ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ছয় লেনের কাজ শুরু হয়েছে দু’বছর হলো। একদিকে হাওর, আরেকদিকে পাহাড়ি অঞ্চল। বর্ষায় পানির প্রবাহ ঠিক রেখে জলাবদ্ধতা বা বন্যার হাত থেকে রক্ষা পেতে এ সড়কে চলমান বক্স-কালভার্ট ও সেতুর কাজ আকস্মিক থেমে যাওয়ায় উদ্বেগ বাড়ছে।
নবীগঞ্জের সীমান্তবর্তী শেরপুর থেকে নবীগঞ্জ ও বাহুবলের মিরপুর পর্যন্ত প্রায় ৬০ কিলোমিটার মহাসড়কের উন্নয়নকাজ চলমান। এখানে নির্মিত হচ্ছে ৫০টির অধিক সেতু ও কালভার্ট। এসব সেতু ও বক্স-কালভার্ট মূলত পানি নিষ্কাশনের জন্য নির্মিত হচ্ছে। মহাসড়কের পশ্চিমে রয়েছে ঘুঙ্গিয়াজুড়ি হাওর, আর পূর্ব পাশে দিনারপুর পাহাড়ি এলাকা।
পাহাড়ি এলাকার পানি নিষ্কাশনের জন্য নবীগঞ্জ ও বাহুবলের পুটিজুড়ি এলাকায় ঘন ঘন বক্স-কালভার্ট করা হচ্ছে। বেশ কিছুদিন ধরে এসব নির্মাণকাজ থমকে গেছে। বড় সেতু দুটির কাজ ধীরগতিতে চলছে। কালভার্টগুলোর কাজ পুরোদমে বন্ধ রয়েছে। ফলে মহাসড়কটি এখন কয়েক লাখ মানুষের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মহাসড়কের নির্মাণকাজের জন্য যেসব ডিভাইডার নির্মাণ করা হয়েছে, বৃষ্টির পানি সেসব ডিভাইডার বাঁধে আটকে যাচ্ছে। সড়কের পূর্ব পাশে ৩০-৪০ কিলোমিটার এলাকা পাহাড়ি অঞ্চল। বৃষ্টি হলে সেসব পানি গড়িয়ে নিচে ঘুঙ্গিয়াজুড়ি হাওরে নামে। এখন কাজ বন্ধ করে রেখেছে মহাসড়ক নির্মাণ প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা। এতে বর্ষার শুরুতে মহাদুর্ভোগে পড়বেন কয়েক লাখ মানুষ। পাহাড়ের পানি আটকে অকালবন্যার আশঙ্কা করছেন তারা।
দেবপাড়া গ্রামের বাসিন্দা রহিম উল্লাহ বলেন, উন্নয়ন যেন গলার কাঁটা না হয়, এ জন্য দ্রুত এসব কালভার্ট আর সেতুর কাজ শেষ করতে হবে। তা না হলে পাহাড়ি এলাকার পানি হাওরে নামতে পারবে না। এখন এসব জায়গায় বাঁধ (ডিভাইডার) দিয়ে রাখা হয়েছে। সেগুলো কেটে না দিলে সমস্যা বড় আকার ধারণ করবে। ফসলি জমির ক্ষতি হবে।
পানিউমদা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইজাজুর রহমান বলেন, কিছুদিন ধরে হঠাৎ করে মহাসড়কের এসব নির্মাণকাজ থমকে গেছে। বড় দুই-তিনটি সেতুর কাজ ধীরগতিতে চলছে। কালভার্টগুলোর কাজ পুরোদমে বন্ধ রয়েছে। ফলে মহাসড়কটি এখন কয়েক লাখ মানুষের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, মহাসড়কের নির্মাণকাজের জন্য যেসব ডিভাইডার নির্মাণ করা হয়েছে, বৃষ্টির পানি সেসব ডিভাইডার বাঁধে আটকে যাচ্ছে। বিষয়টি জরুরি ভিত্তিতে দেখা দরকার। পাহাড়ি এলাকার পানি নামার আর বিকল্প পথ নেই।
দেবপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহরিয়াজ সুমন বলেন, যেসব স্থানে সেতু ও কালভার্ট নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়েছে, তা পরিকল্পনামাফিক করা দরকার। সড়কের শেরপুর থেকে বাহুবল পর্যন্ত এ অংশে অন্তত ৫০টি কালভার্ট ও ১০টি সেতু রয়েছে– এমন প্রকল্পের কাজ দৃশ্যমান। শুধু বিজনা নদী ও করাঙ্গী নদীর সেতু ছাড়া সব কাজই বন্ধ রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট এলাকার এমন বেশ কয়েকটি স্থান ঘুরে দেখা যায়, আগে দেবপাড়া থেকে পুটিজুরি পাহাড়ি এলাকার পানি সরাসরি ঘুঙ্গিয়াজুড়ির দিকে প্রবাহিত হতো। মহাসড়ক হওয়ার পর এসব এলাকায় ঘন ঘন কালভার্ট করা হয় পানি নিষ্কাশনের জন্য। এসব কালভার্টের মধ্যে ডিভাইডার বাঁধ দিয়ে নতুন করে উন্নয়নকাজ শুরু হয়। ইদানীং হঠাৎ করে কাজ বন্ধ করে দেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ফলে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা নেই।
কয়েক দিন আগের সামান্য বৃষ্টিতে পানি আটকে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ফলে সেখানে সেতু বা কালভার্ট স্থাপনের যে পরিকল্পনা ছিল, তা ভেস্তে যায়। এর পরও পূর্বনির্ধারিত স্থানে প্রকল্প বাস্তবায়নে অনড় কর্তৃপক্ষ। ফলে অনেক জায়গায় আবার এসব কালভার্ট অকেজো হয়ে পড়েছে। সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা ছাড়া এসব নির্মাণকাজ করা হচ্ছে এবং এখন আবার পরিকল্পনা ছাড়া হুট করে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন স্থানীয়রা।
আলী হোসেন নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, আউশকান্দি সিএনজি ফিলিং স্টেশনের মাঝখানে নির্মাণাধীন আরও একটি কালভার্টের পূর্ব পাশের সীমানায় রয়েছে বিশাল প্রাচীর। এর আশপাশে পানির কোনো নালা বা প্রবাহ নেই। সেখানেও কালভার্টের কাজ চলছে।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের সিলেট অংশের প্রকল্প ব্যবস্থাপক দেবাশিস রায় বলেন, সেতু ও কালভার্টগুলো পরিকল্পনা করে তৈরি করা হচ্ছে। কালভার্টগুলোর কাজ চলমান, তাই ডিভাইডারগুলো কেটে দেওয়া হচ্ছে না। হয়তো শ্রমিক সংকটের কারণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ বন্ধ করেছে। খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যেসব স্থানে এগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে, সেগুলো আগেই নির্ধারিত। পাহাড়ি এলাকার পানি নিষ্কাশনের জন্য ঘনঘন কালভার্ট করা হয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: এল ক র প ন প রকল প ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
১০ সেতু ৫০ বক্স-কালভার্টের কাজ বন্ধ
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ছয় লেনের কাজ শুরু হয়েছে দু’বছর হলো। একদিকে হাওর, আরেকদিকে পাহাড়ি অঞ্চল। বর্ষায় পানির প্রবাহ ঠিক রেখে জলাবদ্ধতা বা বন্যার হাত থেকে রক্ষা পেতে এ সড়কে চলমান বক্স-কালভার্ট ও সেতুর কাজ আকস্মিক থেমে যাওয়ায় উদ্বেগ বাড়ছে।
নবীগঞ্জের সীমান্তবর্তী শেরপুর থেকে নবীগঞ্জ ও বাহুবলের মিরপুর পর্যন্ত প্রায় ৬০ কিলোমিটার মহাসড়কের উন্নয়নকাজ চলমান। এখানে নির্মিত হচ্ছে ৫০টির অধিক সেতু ও কালভার্ট। এসব সেতু ও বক্স-কালভার্ট মূলত পানি নিষ্কাশনের জন্য নির্মিত হচ্ছে। মহাসড়কের পশ্চিমে রয়েছে ঘুঙ্গিয়াজুড়ি হাওর, আর পূর্ব পাশে দিনারপুর পাহাড়ি এলাকা।
পাহাড়ি এলাকার পানি নিষ্কাশনের জন্য নবীগঞ্জ ও বাহুবলের পুটিজুড়ি এলাকায় ঘন ঘন বক্স-কালভার্ট করা হচ্ছে। বেশ কিছুদিন ধরে এসব নির্মাণকাজ থমকে গেছে। বড় সেতু দুটির কাজ ধীরগতিতে চলছে। কালভার্টগুলোর কাজ পুরোদমে বন্ধ রয়েছে। ফলে মহাসড়কটি এখন কয়েক লাখ মানুষের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মহাসড়কের নির্মাণকাজের জন্য যেসব ডিভাইডার নির্মাণ করা হয়েছে, বৃষ্টির পানি সেসব ডিভাইডার বাঁধে আটকে যাচ্ছে। সড়কের পূর্ব পাশে ৩০-৪০ কিলোমিটার এলাকা পাহাড়ি অঞ্চল। বৃষ্টি হলে সেসব পানি গড়িয়ে নিচে ঘুঙ্গিয়াজুড়ি হাওরে নামে। এখন কাজ বন্ধ করে রেখেছে মহাসড়ক নির্মাণ প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা। এতে বর্ষার শুরুতে মহাদুর্ভোগে পড়বেন কয়েক লাখ মানুষ। পাহাড়ের পানি আটকে অকালবন্যার আশঙ্কা করছেন তারা।
