তরুণ প্রজন্ম নেটিজেন দুনিয়ায় ডুবে আছে। নিজের অজান্তেই প্রবেশ করছে চটকদার ডিজিটাল অ্যাডের ফাঁদে। হারিয়ে যাচ্ছে ডিভাইসের নিয়ন্ত্রণ। ভুলের কারণে বেহাত হয়ে পড়ছে আর্থিক থেকে ব্যক্তিতথ্য। কিছুটা সতর্ক হলে এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব এমন বিপদ। নিজের ডিভাইস নিয়ন্ত্রণে রয়েছে কিছু কৌশল। লিখেছেন সাব্বিন হাসান
সারাবিশ্বে ছড়াচ্ছে স্ক্যামের শঙ্কা। সব ধরনের সোশ্যাল মিডিয়া যার টার্গেট। ডিজিটাল প্রতারণার জালে ফাঁদ পাতার অবিরাম প্রচেষ্টা যেন চলছেই। বিশ্বের জায়ান্ট সব প্রযুক্তি গবেষক যা নিয়ে প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছেন।
সারাবিশ্বে ডিজিটাল জগতে বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপন বা ডি-অ্যাডের স্ক্যাম রুখতে নতুন উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছে যুক্তরাস্ট্রের প্রযুক্তি জায়ান্ট গুগল।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইতোমধ্যে ২৪ কোটি ৭০ লাখ বিজ্ঞাপন সরানো হয়েছে। অন্যদিকে, ২৯ লাখ বিজ্ঞাপনদাতার অ্যাকাউন্ট বাজেয়াপ্ত (সাসপেন্ড) করা হয়েছে।
২০২৪ সালে উল্লিখিত সংখ্যক বিজ্ঞাপন সরানো হয়েছে বলে অবহিত করা হয়। কিছুদিন আগে ‘অ্যানুয়াল অ্যাড সেফটি রিপোর্ট ফর-২০২৪’ প্রকাশ করেছে গুগল। রিপোর্টে এমন তথ্য জানা যায়। বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে স্ক্যাম ঠেকাতেই এমন পদক্ষেপ। ২০২৪ সালে বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে সাধারণ নির্বাচন হয়েছে। নির্বাচনী অখণ্ডতা রক্ষার জন্য বিশেষ নজরদারি করে গুগল।
নির্বাচন থাকলে ওই বছর সে-সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন দেওয়ার হিড়িক পড়ে গুগল পরিচালিত সবকটি প্ল্যাটফর্মে।
এবারে নির্বাচনবিষয়ক বিজ্ঞাপনদাতাদের ভেরিফাই করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ৮ হাজার ৯০০ নির্বাচনী বিজ্ঞাপনদাতার ভেরিফাইয়ের কথা জানায় কর্তৃপক্ষ। বিজ্ঞাপনদাতার থেকে সরাসরি আসেনি– কোটিরও বেশি এমন বিজ্ঞাপন সরিয়ে নেওয়া হয়। এমনকি গুগলই প্রথম সংস্থা, যারা এআই জেনারেটেড পলিটিক্যাল কনটেন্টের লেবেলিং করার উদ্যোগ নিয়েছে। প্রকাশিত (গুগল) রিপোর্টে বলা হয়, ডিজিটাল বিজ্ঞাপনের আবহে দ্রুত পরিবর্তন দৃশ্যমান। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিকাশে সেই প্রেক্ষাপট দ্রুত বদলাচ্ছে। বিপরীতে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রতারণার জাল ছড়ানোর চেষ্টাও অব্যাহত। এমনটা রুখতেই বিশেষ নজরদারি করছে কর্তৃপক্ষ। বিশেষ কর্মদক্ষতার স্ক্যাম চিহ্নিত করতে অ্যাডভান্সড এআই টুলের সহায়তা নিয়েছে গুগল।
২০২৪ সালে স্ক্যাম অ্যাড শনাক্ত করার কৌশলগত পদ্ধতি আরও মানোন্নত করেছে গুগল সংস্থা। গত বছর সারাবিশ্বে ৫১০ কোটি বিজ্ঞাপন সরানো তারই ধারাবাহিকতার অংশ।
তরুণ প্রজন্ম নেটিজেন দুনিয়ায় ডুবে আছে। নিজের অজান্তেই প্রবেশ করছে চটকদার ডিজিটাল অ্যাডের ফাঁদে। হারিয়ে যাচ্ছে ডিভাইসের নিয়ন্ত্রণ। ভুলের কারণে বেহাত হয়ে পড়ছে আর্থিক থেকে ব্যক্তিতথ্য। কিছুটা সতর্ক হলে এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব এমন বিপদ। নিজের ডিভাইস নিয়ন্ত্রণে রয়েছে কিছু কৌশল।
কী করবেন
দিন-রাত ফোনে নানা ধরনের বিজ্ঞাপন আসা নিয়ে বিরক্তি যেন পিছু ছাড়ে না। অধিকাংশ বিজ্ঞাপনী বার্তা অপ্রয়োজনীয় আর অযৌক্তিক। অনেকেই এমন মেসেজের হাত থেকে পরিত্রাণ চান। কিন্তু বন্ধের কৌশল ঠিকঠাক জানেন না বলে অসহায়ের মতো এর অত্যাচার সহ্য করে যেতে হয়। জেনে নিন, কীভাবে বিপদ আর বিরক্তি থেকে রেহাই পেতে পারবেন।
সাধারণত নতুন পণ্য আর অফারের প্রমোশনাল এসএমএস পাঠানো হয় ছদ্মবেশে, যাকে বলে বাল্ক এসএমএস। অর্থাৎ টেলিফোন অপারেটর প্রোভাইডরকে টাকা দিয়ে মোবাইল গ্রাহকের কাছে নিজের পণ্যের প্রচার করা। অনেক ক্ষেত্রে গ্রাহক এ ধরনের এসএমএস বন্ধ করতে পারেন না। চাইলে পদ্ধতি জেনে তা বন্ধ করে নিতে পারেন।
স্মার্ট ডিভাইসের ক্ষেত্রে প্রথমে স্মার্টফোনের সেটিংস অপশনে যেতে হবে। সেখানে গিয়ে খুঁজতে হবে গুগল অপশনকে। খুঁজে পেলে শুরুতেই থাকা ‘অ্যাডস’ অপশনে যেতে হবে। ক্লিক করলে ‘অ্যাডস পার্সোনালাইজড’ নামে অপশন দৃশ্যমান হবে, যা অন করতে হবে। সেখানে ‘ইয়োর অ্যাডভার্টাইজিং আইডি’ নামে অপশনটি রিসেট করলে অ্যাডভার্টাইজিং আইডি পরিবর্তন হয়ে যাবে। অনেকাংশে বিরক্তিকর বিজ্ঞাপন দৃশ্যমান হওয়া থেকে মুক্তি পেয়ে যাবেন।
ব্রাউজার
আবার ফোনের ব্রাউজার থেকে এমন বিরক্তিকর বিজ্ঞাপন বন্ধ করা যায়। প্রথমে ফোনের ‘ক্রোম’ ব্রাউজারে গিয়ে ‘মাই অ্যাক্টিভিটি’ নামে অপশনে প্রবেশ করে ওয়েলকাম টু মাই অ্যাক্টিভিটিতে যেতে হবে। সাইটের বাঁ পাশে ওপরে থ্রি স্কেলের দাগে ক্লিক করতে হবে।
সেখান থেকে যেতে হবে ‘অ্যাক্টিভিটি কন্ট্রোল’ নামের অপশনে। আবার অ্যাডস অপশনে গিয়ে ‘অ্যাডস পার্সোনালাইজেশন ইজ অন’ থাকলে তা বন্ধ (অফ) করে দিতে হবে। ওপরে ডান পাশে থ্রি ডটের মেন্যু থেকে যেতে হবে সেটিংস অপশনে। সেখানে নিচের অংশে ‘সাইট সেটিংস’ নামে অপশন দৃশ্যমান হবে।
তারপর দৃশ্যমান কুকিজ অপশনে গিয়ে ‘ব্লক থার্ড পার্টি কুকিজ’ অন করে দিলেই প্রাথমিকভাবে যন্ত্রদায়ক অ্যাড আসা অনেকাংশে বন্ধ হয়ে যাবে। অযাচিত বিজ্ঞাপন থেকে মিলবে স্বস্তি। প্রতারণা চক্রের উৎপাতও কমবে বহুলাংশে। নিরাপদ হবে নিজের ডিজিটাল কর্মযজ্ঞের ক্যানভাস। কেননা সতর্ক থাকাই নিরাপত্তার প্রথম শর্ত।
কিছুদিন ধরে ইউটিউবে বিজ্ঞাপন ছাড়া কনটেন্ট উপভোগ করা যেন কঠিন হয়ে পড়েছে। স্মার্ট ডিভাইসে ইউটিউব অ্যাড থেকেই স্ক্যাম ছড়ানোর বেশ কিছু অভিযোগ পৌঁছেছে গুগল দপ্তরে। সুতরাং যে কোনো বিজ্ঞাপন এলে তা থেকে সতর্ক হয়ে প্রবেশ বা এড়িয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প রব শ এমন ব সতর ক প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
১০০ কোটি টাকার পাচারের অভিযোগ, জাহাঙ্গীরের নামে মামলা
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দপ্তরের সাবেক পিয়ন জাহাঙ্গীর আলম ওরফে পানি জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) নোয়াখালীর চাটখিল থানায় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে এই মামলা করেছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট।
