে এবং লোকজন কান্না করছে ও সাহায্য চাইছে। অবশ্য বিবিসি এসব ভিডিওর সত্যতা যাচাই করতে পারেনি।

পুলিশ জানিয়েছে, গুলিবিদ্ধ অনেক পর্যটককে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পুরো এলাকা সেনাসদস্যরা ঘিরে রেখেছেন এবং চৌকিগুলোতে গাড়ি থামিয়ে তল্লাশি করা হচ্ছে। হামলাকারীদের খুঁজে বের করতে আরেকটি অভিযানের প্রস্তুতি চলছে।

কাশ্মীরে ভারতের শাসনের বিরুদ্ধে ১৯৯০–এর দশক থেকে সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদীদের তৎপরতায় বহু সাধারণ মানুষ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের প্রাণহানি হয়েছে।
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতার পর হিমালয়ের এ অঞ্চল বিভক্ত হয়।

পারমাণবিক ক্ষমতাধর দুই প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তান উভয়েই পুরো কাশ্মীরকে নিজেদের বলে দাবি করে। এ নিয়ে দেশ দুটি বিগত কয়েক দশকে দুটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ ও একটি সীমিত সংঘাতে জড়িয়েছে।

বর্তমানে প্রায় ৫ লাখ ভারতীয় সেনাসদস্য স্থায়ীভাবে কাশ্মীরে মোতায়েন রয়েছেন।
২০১৯ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কাশ্মীরের আংশিক স্বায়ত্তশাসন প্রত্যাহার করার পর সংঘর্ষ কিছুটা কমেছে। তারপরও সহিংসতা পুরোপুরি থামেনি।
কাশ্মীরে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর সর্বশেষ বড় ধরনের হামলা হয় ২০২৪ সালের জুনে। সে সময় হিন্দু তীর্থযাত্রীদের বহনকারী একটি বাসে বন্দুকধারীরা গুলি চালালে ৯ জন নিহত ও ৩৩ জন আহত হন।

এর আগে ২০১৯ সালে কাশ্মীরের পুলওয়ামায় এক আত্মঘাতী বোমা হামলায় অন্তত ৪৬ জন ভারতীয় সেনা নিহত হন। ভারত এই হামলার জেরে পাকিস্তানের ভেতরে বিমান হামলা চালায়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গতক ল র ওপর সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

সিদ্দিককে মারধর ও শিল্পীদের বিরুদ্ধে মামলা, যা বললেন অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি

শোবিজের একঝাঁক একঝাঁক অভিনয়শিল্পীকে হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি করা হয়েছে। প্রথমে ইরেশ যাকের, তারপর সুবর্ণা মুস্তাফা, অপু বিশ্বাস, নুসরাত ফারিয়া, নিপুণসহ ১৭ অভিনয়শিল্পীর নাম প্রকাশ্যে এসেছে। এরই মধ্যে গতকাল অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর ও লাঞ্ছিত করে রাজধানীর রমনা থানায় সোপর্দ করা হয়। এসব বিষয় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চর্চা চলছে। এ নিয়ে অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি আজাদ আবুল কালাম নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন।

সিদ্দিকের ওপর হামলা ও লাঞ্ছনা ঘটনা নিয়ে আজাদ আবুল কালাম গণমাধ্যমে বলেন, “সিদ্দিকের সঙ্গে যা ঘটেছে, এটা তো মব। এই মব ভায়োলেন্সকে তো ঠেকাচ্ছে না। কেন যেন মনে হচ্ছে, মব ভায়োলেন্সকে নীরবে বলা হচ্ছে, করে যাও। আমাদের কিছুই করার নেই। একজনের রাজনৈতিক চিন্তাচেতনা থাকতে পারে। অভিনেতা হিসেবে সিদ্দিক সবার কাছে পরিচিত। কিছু লোক তাকে এভাবে রাস্তায় ধরে মেরে দেবে!”

