গাইবান্ধার ফুলছড়িতে হিরা খাতুন (৩৩) নামে প্রশিকা এনজিওর এক নারী কর্মীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। 

বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) দুপুর ১টার দিকে উপজেলার কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের মদনের পাড়া গ্রামের একটি ভাড়া বাসা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। 

নিহত হিরা খাতুন নাটোর জেলার সিংড়া উপজেলার বনগ্রামের হাবিবুর রহমানের মেয়ে এবং প্রশিকার ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া ইউনিয়ন শাখায় মাঠকর্মী হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নিহত হিরা খাতুন বুধবার এনজিও অফিসে কাজ শেষে বাসায় ফেরেন। বৃহস্পতিবার সকালে মোটর দিয়ে পানি তুলে গোসল করলেও তিনি অফিসে যাননি। সহকর্মীরা ও বাসার মালিক তার মোবাইলে একাধিকবার ফোন করলেও কোনো সাড়া মেলেনি। পরে তারা বাসার দরজায় ধাক্কাধাক্কি করে এবং জানালার ফাঁক দিয়ে মোবাইলের আলোতে দেখেন, তিনি রান্না ঘরের ধর্ণার সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। 

খবর পেয়ে ফুলছড়ি থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহ উদ্ধার করে গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।

বাসার মালিক শহিদুর রহমান জানান, “প্রশিকা মদনের পাড়া শাখার ম্যানেজার সুরেষ চন্দ্র বর্মণ গ্রাহকদের প্রায় কোটি টাকা নিয়ে গত রোজার ঈদের সময় থেকে পালিয়ে রয়েছেন। এরপর থেকে গ্রাহকরা হিরাসহ এনজিওর অন্যান্য কর্মীদের ওপর টাকা ফেরতের চাপ দিয়ে আসছিলেন।”

প্রশিকার বিভাগীয় ব্যবস্থাপক আনন্দ মোহন বলেন, “ম্যানেজার সুরেষ চন্দ্র ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাওয়ার পর আর অফিসে আসেননি। গ্রাহকদের অভিযোগ থেকে আমরা জানতে পারি তিনি প্রায় কোটি টাকা নিয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। প্রমাণ সাপেক্ষে প্রত্যেক গ্রাহকের টাকা ফেরত দেওয়া হবে।”

তিনি আরও বলেন, “গ্রাহকের কাছে টাকা উত্তোলনের খাতায় শুধু ম্যানেজার সুরেষ চন্দ্রের স্বাক্ষর পাওয়া গেছে। হিরা খাতুন কেন আত্মহত্যা করেছেন, তা আমাদের জানা নেই।”

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সোহেল রানা সালু বলেন, “আমি কয়েকদিন ধরে শুনছি, ম্যানেজার সুরেষ চন্দ্র গ্রাহকদের টাকা নিয়ে পালিয়েছেন। সেই চাপেই হয়তো হিরা আত্মহত্যা করেছেন।”

ফুলছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার হাফিজুর রহমান বলেন, “খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ঢাকা/মাসুম/এস

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ লছড়

এছাড়াও পড়ুন:

ফুটবলার প্রতিমা এগিয়ে যাচ্ছেন, পাশে আছে কিশোর আলোসহ অনেকে

একটি পরিবারের ওপর নেমে আসা অপ্রত্যাশিত চাপ আর হতাশাকে দূর করেছে একটি সংবাদ। বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৫ ও অনূর্ধ্ব-১৭ জাতীয় ফুটবল দলের খেলোয়াড় প্রতিমা মুন্ডার পড়াশোনা ও খেলাধুলা থমকে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল মাত্র ৪৭ হাজার টাকার জন্য। প্রথম আলোয় প্রতিবেদন প্রকাশের পর মিলেছে সহযোগিতা, পরিশোধ হয়ে গেছে বিকেএসপির বকেয়া।

এতে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন প্রতিমার মা সুনিতা মুন্ডা। তাঁদের ওপর থেকে নেমে গেছে বড় ধরনের আর্থিক চাপ।

গত ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেএসপি প্রতিমার অভিভাবককে পাঠানো চিঠিতে জানিয়েছিল, তাঁদের মেয়ের বকেয়া বেতন ৪৬ হাজার ৮৪০ টাকা। সেই চিঠিতেই সতর্ক করে বলা হয়, ছয় মাসের বেশি বেতন বকেয়া থাকলে চূড়ান্ত সতর্কীকরণ, আর ১২ মাসের বেশি বকেয়া থাকলে বহিষ্কারের বিধান আছে। অর্থাভাবে যখন অনিশ্চিত হয়ে উঠেছিল প্রতিমার ভবিষ্যৎ, ঠিক সেই সময় ১১ অক্টোবর প্রথম আলোয় প্রকাশিত হয় তাঁদের পরিবারের সংগ্রামের গল্প।

আরও পড়ুনবকেয়া বেতন চেয়ে বিকেএসপির চিঠি, ফুটবলার প্রতিমার পড়াশোনা বন্ধের পথে ১১ অক্টোবর ২০২৫

প্রতিবেদনটি পাঠকের হৃদয়ে নাড়া দেয়। কিশোর আলোর পক্ষ থেকে প্রতিমার বকেয়া পরিশোধের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ওই দিনই বিকেলে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামে গিয়ে প্রথম আলোর সাতক্ষীরার নিজস্ব প্রতিবেদক কল্যাণ ব্যানার্জি প্রতিমা ও তাঁর মা সুনিতা মুন্ডার হাতে ৫০ হাজার টাকা তুলে দেন। মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও শিশুসাহিত্যিক ফরিদুর রেজা সাগরের সৌজন্যে নেওয়া হয় এই উদ্যোগ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ব্যবসায়ী সহায়তা করেন আরও ১০ হাজার টাকা। তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দীপা রানী সরকার দেন পাঁচ হাজার টাকা ও একটি ফুটবল।

সহায়তা পেয়ে স্বস্তি ফিরেছে পরিবারে। মুঠোফোনে প্রতিমা বলেন, ‘এখন আর কোনো অনিশ্চয়তা নেই। বিকেএসপির পাওনা ৪৬ হাজার ৮৪০ টাকা পরিশোধ করে দিয়েছি। আমি ভালো আছি, মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা আর অনুশীলন করছি।’

সাতক্ষীরার তালা উপজেলার প্রতিমা মুন্ডা ও তাঁর মা সুনিতা মুন্ডার হাতে কিশোর আলোর পক্ষ থেকে ৫০ হাজার টাকা তুলে দেওয়া হয়। মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও শিশুসাহিত্যিক ফরিদুর রেজা সাগরের সৌজন্যে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়

সম্পর্কিত নিবন্ধ