গাজীপুরে ডিবি পরিচয়ে ৯৮ লাখ টাকা লুট, গ্রেপ্তার ৪
Published: 2nd, May 2025 GMT
গাজীপুরে গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ পরিচয়ে একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ৯৮ লাখ টাকা লুটের ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। উদ্ধার করা হয়েছে প্রায় ২৫ লাখ টাকা। লুটের পুরো টাকা দুর্বৃত্তরা ১০ ভাগে নিয়ে যায়। শুক্রবার পিবিআইয়ের গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গত ১৪ এপ্রিল মহানগরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকার আউটপাড়া রিয়াজ টাওয়ারের ষষ্ঠ তলায় অবস্থিত মাল্টিপয়েন্ট বিডিতে এ ঘটনা ঘটে। সেদিনই মাল্টিপয়েন্ট বিডির ব্যবস্থাপক শাহ মোহাম্মদ এনামুল হক বাদী হয়ে বাসন থানায় মামলা করেন। তাঁর প্রতিষ্ঠান মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান নগদের পরিবেশক।
মামলার এজাহার ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ১৪ এপ্রিল সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে ওই প্রতিষ্ঠানে ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে তিন-চারজন ব্যক্তি ঢুকে পড়ে। তারা অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মীদের মারধর শুরু করে। পরে প্রতিষ্ঠানের ভল্ট থেকে ৯৮ লাখ ১৮ হাজার টাকা লুট করে পালিয়ে যায়।
মামলার পর পুলিশের পাশাপাশি ঘটনা তদন্তে মাঠে নামে পিবিআই। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় সংস্থাটি ২৩ এপ্রিল ঢাকার ফকিরাপুল কাঁচাবাজার থেকে গ্রেপ্তার করে ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী আব্দুর রহমান রাজনকে। সে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ থানাধীন গোবিন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা।
পিবিআই জানায়, গাজীপুরের বাসন থানার সরকার বাড়ি মোড়ের প্রিয়াংকা ভিলায় ভাড়ায় থাকত রাজন। গ্রেপ্তারের পর তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সোমবার লুটের টাকা থেকে ২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। একই সঙ্গে গ্রেপ্তার করা হয় তার সহযোগী রবিউল ইসলামকে।
পিবিআইয়ের গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ বলেন, আদালতে পাঠানো হলে তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। এর ভিত্তিতে বুধবার রাতে ভোলার দুলারহাট থানার শিকদারের চর কিল্লার মাঠ এলাকা থেকে ঘটনায় জড়িত দুই ভাই উজ্জ্বল হোসেন ও মিরাজ হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ২২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা।
পিবিআই জানায়, রাজনের সঙ্গে দুই মাস আগে পরিচয় হয় রবিউলের। দু’জন রিয়াজ টাওয়ারের ওই প্রতিষ্ঠানে ডাকাতির পরিকল্পনা করে। এতে যুক্ত করা হয় মিরাজ ও উজ্জ্বলকে। এক পর্যায়ে উজ্জ্বলকে ডিবি কর্মকর্তা সাজিয়ে ১৪ এপ্রিল ওই প্রতিষ্ঠানে ঢুকে পড়ে ছয় যুবক। বাইরে পাহারায় ছিল আরও চারজন। ভেতরে যাওয়া যুবকরা জিম্মি করে ফেলে সব কর্মকর্তাকে। পরে তাদের মারধর করে ভল্ট থেকে ৯৮ লাখ টাকা নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। এরপর ওই টাকা ১০ ভাগ করা হয়।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ল টপ ট গ র প ত র কর ৯৮ ল খ প ব আই
এছাড়াও পড়ুন:
দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম, এখানে সাম্প্রদায়িকতার জায়গা নেই: জেড আই খান পান্না
মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেছেন, এই দেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই।
আজ শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট বারের হলরুমে ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার সংকট ও আইনি প্রতিকার পাওয়ার পথ’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জেড আই খান পান্না। সেমিনারটির আয়োজন করে আন্তর্জাতিক সংস্থা হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনোরিটিস (এইচআরসিবিএম), বাংলাদেশ চ্যাপ্টার।
বক্তব্যে জেড আই খান পান্না বলেন, ‘এখানে সংখ্যালঘুর কথা বলা হচ্ছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখন আমি সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু। আজ মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা দেখি, জুতা দিয়ে বাড়ি দিতে দেখি, কিন্তু কিছু করতে পারি না। তাই আমি সবচেয়ে বড় অসহায়।’
এসব কথা বলতে বলতে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না কেঁদে ফেলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, জীবনে কখনো জেনে-বুঝে অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। যাঁরা মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেন, তাঁদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।
জেড আই খান পান্না আরও বলেন, ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, কারও সঙ্গে এর তুলনা চলে না। এটা সাম্প্রদায়িকতার দেশ না। সংবিধানে যেন কেউ হাত না দেয়। সরকারের অনেকেই বিদেশি হয়েও স্বদেশি ভাব দেখাচ্ছেন।
সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার যেন নিঃশেষ হয়ে গেছে। সমাজে ন্যায়বিচার বা সুবিচার পাওয়ার কথা থাকলেও তা মিলছে না। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিচার হয় না। কেউ কেউ ধরা পড়লেও পরে বেরিয়ে যায়।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুমন কুমার রায় বলেন, সব সরকারের আমলেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত। বর্তমান নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। সংস্কার কমিশনে সংখ্যালঘুদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় হামলা হলেও সরকারের কোনো প্রতিক্রিয়া আসে না, এমনকি দুঃখও প্রকাশ করে না।
গত বছরের ৫ আগস্টের পর সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের প্রেক্ষিতে প্রতিবাদ শুরু হলে তা দমন করতেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে উল্লেখ করে সুমন কুমার দাবি করেন, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সনাতনী সম্প্রদায়ের বাক্স্বাধীনতা বন্ধ করতে, নেতৃত্ব দমন করতে এসব করা হচ্ছে।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জে কে পাল। সঞ্চালনায় ছিলেন এইচআরসিবিএমের বাংলাদেশ চ্যাপটারের আহ্বায়ক লাকি বাছাড়। সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরশেদ ও মো. গোলাম মোস্তফা।