হার্ডিঞ্জ ব্রিজ, কাউনিয়ার তিস্তা নদীতে ব্রিজ (যা একাত্তরে কিছুটা ধ্বংস হয়েছিল), ভুরুঙ্গামারীতে ভোলাহাট স্থলবন্দরের কাছে (অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকা) ব্রিজ দেখেছি। তবে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা হিসেবে আলোচনায় থাকলেও কিন ব্রিজও যে ঐতিহ্যে স্থান করে নিয়ে আছে, তা দেখে জানলাম। যদিও এ সম্পর্কে হয়তো পত্রিকায় কিংবা সাধারণ জ্ঞান বইয়ে পড়েছি; তবে তা হৃদয়ঙ্গমে ততটা ছিল না। যা ছিল পড়ার জন্য পড়া। আবার ব্রিজটি সিলেট শহরের প্রবেশদ্বারে না হলে ভ্রমণে গিয়ে অত গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হতো না। ২০২৩ সালের ১২ আগস্ট সকালে বাস থেকে নেমে প্রথমে শাহজালাল (রহ.
যাহোক আজকের এ ঐতিহ্যবাহী ব্রিজটি স্থাপনের মধ্য দিয়ে সিলেট শহরের সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ সৃষ্টি হয় অখণ্ড ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের। ব্রিজ নির্মাণের ইতিহাসে জানা যায়, আসাম প্রদেশের (তখন সিলেট আসাম প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত ছিল) গভর্নর মাইকেল কিন সিলেট সফরে আসার জন্য সুরমা নদীতে ব্রিজ স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। তখন অবশ্য সামের সঙ্গে সিলেটের যোগাযোগের মাধ্যম ছিল ট্রেন। ফলে, রেলওয়ে বিভাগ ১৯৩৩ সালে সুরমা নদীর ওপর ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ নেয় এবং নির্মাণ শেষে ১৯৩৬ সালে ব্রিজটি আনুষ্ঠানিকভাবে খুলে দেওয়া হয়। ১ হাজার ১৫০ ফুট দীর্ঘ ও ১৮ ফুট প্রশস্ত এ ব্রিজটি গভর্নর মাইকেল কিন-এর নামেই নামকরণ হয়– কিন ব্রিজ। জানা যায়, আব্দুল মজিদ কাপ্তান মিয়া, তৎকালীন আসাম সরকারের এক্সিকিউটিভ সদস্য রায় বাহাদুর প্রমোদ চন্দ্র দত্ত এবং শিক্ষামন্ত্রী আব্দুল হামিদ ব্রিজটি নির্মাণের ক্ষেত্রে অশেষ অবদান রাখেন।
লোহা দিয়ে তৈরি আকৃতিতে ব্রিজটি ধনুকের ছিলার মতো বাঁকানো। জানা যায়, এ ব্রিজটি নির্মাণে তৎকালীন সময়ে ব্যয় হয়েছিল প্রায় ৫৬ লাখ টাকা।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ডিনামাইট দিয়ে ব্রিজের উত্তর পাশের একাংশ উড়িয়ে দেয়; যা স্বাধীনতার পর কাঠ ও বেইলি পার্টস দিয়ে মেরামত করা হয় ও হালকা যান চলাচলের জন্য ব্যবহৃত হয়। পরবর্তী সময়ে ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ রেলওয়ের সহযোগিতায় ব্রিজের বিধ্বস্ত অংশটি কংক্রিট দিয়ে পুনঃনির্মাণ করা হয়। তবে ১৯৯০-এর দশকে ব্রিজের অবস্থা খারাপ হতে থাকলে এবং সুরমা নদীর ওপর বিকল্প হিসেবে শাহজালাল সেতু নির্মাণ করা হলে কিন ব্রিজে ভারী যান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
সর্বশেষ ২০১৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর সড়ক ও জনপথ বিভাগের সঙ্গে পরামর্শ করে ব্রিজটি কেবল পদচারী সেতু হিসেবে ব্যবহারের জন্য ঘোষণা দিয়ে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে সিলেট সিটি করপোরেশন। মাত্র ৫২ দিন পরে নগরবাসীর চাপের মুখে ব্রিজটি আবারও হালকা যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। ২০২০ সালে ব্রিজটির বড় ধরনের সংস্কারের বিষয়টি আলোচনা হয় সিলেট জেলা উন্নয়ন প্রকল্পের সমন্বয় বৈঠকে। সেই বৈঠকের আলোকে পরিকল্পনা প্রণয়ন করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ব্রিজটির সংস্কারে ২ কোটি ১৫ লাখ টাকা অনুমোদন দেয় সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়। সময়ের সঙ্গে এ ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাকে রক্ষা করতে ও কাজে লাগাতে
এর রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় বলে জানা যায়। ব্রিজের দু’পাশের শেষ প্রান্তে দুটি গেটও তৈরি করা আছে। রাতের বেলা ব্রিজটি থেকে তাকালে অন্যরকম একটা সৌন্দর্য ফুটে
ওঠে! ব্রিজের নিচে পাকা করা পাড়ে বসে থাকতেও অন্যরকম অনুভূতি কাজ করে। বেশ উঁচুতে অবস্থিত ব্রিজটিকে যতই
দেখি ততই কেন জানি একটা চিত্তাকর্ষক কাজ করে! v
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সিরাজগঞ্জে নানা অভিযোগে বিএনপির ৮ নেতার পদ স্থগিত
দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গ ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলা ও এনায়েতপুর থানা বিএনপির বিভিন্ন ইউনিটের আট নেতার সব পদ স্থগিত করেছে জেলা বিএনপি। একই অভিযোগে দলটির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের আরও তিন নেতার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার রাতে এ বিষয়ে পৃথক দুটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জেলা বিএনপি। বিষয়টি আজ শনিবার সকালে প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক তানভীর মাহমুদ।
প্রথম বিজ্ঞপ্তিতে উল্লাপাড়া উপজেলায় যাঁদের প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পদ স্থগিত করা হয়েছে, তাঁরা হলেন উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক হেলাল সরকার, সাবেক সদস্য মিজানুর রহমান, পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি বেলাল হোসেন, সাবেক সদস্যসচিব মুকুল হোসেন, সদস্য আশরাফুল ইসলাম, পঞ্চকোকড়ি ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হায়দার আলী এবং বড়হর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন। দ্বিতীয় বিজ্ঞপ্তিতে এনায়েতপুর থানার জালালপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি আবদুর রশিদের প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পদ স্থগিত করা হয়েছে।
এ ছাড়া উল্লাপাড়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আবু হাসান, উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শাহ জালাল এবং পৌর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মো. খোকনের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কমিটির সভাপতি ও সম্পাদককে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষা ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে নেতা-কর্মীদের বিরত রাখতেই অভিযোগ প্রাথমিক যাচাইয়ের পর এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাঁদের বিরুদ্ধে দলের স্বার্থে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।