Samakal:
2025-06-16@04:04:29 GMT

ডিভাইসে আসক্তি কেন!

Published: 27th, April 2025 GMT

ডিভাইসে আসক্তি কেন!

আজকাল কমবেশি প্রায় সবাই সোশ্যাল মিডিয়ায় আসক্ত। দিন-রাত সোশ্যাল মিডিয়ায় সব সময়ে যাদের আনাগোনা, তাদের মধ্যে মূলত মনস্তাত্ত্বিক সমস্যাকে বলে ফোমো, অর্থাৎ ফিয়ার অব মিসিং আউট। সব সময়ই কিছু হারানোর ভয় কাজ করে। পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা। এমন সমস্যা কাটাতে মোবাইল ডিটক্স জরুরি। সহজ ভাষায় বললে, স্মার্ট ডিভাইস থেকে নিয়ম করে বিরত থাকার অভ্যাস। গবেষকরা বলছেন, যার চর্চা এখন থেকে না করলে ভবিষ্যতে বিপদ কিন্তু অনেক। সময় নিয়ে স্মার্ট ডিভাইস বা সোশ্যাল মিডিয়ায় আসক্তি থেকে বেরিয়ে কীভাবে সুস্থ আর স্বাভাবিক থাকা যায়, তা জানা প্রয়োজন। অ্যাপের বিপরীতে অ্যাপ থেকেই পাওয়া যাবে মুক্তির পথ।
অনেকের সঙ্গে আলোচনায় সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘটে যাওয়া কোনো কিছু অজানা থাকলে উদ্বেগ বেড়ে যায়। ইতোমধ্যে অনেকেই এমন পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে স্মার্ট ডিভাইস থেকে সোশ্যাল মিডিয়ার সব অ্যাপ ডিলিট করেন প্রথম পদক্ষেপে। কিন্তু আদতে তাতে তেমন কোনো সুফল দৃশ্যমান হয় না। নিজে কতটা আসক্তির মধ্যে আছেন, প্রথমে তা জানা জরুরি। অ্যাপ থেকে নিজেকে দিনের কতটা সময় সরিয়ে রাখলে কী পরিমাণ উদ্বেগ বাড়ছে, সেটি আগে অনুধাবন করতে হবে। ডিটক্স প্রক্রিয়ার সবার আগে জরুরি কতক্ষণ নিজে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিচরণ করছেন, তা অনুমান করা। পরিমাপের জন্য অ্যাপল ও  গুগলে রয়েছে বেশ কিছু সুবিধা। আইফোনের সেটিংস অপশনে পাবেন ‘স্ক্রিন টাইম’ সুবিধা। ওই অংশে গিয়ে সহজেই দেখা যায় ডিভাইসে কতটা সময় রয়েছে। প্রয়োজনে অপশন থেকে লিমিট নির্ধারণ করে দেওয়া যায়। নির্ধারিত সময় পার হলেই অ্যালার্ট করবে আইফোন। ফলে নিয়ন্ত্রিত হবে স্ক্রিন টাইম।
অন্যদিকে, বেশ কিছু অ্যান্ড্রয়েড ফোনের সেটিংসে গুগলের ডিজিটাল ওয়েলবিং টুল অপশন রয়েছে। ওই অংশে ফোন ও অ্যাপে গতিবিধি পরিমাপ করে নেওয়া যায়। আবার কিছু অ্যাপ রয়েছে, যা ডিটক্স করতে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে। আইফোন গ্রাহকরা ডাম্ব ফোন অ্যাপের সুবিধা নিতে পারেন। বিশেষ অ্যাপটি ফোনের হোম স্ক্রিনকে এতটাই বিরক্ত করে যেন ডিভাইসে হাত দিতেই ইচ্ছা করবে না।
দারুণ অ্যাপ ওপাল। অ্যাপটি মূলত স্ক্রিন টাইম প্রদর্শন করে। নিয়ম করে দেখায়, কতক্ষণ স্ক্রিন টাইম থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারলেন। আর তাতে আয়ু কতটা বাড়ল। ডিজিটাল জগৎ থেকে চোখের ও ব্রেইনের বিরতির অভ্যাস গড়ে তোলা প্রয়োজন বলে মনে করেন মনোবিজ্ঞানীরা। ডিটক্স থেকে ফরেস্ট অ্যাপ বেশ জনপ্রিয়। অ্যাপটি গেমের মডেল মেনে চলে। প্রথমেই গাছের বীজ লাগাতে বলা হয়। সেই বীজটি লাগানোর পর যতক্ষণ ফোন থেকে দূরে থাকবেন, গাছটা ততই বড় হবে। সময় না মানলেই চোখের সামনে দেখবেন, গাছটা শুকিয়ে মারা যাচ্ছে। আর যদি গাছ বড় করতে পারেন, ভার্চুয়াল পয়েন্টের মালিক হবেন। গাছ বড় করতে পারলে ফরেস্ট অ্যাপ থেকে বিশ্বের কোথাও না কোথাও গাছ লাগানো হয়। অ্যাপটি একদিকে যেমন ডিটক্স করে, অন্যদিকে তা প্রকৃতিবান্ধব অনুভূতি দেয়। দিন-রাতে কিছুটা সময় নির্ধারণ করে স্মার্টফোন থেকে দূরে থাকার চর্চা করতে হবে। বিকল্প হিসেবে আর যোগাযোগ রক্ষার প্রয়োজনে বেসিক ফোন বা বাটন ফোনের ব্যবহার ফিরে যেতে পারেন। মাঝেমধ্যে এমন চর্চার পরামর্শ দিয়েছেন ডিটক্স বিশেষজ্ঞরা। কীভাবে নিজেকে ডিটক্স করতে পারবেন, সে চর্চার ধরন বা অভ্যাস জানা প্রয়োজন। নিজেকে মানসিক অস্থিরতা থেকে রেহাই দিতে আর প্রশান্তির প্রয়োজনে ডিটক্স চর্চার বিকল্প নেই।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ড টক স আসক ত

এছাড়াও পড়ুন:

ডলার ও বিদেশিদের ব্যাংক হিসাবে আমানত এক বছরে বেড়ে দ্বিগুণ

হঠাৎ করে দেশে অবস্থানকারী বিদেশিরা বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংকে অর্থ জমার পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছেন। আবার বাংলাদেশিরাও দেশের ব্যাংকগুলোতে আগের চেয়ে বেশি বিদেশি মুদ্রা জমা রাখছেন। এতে ব্যাংকগুলোতে বিদেশি মুদ্রার যে হিসাব আছে, সেটিও বাড়ছে অন্যান্য আমানত হিসাবের চেয়ে বেশি। গত এক বছরে দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে বিদেশি মুদ্রায় রক্ষিত আমানত বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। যদিও বিদেশি মুদ্রার বাইরে দেশীয় মুদ্রার আমানত হিসাবে এক বছরে আমানত বেড়েছে ১ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। সম্প্রতি প্রকাশিত ব্যাংকগুলোর আর্থিক তথ্য নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ত্রৈমাসিক এক প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, মূলত ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে এসব হিসাবে অর্থ জমা বেশি বেড়েছে। এর ফলে ঘরে রাখা ডলার ও অন্যান্য বিদেশি মুদ্রা আবার ব্যাংকে ফিরতে শুরু করেছে। এটা শুরু হয়েছে আবাসিক বৈদেশিক মুদ্রা আমানত বা রেসিডেন্ট ফরেন কারেন্সি ডিপোজিট (আরএফসিডি) হিসাব ও বৈদেশিক মুদ্রার হিসাবের ওপর সুদসহ বাড়তি সুবিধা দেওয়ার কারণে।

