এলজিইডির প্রকৌশলী রাশেদুলের ঢাকায় প্লট-ফ্ল্যাট, কলেজ শিক্ষক স্ত্রীর কোটি টাকার সম্পদ
Published: 27th, April 2025 GMT
ঢাকার অভিজাত একটি আবাসিক এলাকায় প্লট কিনেছেন। কিনেছেন ফ্ল্যাট। শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেছেন চার কোটি টাকা। এফডিআর (স্থায়ী আমানত) রয়েছে সোয়া কোটি টাকার। দুদক বলছে, তাঁর স্ত্রীর নামেও রয়েছে কোটি টাকার সম্পদ। বিপুল এই সম্পদ করা হয়েছে ঘুষের টাকায়।
তিনি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) জ্যেষ্ঠ প্রকৌশলী মো.
রাশেদুল ও অপর্ণার ব্যাংক হিসাবে অস্বাভাবিক লেনদেন নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) একটি প্রতিবেদন ধরে অনুসন্ধান করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অনুসন্ধানে প্লট ও ফ্ল্যাট কেনা, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগসহ ২২ কোটি ৮০ লাখ ৫৭ হাজার ৭০৭ টাকার অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। অনুসন্ধান শেষে এই দম্পতির বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ করেছেন দুদকের সহকারী কমিশনার মো. সাজিদ-উর-রোমান।
এই দুর্নীতির সঙ্গে ঠিকাদার, রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও তাঁর (রাশেদুল) প্রতিষ্ঠানের অনেকেই জড়িত। দুদককে এ বিষয়ে বিস্তারিত অনুসন্ধান করতে হবে। জড়িত সবাইকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।ইফতেখারুজ্জামান, নির্বাহী পরিচালক, টিআইবিদুদকের সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, ২০১৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সময়ে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন প্রকৌশলী রাশেদুল। গত বছরের মে মাসে ছুটি নিয়ে বিদেশে পড়তে গেছেন। এখন পরিবার নিয়ে নিউজিল্যান্ডে আছেন।
দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়, রাশেদুলের নামে তিনটি ব্যাংক হিসাব ও তিনটি এফডিআর হিসাবের তথ্য পাওয়া গেছে। এর বাইরে সোনালী ব্যাংকের হিসাবে তাঁর বেতনের টাকা জমা হয়। বাকি ব্যাংক হিসাবগুলোতে তিনি ঘুষের টাকা লেনদেন করেছেন।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাশেদুলের নামে শেল্টেক্ ব্রোকারেজ লিমিটেডে একটি বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাব রয়েছে। এই বিও হিসাবের মাধ্যমে রাশেদুলের নামে থাকা একটি বেসরকারি ব্যাংকের হিসাব থেকে ২০১৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন কোম্পানির ৩ কোটি ৯৯ লাখ ৬১ হাজার টাকার শেয়ার কেনা হয়েছে।
দুদকের তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, অনুসন্ধানকালে রাশেদুল ও অপর্ণার নামে ব্যাংক হিসাবে থাকা সব টাকা অবরুদ্ধ এবং আবাসিক এলাকার প্লট ও রাশেদুলের নিজ এলাকা কুমিল্লার হোমনায় থাকা একটি জমি জব্দ করা হয়েছে।
রাশেদুল ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শেষে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন বলেন, আইন অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাশেদুলের নামে শেল্টেক্ ব্রোকারেজ লিমিটেডে একটি বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাব রয়েছে। এই বিও হিসাবের মাধ্যমে রাশেদুলের নামে থাকা একটি বেসরকারি ব্যাংকের হিসাব থেকে ২০১৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন কোম্পানির ৩ কোটি ৯৯ লাখ ৬১ হাজার টাকার শেয়ার কেনা হয়েছে।দেড় লাখ টাকার ঘড়িরাশেদুলের সর্বশেষ কর্মস্থল ছিল কিশোরগঞ্জ এলজিইডি। দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিনি বিলাসী জীবন কাটাতেন। দেড় লাখ টাকার ঘড়ি পরতেন। নিয়মিত যেতেন পাঁচ তারকা হোটেলে। অনুসন্ধানে এসব হোটেলে লাখ লাখ টাকা বিল দেওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। ঢাকার অভিজাত একটি বিপণিবিতান থেকে ২০১৮ সালে চারটি দামি ঘড়ি কেনার তথ্য পাওয়া গেছে।
দুদকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ থেকে ২০২৩-২৪ করবর্ষ পর্যন্ত রাশেদুল বেতন পেয়েছেন ৩২ লাখ ৩৫ হাজার ৬১৯ টাকা। সঞ্চয় দেখিয়েছেন ৮ লাখ টাকা। এ ছাড়া করমুক্ত আয় ১৪ লাখ ২৬ হাজার ৬১ টাকা, মায়ের কাছ থেকে উপহার ৪ লাখ টাকা, বাবা ও দাদির কাছ থেকে ৬ লাখ টাকার জমি পেয়েছেন, নিকটাত্মীয়র কাছ থেকে উপহার পেয়েছেন সাড়ে ৪ লাখ টাকার। পাশাপাশি জিপিএফ (সরকারি কর্মচারীদের সাধারণ ভবিষ্য তহবিল) সুদ ও অন্যান্য আয় ৩ লাখ ২৭ হাজার ১৩৮ টাকা এবং রেমিট্যান্স থেকে ৪ লাখ ৬৩ হাজার টাকা আয় দেখিয়েছেন রাশেদুল।
দুদকের তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, অনুসন্ধানকালে রাশেদুল ও অপর্ণার নামে ব্যাংক হিসাবে থাকা সব টাকা অবরুদ্ধ এবং আবাসিক এলাকার প্লট ও রাশেদুলের নিজ এলাকা কুমিল্লার হোমনায় থাকা একটি জমি জব্দ করা হয়েছে।স্ত্রীর নামে কোটি টাকার সম্পদরাশেদুলের স্ত্রী অপর্ণা কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল সরকারি কলেজের শিক্ষক। দুদক সূত্র বলছে, অপর্ণার নামে ৯১ লাখ ৯১ হাজার ৮৪২ টাকার সম্পদ রয়েছে। এর মধ্যে একটি বেসরকারি ব্যাংকে (কিশোরগঞ্জ শাখা) রয়েছে ৬০ লাখ ৪৩ হাজার ৯০৮ টাকা। নগদ রয়েছে ৩১ লাখ ৪৭ হাজার টাকা। এ ছাড়া তাঁর ১০ ভরি স্বর্ণালংকার রয়েছে।
দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়, অপর্ণা ২০১৭ সালে বিসিএসে (শিক্ষা ক্যাডার) উত্তীর্ণ হয়ে চাকরিতে যোগ দেন। চাকরিজীবনের শুরু থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১০ লাখ ৭৫ হাজার ২৫৬ টাকা সঞ্চয় করেছেন তিনি। বেতন-ভাতা পেয়েছেন ১৬ লাখ ১০ হাজার ৮১০ টাকা। আয়কর নথিতে করমুক্ত আয় হিসেবে দেখিয়েছেন ৬ লাখ ৭৩ হাজার ৮৬৮ টাকা।
অনুসন্ধানে দুদক অপর্ণার বৈধ আয় পেয়েছেন ৩৩ লাখ ৫৯ হাজার ৯৩৪ টাকা। এর বাইরে তাঁর নামে থাকা সব সম্পদই অবৈধ।
রাশেদুলের সর্বশেষ কর্মস্থল ছিল কিশোরগঞ্জ এলজিইডি। দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিনি বিলাসী জীবন কাটাতেন। দেড় লাখ টাকার ঘড়ি পরতেন। নিয়মিত যেতেন পাঁচ তারকা হোটেলে। অনুসন্ধানে এসব হোটেলে লাখ লাখ টাকা বিল দেওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।জড়িত সবার জবাবদিহি প্রয়োজনঅনুসন্ধানে দুদক রাশেদুল আলমের বিপুল অর্থসম্পদের বৈধ ও গ্রহণযোগ্য কোনো উৎস পায়নি। এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে রাশেদুলের সঙ্গে ফেসবুক মেসেঞ্জারে যোগাযোগ করা হয়। তবে তিনি সাড়া দেননি। পরে মেসেঞ্জারে বার্তা পাঠিয়েও জবাব পাওয়া যায়নি।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, রাশেদুল যে বিপুল অর্থের মালিক হয়েছেন, সেটা বৈধভাবে সম্ভব নয়। তিনি দুর্নীতির মাধ্যমেই এই বিপুল সম্পদ করেছেন।
গত ১৫ বছরে দুর্নীতি স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছিল উল্লেখ করে ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, এই দুর্নীতির সঙ্গে ঠিকাদার, রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও তাঁর প্রতিষ্ঠানের অনেকেই জড়িত। দুদককে এ বিষয়ে বিস্তারিত অনুসন্ধান করতে হবে। জড়িত সবাইকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক শ রগঞ জ অপর ণ র কর ছ ন অন য য় সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
২০২৬ আইপিএলের আগে নতুন হেড কোচ নিয়োগ দিল কেকেআর
আইপিএল ২০২৬ মৌসুমের আগে কলকাতা নাইট রাইডার্স (কেকেআর) নতুন হেড কোচ হিসেবে দায়িত্ব দিল অভিষেক নায়ারকে। গত মৌসুমে তিনি ছিলেন চন্দ্রকান্ত পান্ডিতের সহকারী কোচ। এবার সেই জায়গা থেকেই পদোন্নতি পেয়ে দলের দায়িত্বভার নিলেন তিনি। এর আগে এক বছরের বিরতিতে নায়ার কাজ করেছিলেন ভারতের জাতীয় দলের প্রধান কোচ গৌতম গম্ভীরের সহকারী হিসেবে।
সম্প্রতি নারী প্রিমিয়ার লিগের দল ইউপি ওয়ারিয়র্সও তাকে প্রধান কোচ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিল।
আরো পড়ুন:
শেষটায় কী অপেক্ষা করছে?