প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে আজাদ আবুল কালাম বলেন, “দলবদ্ধভাবে সিদ্দিককে শারীরিকভাবে আঘাত করেছে, আক্রমণ করেছে, গায়ে থেকে জামাকাপড় খুলে ফেলেছে, এরপর থানায় সোপর্দ করেছে। থানায় যদি সোপর্দ করতেই হয়, তাহলে প্রথমে কেন আইন হাতে তুলে নিল? তাকে হেনস্তা করে আইনের হাতে তুলে দেবে— এই মব জাস্টিস, মব ভায়োলেন্স সমাজে বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে। এটা তো একটা সময় নানা স্তরে হবে। এসব কর্মকাণ্ড সরকারকেও প্রশ্নবিদ্ধ করছে। সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে, যেখানে মব ভায়োলেন্স, সেখানে কঠোর হস্তে দমন করবে।”

ঢালাওভাবে অভিনয়শিল্পীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের বিষয়ে বিস্মিত আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, “ঢালাওভাবে হত্যা মামলা হচ্ছে! দেখে মনে হচ্ছে, সবাইকে মামলার মধ্যে ফেলতে হবে। ৩০০-৪০০ জন মামলার আসামি, এটা অবাস্তব একটা অবস্থা। একজন সুবর্ণা মুস্তাফার মতো শিল্পী রাস্তায় গিয়ে মানুষকে গুলি করবে? যে মানুষটি মামলা করেছেন, তিনি আন্দোলনের সময় আহত হয়েছেন, গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন; তিনি মামলা করেছিলেন অনেক লোকের নামে। মামলার নথিতে শিল্পীদের অনেকের নাম দেখলাম, তারা রাস্তায় নেমে মানুষকে গুলি করবে!”

সরকারিভাবে এ ধরনের মামলাকে প্রতিরোধ করা উচিত বলে মনে করেন আজাদ আবুল কালাম। তিনি বলেন, “সরকারিভাবে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারেরও উচিত হবে এ ধরনের মামলাকে প্রতিরোধ করা। নিরুৎসাহিত করা। যে ব্যক্তি মামলা করছেন, যদি প্রমাণিত হয়, শিল্পীরা কেউই গুলি করেনি, তখন তো এটা মিথ্যা মামলা হবে। এ রকম মিথ্যা মামলার ক্ষেত্রে, যে ব্যক্তি শিল্পীদের নামে মামলা করেছেন, তার কী শাস্তি হবে, তারও বিধান থাকতে হবে।”

“কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে, তা জানানোর একটা প্রক্রিয়া আছে। শুধু শিল্পী না, একজন খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধেও যদি কোনো অভিযোগ থাকে, তাহলে আপনি তার অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার আগপর্যন্ত তাকে অপরাধী বলতে পারেন না। তাকে সামাজিকভাবে হেয় করতে পারেন না। মামলা করে তাকে সামাজিকভাবে হেয় করা শুরু করলেন, এই প্রক্রিয়া যদি চলতে থাকে, এটাই যদি আমাদের মনস্তত্ত্ব হয়, তাহলে বিভক্তি আরো বাড়বে।” বলেন আবুল কালাম আজাদ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নাটোরে ছুরিকাঘাতে প্রাণ গেল একজনের
  • ফরিদপুর জেলা এনসিপি’র কমিটি গঠনের দায়িত্বে মহিলা আ’লীগ সভাপতির মেয়ে
  • ফরিদপুর জেলা এনসিপি’র কমিটি গঠনের দায়িত্বে মহিলা আ’লীগ সভাপতি মেয়ে
  • ৫০ পেরোনো নারীর খাদ্যাভ্যাস যেমন হতে হবে
  • যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ করতে কাজ করছে চীন
  • সেলফি’র ধাক্কায় গণস্বাস্থ্যের কর্মীর মৃত্যু, ৬ বাস আটক
  • পেহেলগামে হামলার পর প্রতিশোধের আশঙ্কায় দিন কাটছে ভারতীয় মুসলিমদের
  • প্রথম আলোর সাংবাদিককে বৈষম্যবিরোধী নেতার হুমকি, থানায় জিডি
  • গাজীপুরে জমি নিয়ে বিরোধে সংঘর্ষ, হাতুড়িপেটায় একজন নিহত
  • সিদ্দিককে মারধর ও শিল্পীদের বিরুদ্ধে মামলা, যা বললেন অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি