তাওহীদ হৃদয়কে নিয়ে কতকিছু ঘটে গেলো বাংলাদেশ ক্রিকেটে। নিষিদ্ধ হওয়া, শাস্তি কমানো, আবার শাস্তি বহাল এরপর ক্রিকেটারদের আন্দোলনে আবার শাস্তি পরের বছর নেওয়া।

এবার এক দুটি নয় ঢাকা লিগে চার ম্যাচ নিষিদ্ধ হচ্ছেন তাওহীদ হৃদয়। রোববার (২৭ এপ্রিল) বিকেলে এক বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। সঙ্গে এও জানায় যে, অবিলম্বে কার্যকর হবে হৃদয়ের এই শাস্তি।

গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের বিপক্ষে গতকাল মিরপুরে আউট হওয়ার পর আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত না মেনে প্রতিক্রিয়া দেখানোয় তার নামের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ১ ডিমেরিট পয়েন্ট। সব মিলিয়ে ৮ ডিমেরিট পয়েন্ট হওয়ায় চার ম্যাচ নিষিদ্ধ হচ্ছেন হৃদয়।

আরো পড়ুন:

ইমরানউজ্জামাানের সেঞ্চুরিতে অগ্রণীর বড় জয়

শ্বাসরুদ্ধকর লড়াইয়ে শিরোপার লড়াইয়ে টিকে থাকল মোহামেডান

গাজীর বিপক্ষে ব্যাট হাতে এতটা সুবিধা করতে পারেননি। ৫৪ বলে ৩৭ রান করেন। শেষ পর্যন্ত ম্যাচটি জেতে মোহামেডান। আগের সিদ্ধান্ত বহাল থাকলে হৃদয়কে আজ মাঠের বাইরে থাকতে হতো। কিন্তু গতকাল তামিম ইকবালের নেতৃত্বে ক্রিকেটাররা বিসিবিতে গিয়ে চাপ দিলে সেই শাস্তি পরের বছরে কার্যকরের সিদ্ধান্ত নেয় বিসিবি।

হৃদয়ের চার ম্যাচ নিষেধাজ্ঞার প্রথমটি হবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ২৯ এপ্রিল আবাহনীর বিপক্ষে শিরোপা নির্ধারনী ম্যাচে তাকে পাবে সাদাকালো শিবিরটি। এর আগে আম্পায়ারের সঙ্গে মাঠে অসাদাচরণ তারপর মাঠের বাইরে গিয়ে মুখ খোলার হুমকি দিয়ে দুই ম্যাচ নিষিদ্ধ হয়েছিলেন। সেটিও চাপ দিয়ে কমায় মোহামেডান। এরপরই দেশের ক্রিকেটে দেখা যায় নয়া সংকট।

ঢাকা/রিয়াদ/আমিনুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

আজও আছে পরতে পরতে সৌন্দর্য

কারুকার্যখচিত বিশাল ভবন। দেয়ালের পরতে পরতে মনোহর সৌন্দর্য। মনোরম পরিবেশে ভবনের চারপাশে দাঁড়িয়ে সুন্দরী পরীর আবক্ষ মূর্তি। ছবির মতো সাজানো ‘পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি’ এখন কালের সাক্ষী।

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া থেকে ১২ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে টাঙ্গাইলের নাগরপুরের কলমাই নদীতীরে ১৫ একর জমিতে জমিদারবাড়িটি। ঢুকতেই চোখে পড়ে পুরোনো মন্দির। লোকমুখে প্রচলিত, শরতের দিনে দেবী দুর্গার প্রতিমা তৈরিতে এখানে ব্যস্ত থাকতেন ভারতবর্ষের নামকরা কারিগররা। কালের বিবর্তনে স্থানটি এখন নির্জন। নেই আগের গৌরব-আভিজাত্যের ছাপ, এমনকি প্রতিমা তৈরির ব্যস্ততাও।