ফাইনালে যেতে ভারতকে ৩৩৯ রানের টার্গেট দিলো অস্ট্রেলিয়া
কেকেআরের সিইও ভেঙ্কি মাইসোর এক বিবৃতিতে বলেন, “২০১৮ সাল থেকে অভিষেক কেকেআর পরিবারের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। মাঠের ভেতরে ও বাইরে- দুই জায়গাতেই তিনি আমাদের খেলোয়াড়দের গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। খেলার সূক্ষ্ম বিষয়গুলো বোঝার ক্ষমতা আর খেলোয়াড়দের সঙ্গে গভীর সংযোগ; দুটোই তাকে আলাদা করে রেখেছে। আমরা অত্যন্ত আনন্দিত যে, এখন তিনি প্রধান কোচ হিসেবে কেকেআরকে নতুন অধ্যায়ে নেতৃত্ব দেবেন।”
৪২ বছর বয়সী অভিষেক নায়ার একসময় ছিলেন মুম্বাইয়ের অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার। ২০০৯ সালে ভারতের জার্সি গায়ে তিনটি ওয়ানডেও খেলেছেন তিনি। তবে খেলোয়াড়ি জীবনের চেয়ে কোচ হিসেবে তার সিভিটাই এখন অনেক সমৃদ্ধ।
২০১৮ সালে খেলোয়াড়ি জীবনের শেষ দিকে নায়ার কেকেআর একাডেমির প্রধান কোচ নিযুক্ত হন। ২০১৯ সালে অবসরের পর মূল দলের সহকারী কোচ হিসেবে যোগ দেন। পরে ২০২২ সালে ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে ত্রিনবাগো নাইট রাইডার্সের প্রধান কোচের দায়িত্বও পালন করেন।
কেকেআরে থাকাকালীন গৌতম গম্ভীরের সঙ্গে তার গড়ে ওঠে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। যখন গম্ভীর ভারতের জাতীয় দলের প্রধান কোচ হন, তখন নায়ারও তার সহকারী হিসেবে যোগ দেন। তবে দলের পারফরম্যান্স নিয়ে বিসিসিআইয়ের পর্যালোচনার পর এক বছরেরও কম সময়ে তার চুক্তি নবায়ন করা হয়নি। এরপর আইপিএল ২০২৫ মৌসুমের আগে তিনি ফের ফিরে আসেন কেকেআরে।
তিন মৌসুম পর কেকেআর ও চন্দ্রকান্ত পান্ডিতের পথ আলাদা হয়ে যায়। সেই সময়ের মধ্যে দলটি দশ বছর পর ২০২৪ সালে আইপিএল শিরোপা জিতেছিল। তবে ২০২৫ মৌসুমে হতাশাজনক পারফরম্যান্সে মাত্র পাঁচ জয়ে পয়েন্ট তালিকায় অষ্টম স্থানে থাকাটা শেষ পর্যন্ত পান্ডিতের বিদায়ের কারণ হয়। এরপর তিনি ফিরে যান নিজ রাজ্য মধ্যপ্রদেশে এবং সেখানে ক্রিকেট পরিচালকের দায়িত্ব নেন।
কেকেআরের সহায়ক দলেও বড় পরিবর্তন আসতে চলেছে। বোলিং পরামর্শক ভরৎ অরুণ ও স্পিন-বোলিং বিশেষজ্ঞ কার্ল ক্রো দুজনই চলে গেছেন লখনউ সুপার জায়ান্টসে। ফলে আগামী কয়েক মাসে তাদের বিকল্প খোঁজার কাজ শুরু হবে।
অর্থাৎ, নতুন করে সাজানো কেকেআর এখন নতুন কোচ অভিষেক নায়ারের হাত ধরে এগোতে প্রস্তুত। আইপিএল ২০২৬-এ আবারও পুরনো জৌলুস ফিরে পাওয়ার প্রত্যাশায়।
ঢাকা/আমিনুল