‘এ’ ক্যাটাগরির শেয়ারে বিনিয়োগে আইসিবির শর্ত শিথিল
Published: 22nd, April 2025 GMT
ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশকে (আইসিবি) পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত ‘এ’ ক্যাটাগরির একক শেয়ারে সর্বোচ্চ বিনিয়োগ সীমা ৫ শতাংশ হতে অব্যাহতি প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। অর্থাৎ এখন থেকে ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ারে ৫ শতাংশের বেশি বিনিয়োগ করতে পারবে আইসিবি।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) ৯৫২তম কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা গেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) আবেদনের প্রেক্ষিতে এবং দেশের পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা বিবেচনায় মূলভিত্তি সম্পন্ন ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাময় সিকিউরিটিজে অধিক বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানিসমূহের একক শেয়ারে সর্বোচ্চ বিনিয়োগ সীমা ৫ শতাংশ হতে আইসিবিকে অব্যাহতি প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
উল্লেখ্য, এক্ষেত্রে আইসিবি কর্তৃক বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শেয়ার অর্জন, অধিগ্রহণ ও কর্তৃত্ব গ্রহণ) বিধিমালা, ২০১৮ এর প্রাসঙ্গিক বিধিমালা যথাযথভাবে পরিপালন করতে হবে। এ ছাড়া,কমিশনের পত্র নং-BSEC/SRMID /2011/1240/847; তারিখ: অক্টোবর ২৯, ২০১৯ এর আওতায় শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে কোম্পানির উদ্যোক্তা ও পরিচালক কর্তৃক শেয়ার ধারণ সংক্রান্ত কমিশনের নোটিফিকেশন নং-BSEC/CMRRCD/2009-193/217/Admin/ 90; তারিখ: মে ২১, ২০১৯ এর প্রাসঙ্গিক শর্তাবলী যথাযথভাবে পরিপালন করতে হবে।
ঢাকা/এনটি/এনএইচ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
‘সমন্বিত রোডম্যাপে ব্যাংক খাত পুনরুদ্ধারের টেকসই পথ পুঁজিবাজার’
দেশের ব্যাংক খাতের ওপর আস্থা ফিরিয়ে আনতে পুঁজিবাজারই হতে পারে টেকসই পথ, যা দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার নতুন ভিত্তি স্থাপন করতে পারে। এজন্য একটি সমন্বিত রোডম্যাপ তৈরি করা প্রয়োজন।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডআরএ) এবং আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতের ভিত্তিতে এ রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে।
আরো পড়ুন:
সিএসই-৫০ সূচক সমন্বয়, কার্যকর ১১ নভেম্বর
সাইফুল ইসলাম ডিবিএ’র প্রেসিডেন্ট পুনঃনির্বাচিত
সোমবার (৩ নভেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশ পলিসি এক্সচেঞ্জ আয়োজিত ‘ব্যাংকিং খাতে আস্থা ফিরিয়ে আনা: পুঁজি কেন বেশি গুরুত্বপূর্ণ’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ পলিসি এক্সচেঞ্জের অর্থনীতিবিদ হাসনাত আলম। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাসরুর রিয়াজ।
আলোচনায় মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, “বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে সুশাসনের অভাব রয়েছে। বিগত সময়ে নন পারফর্মিং লোন (এনপিএল) ২৮ শতাংশে পৌঁছছে। বর্তমানে আস্থা ফেরাতে মূলধন জরুরি। এ কাজে পুঁজিবাজার এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এজন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় জরুরি।”
প্রাইম ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হাসান ও. রশিদ বলেন, “ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি মেটাতে পুঁজিবাজার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এজন্য রেগুলেটরদের সমন্বিত মতামতের ভিত্তিতে একটি ফ্রেম ওয়ার্ক তৈরি করতে হবে।”
হুদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোং এর সিনিয়র পার্টনার এএফএম নেসার উদ্দীন বলেন, “বিগত সরকারের আমলে বাংলাদেশের ব্যাংকের বেশি ছাড় দেওয়ার কারণেই মন্দ ঋণ বেড়েছে। মন্দ ঋণের ব্যাংকগুলোকে আস্থা ফেরাতে অবশ্যাই খেলাপী পরিচালকদের বের করে দিয়ে আমানতকারীদের হাতে ব্যাংকের দায়িত্ব তুলে দিতে হবে।”
ঢাকা স্টক একচেঞ্জ ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ) প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম বলেন, “বাংলাদেশের আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর মধ্যে কোনো সমন্বয় নাই। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যে সমন্বয়হীনতা রয়েছে। এ দুইটি সংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতা থাকলে অর্থনীতি আগানো কঠিন হবে। একইসঙ্গে অর্থমন্ত্রণালয় ও আইডআরএ-কে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করা উচিত।”