আরো পড়ুন:
নাফিসা কামালসহ ৮ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের মামলা
সাজিদ হত্যার তদন্তে সিআইডিকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমোদন
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান জানান, প্রাথমিক অনুসন্ধানে উল্লেখযোগ্য প্রমাণ পাওয়ায় নোয়াখালীর চাটখিল থানায় জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার এক নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান জাহাঙ্গীর আলম জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন। পরে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর তিনি অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে স্বল্প সময়ের জন্য ‘ব্যক্তিগত সহকারী’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই দায়িত্বই তাকে আর্থিকভাবে লাভবান করেছে মর্মে প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।
জসীম উদ্দিন খান জানান, ২০১০ সালে জাহাঙ্গীর ‘স্কাই রি অ্যারেঞ্জ লিমিটেড’ নামে একটি কোম্পানি গঠন করে বিকাশের ডিস্ট্রিবিউশন ব্যবসা নেন। কিন্তু এর আড়ালে তিনি অসংখ্য সন্দেহজনক ব্যাংকিং কার্যক্রম করেন। কোম্পানির নামে একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অস্বাভাবিক অঙ্কের টাকা জমা হয়, যার বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি ও ব্যবসার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।
সিআইডির এই কর্মকর্তা জানান, প্রতিষ্ঠানটির অ্যাকাউন্টগুলোতে ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বিভিন্ন ব্যাংকে মোট ৫৬৫ কোটিরও বেশি টাকা লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ নগদে জমা হয়েছে দেশের নানা স্থান থেকে। এসব অর্থের উৎস অজানা এবং হুন্ডি ও মানিলন্ডারিং কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত বলে প্রাথমিক প্রমাণ মেলে।
বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দীন জানান, জাহাঙ্গীর আলম তার স্ত্রী কামরুন নাহার ও ভাই মনির হোসেনের সহায়তায় দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ অর্থ লেনদেন করতেন। জাহাঙ্গীর আলম ও তার স্ত্রী ২০২৪ সালের জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান এবং বর্তমানে ভার্জিনিয়ায় অবস্থান করছেন। বিদেশে তাদের বিনিয়োগ বা সম্পদ ক্রয়ের কোনো সরকারি অনুমোদন না পাওয়া গেলেও তারা যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রমাণ মেলে।
অনুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে, জাহাঙ্গীর আলম, তার স্ত্রী কামরুন নাহার, ভাই মনির হোসেন এবং প্রতিষ্ঠান স্কাই রি অ্যারেঞ্জ লিমিটেড যৌথভাবে ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে প্রায় ১০০ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। অপরাধের পূর্ণাঙ্গ তথ্য উদঘাটন, অপরাপর সদস্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করার স্বার্থে সিআইডির তদন্ত ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
ঢাকা/মাকসুদ/সাইফ