আমানত কতটা বাড়ল

দেশের ব্যাংকগুলোতে নানা ধরনের আমানত পণ্য রয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে দেশি ও বিদেশিদের জন্য পৃথক আমানত পণ্য। বিদেশি মুদ্রার জন্য রয়েছে পৃথক আমানত পণ্য। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে অবস্থান করা বিদেশিদের জমা অর্থের পরিমাণ এক বছরে বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। বিদেশিরা সাধারণত বিদেশি মুদ্রাকে টাকায় রূপান্তর করে এই ধরনের হিসাব পরিচালনা করেন, ব্যাংকের ভাষায় এসব হিসাবকে কনভার্টেবল টাকা অ্যাকাউন্ট অব ফরেনার্স বা বিদেশিদের জন্য টাকায় রূপান্তরযোগ্য হিসাব বলা হয়। ২০২৪ সালের মার্চে এই ধরনের হিসাবে জমা ছিল ১ হাজার ৮০৪ কোটি টাকা, গত মার্চ শেষে তা বেড়ে হয়েছে ৩ হাজার ৮৫৯ কোটি টাকা।

একইভাবে বৈদেশিক মুদ্রার হিসাবেও (এফসিএ) জমা অর্থের পরিমাণ বেড়েছে। গত বছরের মার্চে এই ধরনের হিসাবে জমা ছিল ৬ হাজার ৫৪ কোটি টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা। গত ডিসেম্বর শেষে তা বেড়ে হয়েছে ১৪ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার সমপরিমাণ। আমদানি-রপ্তানির কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোই সাধারণ এফসিএ হিসাব খুলে থাকে। প্রবাসী বাংলাদেশিরাও এ ধরনের হিসাব খুলতে পারেন।

এ ছাড়া শুধু প্রবাসীদের জন্য আলাদা আমানত হিসাবও রয়েছে, তাতে স্থিতি খুব বেশি বাড়েনি। গত বছরের মার্চে প্রবাসীদের আমানত হিসাবে স্থিতির পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৪৭৭ কোটি টাকা, যা গত মার্চে বেড়ে হয়েছে ৪ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকা।

অন্যদিকে বিদেশ সফর শেষে দেশে ফেরত আসা বাংলাদেশিদের বৈদেশিক মুদ্রার হিসাবে (আরএফসিডি) আমানতও বেড়েছে। গত বছরের মার্চে এই ধরনের হিসাবে আমানত ছিল ২৬ হাজার ১৩০ কোটি টাকা, যা গত মার্চে বেড়ে হয়েছে ৩৩ হাজার ২৭৩ কোটি টাকা।

তবে সার্বিকভাবে ব্যাংক খাতে আমানত সেভাবে বাড়েনি। ২০২৪ সালের মার্চে পুরো খাতে আমানত ছিল ১৭ লাখ ৬২ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা, যা গত মার্চে বেড়ে হয় ১৯ লাখ ২৩ হাজার ৫০৪ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংক খাতে আমানত বেড়েছে ১ শতাংশের কিছু বেশি।

কেন বাড়ছে ডলার ও বিদেশিদের জমা অর্থ

দেশে ডলার–সংকট দেখা দেওয়ায় ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে মানুষের ঘরে থাকা ডলার ব্যাংকে ফেরাতে আবাসিক বৈদেশিক মুদ্রা আমানত বা রেসিডেন্ট ফরেন কারেন্সি ডিপোজিট (আরএফসিডি) হিসাবের ওপর সুদসহ বাড়তি সুবিধা দেওয়ার সুযোগ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপরই দি সিটিসহ কিছু ব্যাংক বাড়তি উদ্যোগ নিয়ে এই ধরনের হিসাব খুলতে শুরু করে। বর্তমানে নগদ ডলারের বড় অংশ মজুত আছে ইস্টার্ন, দি সিটি, ব্র্যাক, ডাচ্-বাংলা, প্রাইম, পূবালী, বহুজাতিক স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ও এইচএসবিসি এবং দেশীয় মালিকানাধীন ইসলামীসহ আরও কয়েকটি ব্যাংকে। মার্কিন ডলারের পাশাপাশি পাউন্ড, ইউরো, অস্ট্রেলিয়ান ডলার, কানাডিয়ান ডলার, সিঙ্গাপুরি ডলারেও আরএফসিডি হিসাব খোলা যায়।

