Samakal:
2025-07-31@07:27:54 GMT

আজও আছে পরতে পরতে সৌন্দর্য

Published: 1st, May 2025 GMT

আজও আছে পরতে পরতে সৌন্দর্য

কারুকার্যখচিত বিশাল ভবন। দেয়ালের পরতে পরতে মনোহর সৌন্দর্য। মনোরম পরিবেশে ভবনের চারপাশে দাঁড়িয়ে সুন্দরী পরীর আবক্ষ মূর্তি। ছবির মতো সাজানো ‘পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি’ এখন কালের সাক্ষী।

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া থেকে ১২ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে টাঙ্গাইলের নাগরপুরের কলমাই নদীতীরে ১৫ একর জমিতে জমিদারবাড়িটি। ঢুকতেই চোখে পড়ে পুরোনো মন্দির। লোকমুখে প্রচলিত, শরতের দিনে দেবী দুর্গার প্রতিমা তৈরিতে এখানে ব্যস্ত থাকতেন ভারতবর্ষের নামকরা কারিগররা। কালের বিবর্তনে স্থানটি এখন নির্জন। নেই আগের গৌরব-আভিজাত্যের ছাপ, এমনকি প্রতিমা তৈরির ব্যস্ততাও।

মন্দির ঘুরে দেখা যায়, এর কোথাও কোথাও ইট খসে পড়েছে। পুরোনো দিনের নকশা হারাচ্ছে তার সৌন্দর্য। মন্দিরের পেছনে বিশাল তিনটি মহল, যা সেকালে তিন তরফ নামে পরিচিত ছিল। মহলগুলোর আলাদা কোনো নাম পাওয়া যায়নি। সবচেয়ে বড় মহলে বর্তমান পাকুটিয়া বিসিআরজি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ পরিচালিত হচ্ছে।

দোতলা ভবনের নির্মাণশৈলী মুগ্ধ করবে সবাইকে। যদিও সংস্কারের অভাবে ভবনটিতে ফাটল দেখা দিয়েছে। পাশেই অপূর্ব লতাপাতার কারুকার্যখচিত বিশাল আরেকটি ভবন, যার মাথায় ময়ূরের মূর্তি। এ ছাড়া কিছু নারী মূর্তিরও দেখা মেলে। জমিদার আমলের টিনের চৌচালা ঘরে অস্থায়ীভাবে সরকারি তহশিল অফিস স্থানান্তর হলেও, সেটি এখন স্থায়িত্ব পেয়েছে।

লতাপতায় আচ্ছন্ন ভবনের একাংশ বর্তমানে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং আরেকাংশে একটি বেসরকারি দাতব্য সেবা সংস্থা কার্যক্রম চালাচ্ছে। ভবনটির পিলারের মাথায় এবং দেয়ালেও অসাধারণ নকশা মুগ্ধ করে।

দোতল আরেকটি মহল, যার সামনে বিশাল শান বাঁধানো সিঁড়ি। অন্য সব ভবনের সঙ্গে এটির নকশার যথেষ্ট মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ভবনটির বারান্দা ও পুরোনো কাঠের দরজা সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলেছে কয়েক গুণ। ভবনটির মাথায় ময়ূরের সঙ্গে দুই পাশে দুই নারী মূর্তির দেখা মেলে। সিঁড়ি বেয়ে ছাদে গেলে গাছগাছালির সবুজে ঘেরা পুরো জমিদারবাড়ির সৌন্দর্য বিমোহিত করতে বাধ্য। যদিও ভবনের ভিন্ন অংশ খসে পড়ছে, হারাচ্ছে রূপ-লাবণ্য।

জমিদারবাড়ির পেছনে রয়েছে দীঘি ও দুটি পরিত্যক্ত কূপ। এ ছাড়া জমিদারবাড়ির বিশাল মাঠের এক কোণে নাটমন্দির। জানা যায়, নাগরপুরের সঙ্গে কলকাতার একটি বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা থেকে আসেন ধনাঢ্য ব্যক্তি রামকৃষ্ণ সাহা মণ্ডল। তিনিই ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে ব্রিটিশদের কাছ থেকে বিপুল অর্থের বিনিময়ে জমি কিনে জমিদারি শুরু করেন।

রামকৃষ্ণ সাহার দুই ছেলে বৃন্দাবন ও রাধাগোবিন্দ। রাধা নিঃসন্তান। তবে বৃন্দাবনের তিন ছেলে– ব্রজেন্দ্র মোহন, উপেন্দ্র মোহন ও যোগেন্দ্র মোহন দীর্ঘকাল রাজত্ব করেন। এভাবে পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি তিন ভাইয়ের তরফে বিভক্ত থাকলেও, জমিদাররা সবাই ছিলেন প্রজানন্দিত। বৃন্দাবনের মেজ ছেলে উপেন্দ্রকে কাকা রাধাগোবিন্দ দত্তক নেন। ফলে উপেন্দ্র কাকার জমিদারির পুরো সম্পত্তি লাভ করেন।

