গাজীপুরে গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ পরিচয়ে একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ৯৮ লাখ টাকা লুটের ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। উদ্ধার করা হয়েছে প্রায় ২৫ লাখ টাকা। লুটের পুরো টাকা দুর্বৃত্তরা ১০ ভাগে নিয়ে যায়। শুক্রবার পিবিআইয়ের গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

গত ১৪ এপ্রিল মহানগরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকার আউটপাড়া রিয়াজ টাওয়ারের ষষ্ঠ তলায় অবস্থিত মাল্টিপয়েন্ট বিডিতে এ ঘটনা ঘটে। সেদিনই মাল্টিপয়েন্ট বিডির ব্যবস্থাপক শাহ মোহাম্মদ এনামুল হক বাদী হয়ে বাসন থানায় মামলা করেন। তাঁর প্রতিষ্ঠান মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান নগদের পরিবেশক।

মামলার এজাহার ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ১৪ এপ্রিল সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে ওই প্রতিষ্ঠানে ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে তিন-চারজন ব্যক্তি ঢুকে পড়ে। তারা অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মীদের মারধর শুরু করে। পরে প্রতিষ্ঠানের ভল্ট থেকে ৯৮ লাখ ১৮ হাজার টাকা লুট করে পালিয়ে যায়।

মামলার পর পুলিশের পাশাপাশি ঘটনা তদন্তে মাঠে নামে পিবিআই। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় সংস্থাটি ২৩ এপ্রিল ঢাকার ফকিরাপুল কাঁচাবাজার থেকে গ্রেপ্তার করে ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী আব্দুর রহমান রাজনকে। সে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ থানাধীন গোবিন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা।

পিবিআই জানায়, গাজীপুরের বাসন থানার সরকার বাড়ি মোড়ের প্রিয়াংকা ভিলায় ভাড়ায় থাকত রাজন। গ্রেপ্তারের পর তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সোমবার লুটের টাকা থেকে ২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। একই সঙ্গে গ্রেপ্তার করা হয় তার সহযোগী রবিউল ইসলামকে। 

পিবিআইয়ের গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ বলেন, আদালতে পাঠানো হলে তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। এর ভিত্তিতে বুধবার রাতে ভোলার দুলারহাট থানার শিকদারের চর কিল্লার মাঠ এলাকা থেকে ঘটনায় জড়িত দুই ভাই উজ্জ্বল হোসেন ও মিরাজ হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ২২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা।

পিবিআই জানায়, রাজনের সঙ্গে দুই মাস আগে পরিচয় হয় রবিউলের। দু’জন রিয়াজ টাওয়ারের ওই প্রতিষ্ঠানে ডাকাতির পরিকল্পনা করে। এতে যুক্ত করা হয় মিরাজ ও উজ্জ্বলকে। এক পর্যায়ে উজ্জ্বলকে ডিবি কর্মকর্তা সাজিয়ে ১৪ এপ্রিল ওই প্রতিষ্ঠানে ঢুকে পড়ে ছয় যুবক। বাইরে পাহারায় ছিল আরও চারজন। ভেতরে যাওয়া যুবকরা জিম্মি করে ফেলে সব কর্মকর্তাকে। পরে তাদের মারধর করে ভল্ট থেকে ৯৮ লাখ টাকা নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। এরপর ওই টাকা ১০ ভাগ করা হয়।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ল টপ ট গ র প ত র কর ৯৮ ল খ প ব আই

এছাড়াও পড়ুন:

অস্ট্রেলিয়ায় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের ভোট শুরু, আলোচনায় জীবনযাত্রার ব্যয় ইস্যু

অস্ট্রেলিয়ার নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। এ নির্বাচনের মাধ্যমে একজন নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করতে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাচ্ছেন এক কোটি ৮০ লাখ ভোটার। এ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ এর বামপন্থী অস্ট্রেলিয়ান লেবার পার্টি পুনরায় জয়ের চেষ্টা করছে। আর তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হলেন পিটার ডাটনের নেতৃত্বাধীন কনজারভেটিভ লিবারেল-ন্যাশনাল কোয়ালিশন।

নির্বাচনে বড় ইস্যু: এবারের নির্বাচনে বড় ইস্যু হয়ে উঠেছে জীবনযাত্রার ব্যয়। এছাড়া স্বাস্থ্যসেবা ও আবাসন ব্যয় নিয়েও ভোটারদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা গেছে। নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক ফল আসতে কয়েক দিন, এমনকি সপ্তাহও লেগে যেতে পারে। তবে ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পরপরই দেশটির ইলেকটোরাল কমিশন অনানুষ্ঠানিক প্রাথমিক ফল ঘোষণা শুরু করবে। মূলত এই প্রাথমিক ফল থেকেই ধারণা পাওয়া যাবে যে কে দেশটির পরবর্তী সরকার গঠন করবেন।

নির্বাচনে শুধু অস্ট্রেলিয়াতেই ভোটগ্রহণ হচ্ছে না, বরং বিদেশে থাকা দেশটির ভোটাররা যেন ভোট দিতে পারেন, সেজন্য ৮৩টি দেশে ১১১টি কেন্দ্রের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে দেশটির পররাষ্ট্র দফতর জানিয়েছে। এর মধ্যে বার্লিন, হংকং, লন্ডন ও নিউইয়র্কে বিপুল সংখ্যক অস্ট্রেলিয়ানের বসবাস রয়েছে।

দেশটির ভোটারদের জন্য ভোট দেয়ার কিছু বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ১৮ বছর বয়সী সবার জন্য ভোট দেয়া বাধ্যতামূলক। কেউ ভোট দিতে ব্যর্থ হলে তাকে ১৩ ডলার জরিমানা গুনতে হবে। প্রতিনিধি পরিষদের ১৫০টি আসনের সবকটিতেই এবং সিনেটের ৭৬টির মধ্যে ৪০টি আসনে আজ নির্বাচন হচ্ছে।