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের আর্থিক খাতের অন্যতম দূর্বলতা কার্যকর বন্ড মার্কেট না থাকা। অথচ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বন্ড মার্কেট খুবই শক্তিশালী। বাংলাদেশকে অর্থনীতিকে নিয়ে সম্পদভিত্তিক বন্ড মার্কেট দরকার। বন্ডের নীতিমালা শক্তিশালী করে ট্রেজারি বন্ডকে পুঁজিবাজারে লেনদেনযোগ্য করতে হবে। এই বন্ডকে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছেও পরিচিত করতে হবে।”
তিনি আরো বলেন, “বন্ড মার্কেটকে শক্তিশালীকরণের পাশাপাশি জনপ্রিয় করতে আগামী ১০ বছরের মুনাফার ওপর কর মওকুফ করতে হবে। ক্যাপিটাল গেইনের ওপর যেমন ছাড় ছিল, ঠিক তেমনি বন্ডের ওপর করছাড় দিতে হবে। একইসঙ্গে মার্জার সংক্রান্ত আইনেরও কিছুটা সংশোধনী আনতে হবে। সেটা না হলে দেশের ব্যাংক খাতের ওপর আস্থা ফেরানো কঠিন হবে “
সিটি ব্যাংকের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, “ব্যাংকের ঋণকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মানদণ্ডে বিচার করতে হবে। ঋণগুলোতে তিনভাগে ভাগ করে পৃথক পৃথক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বাংলাদেশকে অবশ্যই অর্থনীতির বৈশ্বিক সূচকগুলো মানতে হবে। এর বাইরে বাংলাদেশের ন্যারেটিভ তৈরি করা সম্ভব নয়।”
পুঁজিবাজারবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ক্যাপিটাল মার্কেট জানালিস্ট ফোরামের (সিএমএজেএফ) প্রেসিডেন্ট এসএম গোলাম সামদানী ভূঁইয়া বলেছেন, “পুঁজিবাজারের মাধ্যমে অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে যে সমস্ত বহুজাতিক কোম্পানি এখনো পুঁজিবাজারে আসেনি বা তালিকাভুক্ত হয়নি, সেগুলোকে দ্রুত তালিকাভুক্ত করতে হবে। পাশাপাশি সরকারি কোম্পানি যেগুলো এখন পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয়, সেগুলোতে দ্রুত তালিকাভুক্ত করতে হবে। ভালো ভারো কোম্পানি বাজারে আসলে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়বে এবং এর ইতিবাচক প্রভাব ব্যাংকগুলোর শেয়ার দরে পড়বে। তখন ব্যাংক রাইট ও বোনাস শেয়ার ছেড়ে টাকা তোলা সম্ভব হবে।”
অর্থসূচকের সম্পাদক জিয়াউর রহমান বলেন, “বাংলাদেশে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় নেই। আর্থিক খাতের উন্নয়নে সংস্থাগুলোর মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানো জরুরি। এছাড়া ব্যাংকগুলোর মধ্যে সুশাসন ফিরিয়ে আনা জরুরি।”
সিএমজেএফ নির্বাহী কমিটির সদস্য ও রাইজিংবিডি ডটকমের সিনিয়র রিপোর্টার নুরুজ্জামান তানিম বলেন, “ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ধারাবাহিকভাবে বাড়ার ফলে মূলধন ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এ ঘাটতি পূরণে ব্যাংকগুলো সাব-অর্ডিনেটেড বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে সরাসরি মূলধন সংগ্রহ করতে পারে। বর্তমানে পুঁজিবাজারই হতে পারে ব্যাংকিং খাতের আস্থা ফিরিয়ে আনার টেকসই পথ। এজন্য বাস্তবায়নযোগ্য একটি রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে। সেজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক, বিএসইসি, এনবিআর, আইডআরএ ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে নীতিগত সমন্বয় প্রয়োজন। সেইসঙ্গে ব্যাংকগুলোতে করপোরেট সুশাসন নিশ্চিত করা প্রয়োজন।”
আলোচনার শেষ পর্বে বাংলাদেশ পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাসরুর রিয়াজ বলেন, “বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নে জাতীয় কৌশল নেই। সেইসাথে এই কৌশলের মাধ্যমে ধাপে ধাপে এগিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনাও নাই। বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নে রেগুলেটরি ম্যাপিং প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকের ক্যাপিটালাইজেশন ও নন পারফর্মিং লোন রিকভারি- এ দুই জায়গাতেই বাধা আছে। সেখানে সুর্নির্ধারিত বা নিয়মিত নীতিমালা নাই। তবে সেটা আলোচনার মাধ্যমে দূর করতে হবে।”
তিনি বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা একেবারে বড় লাফ দিতে পারব না। স্থানীয় বাস্তবতাকে মাথায় রেখে আমাদের চলতে হবে। সরকারের সহযোগিতা, সমন্বিত রোডম্যাপ প্রণয়ন, আইনগত সংস্কার ও সুশাসন নিশ্চিত করতে পারলেই ব্যাংকিং খাতের ওপর আস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।”
আলোচনায় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ক্যাপিটাল মার্কেটের (বিআইসিএম) নির্বাহী প্রেসিডেন্ট ওয়াজিদ হাসান শাহ প্রমুখ বক্তব্য দেন।
ঢাকা/এনটি/মেহেদী