‘প‌তিত সরকা‌রের দোসর’ ট্যাগ দি‌য়ে ঢাকায় সুন্নী মহাসমা‌বেশ বানচালের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে দাবি করে আধিপত্যবাদ-বিরোধী মুসলিম ঐক্য মঞ্চের উদ্যোক্তারা বলেছেন, ব্যাপক অপপ্রচারের পরও রোহিঙ্গাসহ ফিলিস্তিন, ভারতের নিপীড়তি মুসলিম বিশ্বের পক্ষে সংহতি মহাসমাবেশ অত্যন্ত সফল ও সার্থক হয়েছে।

রবিবার (২৭ এপ্রিল) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ স‌ম্মেল‌নে এসে এসব তথ্য তুলে ধরেন ২৬ এপ্রিলের মহাসমাবেশের উদ্যোক্তরা।

তারা বলেছেন, মহাসমাবেশ বানচাাল কর‌তে চে‌য়ে‌ছিল স্বার্থা‌ন্বেষী এক‌টি মহল। প‌থে প‌থে বাধা, হুম‌কি, সামা‌জিক যো‌গা‌যোগ মাধ্যমে ব্যাপক অপপ্রচা‌রের পরও দে‌শের সুন্নী জনতা এই মহাসমা‌বেশে যোগ দি‌য়ে‌ছেন। 

সংবাদ স‌ম্মেল‌নে লি‌খিত বক্তব্য পাঠ করেন সৈয়দ মুহাম্মদ হাসান আল আযহারী। তিনি বলেন, “আমা‌দের ম‌ধ্যে সাবেক সরকারের কোনো দোসর নেই, সমাবেশে উপ‌স্থি‌তি‌ হওয়াদের ম‌ধ্যেও দোসর ছিলেন না।”

সাংবা‌দিক‌দের বি‌ভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সৈয়দ সাইফুল ইসলাম বারী, শফিক আল মোজাদ্দেদী, আব্দুল মুস্তফা রাহিম আযহারী, ইমরান হুসাইন তুষার ও সৈয়্যদ গোলাম আজহারী।

স্বাধীন ফিলিস্তিনের স্বীকৃ‌তি দা‌বি ক‌রে সংবাদ স‌ম্মেল‌নে হাসান আযহারী ব‌লেন, “গাজার মানুষের মুক্তি চাই। গাজায় চলমান গণহত্যার যথাযোগ্য বিচার চাই। আমরা ইন্ডিয়ায় মুসলমানদের নাগরিক অধিকার চাই। ইন্ডিয়ায় মুসলমানদের মাজার-দরগাহ-খানকাহয় মোদি সরকারের হামলার প্রতিবাদ করি। আমরা ভারতে অসাংবিধানিক ওয়াকফ বিল বাতিল চাই।”

“আমরা নিরাপদে রোহিঙ্গাদের নিজ বাসভূমিতে প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করার দাবি জানাই। আমরা জুলাইয়ে আন্দোলনে রোহিঙ্গা শহীদ নূর মোস্তফার সম্মানের সহিত রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি চাই। আমরা বাংলাদেশে শান্তিপ্রিয় মুসলমানদের মাজার-দরগায় হামলার তীব্র প্রতিবাদ জানাই ও এর যথাযথ প্রতিকার দাবি করছি,” যোগ করেন হাসান আযহারী।

বিগত ১৫ বছরের স্বৈরাচারী জুলুম নির্যাত‌নে শহীদ নুরুল ইসলাম ফারুকী, বিশ্বজিৎ দাশ, শহীদ আবরার ফাহাদ, আ্যডভোকেট আলিফ, জুলাই আন্দোলনের শহীদ আবু সাঈদ, মুগ্ধ, ওয়াসিম, ইয়ামিনসহ সব শহীদের রুহের মাগফিরাত কামনা ক‌রে এসব হত্যাকাণ্ডের যথাযোগ্য বিচার দা‌বি ক‌রা হয় সংবাদ সম্মেলনে। 

