খাদ্য মূল্যস্ফীতি ঝুঁকিতে ‘লাল’ শ্রেণিতে আছে বাংলাদেশ। প্রায় দুই বছর ধরে বাংলাদেশ এই শ্রেণিতে অবস্থান করছে। বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এই চিত্র ওঠে এসেছে।

সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক বিশ্বের বিভিন্ন দেশের খাদ্যনিরাপত্তার হালনাগাদ পরিস্থিতি তুলে ধরে তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ করেছে। প্রতি ছয় মাস পরপর এই চিত্র প্রকাশ করে থাকে সংস্থাটি। সেই অনুসারে, প্রায় দুই বছর ধরেই বাংলাদেশ লাল তালিকায় অর্থাৎ অবস্থানের পরিবর্তন হয়নি।

বিশ্বব্যাংক ১০ থেকে ১২ মাসের খাদ্য মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে খাদ্যনিরাপত্তা–বিষয়ক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে থাকে।

বাংলাদেশের পাশাপাশি আরও ১৪টি দেশ লাল শ্রেণিতে আছে। দেশগুলো হলো কঙ্গো, অ্যাঙ্গোলা, ইথিওপিয়া, গাম্বিয়া, গিনি, মাদাগাস্কার, ঘানা, ভারত, লাওস, লেসেথো, তিউনিসিয়া, জাম্বিয়া, বেলারুশ ও রাশিয়া।

খাদ্য মূল্যস্ফীতি কোন দেশে কত বেশি, তা বোঝাতে বিভিন্ন দেশকে চার শ্রেণিতে ভাগ করেছে বিশ্বব্যাংক। যেসব দেশের খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৩০ শতাংশ বা তার বেশি, সেসব দেশকে ‘বেগুনি’ শ্রেণিতে; ৫ থেকে ৩০ শতাংশের মধ্যে যেসব দেশের খাদ্য মূল্যস্ফীতি, তাদের ‘লাল’ শ্রেণিতে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ২ থেকে ৫ শতাংশের মধ্যে মূল্যস্ফীতির দেশগুলোকে ‘হলুদ’ ও ২ শতাংশের কম মূল্যস্ফীতির দেশগুলোকে ‘সবুজ’ শ্রেণিতে রাখা হয়েছে। সব মিলিয়ে ১৭২টি দেশের খাদ্য মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে সংস্থাটির প্রতিবেদনে।

কেন বাংলাদেশ লাল শ্রেণিতে

প্রায় তিন বছর ধরে বাংলাদেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি চলছে। তবে এক বছর ধরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেশি ছিল। টানা ১০ মাস খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ শতাংশের বেশি।

১০ মাস পর গত ফেব্রুয়ারিতে খাদ্যের মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের নিচে নামে। মার্চেও তা এক অঙ্কের ঘরেই ছিল, যা একটু স্বস্তির বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

গত বছরের মার্চের পর খাদ্য মূল্যস্ফীতি আর এক অঙ্কের ঘরে নামেনি। গরিব ও সীমিত আয়ের মানুষ এত দীর্ঘ সময় ধরে ভোগান্তিতে পড়েননি আগে। এর মধ্যে গত জুলাইয়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৪ দশমিক ১০ শতাংশে উঠে, যা গত ১৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসের পর থেকে এ বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত অর্থাৎ গত এক বছরে গড় খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১০ দশমিক ৪৪ শতাংশ।

গত এক বছরে গড় খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১০ দশমিক ৪৪ শতাংশ হওয়ার মানে হলো, ২০২৩ সালের মার্চ থেকে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত যদি আপনার খাবার কিনতে ১০০ টাকা খরচ হয়। পরের এক বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালের মার্চ থেকে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত খাবার কিনতে লাগল ১১০ টাকা ৪৪ পয়সা। প্রতি ১০০ টাকায় খরচ বেড়েছে ১০ টাকা ৪৪ পয়সা। এর মানে, বাংলাদেশের সব শ্রেণির মানুষের খাবার খরচ গড়ে এক-দশমাংশ বেড়েছে।

মূল্যস্ফীতি একধরনের করের মতো। ধরুন, আপনার প্রতি মাসে আয়ের পুরোটাই সংসার চালাতে খরচ হয়ে যায়। কিন্তু হঠাৎ জিনিসপত্রের দাম বাড়লে এবং সে অনুযায়ী আপনার আয় না বাড়লে আপনাকে ধারদেনা করে সংসার চালাতে হবে কিংবা খাবার, কাপড়–চোপড়, যাতায়াতসহ বিভিন্ন খাতে কাটছাঁট করতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বাংলাদেশের মানুষকে গড় আয়ের অর্ধেকের মতো খরচ করতে হয় খাবার কিনতে। গরিব মানুষের খাবারের পেছনে ব্যয় আরও বেশি। গরিব মানুষেরা তাঁদের আয়ের প্রায় ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ খরচ করেন খাবার কেনার পেছনে।

বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, মূল্যস্ফীতি, বিশেষ করে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমানো সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এ জন্য সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে। মুদ্রানীতির পাশাপাশি রাজস্ব নীতিগুলো এমন করতে হবে যেন মূল্যস্ফীতি কমে। এ ছাড়া বাজার তদারকিও জোরদার করতে হবে।

অন্য শ্রেণিতে কোন দেশ

উচ্চ খাদ্য মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় বিশ্বব্যাংকের তালিকায় টানা এক বছর ধরে সবচেয়ে খারাপ শ্রেণি বেগুনিতে আছে ছয়টি দেশ। এই দেশগুলো হলো মালাওয়ি, দক্ষিণ সুদান, হাইতি, মিয়ানমার, আর্জেন্টিনা ও তুরস্ক।

খাবারের দাম নিয়ে সবচেয়ে ভালো আছে আটটি দেশ। সবুজ শ্রেণিভুক্ত দেশগুলো হলো সুইজারল্যান্ড, সুইডেন, সৌদি আরব, ম্যাকাও, চীন, ফ্রান্স, ফিনল্যান্ড ও বেনিন।

তালিকায় থাকা বাকি দেশগুলো গত এক বছরে কখনো লাল, কখনো বেগুনি, কখনো-বা হলুদ বা সবুজ তালিকায় রয়েছে। কেউ নিজেদের খাদ্য মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতির উন্নতি করেছে, কারও অবনতি হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর স থ ত এক বছর

এছাড়াও পড়ুন:

বিদেশি ঋণ পরিশোধ বেড়েছে ২৪ শতাংশ

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) বিদেশি ঋণের সুদ ও আসল বাবদ ৩২১ কোটি ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে (জুলাই-মার্চ) ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ছিল ২৫৭ কোটি ডলার। সেই হিসেবে এ বছর বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ বেড়েছে ২৪ দশমিক ৯ শতাংশ। এমনকি চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে গত অর্থবছরের কাছাকাছি ঋণের সুদাসল পরিশোধ হয়ে গেছে।

বিদেশি ঋণ-অনুদান পরিস্থিতির ওপর গতকাল বুধবার প্রকাশিত অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে বিদেশি ঋণ বাবদ পরিশোধের মধ্যে আসলের পরিমাণ ২০১ কোটি ডলার। সুদ বাবদ ১২০ কোটি ডলার পরিশোধ হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ২৫৭ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হয়েছিল। এক বছরের ব্যবধানে ৬৪ কোটি ডলার বেশি পরিশোধ করতে হয়েছে বাংলাদেশ সরকারকে।

ইআরডির একজন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় আগ্রাসী অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় পরিণাম চিন্তা না করে বড় অঙ্কের ঋণ নেওয়া হয়। সেই সঙ্গে ডলারের সঙ্গে টাকার বিনিময় হারের তারতম্য বাড়াসহ নানা কারণে এখন বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। 

চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে দেশে মোট প্রায় ৪৮১ কোটি ডলার সমপরিমাণ বিদেশি ঋণ-অনুদান এসেছে। এ সময়ে ঋণের সুদাসল পরিশোধ করতে হয়েছে অর্থছাড়ের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশের সমান। এদিকে গত জুলাই-মার্চ সময়ে ৩০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ বিদেশি সহায়তার প্রতিশ্রুতি পেয়েছে বাংলাদেশ, যা গতবারের একই সময়ে পাওয়া প্রতিশ্রুতির অর্ধেকের কম।

গত অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ৭২৪ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গিয়েছিল। জুলাই-মার্চ সময়ে সবচেয়ে বেশি ১২২ কোটি ডলার ছাড় করেছে এডিবি। এ ছাড়া বিশ্বব্যাংক ১০৭ কোটি ডলার ও জাপান ৮৯ কোটি ডলার দিয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিদেশি ঋণ পরিশোধ বেড়েছে ২৪ শতাংশ
  • জ্বালানি তেলের দাম কমল লিটারে ১ টাকা
  • আইন সংশোধন করে কি ঠেকানো যাবে ইন্টারনেট বন্ধ
  • ম্যারিকোর ১ হাজার ৯৫০ শতাংশ চূড়ান্ত লভ্যাংশ ঘোষণা
  • অর্থনীতির আকারে এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ দশম
  • ইউনাইটেড ফাইন্যান্সের ১০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা
  • সিটি ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক সম্মেলন অনুষ্ঠিত
  • সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্সের ১২ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা
  • অগ্রণী ইন্স্যুরেন্সের ১২ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা
  • প্রাইম ইন্স্যুরেন্সের ১০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা