Samakal:
2025-06-17@14:31:34 GMT

কিন ব্রিজের বাতাস

Published: 2nd, May 2025 GMT

কিন ব্রিজের বাতাস

হার্ডিঞ্জ ব্রিজ, কাউনিয়ার তিস্তা নদীতে ব্রিজ (যা একাত্তরে কিছুটা ধ্বংস হয়েছিল), ভুরুঙ্গামারীতে ভোলাহাট স্থলবন্দরের কাছে (অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকা) ব্রিজ দেখেছি। তবে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা হিসেবে আলোচনায় থাকলেও কিন ব্রিজও যে ঐতিহ্যে স্থান করে নিয়ে আছে, তা দেখে জানলাম। যদিও এ সম্পর্কে হয়তো পত্রিকায় কিংবা সাধারণ জ্ঞান বইয়ে পড়েছি; তবে তা হৃদয়ঙ্গমে ততটা ছিল না। যা ছিল পড়ার জন্য পড়া। আবার ব্রিজটি সিলেট শহরের প্রবেশদ্বারে না হলে ভ্রমণে গিয়ে অত গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হতো না। ২০২৩ সালের ১২ আগস্ট সকালে বাস থেকে নেমে প্রথমে শাহজালাল (রহ.

)-এর মাজারে যেতে হেঁটে এ সেতু পার হচ্ছিলাম (ঝিরিঝিরি বৃষ্টিও পড়ছিল সে সময়, যা সিলেটের বৈশিষ্ট্য)। তখন মনে হলো, এত বড় লোহার ব্রিজ! আবছায়া আবছায়া ভাবে মনে পড়ছিল পত্রিকায়, বইয়ে এ ব্রিজ সম্পর্কে পড়ার কথা।
যাহোক আজকের এ ঐতিহ্যবাহী ব্রিজটি স্থাপনের মধ্য দিয়ে সিলেট শহরের সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ সৃষ্টি হয় অখণ্ড ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের। ব্রিজ নির্মাণের ইতিহাসে জানা যায়, আসাম প্রদেশের (তখন সিলেট আসাম প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত ছিল) গভর্নর মাইকেল কিন সিলেট সফরে আসার জন্য সুরমা নদীতে ব্রিজ স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। তখন অবশ্য সামের সঙ্গে সিলেটের যোগাযোগের মাধ্যম ছিল ট্রেন। ফলে, রেলওয়ে বিভাগ ১৯৩৩ সালে সুরমা নদীর ওপর ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ নেয় এবং নির্মাণ শেষে ১৯৩৬ সালে ব্রিজটি আনুষ্ঠানিকভাবে খুলে দেওয়া হয়। ১ হাজার ১৫০ ফুট দীর্ঘ ও ১৮ ফুট প্রশস্ত এ ব্রিজটি গভর্নর মাইকেল কিন-এর নামেই নামকরণ হয়– কিন ব্রিজ। জানা যায়, আব্দুল মজিদ কাপ্তান মিয়া, তৎকালীন আসাম সরকারের এক্সিকিউটিভ সদস্য রায় বাহাদুর প্রমোদ চন্দ্র দত্ত এবং শিক্ষামন্ত্রী আব্দুল হামিদ ব্রিজটি নির্মাণের ক্ষেত্রে অশেষ অবদান রাখেন। 
লোহা দিয়ে তৈরি আকৃতিতে ব্রিজটি ধনুকের ছিলার মতো বাঁকানো। জানা যায়, এ ব্রিজটি নির্মাণে তৎকালীন সময়ে ব্যয় হয়েছিল প্রায় ৫৬ লাখ টাকা।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ডিনামাইট দিয়ে ব্রিজের উত্তর পাশের একাংশ উড়িয়ে দেয়; যা স্বাধীনতার পর কাঠ ও বেইলি পার্টস দিয়ে মেরামত করা হয় ও হালকা যান চলাচলের জন্য ব্যবহৃত হয়। পরবর্তী সময়ে ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ রেলওয়ের সহযোগিতায় ব্রিজের বিধ্বস্ত অংশটি কংক্রিট দিয়ে পুনঃনির্মাণ করা হয়। তবে ১৯৯০-এর দশকে ব্রিজের অবস্থা খারাপ হতে থাকলে এবং সুরমা নদীর ওপর বিকল্প হিসেবে শাহজালাল সেতু নির্মাণ করা হলে কিন ব্রিজে ভারী যান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
সর্বশেষ ২০১৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর সড়ক ও জনপথ বিভাগের সঙ্গে পরামর্শ করে ব্রিজটি কেবল পদচারী সেতু হিসেবে ব্যবহারের জন্য ঘোষণা দিয়ে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে সিলেট সিটি করপোরেশন। মাত্র ৫২ দিন পরে নগরবাসীর চাপের মুখে ব্রিজটি আবারও হালকা যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। ২০২০ সালে ব্রিজটির বড় ধরনের সংস্কারের বিষয়টি আলোচনা হয় সিলেট জেলা উন্নয়ন প্রকল্পের সমন্বয় বৈঠকে। সেই বৈঠকের আলোকে পরিকল্পনা প্রণয়ন করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ব্রিজটির সংস্কারে ২ কোটি ১৫ লাখ টাকা অনুমোদন দেয় সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়। সময়ের সঙ্গে এ ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাকে রক্ষা করতে ও কাজে লাগাতে 
এর রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় বলে জানা যায়। ব্রিজের দু’পাশের শেষ প্রান্তে দুটি গেটও তৈরি করা আছে। রাতের বেলা ব্রিজটি থেকে তাকালে অন্যরকম একটা সৌন্দর্য ফুটে 
ওঠে! ব্রিজের নিচে পাকা করা পাড়ে বসে থাকতেও অন্যরকম অনুভূতি কাজ করে। বেশ উঁচুতে অবস্থিত ব্রিজটিকে যতই 
দেখি ততই কেন জানি একটা চিত্তাকর্ষক কাজ করে! v
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব র জট র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

পন্টুন থেকে নদীতে পড়ে যাওয়া যুবকের মরদেহ উদ্ধার

মুন্সীগঞ্জ শহরের হাটলক্ষীগঞ্জ এলাকায় লঞ্চঘাটের পন্টুন থেকে ধলেশ্বরী নদীতে পড়ে যাওয়া যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস।

মঙ্গলবার (১৭ জুন) সকালে সদর উপজেলার মোল্লাচর এলাকার ধলেশ্বরী নদী থেকে থেকে মরদেহটি উদ্ধার হয়। গত রবিবার (১৫ জুন) দিবাগত রাত ২টার দিকে পন্টুন থেকে তিনি নদীতে পড়ে নিখোঁজ হন। 

মারা যাওয়া যুবকের নাম লোকমান হোসেন (৩৭)। তিনি ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার দেওয়ানপুর গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে। 

আরো পড়ুন:

মেহেরপুরে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু

মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে স্কুলছাত্রের মৃত্যু

আরো পড়ুন: মুন্সীগঞ্জে লঞ্চঘাটের পন্টুন থেকে পড়ে যুবক নিখোঁজ 

মুন্সীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‍“নিখোঁজের সন্ধানে ডুবুরি দল কাজ করেছে। অন্ধকার ও নদীতে ঘূর্নী স্রোতের কারণে রাতে উদ্ধার অভিযান স্থগিত ছিল। আজ সকালে পুনরায় উদ্ধার অভিযান শুরু হয়। মুন্সীগঞ্জ সদরের মোল্লারচর সংলগ্ন ধলেশ্বর নদী থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।”

তিনি জানান, ভোলার তজুমদ্দিন থেকে ঢাকা সদরঘাটের দিকে যাচ্ছিল যাত্রীবাহী লঞ্চ ফারহান-৩। রবিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে যাত্রা বিরতিতে মুন্সীগঞ্জ লঞ্চঘাট নোঙর করে লঞ্চটি। সোহেল নামে এক যাত্রীকে এগিয়ে দিতে লঞ্চ থেকে ঘাটে নামেন লোকমানসহ কয়েকজন। পরে লঞ্চে উঠার সময় লোকমান পন্টুন থেকে নদীতে পড়ে যান। এরপর থেকেই তিনি নিখোঁজ ছিলেন। আজ বিকেলে যুবকের মরদেহ আইনগত প্রক্রিয়া শেষে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

ঢাকা/রিটন/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