মন্দির ঘুরে দেখা যায়, এর কোথাও কোথাও ইট খসে পড়েছে। পুরোনো দিনের নকশা হারাচ্ছে তার সৌন্দর্য। মন্দিরের পেছনে বিশাল তিনটি মহল, যা সেকালে তিন তরফ নামে পরিচিত ছিল। মহলগুলোর আলাদা কোনো নাম পাওয়া যায়নি। সবচেয়ে বড় মহলে বর্তমান পাকুটিয়া বিসিআরজি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ পরিচালিত হচ্ছে।

দোতলা ভবনের নির্মাণশৈলী মুগ্ধ করবে সবাইকে। যদিও সংস্কারের অভাবে ভবনটিতে ফাটল দেখা দিয়েছে। পাশেই অপূর্ব লতাপাতার কারুকার্যখচিত বিশাল আরেকটি ভবন, যার মাথায় ময়ূরের মূর্তি। এ ছাড়া কিছু নারী মূর্তিরও দেখা মেলে। জমিদার আমলের টিনের চৌচালা ঘরে অস্থায়ীভাবে সরকারি তহশিল অফিস স্থানান্তর হলেও, সেটি এখন স্থায়িত্ব পেয়েছে।

লতাপতায় আচ্ছন্ন ভবনের একাংশ বর্তমানে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং আরেকাংশে একটি বেসরকারি দাতব্য সেবা সংস্থা কার্যক্রম চালাচ্ছে। ভবনটির পিলারের মাথায় এবং দেয়ালেও অসাধারণ নকশা মুগ্ধ করে।

দোতল আরেকটি মহল, যার সামনে বিশাল শান বাঁধানো সিঁড়ি। অন্য সব ভবনের সঙ্গে এটির নকশার যথেষ্ট মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ভবনটির বারান্দা ও পুরোনো কাঠের দরজা সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলেছে কয়েক গুণ। ভবনটির মাথায় ময়ূরের সঙ্গে দুই পাশে দুই নারী মূর্তির দেখা মেলে। সিঁড়ি বেয়ে ছাদে গেলে গাছগাছালির সবুজে ঘেরা পুরো জমিদারবাড়ির সৌন্দর্য বিমোহিত করতে বাধ্য। যদিও ভবনের ভিন্ন অংশ খসে পড়ছে, হারাচ্ছে রূপ-লাবণ্য।

জমিদারবাড়ির পেছনে রয়েছে দীঘি ও দুটি পরিত্যক্ত কূপ। এ ছাড়া জমিদারবাড়ির বিশাল মাঠের এক কোণে নাটমন্দির। জানা যায়, নাগরপুরের সঙ্গে কলকাতার একটি বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা থেকে আসেন ধনাঢ্য ব্যক্তি রামকৃষ্ণ সাহা মণ্ডল। তিনিই ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে ব্রিটিশদের কাছ থেকে বিপুল অর্থের বিনিময়ে জমি কিনে জমিদারি শুরু করেন।

রামকৃষ্ণ সাহার দুই ছেলে বৃন্দাবন ও রাধাগোবিন্দ। রাধা নিঃসন্তান। তবে বৃন্দাবনের তিন ছেলে– ব্রজেন্দ্র মোহন, উপেন্দ্র মোহন ও যোগেন্দ্র মোহন দীর্ঘকাল রাজত্ব করেন। এভাবে পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি তিন ভাইয়ের তরফে বিভক্ত থাকলেও, জমিদাররা সবাই ছিলেন প্রজানন্দিত। বৃন্দাবনের মেজ ছেলে উপেন্দ্রকে কাকা রাধাগোবিন্দ দত্তক নেন। ফলে উপেন্দ্র কাকার জমিদারির পুরো সম্পত্তি লাভ করেন।

দৃষ্টিনন্দন পাকুটিয়া জমিদারবাড়িতে প্রতিনিয়ত পর্যটকের ভিড় বাড়ছে। ইতিহাসের সাক্ষী বাড়িটি সংস্কার না হওয়ায় একদিকে যেমন সৌন্দর্য হারাচ্ছে, অন্যদিকে তরুণ প্রজন্মের কাছে অজানা থেকে যাচ্ছে ইতিহাস। জমিদারবাড়িটি পুরাকীর্তি হিসেবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে নিয়ে সংস্কার ও সংরক্ষণের দাবি জোরালো হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