দৃষ্টিনন্দন পাকুটিয়া জমিদারবাড়িতে প্রতিনিয়ত পর্যটকের ভিড় বাড়ছে। ইতিহাসের সাক্ষী বাড়িটি সংস্কার না হওয়ায় একদিকে যেমন সৌন্দর্য হারাচ্ছে, অন্যদিকে তরুণ প্রজন্মের কাছে অজানা থেকে যাচ্ছে ইতিহাস। জমিদারবাড়িটি পুরাকীর্তি হিসেবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে নিয়ে সংস্কার ও সংরক্ষণের দাবি জোরালো হচ্ছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ম ন কগঞ জ স ন দর য মন দ র ভবন র

এছাড়াও পড়ুন:

মাইলস্টোনে বিমানবাহিনীর চিকিৎসা ক্যাম্প, সেবা নিতে আসছেন অনেকে

রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে অস্থায়ী চিকিৎসা ক্যাম্প স্থাপন করেছে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী। এই ক্যাম্পে চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শ নিচ্ছেন অনেকে। তাদের বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের আত্মীয়-স্বজন।

বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অস্থায়ী এই চিকিৎসা ক্যাম্প আজ সোমবার শুরু হয়েছে। চলবে এক সপ্তাহ। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত এখান থেকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হবে।

সকাল সোয়া ১০টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির প্রবেশমুখে অস্থায়ী চিকিৎসা ক্যাম্পের সাইনবোর্ড টানানো হয়েছে। লোকজন ভেতরে যাচ্ছেন। কেউ এসেছেন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে, কেউবা যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের জায়গাটি দেখতে এসেছেন।

ক্যাম্পাসের ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, প্রশাসনিক ভবনে চলছে চিকিৎসা ক্যাম্পের কার্যক্রম। ভবনটির বারান্দায় মানুষের ভিড়। চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে যাওয়া ব্যক্তিদের নাম বারান্দায় বসে নিবন্ধন করছেন বিমানবাহিনীর একজন সদস্য। নিবন্ধন শেষে লোকজন বারান্দায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন। ভবনটির কয়েকটি কক্ষে বিমানবাহিনীর চিকিৎসকেরা সেবা নিতে যাওয়া ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলছেন, পরামর্শ দিচ্ছেন।

আরও পড়ুনস্কুলে বিমান দুর্ঘটনা থেকে যে শিক্ষা নেওয়া দরকার২৭ জুলাই ২০২৫

নাম নিবন্ধন করে ১০৮ নম্বর কক্ষের সামনে অপেক্ষা করছিলেন মাইলস্টোন স্কুলের ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী আহমেদ আল ফাতাহ। সে জানায়, যে ভবনে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়, সেটির দোতলায় ছিল তার শ্রেণিকক্ষ। স্কুল ছুটি হওয়ায় যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের কয়েক মিনিট আগে সে শ্রেণিকক্ষ থেকে বেরিয়ে ক্যানটিনে চলে গিয়েছিল। যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় বন্ধু শামীমকে হারিয়েছে সে।

নানার সঙ্গে বিদ্যালয়ে আসা এই শিক্ষার্থী বলে, ‘রাতে ঘুমানোর সময় ভয় পাই। দুঃস্বপ্ন দেখি। বন্ধু শামীমকে স্বপ্নে দেখি।’

অভিভাবকের সঙ্গে চিকিৎসাসেবা নিতে এসেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী নুহান হোসেন। শিশুটির কানে ব্যথা। তার কান ফুলে আছে। হাত ও মুখে পোড়া দাগ।

ক্যাম্পে চিকিৎসকেরা নুহানকে দেখে কিছু পরামর্শ ও ওষুধপত্র দিয়েছেন। প্রয়োজনে তাকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) পাঠানো হবে বলে জানান তাঁরা।

আরও পড়ুনউত্তরায় বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় দগ্ধ আরেক শিশুর মৃত্যু৪ ঘণ্টা আগে

চিকিৎসা ক্যাম্পে সেবা দিচ্ছেন বিমানবাহিনীর স্কোয়াড্রন লিডার চিকিৎসক শিহাব আলী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মাইলস্টোনের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী আর শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা ঘটনার দিন উপস্থিত ছিলেন, তাদের অনেকেই আসছেন। ঘটনার পর থেকে রাতে ঘুম হচ্ছে না—এমন লোকজন আসছেন। আগুনে সামান্য দগ্ধ হওয়া কয়েকজন শিক্ষার্থী এসেছে। অনেকে ড্রেসিং করাচ্ছেন, অনেকে ওষুধ নিচ্ছেন। এ ছাড়া যাদের অনেক বেশি মানসিক সমস্যা পাওয়া যাবে, তাদের সিএমএইচে পাঠানো হবে। তবে এ পর্যন্ত কাউকে পাঠানো হয়নি।

যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের জায়গা দেখতে ভিড় করেছেন অনেকে। রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে। ২৮ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দশমিনায় ভবন নির্মাণের ছয় মাসের মধ্যে খসে পড়ছে পলেস্তারা
  • চট্টগ্রামের রেলওয়ের ‘হাতির বাংলো’ নিয়ে কেন এত মাতামাতি
  • মাইলস্টোনে বিমানবাহিনীর চিকিৎসা ক্যাম্প, সেবা নিতে আসছেন অনেকে