শনিবারের (২৬ এপ্রিল) সমবাশে নিয়ে হাসান আযহারী ব‌লেন, ‍‍“আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, ফিলিস্তিন, ইন্ডিয়া ও রোহিঙ্গাসহ নিপীড়িত মুসলিম বিশ্বের পক্ষে সংহতি সমাবেশ হয়েছে ‌আধিপত্যবাদবিরোধী মুসলিম ঐক্য মঞ্চের আয়োজনে।”

“বৃহত্তর ঐক্যের স্বার্থে সব ধরনের প্রোপাগান্ডা ও ষড়যন্ত্রকে নস্যাৎ করে দিয়ে আধিপত্যবাদ ও জুলুমের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান ও বাংলাদেশ পুনর্গঠনে আমাদের লড়াই অব্যাহত থাক‌বে," যোগ করেন তিনি।

সুন্নী‌দের ম‌ধ্যে কো‌নো বি‌ভেদ নাই দা‌বি ক‌রে সৈয়দ সাইফুল ইসলাম বারী ব‌লেন, ‍“সুন্নী কমিউনিটির অনেক দরবার, পীর মাশায়েখ, সংগঠন ও সংগঠক বৃহত্তর ঐক্যের স্বার্থে আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আধিপত্যবাদবিরোধী মুসলিম ঐক্য মঞ্চের ব্যানারে একত্রিত হয়ে সকল প্রকার জুলুমের বিরুদ্ধে মজলুমের পক্ষে একত্রিত হয়ে আমাদের আয়োজনকে বেগবান করতে আন্তরিক শ্রম দিয়েছেন- প্রত্যেকের কাছে আমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি। সুন্নী কমিউনিটি ২৬ এপ্রিল যুগান্তকারী ইতিহাস রচনা করেছে। ২৬ সবার। রেসালতের স্পৃহায় উদ্বেলিত প্রত্যেক আশিকে রাসুলের ২৬ এপ্রিল।"

আব্দুল মুস্তফা রাহিম আযহারী ব‌লেন, ‍“এই আয়োজনের পেছনে প্রশাসনিক অনুমতি, মাঠপর্যায়ের কাজ, অনলাইন প্রচার, উপস্থিত বাংলাদেশ পীর মাশায়েখ আলেম-ওলামা, সংগঠক এবং বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল, কলেজ, মাদরাসার অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, পেশাজীবী বিশেষত দরবারে সিরিকোট, শর্ষিণা, মাইজভান্ডার, গুরুছাড়, মির্জাখিল, শাহপুর, সোনাকান্দা, সিরাজনগর, ফুলতলী, ফান্দাউক, খাব্দুরা, এনায়েতপুর, অলিতলা, জৈনপুর, আটরশি, শম্ভুগঞ্জ, কুতুবিয়া মাতুআইল, কুতবদিয়া মালেক শাহ, দরবারে হাশেমীয়া, আল আমিন বারিয়া, মহুরীখোলা, মিরসরাই লতিফিয়া, মমতাজিয়া, মদিনার জামাত, কামাল্লা, কচুয়া দরবারসহ আপামর সুন্নী জনতার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানা‌চ্ছি।”

সময় স্বল্পতার দরুন প্রয়োজনীয় আয়োজনের ব্যবস্থা নিতে না পারায় উপস্থিত পীর-মাশায়েখ ও আলেম-ওলামাসহ সম্মানিত ব্যক্তিদের যথার্থ আতিথেয়তা ও সম্মান দেখা‌তে না পারায় সংবাদ সম্মেলনে দুঃখ প্রকাশ ক‌রে‌ন সমাবেশের অন্যতম উ‌দ্যোক্তা শফিক আল মোজাদ্দেদী ও ইমরান হুসাইন তুষার।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/রাসেল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আম দ র দরব র

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাচন বাতিলের সব ষড়যন্ত্র রুখে দেওয়ার আহ্বান সিপিবির

আগামী জাতীয় নির্বাচন ঘিরে ‘নির্বাচন বাতিল বা বিলম্বের ষড়যন্ত্র’ রুখে দিতে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। দলটি বলেছে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও শোষণমুক্ত সমাজ গড়তে হলে সাম্রাজ্যবাদ ও পুঁজিবাদবিরোধী আন্দোলনকে জোরদার করতে হবে।

শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর মিরপুরের ঈদগাহ মাঠসংলগ্ন সেনপাড়ায় সিপিবি ঢাকা মহানগর উত্তরের উদ্যোগে আয়োজিত জনসভায় এ আহ্বান জানানো হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন মহানগর উত্তরের সভাপতি হাসান হাফিজুর রহমান এবং সভা পরিচালনা করেন সংগঠনের এই শাখার সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ফেরদৌস আহমেদ।

সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিপিবির সভাপতি কাজী সাজ্জাদ জহির। আরও বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন, কেন্দ্রীয় সদস্য ও মহানগর উত্তরের সাবেক সভাপতি আহাম্মদ সাজেদুল হক, মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক লূনা নূর, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মোতালেব হোসেন ও মহানগর কমিটির সদস্য রিয়াজ উদ্দিন।

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে কাজী সাজ্জাদ জহির বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত চার মূলনীতি সমুন্নত রাখতে হবে। শোষণ ও বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে বেগবান করতে শ্রমিক, কৃষক, যুব ও নারী সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে নামতে হবে। বামপন্থীদের সরকার গঠন করতে সব দেশপ্রেমিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তাঁদের নেতৃত্বেই আগামী দিনের ক্ষমতায় লড়াইকে অগ্রসর করতে হবে।

সিপিবির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রুহিন হোসেন বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে যাদের অবস্থান ছিল, আজ তারাই রাষ্ট্র ও সমাজের বিভিন্ন স্তরে পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে কেবল ক্ষমতার পরিবর্তন নয়, ব্যবস্থার পরিবর্তনই সময়ের দাবি। কমিউনিস্টরা সেই ব্যবস্থার পরিবর্তনের সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা আহ্বান জানাই, গণতন্ত্রের প্রথম শর্ত হলো নিরপেক্ষ ও সময়োপযোগী নির্বাচন। আগামীকাল থেকেই আমরা জাতীয় নির্বাচনের কাউন্টডাউন (ক্ষণগণনা) দেখতে চাই।’

নির্বাচনের কাউন্টডাউন শুরু না হলে জনগণের মধ্যে অনিশ্চয়তা বাড়বে বলে উল্লেখ করেন রুহিন হোসেন। তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রের প্রথম শর্ত হলো নিরপেক্ষ ও সময়োপযোগী নির্বাচন। সরকারকে দ্রুত নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করতে হবে। কমিউনিস্টরা ক্ষমতায় গিয়ে দুর্নীতি, লুটপাট ও শোষণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা বদলের সংগ্রামকে জনগণের আন্দোলনে রূপ দেবে।’

সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ও তাদের দেশীয় দোসরদের হাতে দেশের সম্পদ লুট হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন সিপিবির ঢাকা মহানগর উত্তরের সাবেক সভাপতি আহাম্মদ সাজেদুল হক। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণ এখনো অনিশ্চিত যে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে কি না। কারণ, বর্তমান সরকার এখনো সুনির্দিষ্টভাবে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেনি। জনগণ আজ অর্থনৈতিক সংকট, বৈষম্য ও দুর্নীতির শিকার। একদিকে জনগণের ঘামঝরানো টাকায় দেশ চলছে, অন্যদিকে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ও তাদের দোসররা দেশের সম্পদ লুট করছে। সমুদ্রবন্দর, গ্যাস, বিদ্যুৎ, টেলিযোগাযোগসহ জাতীয় সম্পদ বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে। এটি দেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দ্রুত নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করুন: দুলু
  • অদৃশ্য শক্তি ও ফ্যাসিষ্টরা নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত খোরশেদ
  • নির্বাচন বাতিলের সব ষড়যন্ত্র রুখে দেওয়ার আহ্বান সিপিবির
  • বিদেশ যেতে কেন বাধা দেওয়া হল, প্রশ্ন মিলনের