দেশটিতে প্রধান রাজনৈতিক দল দুটি: অস্ট্রেলিয়ান লেবার পার্টি এবং রক্ষণশীল লিবারেল-ন্যাশনাল কোয়ালিশন। কোনও দলের সরকার গঠনের জন্য প্রতিনিধি পরিষদের অন্তত ৭৬টি আসন পেতে হবে। সেটি সম্ভব না হলে দলগুলো বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থী বা ছোট দলগুলোর সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা করতে পারে।

দেশটিতে কয়েক দশক ধরেই রাজ্য ও ফেডারেল সরকার নির্বাচনে ছোট দলগুলো ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ভোট ক্রমাগত বাড়ছে। ২০২২ সালের নির্বাচনে প্রতি তিনজন ভোটারের একজন দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের বাইরে অন্যদের ভোট দিয়েছিলেন। লেবার, দ্যা লিবারেল, দ্যা ন্যাশনালস এবং দ্যা গ্রিন মোটামুটি আলোচনায় থাকে। যদিও আসলে ১২টি দল সিনেটে আর আটটি দল প্রতিনিধি পরিষদে প্রতিনিধিত্ব করে থাকে।

সিনেটর পলিন হানসন ১৯৯৭ সালে ডানপন্থী হিসেবে পরিচিত ওয়ান ন্যাশন পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন। হানসন প্রায়ই নানা বিতর্কের কেন্দ্রে থাকেন। তিনি সিনেটে বুরকা পড়ে ব্যাপক আলোচনায় এসেছিলেন। তার দলের নীতিগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানো এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা। দ্য ন্যাশনালসের সাবেক সদস্য বব কাট্টের প্রায় ৫০ বছর ধরে এমপি এবং তিনি তার বক্তৃতার স্টাইলের জন্য পরিচিত। ২০১৭ সালে সমলিঙ্গের বিয়ের বিষয়ে গণভোটের সময়ে তিনি এর তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন।

বিলিওনিয়ার ক্লাইভ পালমারের দলের নাম ছিলো ইউনাইটেড অস্ট্রেলিয়া পার্টি। গত নির্বাচনে প্রায় ৭৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করেও মাত্র একটি আসন পেয়েছিলেন সিনেটে। এবার পালমার ট্রাম্পেট অফ প্যাটরিওটস পার্টিকে সমর্থন দিচ্ছেন। এছাড়া সেন্ট্রাল এলায়েন্স দলের একমাত্র এমপি হলেন রেবেকা শারকি। ইতোমধ্যেই তিনি কোয়ালিশন নেতা পিটার ডাটনের সাথে যোগসূত্র রাখবেন বলে জানিয়েছেন।

স্বাস্থ্য সেবা ইস্যু
বিবিসির টিফানি টার্নবুল দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া থেকে লিখেছেন, অস্ট্রেলিয়ায় আধুনিক স্বাস্থ্য সেবা পদ্ধতির সূচনা হয়েছে প্রায় চার দশক আগে। সেখানে মেডিকেয়ার নামে একটি জনবীমা প্রকল্প চালু আছে। এর আওতায় উন্নত মানের স্বাস্থ্য সেবা নাগরিকদের জন্য মৌলিক অধিকার হিসেবে বিবেচিত। কিন্তু বিষয়টি প্রায়ই জাতীয় ইস্যুতে পরিণত হয়। কারণ প্রয়োজনের সময় অনেককেই এই সেবা পেতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বলতে গেলে সর্বজনীন এই স্বাস্থ্যসেবা পদ্ধতি অনেকটাই খুঁড়িয়ে হাঁটছে। সরকার যে অর্থ বরাদ্দ দিচ্ছে তা যথেষ্ট হচ্ছে না। জেনারেল প্রাকটিশনারসহ স্বাস্থ্যকর্মীর সংকট দেখা যাচ্ছে। সেবাপ্রার্থীদের জন্য অপেক্ষার সময় ক্রমশ দীর্ঘতর হচ্ছে। রোগীদের খরচও দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। দেশটিতে অনেকেই বিবিসিকে বলেছেন, সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।

অভিবাসন আলোচনায় কেন
অস্ট্রেলিয়ার জনগোষ্ঠীর তৃতীয় বৃহত্তম অংশেরই জন্ম দেশটির বাইরে। দীর্ঘদিন ধরেই দেশটির পরিচিত 'মাইগ্রেশন ন্যাশন' হিসেবে, যেখানে অভিবাসীরা নতুন করে জীবন শুরু করতে পারেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে অভিবাসীদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে। এর মূল কারণ হলো বাসস্থান খরচ বাড়ছে। পিটার ডাটন বলেছেন তিনি অভিবাসীরা যেন সহজেই ভোট দিতে পারেন সেজন্য ফাস্ট ট্রাক সিটিজেনশিপ চালু করবেন। গত বছর প্রধানমন্ত্রী আলবানিজের সরকার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী সীমিত করার উদ্যোগ নিলেও শেষ পর্যন্ত প্রস্তাবটি পাশ হয়নি।

অস্ট্রেলিয়ার নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। এ নির্বাচনের মাধ্যমে একজন নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করতে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাচ্ছেন এক কোটি ৮০ লাখ ভোটার। এ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ এর বামপন্থী অস্ট্রেলিয়ান লেবার পার্টি পুনরায় জয়ের চেষ্টা করছে। আর তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হলেন পিটার ডাটনের নেতৃত্বাধীন কনজারভেটিভ লিবারেল-ন্যাশনাল কোয়ালিশন।

 

সম্পর্কিত নিবন্ধ