দেবপাড়া গ্রামের বাসিন্দা রহিম উল্লাহ বলেন, উন্নয়ন যেন গলার কাঁটা না হয়, এ জন্য দ্রুত এসব কালভার্ট আর সেতুর কাজ শেষ করতে হবে। তা না হলে পাহাড়ি এলাকার পানি হাওরে নামতে পারবে না। এখন এসব জায়গায় বাঁধ (ডিভাইডার) দিয়ে রাখা হয়েছে। সেগুলো কেটে না দিলে সমস্যা বড় আকার ধারণ করবে। ফসলি জমির ক্ষতি হবে।
পানিউমদা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইজাজুর রহমান বলেন, কিছুদিন ধরে হঠাৎ করে মহাসড়কের এসব নির্মাণকাজ থমকে গেছে। বড় দুই-তিনটি সেতুর কাজ ধীরগতিতে চলছে। কালভার্টগুলোর কাজ পুরোদমে বন্ধ রয়েছে। ফলে মহাসড়কটি এখন কয়েক লাখ মানুষের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, মহাসড়কের নির্মাণকাজের জন্য যেসব ডিভাইডার নির্মাণ করা হয়েছে, বৃষ্টির পানি সেসব ডিভাইডার বাঁধে আটকে যাচ্ছে। বিষয়টি জরুরি ভিত্তিতে দেখা দরকার। পাহাড়ি এলাকার পানি নামার আর বিকল্প পথ নেই।
দেবপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহরিয়াজ সুমন বলেন, যেসব স্থানে সেতু ও কালভার্ট নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়েছে, তা পরিকল্পনামাফিক করা দরকার। সড়কের শেরপুর থেকে বাহুবল পর্যন্ত এ অংশে অন্তত ৫০টি কালভার্ট ও ১০টি সেতু রয়েছে– এমন প্রকল্পের কাজ দৃশ্যমান। শুধু বিজনা নদী ও করাঙ্গী নদীর সেতু ছাড়া সব কাজই বন্ধ রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট এলাকার এমন বেশ কয়েকটি স্থান ঘুরে দেখা যায়, আগে দেবপাড়া থেকে পুটিজুরি পাহাড়ি এলাকার পানি সরাসরি ঘুঙ্গিয়াজুড়ির দিকে প্রবাহিত হতো। মহাসড়ক হওয়ার পর এসব এলাকায় ঘন ঘন কালভার্ট করা হয় পানি নিষ্কাশনের জন্য। এসব কালভার্টের মধ্যে ডিভাইডার বাঁধ দিয়ে নতুন করে উন্নয়নকাজ শুরু হয়। ইদানীং হঠাৎ করে কাজ বন্ধ করে দেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ফলে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা নেই।
কয়েক দিন আগের সামান্য বৃষ্টিতে পানি আটকে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ফলে সেখানে সেতু বা কালভার্ট স্থাপনের যে পরিকল্পনা ছিল, তা ভেস্তে যায়। এর পরও পূর্বনির্ধারিত স্থানে প্রকল্প বাস্তবায়নে অনড় কর্তৃপক্ষ। ফলে অনেক জায়গায় আবার এসব কালভার্ট অকেজো হয়ে পড়েছে। সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা ছাড়া এসব নির্মাণকাজ করা হচ্ছে এবং এখন আবার পরিকল্পনা ছাড়া হুট করে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন স্থানীয়রা।
আলী হোসেন নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, আউশকান্দি সিএনজি ফিলিং স্টেশনের মাঝখানে নির্মাণাধীন আরও একটি কালভার্টের পূর্ব পাশের সীমানায় রয়েছে বিশাল প্রাচীর। এর আশপাশে পানির কোনো নালা বা প্রবাহ নেই। সেখানেও কালভার্টের কাজ চলছে।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের সিলেট অংশের প্রকল্প ব্যবস্থাপক দেবাশিস রায় বলেন, সেতু ও কালভার্টগুলো পরিকল্পনা করে তৈরি করা হচ্ছে। কালভার্টগুলোর কাজ চলমান, তাই ডিভাইডারগুলো কেটে দেওয়া হচ্ছে না। হয়তো শ্রমিক সংকটের কারণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ বন্ধ করেছে। খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যেসব স্থানে এগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে, সেগুলো আগেই নির্ধারিত। পাহাড়ি এলাকার পানি নিষ্কাশনের জন্য ঘনঘন কালভার্ট করা হয়েছে।