সুদ বৃদ্ধিসহ ব্যাংকগুলোর নানা উদ্যোগের ফলে ঘরে থাকা ডলার ও অন্যান্য বিদেশি মুদ্রা আবার ব্যাংকে ফিরতে শুরু করেছে। কারণ, ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের এসব হিসাবে জমা বিদেশি মুদ্রার ওপর সুদ দিচ্ছে। পাশাপাশি এই ধরনের হিসাবের ডলার কোনো বাছবিচার ছাড়াই দেশে ও বিদেশে গিয়ে খরচ করা যাচ্ছে। প্রতিবার বিদেশ ভ্রমণের সময় এই হিসাব থেকে নগদ ৫ হাজার মার্কিন ডলার নেওয়া যায়। হিসাবধারী এবং তার ওপর নির্ভরশীলদেরও প্রয়োজনে বিদেশে কয়েকটি খাতে অর্থ খরচের সুযোগ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ভ্রমণ, সন্তানের শিক্ষা এবং চিকিৎসা খাতে খরচ। এসব খাতে খরচের কোনো সীমা রাখেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। আগে শুধু হিসাবধারীরা নিজ প্রয়োজনে বিদেশে অর্থ নেওয়া ও খরচের সুবিধা পেতেন।

এদিকে ব্যবহারযোগ্য সব ধরনের বৈদেশিক মুদ্রায় হিসাব খোলার সুযোগ রয়েছে প্রবাসীদের জন্য। সেই সঙ্গে প্রবাসীদের নামে খোলা বৈদেশিক হিসাবের সুদের হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে সুদের হার নির্ধারিত হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, এত দিন শুধু অনুমোদিত চারটি বৈদেশিক মুদ্রায় প্রবাসীদের হিসাব খোলার সুযোগ ছিল। সেগুলো হলো ডলার, পাউন্ড, ইউরো ও ইয়েন। কিন্তু এখন অনুমোদিত মুদ্রার পাশাপাশি ব্যবহারযোগ্য সব বৈদেশিক মুদ্রায় হিসাব খুলতে পারছেন প্রবাসীরা।

এ ছাড়া যেসব বিদেশি বাংলাদেশে কর্মরত ও বসবাস করছেন, তাঁদের যে টাকার হিসাব রয়েছে, তাতেও আমানত বেড়েছে। এ ধরনের হিসাবে গত সেপ্টেম্বরে আমানত বেশ কমে যায়, তবে ডিসেম্বরে আবার তা বেড়ে যায়। আর গত মার্চ শেষে তা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগস্টে বড় পরিবর্তনের পর দেশের পরিস্থিতি এখন আগের চেয়ে কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। আবার অন্তর্বর্তী সরকারের নানা পদক্ষেপে বিদেশিরা সহায়তা দিচ্ছেন। ফলে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বাড়ছে ও এই ধরনের হিসাবে জমা অর্থের পরিমাণ বাড়ছে।

এ বিষয়ে বেসরকারি মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ব্যাংক হিসাবে ডলার জমা রাখলে এখন সুদ পাওয়া যায়, এ ছাড়া রয়েছে নানা সুবিধা। যাঁরা নিয়মিত বিদেশ ভ্রমণ করেন, তাঁরাও এখন নিজ নিজ হিসাবে ডলার জমা রাখছেন। এতে মুদ্রার মান কমলেও কোনো ক্ষতি হয় না। এ ছাড়া চীনের বিনিয়োগকারীরা দেশে আসছেন। এই কারণে বিদেশিদের হিসাবে জমা অর্থের পরিমাণ বাড়তে পারে। এটা অর্থনীতির জন্য ভালো খবর। কারণ, অন্য আমানতে যখন এত প্রবৃদ্ধি হচ্ছে না, তখন ডলার হিসাবে জমা অর্থের পরিমাণ বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